সরকারি উদাসীনতায় চ্যালেঞ্জের মুখে সেবা by বদরুদ্দোজা সুমন
এইচআইভি পজেটিভ ও এইডস রোগীরা চিকিৎসাসেবা প্রাপ্তি ও সামাজিক অন্যান্য সুবিধা পেতে বঞ্চনার শিকার হচ্ছে। ওষুধ সরবরাহে সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে আক্রান্তদের নিরবচ্ছিন্ন চিকিৎসা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কর্মরত বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) অভিযোগ, সরকারি উদ্যোগে ঘাটতি ও উদাসীনতার কারণে এইডস সেবা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। এমতাবস্থায় আজ বৃহস্পতিবার দেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব এইডস দিবস। এবারের প্রতিপাদ্যথ_ 'এইচআইভি
সংক্রমণ ও এইডস মৃত্যু নয় : নয় একটিও আর। বৈষম্যহীন পৃথিবী গড়ব সবাই, এই আমাদের অঙ্গীকার।' জানা গেছে, আগামী ৩০ জানুয়ারি সেবাদানকারী এনজিও আশার আলো সোসাইটি, মুক্ত আকাশ বাংলাদেশ এবং কনফিডেনশিয়াল অ্যাপ্রোচ টু এইডস প্রিভেনশনের (ক্যাপ) সঙ্গে সরকার পক্ষের চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। দেশে এইডস কার্যক্রম চলছে প্রধানত দাতা সংস্থা গ্গ্নোবাল ফান্ডের অর্থায়নে। আগামী এপ্রিল মাসে এই সহায়তার মেয়াদ শেষ হবে। এনজিও প্রতিনিধিরা বলছেন, ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন থেকেই প্রায় ৬০০ এইডস রোগী কীভাবে ও কাদের মাধ্যমে অ্যান্টি রেট্রোভাইরাল
(এআরভি) ওষুধ পাবে সেটি অনিশ্চিত। কারা কার্যক্রম এগিয়ে নেবে সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলছে না সরকার।
সরকারের জাতীয় এইডস/এসটিডি কর্মসূচির (এনএএসপি) লাইন ডিরেক্টর আবদুল ওয়াহেদ সমকালকে বলেন, কার্যক্রম কীভাবে এগোবে, সে ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। তবে গ্গ্নোবাল ফান্ডের সঙ্গে চুক্তি নবায়নের প্রক্রিয়া চলছে। তিনি বলেন, অর্থায়ন সরকার বা বৈদেশিক সহায়তা যেখান থেকেই হোক, দক্ষতা সম্পন্ন এনজিওগুলোকে নিয়েই কাজ চলবে।
এনএএসপির ২০১০ সালের তথ্য মতে, দেশে এ পর্যন্ত এইচআইভি পজেটিভ ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছেন দুই হাজার ৮৮ জন। এর মধ্যে এইডস রোগী ৮৫০ জন। ইতিমধ্যে মারা গেছেন ২৪১ জন। সরকারি কর্মকর্তাদের অনুমান, সারাদেশে প্রায় সাড়ে সাত হাজার এইচআইভি আক্রান্ত মানুষ রয়েছে। রোগীদের গোপনীয়তা রক্ষার মানসিকতার কারণে সবাইকে শনাক্ত করা যাচ্ছে না। এনএএসপি ও এনজিও সূত্র বলছে, বর্তমানে প্রায় ৬০০ রোগী এআরভি ওষুধ পাচ্ছে। জুনের পর সরকারের ওষুধের মজুদ শেষ হলে কী হবে_ সেটি নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে। জানা গেছে, উপরোক্ত তিনটি এনজিও সর্বোচ্চ ৬০০ রোগীকে সেবাদানে সক্ষম। প্রতি মাসে ১৫ থেকে ২০ জন নতুন রোগী বাড়ছে।
