পাহাড়ের কোলে-খাগড়াছড়ি ভূস্বর্গ হতে পারত by বিপ্রদাশ বড়ুয়া
পাহাড়,
নদী, সমতল, আদিবাসী ও বাঙালি নিয়ে ভূস্বর্গের সেরা সুন্দরী নগরী হতে পারে
খাগড়াছড়ি, চেঙ্গির বাঁ তীরে খাগড়াছড়ি, ডান তীরে উত্তর থেকে দক্ষিণে বিস্তৃত
পাহাড় শ্রেণী। এই পাহাড়ের সর্বোচ্চ শীর্ষের নাম 'এদো শিরো মোন', অর্থাৎ
হাতির শির। খাঁরাছড়ি নামের একটি ছড়া শহর ভেদ করে চেঙ্গিতে মিশেছে। খাঁড়া বা
নলখাগড়া থেকে খাঁরাছড়ি, তার থেকে খাগড়াছড়ি। পঞ্চাশ বছর আগের সুশ্রী তরুণী
এই শহর এখন অবৈধ ভোগদখল হয়ে হয়ে হতশ্রী। শহরের উঁচু টিলা, তার চারপাশ কিছুই
অক্ষত নেই। এমনকি কুড়ি-তিরিশ বছর আগেও এর পাহাড় ও টিলার সবুজের জৌলুস দুই
চোখ ভরে পান করেছি। পাহাড়িদের তৈরি দুধ-সাদা মিষ্টি পানীয় জগরার মতো।
মেয়র, আঞ্চলিক পরিষদ, জেলা প্রশাসক কারো নয় এখন ভূস্বর্গ খাগড়াছড়ি। অবৈধ
দখলদার, রাজনৈতিক ক্ষমতাবান বাটপাড়দের রক্ষিতা সে। বারোয়ারি মাল-সামান।
১৯৭১
সালের পয়লা জানুয়ারি খাগড়াছড়ি হয় রামগড় মহকুমার সদর দপ্তর। ১৯৬১ সালে
খাগড়াছড়ি ইউনিয়ন ছিল মহালছড়ি থানার অধীন। এ বছর আদমশুমারিতে এর লোকসংখ্যা
১২ হাজার ৯০০, এলাকা ছিল ৪৮ হাজার ২৮৯ একর। ১৯৫৮ সালে খাগড়াছড়ি উচ্চ
বিদ্যালয় স্থাপিত। আমার 'শ্রামণ গৌতম' উপন্যাসের পটভূমি লেখার জন্য এই পথে
পানছড়ি যাই। সেও তিরিশ বছর আগে ঘটেছিল। তখনো খাগড়াছড়ি ও পানছড়ির ভূপ্রকৃতি
প্রায় অপাপবিদ্ধ। আস্তে আস্তে শাসকদের ছত্রচ্ছায়ায় বাঙালি অভিবাসী ঢুকে
পড়ল। ব্রিটিশ ও পাকিস্তানি সরকার যেমন শঠ ও খল ছিল, বাংলাদেশ সরকারও সে পথ
অনুসরণ করল। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে খাগড়াছড়ির কী করুণ অবস্থা হয়েছিল।
চেঙ্গির মোড়ের। মনে পড়ে? মনে করে দেখুন, বিচার-বিবেচনা করে দেখুন মহাশয়
শাসকগণ।
বাংলাদেশের আনাচকানাচের প্রকৃতি ও মানুষ দেখা শুরু করি ১৯৯৫ সালের দিকে। পার্বত্য চট্টগ্রামের কিছু গভীর প্রত্যন্ত অঞ্চল দেখার সুযোগ হয়েছে। বহু ভোগান্তির পর এত দিনে ভূস্বর্গের ছাদ সাজেক দেখার পরদিন পাখির চোখে খাগড়াছড়ি দেখে নিই। পাহাড় কাটা, জলা ও পুকুর ভরাট, খাগড়াছড়ি ও চেঙ্গি নদী দখল এবং দুর্গতি দেখতে হলো সেই সুবাদে। স্থানীয় অনেকে অনুরোধ করেছেন দু-এক কথা লিখতে। এখানকার কোনো স্কুল-কলেজে খেলার মাঠ নেই? এ কথা বিশ্বাস করব?
