ইউনিয়ন পরিষদ সেবাকেন্দ্র-প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মেলাতেই হবে
কুমিল্লার অজপাড়াগাঁয়ের গ্রাম দুর্গাপুর ঘুরে সরেজমিন প্রতিবেদন 'জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ইউনিয়ন সেবাকেন্দ্র' প্রকাশিত হয়েছে বুধবারের সমকালে। রাজধানী ঢাকায় থাকা পুত্র-পুত্রবধূ তাদের প্রথম সন্তানের ছবি ইন্টারনেটে দিয়ে দেওয়ায় কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তা দেখতে পেলেন গ্রামে থাকা দাদা-দাদি। এখন প্রত্যন্ত গ্রামে বসবাসকারী দরিদ্র পরিবারেও মোবাইল টেলিফোন সেবা সহজলভ্য। ইন্টারনেট সুবিধাও মেলে অনেক মোবাইল ফোনে। ইউনিয়ন
পরিষদকেন্দ্রিক ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্র ইন্টার সুবিধা চালু করলে সব ধরনের মানুষ তার দ্বারা উপকৃত হতে পারে। দুর্গাপুর গ্রামে ইন্টারনেট সুবিধাসহ ল্যাপটপ রয়েছে, যাতে শুধু বাংলাদেশের নয়, গোটা বিশ্ব সংক্রান্ত অগণিত তথ্য যে কারও হাতের নাগালে চলে আসে মুহূর্তে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি বা ভর্তি সংক্রান্ত ফরম পূরণ করে দ্রুত তা বহুদূরের গন্তব্যে পাঠিয়ে দেওয়া এখন আর সমস্যা নয়। ছবিও তোলা যায়। দেশের প্রায় পাঁচ হাজার ইউনিয়নে এ সুবিধা চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ উদ্যোগ মূলত সরকারের, কিন্তু তারা স্থানীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা ইউনিয়ন পরিষদের সহায়তা গ্রহণ করছে। এ ধরনের তথ্য ও সেবাকেন্দ্র পূর্ণাঙ্গরূপে চালু হলে গোটা দেশের মানুষ নানাভাবে উপকৃত হবে। লাভবান হবে পারিবারিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। তবে সরকার এবং ইউনিয়ন পরিষদ উভয়কেই মনে রাখতে হবে যে, প্রযুক্তি এত দ্রুত এগিয়ে চলেছে যে কেউ তাদের ওপর ভরসা করে বসে থাকবে না। শহর কিংবা গ্রাম সর্বত্র এখন মোবাইল ফোনেই ইন্টারনেট সুবিধা চালু রয়েছে এবং তার ব্যয় ক্রমাগত কমছে। বিশ্বের একপ্রান্তের কোনো দেশে প্রযুক্তি ক্ষেত্রে নতুন কিছু অর্জিত হলে তা স্বল্পতম সময়েই ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র এবং বাংলাদেশও ব্যতিক্রম নয়। তবে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় থাকা আমাদের বাংলাদেশ। এখানে জনসংখ্যার প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। তাদের অর্থনৈতিক ক্ষমতা সীমিত। এটা আনন্দের বিষয় যে, তারা সন্তানদের লেখাপড়া শেখাতে আগ্রহী। কৃষক-ক্ষেতমজুররা এখন কৃষি কাজ কিংবা মাছ চাষে আধুনিক বিজ্ঞানের সুবিধা কাজে লাগাতে উৎসাহী। বাজারের সংবাদ নিতে তারা অনেক বছর ধরেই মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে। স্বাস্থ্যসেবা কিংবা স্কুল-কলেজে সন্তানের পড়াশোনার ব্যাপারেও তারা প্রযুক্তির কিছু না কিছু সাহায্য নেয়। কিন্তু সংসারের অভাব এবং জ্ঞানের ভাণ্ডারের সীমাবদ্ধতার জন্য তারা এখনও আধুুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সুবিধা পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারে না। আর এখানেই সরকার ও স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন সংস্থায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের গুরুদায়িত্ব আমরা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্র চালু করা মহতী ও অপরিহার্য পদক্ষেপ তাতে দ্বিমত নেই। তবে প্রযুক্তির যেভাবে উন্নতিসাধন ঘটছে তাতে দেখা যাবে ক্রমাগত মান বাড়িয়ে চলতে না পারলে তা সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে পারবে না এবং এর ফলে কেন্দ্রগুলো অচল হয়ে পড়বে। এখন তাদের সামনে দুটি জরুরি করণীয় :এক. প্রতিটি কেন্দ্রে অত্যাধুনিক সরঞ্জাম সরবরাহ এবং দুই. দক্ষ প্রযুক্তি-কর্মী নিয়োগ। দক্ষ কর্মী পেতে হলে উপযুক্ত সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে এবং সরকার ও ইউনিয়ন পরিষদ উভয়কেই তা বহনে প্রস্তুত থাকতে হবে।
No comments