আশার আলো সোসাইটির নির্বাহী প্রধান হাবিবা আকতার সমকালকে বলেন, রোগীদের দেখাশোনা, ওষুধ ঠিকমতো পেঁৗছানো, রোগীর নিয়মিত ফলোআপ করার দায়িত্ব এককভাবে পালন করা এনজিওগুলোর জন্য কষ্টকর। রোগী বাড়ছে। সরকার আরও দায়িত্ব না নিলে চিকিৎসায় সংকট কাটবে না।
সূত্র জানায়, এইডস রোগীদের রক্তের সিডি-৪ সেল পরিমাপের যন্ত্র ঢাকার বাইরে অন্য কোথাও নেই। সংকট কাটাতে সরকার আটটি মেডিকেলের জন্য আটটি মেশিন ক্রয় করেছিল এক বছরেরও বেশি সময় আগে। ওই মেশিন এখনও অব্যবহৃত পড়ে আছে। জানা গেছে, ঢাকা মেডিকেল, বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট মেডিকেল, চট্টগ্রাম মেডিকেল, রাজশাহী মেডিকেল, বরিশাল মেডিকেল, খুলনা মেডিকেল এবং স্বাস্থ্য গবেষণা ইনস্টিটিউটে মেশিনগুলো রয়েছে। তবে রি-এজেন্ট সংকট ও দক্ষ জনবল দিতে না পারায় সেগুলো বন্ধ। এনএএসপির কর্মকর্তারা বলেন, আগামী জানুয়ারি মাস নাগাদ যন্ত্রগুলো চালু হবে। এর আগেই অপারেটরদের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন ও রি-এজেন্ট সংগ্রহ করা হবে।
এইডস রোগীদের চিকিৎসায় কী ওষুধ লাগবে_ সেটির একটি তালিকা এনজিওগুলো সরকারের কাছে জমা দিয়েছে। সর্বশেষ তথ্য বলছে, প্রস্তাবনাটি কেন্দ্রীয় ঔষধাগারে (সিএমএসডি) পাঠিয়ে ওষুধ দ্রুত কেনার তাগিদ দিয়েছে এনএএসপি।
বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের সাবেক উপাচার্য ও এইডস বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, এইডস হলে মরতে হবে_ এটি রোগীরা জানে। ওষুধের ঘাটতি ও সেবাকাজে শৈথিল্য মৃত্যুকে এগিয়ে নিয়ে আসবে। তাই এ ক্ষেত্রে কোনো অজুহাত চলবে না।
এইডস সেবা প্রদানে সক্ষম কোনো পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্র সরকারি খাতে তৈরি হয়নি। জাতীয় সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে ওয়ার্ড থাকলেও নামমাত্র সেবা চলে। জরুরি প্রয়োজনে এনজিও থেকে রোগী পাঠানোর পর তাদের জন্য কাঁথা-বালিশ পর্যন্ত সরবরাহ করতে হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হয় বাইরে থেকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক এনজিও কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে আসলে ভর্তি করে ফেলে রাখা ছাড়া রোগের কোনো চিকিৎসা হয় না।
এনএএসপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রেষণে পাঠানো হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দায়িত্ব দেওয়া হয় চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার এক বছর আগে। এতে করে কর্মসূচি বাস্তবায়নে বিঘ্ন হয়। বর্তমান লাইন ডিরেক্টর ও প্রোগ্রাম ম্যানেজারের চাকরি ডিসেম্বরে শেষ হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কাজ বুঝতেই প্রশাসন থেকে আসা কর্মকর্তাদের সময় ফুরিয়ে যায়। কয়েক বছর কাজ করতে পারবেন_ এমন কর্মকর্তাদেরই পাঠানো উচিত।
দিবস পালনে কর্মসূচি