খাগড়াছড়ি কোর্টের প্রবেশপথের বিখ্যাত বটগাছটি আমার বয়সী। ওর গায়ে বিশাল এক সাইনবোর্ড খাড়া। ছোট ছোট আরো কিছু টিনের ফলক, পেরেকে পেরেকে জর্জরিত। কোর্টের অভিভাবকরা দেখুন চোখ মেলে। ওর শেকড়গুলো বাধ্য হয়ে টিলার ওপর থেকে নিচের দিকে শৈল্পিক দক্ষতায় নেমে পড়েছে। নিচে বাঁধানো সড়ক, শেকড়ের জন্য একটুও মাটি রাখেননি সড়ক নির্মাতা ও প্রকৌশলীরা। জেলা শাসক, রাজনীতিক, আদালতচালক_কারো চোখে পড়ে না? বটগাছের বিশাল শরীর খাড়া রাখতে ও খাদ্য জোগাতে শেকড় ও ঝুরি হলো প্রাণ। রাস্তার পাশে অন্তত এক ফুট মাটি রাখতে মানা? কী করে হে মানুষ, তার সৌন্দর্য ও উপকার নিতে চান? গাছের চারদিকে ইট-সিমেন্টে বেঁধে দেওয়ার সময় শেকড় যাতে কাটা না পড়ে সেদিকে কঠোর সতর্কতা দরকার। শ্রমিকদের ওপর এ দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া যায় না। অভিজ্ঞ প্রকৌশলী বা বৃক্ষবিদের দৃষ্টি দরকার। আলুটিলার বিখ্যাত বট-পাকুড়-আশ্বত্থেরও একই করুণ দশা। বট-অশ্বত্থ আমাদের জন্য প্রচুর প্রচুর অঙ্েিজন জোগান দেয়। প্রচুর ফল পাখিদের অন্তত তিন মাস খাদ্য জোগায়। পঞ্চাশ বছুরে একটি গাছ, তার আনুমানিক ওজন পঞ্চাশ টন ধরুন। এখন সে যে পরিমাণ অঙ্েিজন তৈরি করে, এর মূল্য সাত লাখ ৫০ হাজার টাকা, জীবজন্তুর জন্য আমিষ সরবরাহের মূল্য ৬০ হাজার টাকা, মাটির ক্ষয়রোধ ও উর্বরতা বাড়াবে সাত লাখ ৫০ হাজার টাকার, জলের আবর্তনচক্রের আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ মূল্য ৯ লাখ টাকা, আবহাওয়া দূষণ নিয়ন্ত্রণ মূল্য ১৫ লাখ টাকা, পাখি ও পোকামাকড় ইত্যাদির আশ্রয় মূল্য সাত লাখ ৫০ হাজার টাকা। যোগ করে নিন মোট পরিমাণ! সারা খাগড়াছড়িতে, অরণ্যের নিকটতম প্রতিবেশী শহরে শতাব্দীর বৃক্ষ কেন নেই? না থাকার জন্য পূর্বাপর জেলা শাসক, মেয়র, আঞ্চলিক পরিষদ, পরিবেশ অধিদপ্তর, নগরবাসী সবার জন্য অপমানকর। খুব খুব। তরুণ সাংবাদিক বন্ধুদের বলি, ভয় পেয়ো না। 'সত্য যে কঠিন,/কঠিনেরে ভালোবাসিলাম,/সে কখনো করে না বঞ্চনা।'_রবীন্দ্রনাথের কথা। তুড়ি মেরে নজরুল বলেছেন, 'দে গরুর গা ধুইয়ে।' বন্ধুরা লিখে যাও।
