পাট ও পাটজাত দ্রব্য-আবার ফিরে পাক ঐতিহ্য
দীর্ঘদিন পাট চাষে পিছিয়ে থাকার পর কয়েক বছর আগে বাংলাদেশের পাটচাষিরা নড়েচড়ে উঠেছিলেন। তাঁদের সামনে আশার আলো জ্বলে উঠেছিল খানিকটা। সেই আলো দেখেই পাটচাষিরা উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন পাট চাষে। পাটের উৎপাদন বেড়ে যায় সেই সুবাদে। পাটের বাজারও বেড়ে গিয়েছিল কিছুটা। কিন্তু এ অবস্থা স্থায়ী হয়নি মোটেও। পরিস্থিতি দ্রুত বদলে যায়। আবারও পাটচাষিরা মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেন। কারণ পাটের দাম পড়তে শুরু করে
ইতিমধ্যে। পাটের বিক্রয়মূল্য আর উৎপাদনব্যয় অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। এমনও দেখা গেছে, ৪০ কেজি পাট বিক্রি করে ৪০ কেজি সার কিনতে পারছেন না কৃষক। এ পরিস্থিতি পাটচাষিদের জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বিভিন্ন মহল এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য আহ্বান জানায়। কিন্তু দেরিতে হলেও সরকারি ও বেসরকারি কিছু উদ্যোগ পাটশিল্পকে বাঁচিয়ে তোলার ব্যাপারে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে_পাটের বাজার বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারি প্রচেষ্টা। বিভিন্ন দেশে পাট ও পাটজাত দ্রব্য রপ্তানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দেশের অভ্যন্তরেও পাট ও পাটজাত দ্রব্য ব্যবহার বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরকারের এই উদ্যোগ অবশ্যই আমাদের আশা জাগাতে পারে। ব্রাজিল ও জার্মানির বাজারে আমাদের পাট ও পাটজাত দ্রব্যের চাহিদা রয়েছে। কথা হচ্ছে, এই আগ্রহকে কাজে লাগানোর দায়িত্ব হচ্ছে সরকারের। অথচ যে ব্রাজিলে পাটের চাহিদা রয়েছে, সেখানে বাংলাদেশের কোনো দূতাবাসই নেই। বাংলাদেশের স্বার্থ বিবেচনা করে সেখানে দূতাবাস খোলা যায় কি না, সরকারকে সেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। জার্মানিতেও পাটের চাহিদা বেড়েছে। হালে পৃথিবীব্যাপী পরিবেশবাদীদের সোচ্চার হতে দেখা গেছে। এ পরিস্থিতিকেও কাজে লাগাতে পারে বাংলাদেশ। এর জন্য প্রয়োজন ব্যাপক প্রচারণা এবং বাণিজ্যবান্ধব কূটনীতি। বাণিজ্যবান্ধব কূটনীতির মাধ্যমে পাট ও পাটজাত দ্রব্যের ব্যাপক চাহিদা বাড়ানো সম্ভব। জার্মানি ও ব্রাজিলে বাংলাদেশের পাটের চাহিদা বৃদ্ধির পর প্রমাণ হয়ে যায় যে সেই সুযোগটি কাজে লাগানো সম্ভব। তাকে অনুসরণ করে অন্যান্য দেশেও একই উদ্যোগ নেওয়া দরকার বলে মনে করি। পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরেও বাজার বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে আমাদের খাদ্যদ্রব্য মোড়কীকরণে যেভাবে পলিথিনের ব্যবহার হয়, তা রদ করতে পারলে দেশের অভ্যন্তরেই পাটজাত দ্রব্যের ব্যবহার অনেক বেড়ে যাবে। এতে পরিবেশ নষ্ট হওয়ার ভয় যেমন কমে যাবে, তেমনি আমাদের সোনালি আঁশের গৌরবও ফিরে আসবে। সুতরাং সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সবাইকে দ্রুত এগিয়ে আসা উচিত।
No comments