পিএসসির আঞ্চলিক কার্যালয় প্রসঙ্গে by ড. তুহিন ওয়াদুদ

বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন বাংলাদেশের সরকারি চাকরিতে প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তাদের নিয়োগদানের নিমিত্তে একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। নিয়োগ ছাড়াও এ প্রতিষ্ঠান প্রথম শ্রেণীর গেজেটেড কর্মকর্তাদের বিভাগীয় পরীক্ষা এবং সিনিয়র স্কেল পরীক্ষাও গ্রহণ করে থাকে। সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠান সরকারি বিভিন্ন উচ্চতর পদেও নিয়োগ দিয়ে থাকে। বিগত সরকারের সময় বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ


থাকলেও বর্তমানে সরকারি কর্মকমিশন অনেকটা সততার সঙ্গে নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করছে।বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন বেকারদের কর্মসংস্থান করে থাকে। যেহেতু বেকারদের কর্মসংস্থান করে থাকে, সেহেতু বেকারদের ব্যয় নির্বাহের কথাটি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা প্রয়োজন। বর্তমানে সরকারি কর্মকমিশন বিসিএস পরীক্ষা কয়েকটি আঞ্চলিক কেন্দ্রে গ্রহণ করে থাকে। ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে রাজশাহী, খুলনা, সিলেট বরিশাল এবং চট্টগ্রামে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সরকারি কর্মকমিশনের আঞ্চলিক পরীক্ষাকেন্দ্র আরো বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। একবার প্রিলিমিনারি, তারপর ৯টি লিখিত পরীক্ষা, তারপর মনস্তাত্তি্বক পরীক্ষা, তারপর মৌখিক পরীক্ষা, তারপর স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর চূড়ান্ত মনোনয়ন। একেকটি বিসিএসের বহু স্তরবিশিষ্ট পরীক্ষার জন্য একজন চাকরিপ্রার্থীর দূরবর্তী এসব কেন্দ্রে গিয়ে পরীক্ষা দেওয়া অনেক ঝামেলাপূর্ণ এবং ব্যয়নির্ভর। একজন চাকরিপ্রার্থীকে প্রতি মাসে কখনো কখনো প্রতি সপ্তাহে বিভিন্ন চাকরির জন্য আবেদন করতে হয়। ব্যাংক ড্রাফট, যাতায়াত_সব কিছু মিলে এত টাকা একজন চাকরিপ্রার্থীর পক্ষে জোগান দেওয়া সত্যিই অনেক কষ্টের। এই বাস্তবতায় না পড়লে এর ভয়াবহতা উপলব্ধি করা অসম্ভব। খেয়ে না খেয়ে অন্যের বাসায় টিউশনি করে একজন চাকরিপ্রার্থীকে এই অর্থের জোগান দিতে হিমশিম খেতে হয়। বাংলাদেশের সব সরকারি নিয়োগ পরীক্ষার যেগুলোতে অধিকসংখ্যক প্রতিযোগী থাকে, সেগুলোর জন্য আঞ্চলিক কেন্দ্র থাকা আবশ্যক।
শিক্ষা বিভাগের কিছু কিছু পরীক্ষা বড় জেলা শহরগুলোকে আঞ্চলিক কার্যালয় হিসেবে বিন্যস্ত করে সেখানে সরকারি মাধ্যমিক স্কুলের নিয়োগ পরীক্ষা, বেসরকারি স্কুল-কলেজের নিবন্ধন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু সেগুলোরও রয়েছে সীমাবদ্ধতা। সে ক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে, যারা যে অঞ্চলের বাসিন্দা, তারা সে অঞ্চলের পরীক্ষাকেন্দ্রের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা হয় জেলাভিত্তিক। যদি অভিন্ন প্রশ্নপত্রে একই দিনে ও একই সময়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে, তাহলে অন্য কোনো স্থান থেকে পরীক্ষা হলে অসুবিধা কোথায়? একসময় যখন প্রযুক্তি আজকের দিনের মতো বিকাশ লাভ করেনি, তখনকার জন্য হয়তো ঠিক ছিল; কিন্তু আজকের দিনে প্রযুক্তির এই বিকাশের সময় যেকোনো কেন্দ্র থেকে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ থাকা উচিত। কেন্দ্রীয়ভাবে ফলাফল মেধাক্রম অনুসারে করলে যেকোনো জেলার প্রার্থী যেকোনো পছন্দমতো কেন্দ্রের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে।
যত দিন পর্যন্ত সব নিয়োগ পরীক্ষার জন্য বড় বড় শহরে পরীক্ষাকেন্দ্র করা না যায়, তত দিন প্রত্যেক বিভাগীয় শহরে সরকারি কর্মকমিশনের আঞ্চলিক পরীক্ষাকেন্দ্র থাকা জরুরি। বর্তমানে দেশে শুধু রংপুর বিভাগে সরকারি কর্মকমিশনের কোনো আঞ্চলিক কার্যালয় নেই। এ বিভাগে আঞ্চলিক কার্যালয় গড়ে তোলা প্রয়োজন। প্রতিবছর রংপুর থেকেই প্রচুরসংখ্যক প্রার্থী বিসিএসের জন্য চেষ্টা করে। অথচ তাদের জন্য রংপুরে কোনো আঞ্চলিক পরীক্ষাকেন্দ্র নেই। একবার রংপুরে একটি আঞ্চলিক পরীক্ষাকেন্দ্র করার কথা থাকলেও তা কী কারণে বিলম্বিত হচ্ছে, তার কোনো সদুত্তর মেলেনি। বর্তমানে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় নামে আরো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কুড়িটি বিভাগে সম্মান কোর্স পড়ানো হচ্ছে। প্রতিবছর বাড়ছে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসংখ্যা। অন্যদিকে ঢাকা শহর দিনের পর দিন বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। প্রতিদিন যে সংখ্যক মানুষ স্বল্প সময়ের জন্য ঢাকা আসে, তার একটি বড় অংশই আসে বিভিন্ন চাকরির প্রত্যাশায়, কোনো না কোনো চাকরির পরীক্ষা দিতে।
অল্প দিনের মধ্যে ৩৩তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হবে। সে ক্ষেত্রে রংপুরে যদি এই অল্প সময়ের মধ্যে আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপন করা যায়, তাহলে ৩৩তম বিসিএস পরীক্ষার সময় থেকেই রংপুর বিভাগের মানুষ এ সুবিধা ভোগ করতে পারবে। বর্তমানে জেলা শহরগুলোতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বিসিএসের আবেদন গ্রহণ করা হয়, যা চাকরিপ্রার্থীদের জন্য অনেক সুবিধাজনক হয়েছে। চাকরিপ্রার্থীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে রংপুরে বিসিএস পরীক্ষার অঞ্চলিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। শুধু বিসিএস পরীক্ষা নয়, অন্য সব প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্যও আঞ্চলিক কেন্দ্র প্রয়োজন।
লেখক : শিক্ষক, বাংলা বিভাগ
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর।
wadudtuhin@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.