বনশ্রী হল বন বিভাগের বিশ্রামাগার, বাংলো। ওখানে যাওয়ার খাড়া পথের দুই ধারে কিছু গাছ আছে, ওরা কি আমার বয়সী? হন্তারকরা বলে, বঙ্গবন্ধু ও চার নেতাকে যদি খুন করা যায়, তাহলে বৃক্ষ কোন ছার! এ জন্যই অন্যায় ও অপরাধের শাস্তি হওয়া দরকার। নয়তো আইনের শাসন থাকে না, খুনিরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। যুদ্ধাপরাধীদেরও তাই সারা বিশ্বে বিচার হয়, কেউ টুঁ শব্দ করে না। আমাদের দেশে খুনিদের সমর্থনকারীরা করে। এ জন্য সমর্থকদেরও বিচার হওয়া উচিত। নয়তো দেশ চলে না। খাগড়াছড়ির পরিবেশও বাঁচবে না। দেশের নদী, পুকুর, ঝিল, এমনকি অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে বঙ্গোপসাগরও বাঁচবে না। এ জন্য শিশু, নারী, প্রেমিকা, পাখি, জীবজন্তু, সারা দেশের আদিবাসী কেউ রেহাই পায় না। বনের হরিণ, টুট্যাং (তক্ষক), বাঘ, ভালুক, হাতি কেউ নিরাপদ নয়। অন্যায়ের বিরুদ্ধে না দাঁড়ালে কারো রেহাই নেই।
খাগড়াছড়ির সবুজবাগ বসতি সৃষ্টি হচ্ছে পাহাড় কেটে। প্রশাসন ও শাসক অন্ধ, বধির। এমনকি পক্ষপাতদুষ্টও। ক্ষেতের বেড়া যদি ধান খায়, চাষির কী উপায় থাকে? মোহাম্মদপুরের বসতি সৃষ্টিও পাহাড় ধ্বংস করে। এত পাহাড় আছে, দু-একটা ধ্বংস করলেই বা কি? আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী সরকারি কর্মকর্তারাও এ ধারণার শিকার। মূর্খ ওরা, জেনে রাখুন। এ জন্য সবুজবাগের, মোহাম্মদপুরের পাহাড় কাটায় কেউ বাধা দেয়নি? অথচ এ বিষয়ে স্পষ্ট আইন আছে। এ আইন লঙ্ঘন করছে স্থানীয় প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতা, টাউট-বাটপার। আর প্রশাসন মদদ দিচ্ছে, সায় দিচ্ছে, উসকানিও দিচ্ছে।
জগন্নাথ মন্দির খাগড়াছড়ির সুপ্রাচীন ধর্মস্থান। ১৯৭১ সালে মন্দিরের পেছনের পুকুর বা জলাভূমিটি মন্দির কর্তৃপক্ষ লিজ নিয়েছিল আইন অনুযায়ী। মাছের চাষ হতো, মন্দিরের খরচ মিটত। গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় অবৈধভাবে এর বন্দোবস্তি চলে যায় অন্যের হাতে। সচেতন জনগণের আন্দোলনের ফলে বন্দোবস্তি বাতিল হয়। এখন পৌরসভার মেয়র রফিকুল আলম রাষ্ট্রের পরিবেশ আইন অমান্য করে ভরাট করে নিয়েছেন। ওখানে বহুতল ভবন হবে, ব্যবসাকেন্দ্র হবে। পুকুর-জলাশয় ভরাট করে নগরায়ণ, ব্যবসায়ীদের পেট ভরানো। ধন্য এ দেশ, বিচিত্র এ দেশ। চেঙ্গি স্কয়ার থেকে বাসস্ট্যান্ডের দিকে যেতে বাঁ পাশে একটি পুকুরের মাঝখানে ঘর বানাচ্ছে। এ অন্যায় বন্ধ করা হোক। চেঙ্গি স্কয়ার এ শহরের সুন্দর মোড়। এর সুন্দর ভাস্কর্যটি যত্নের অভাবে হতশ্রী। পাহাড়ের ওপর দশবল বৌদ্ধবিহার, প্রয়াত জনপ্রিয় নেতা মানবেন্দ্র লারমার ভাস্কর্য, পানছড়ির দিকে যাওয়া সড়কটি সুন্দর। শুধু দরকার রাস্তার দুই ধারে নির্বাচিত ফুল-ফলের একক বৃক্ষবীথি। শুধু দরকার প্রকৃতি বিশারদের পরামর্শ। শিমুল, মহুয়া, কৃষ্ণচূড়া, স্বর্ণচূড়া, সোনালু, ছাতিম, তাল, গামারি, চাঁপার একান্ত বীথি। তেঁতুল, গাব, ফুলচুষি, পদাউকের একান্ত বীথির পরিকল্পিত রূপ নিষ্ঠুর হন্তারকের মনও বদলে দিতে বা ভাবের আবেশ তুলতে সক্ষম। পলাশের পাশে পারিজাত বা মাদারের বীথি কখনো যদি খাগড়াছড়ির রাস্তার দুই পাশে দেখা যেত! শুধু পরিকল্পনার অভাবে, সুস্থ চিন্তার অভাবে ভূদৃশ্য অসুন্দর হয়ে আছে। কে এগিয়ে আসবে ভূস্বর্গ খাগড়াছড়ি গড়ে তুলতে। শহরে ইট-সিমেন্টের দালানকোঠার ভিড় বলেই তো তার মধ্যে পরিকল্পিত পুষ্পবৃক্ষ ও ছায়াবৃক্ষ এত প্রয়োজন। আলুটিলাকে এখনো সম্ভব স্বপ্নসুন্দর করে তোলা। শুধু গাছ দিয়ে, বীথি রচনা করে এ কাজ সম্ভব। আহা, এ যাত্রায় পানখাইয়াপাড়ার মোড়ের বটগাছ মহাশয়কে শুভেচ্ছা জানিয়ে আসা হয়ে উঠল না!!
বাংলাদেশের আনাচকানাচের প্রকৃতি ও মানুষ দেখা শুরু করি ১৯৯৫ সালের দিকে। পার্বত্য চট্টগ্রামের কিছু গভীর প্রত্যন্ত অঞ্চল দেখার সুযোগ হয়েছে। বহু ভোগান্তির পর এত দিনে ভূস্বর্গের ছাদ সাজেক দেখার পরদিন পাখির চোখে খাগড়াছড়ি দেখে নিই। পাহাড় কাটা, জলা ও পুকুর ভরাট, খাগড়াছড়ি ও চেঙ্গি নদী দখল এবং দুর্গতি দেখতে হলো সেই সুবাদে। স্থানীয় অনেকে অনুরোধ করেছেন দু-এক কথা লিখতে। এখানকার কোনো স্কুল-কলেজে খেলার মাঠ নেই? এ কথা বিশ্বাস করব?
খাগড়াছড়ি কোর্টের প্রবেশপথের বিখ্যাত বটগাছটি আমার বয়সী। ওর গায়ে বিশাল এক সাইনবোর্ড খাড়া। ছোট ছোট আরো কিছু টিনের ফলক, পেরেকে পেরেকে জর্জরিত। কোর্টের অভিভাবকরা দেখুন চোখ মেলে। ওর শেকড়গুলো বাধ্য হয়ে টিলার ওপর থেকে নিচের দিকে শৈল্পিক দক্ষতায় নেমে পড়েছে। নিচে বাঁধানো সড়ক, শেকড়ের জন্য একটুও মাটি রাখেননি সড়ক নির্মাতা ও প্রকৌশলীরা। জেলা শাসক, রাজনীতিক, আদালতচালক_কারো চোখে পড়ে না? বটগাছের বিশাল শরীর খাড়া রাখতে ও খাদ্য জোগাতে শেকড় ও ঝুরি হলো প্রাণ। রাস্তার পাশে অন্তত এক ফুট মাটি রাখতে মানা? কী করে হে মানুষ, তার সৌন্দর্য ও উপকার নিতে চান? গাছের চারদিকে ইট-সিমেন্টে বেঁধে দেওয়ার সময় শেকড় যাতে কাটা না পড়ে সেদিকে কঠোর সতর্কতা দরকার। শ্রমিকদের ওপর এ দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া যায় না। অভিজ্ঞ প্রকৌশলী বা বৃক্ষবিদের দৃষ্টি দরকার। আলুটিলার বিখ্যাত বট-পাকুড়-আশ্বত্থেরও একই করুণ দশা। বট-অশ্বত্থ আমাদের জন্য প্রচুর প্রচুর অঙ্েিজন জোগান দেয়। প্রচুর ফল পাখিদের অন্তত তিন মাস খাদ্য জোগায়। পঞ্চাশ বছুরে একটি গাছ, তার আনুমানিক ওজন পঞ্চাশ টন ধরুন। এখন সে যে পরিমাণ অঙ্েিজন তৈরি করে, এর মূল্য সাত লাখ ৫০ হাজার টাকা, জীবজন্তুর জন্য আমিষ সরবরাহের মূল্য ৬০ হাজার টাকা, মাটির ক্ষয়রোধ ও উর্বরতা বাড়াবে সাত লাখ ৫০ হাজার টাকার, জলের আবর্তনচক্রের আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ মূল্য ৯ লাখ টাকা, আবহাওয়া দূষণ নিয়ন্ত্রণ মূল্য ১৫ লাখ টাকা, পাখি ও পোকামাকড় ইত্যাদির আশ্রয় মূল্য সাত লাখ ৫০ হাজার টাকা। যোগ করে নিন মোট পরিমাণ! সারা খাগড়াছড়িতে, অরণ্যের নিকটতম প্রতিবেশী শহরে শতাব্দীর বৃক্ষ কেন নেই? না থাকার জন্য পূর্বাপর জেলা শাসক, মেয়র, আঞ্চলিক পরিষদ, পরিবেশ অধিদপ্তর, নগরবাসী সবার জন্য অপমানকর। খুব খুব। তরুণ সাংবাদিক বন্ধুদের বলি, ভয় পেয়ো না। 'সত্য যে কঠিন,/কঠিনেরে ভালোবাসিলাম,/সে কখনো করে না বঞ্চনা।'_রবীন্দ্রনাথের কথা। তুড়ি মেরে নজরুল বলেছেন, 'দে গরুর গা ধুইয়ে।' বন্ধুরা লিখে যাও।
বনশ্রী হল বন বিভাগের বিশ্রামাগার, বাংলো। ওখানে যাওয়ার খাড়া পথের দুই ধারে কিছু গাছ আছে, ওরা কি আমার বয়সী? হন্তারকরা বলে, বঙ্গবন্ধু ও চার নেতাকে যদি খুন করা যায়, তাহলে বৃক্ষ কোন ছার! এ জন্যই অন্যায় ও অপরাধের শাস্তি হওয়া দরকার। নয়তো আইনের শাসন থাকে না, খুনিরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। যুদ্ধাপরাধীদেরও তাই সারা বিশ্বে বিচার হয়, কেউ টুঁ শব্দ করে না। আমাদের দেশে খুনিদের সমর্থনকারীরা করে। এ জন্য সমর্থকদেরও বিচার হওয়া উচিত। নয়তো দেশ চলে না। খাগড়াছড়ির পরিবেশও বাঁচবে না। দেশের নদী, পুকুর, ঝিল, এমনকি অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে বঙ্গোপসাগরও বাঁচবে না। এ জন্য শিশু, নারী, প্রেমিকা, পাখি, জীবজন্তু, সারা দেশের আদিবাসী কেউ রেহাই পায় না। বনের হরিণ, টুট্যাং (তক্ষক), বাঘ, ভালুক, হাতি কেউ নিরাপদ নয়। অন্যায়ের বিরুদ্ধে না দাঁড়ালে কারো রেহাই নেই।
খাগড়াছড়ির সবুজবাগ বসতি সৃষ্টি হচ্ছে পাহাড় কেটে। প্রশাসন ও শাসক অন্ধ, বধির। এমনকি পক্ষপাতদুষ্টও। ক্ষেতের বেড়া যদি ধান খায়, চাষির কী উপায় থাকে? মোহাম্মদপুরের বসতি সৃষ্টিও পাহাড় ধ্বংস করে। এত পাহাড় আছে, দু-একটা ধ্বংস করলেই বা কি? আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী সরকারি কর্মকর্তারাও এ ধারণার শিকার। মূর্খ ওরা, জেনে রাখুন। এ জন্য সবুজবাগের, মোহাম্মদপুরের পাহাড় কাটায় কেউ বাধা দেয়নি? অথচ এ বিষয়ে স্পষ্ট আইন আছে। এ আইন লঙ্ঘন করছে স্থানীয় প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতা, টাউট-বাটপার। আর প্রশাসন মদদ দিচ্ছে, সায় দিচ্ছে, উসকানিও দিচ্ছে।
জগন্নাথ মন্দির খাগড়াছড়ির সুপ্রাচীন ধর্মস্থান। ১৯৭১ সালে মন্দিরের পেছনের পুকুর বা জলাভূমিটি মন্দির কর্তৃপক্ষ লিজ নিয়েছিল আইন অনুযায়ী। মাছের চাষ হতো, মন্দিরের খরচ মিটত। গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় অবৈধভাবে এর বন্দোবস্তি চলে যায় অন্যের হাতে। সচেতন জনগণের আন্দোলনের ফলে বন্দোবস্তি বাতিল হয়। এখন পৌরসভার মেয়র রফিকুল আলম রাষ্ট্রের পরিবেশ আইন অমান্য করে ভরাট করে নিয়েছেন। ওখানে বহুতল ভবন হবে, ব্যবসাকেন্দ্র হবে। পুকুর-জলাশয় ভরাট করে নগরায়ণ, ব্যবসায়ীদের পেট ভরানো। ধন্য এ দেশ, বিচিত্র এ দেশ। চেঙ্গি স্কয়ার থেকে বাসস্ট্যান্ডের দিকে যেতে বাঁ পাশে একটি পুকুরের মাঝখানে ঘর বানাচ্ছে। এ অন্যায় বন্ধ করা হোক। চেঙ্গি স্কয়ার এ শহরের সুন্দর মোড়। এর সুন্দর ভাস্কর্যটি যত্নের অভাবে হতশ্রী। পাহাড়ের ওপর দশবল বৌদ্ধবিহার, প্রয়াত জনপ্রিয় নেতা মানবেন্দ্র লারমার ভাস্কর্য, পানছড়ির দিকে যাওয়া সড়কটি সুন্দর। শুধু দরকার রাস্তার দুই ধারে নির্বাচিত ফুল-ফলের একক বৃক্ষবীথি। শুধু দরকার প্রকৃতি বিশারদের পরামর্শ। শিমুল, মহুয়া, কৃষ্ণচূড়া, স্বর্ণচূড়া, সোনালু, ছাতিম, তাল, গামারি, চাঁপার একান্ত বীথি। তেঁতুল, গাব, ফুলচুষি, পদাউকের একান্ত বীথির পরিকল্পিত রূপ নিষ্ঠুর হন্তারকের মনও বদলে দিতে বা ভাবের আবেশ তুলতে সক্ষম। পলাশের পাশে পারিজাত বা মাদারের বীথি কখনো যদি খাগড়াছড়ির রাস্তার দুই পাশে দেখা যেত! শুধু পরিকল্পনার অভাবে, সুস্থ চিন্তার অভাবে ভূদৃশ্য অসুন্দর হয়ে আছে। কে এগিয়ে আসবে ভূস্বর্গ খাগড়াছড়ি গড়ে তুলতে। শহরে ইট-সিমেন্টের দালানকোঠার ভিড় বলেই তো তার মধ্যে পরিকল্পিত পুষ্পবৃক্ষ ও ছায়াবৃক্ষ এত প্রয়োজন। আলুটিলাকে এখনো সম্ভব স্বপ্নসুন্দর করে তোলা। শুধু গাছ দিয়ে, বীথি রচনা করে এ কাজ সম্ভব। আহা, এ যাত্রায় পানখাইয়াপাড়ার মোড়ের বটগাছ মহাশয়কে শুভেচ্ছা জানিয়ে আসা হয়ে উঠল না!!
No comments