সরকারের জাতীয় এইডস/এসটিডি কর্মসূচি (এনএএসপি) এবং বিভিন্ন এনজিও ও সামাজিক সংগঠন দিবস পালনে বিস্তারিত কর্মসূচি পালন করছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকাল ৯টায় জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে ওসমানী মিলনায়তন পর্যন্ত র্যালি, সকাল সাড়ে ১০টায় সেমিনার এবং সভা শেষে এইচআইভি পজেটিভ রোগীদের উপস্থাপনায় সাংস্কৃতিক পর্ব ইত্যাদি। সেমিনারে প্রধান অতিথি থাকবেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক। এইডস নিয়ে কর্মরত এনজিওগুলোর সংগঠন পিএলএইচআইভি সকাল ১০টায় ওসমানী মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করেছে।
(এআরভি) ওষুধ পাবে সেটি অনিশ্চিত। কারা কার্যক্রম এগিয়ে নেবে সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলছে না সরকার।
সরকারের জাতীয় এইডস/এসটিডি কর্মসূচির (এনএএসপি) লাইন ডিরেক্টর আবদুল ওয়াহেদ সমকালকে বলেন, কার্যক্রম কীভাবে এগোবে, সে ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। তবে গ্গ্নোবাল ফান্ডের সঙ্গে চুক্তি নবায়নের প্রক্রিয়া চলছে। তিনি বলেন, অর্থায়ন সরকার বা বৈদেশিক সহায়তা যেখান থেকেই হোক, দক্ষতা সম্পন্ন এনজিওগুলোকে নিয়েই কাজ চলবে।
এনএএসপির ২০১০ সালের তথ্য মতে, দেশে এ পর্যন্ত এইচআইভি পজেটিভ ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছেন দুই হাজার ৮৮ জন। এর মধ্যে এইডস রোগী ৮৫০ জন। ইতিমধ্যে মারা গেছেন ২৪১ জন। সরকারি কর্মকর্তাদের অনুমান, সারাদেশে প্রায় সাড়ে সাত হাজার এইচআইভি আক্রান্ত মানুষ রয়েছে। রোগীদের গোপনীয়তা রক্ষার মানসিকতার কারণে সবাইকে শনাক্ত করা যাচ্ছে না। এনএএসপি ও এনজিও সূত্র বলছে, বর্তমানে প্রায় ৬০০ রোগী এআরভি ওষুধ পাচ্ছে। জুনের পর সরকারের ওষুধের মজুদ শেষ হলে কী হবে_ সেটি নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে। জানা গেছে, উপরোক্ত তিনটি এনজিও সর্বোচ্চ ৬০০ রোগীকে সেবাদানে সক্ষম। প্রতি মাসে ১৫ থেকে ২০ জন নতুন রোগী বাড়ছে।
আশার আলো সোসাইটির নির্বাহী প্রধান হাবিবা আকতার সমকালকে বলেন, রোগীদের দেখাশোনা, ওষুধ ঠিকমতো পেঁৗছানো, রোগীর নিয়মিত ফলোআপ করার দায়িত্ব এককভাবে পালন করা এনজিওগুলোর জন্য কষ্টকর। রোগী বাড়ছে। সরকার আরও দায়িত্ব না নিলে চিকিৎসায় সংকট কাটবে না।
সূত্র জানায়, এইডস রোগীদের রক্তের সিডি-৪ সেল পরিমাপের যন্ত্র ঢাকার বাইরে অন্য কোথাও নেই। সংকট কাটাতে সরকার আটটি মেডিকেলের জন্য আটটি মেশিন ক্রয় করেছিল এক বছরেরও বেশি সময় আগে। ওই মেশিন এখনও অব্যবহৃত পড়ে আছে। জানা গেছে, ঢাকা মেডিকেল, বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট মেডিকেল, চট্টগ্রাম মেডিকেল, রাজশাহী মেডিকেল, বরিশাল মেডিকেল, খুলনা মেডিকেল এবং স্বাস্থ্য গবেষণা ইনস্টিটিউটে মেশিনগুলো রয়েছে। তবে রি-এজেন্ট সংকট ও দক্ষ জনবল দিতে না পারায় সেগুলো বন্ধ। এনএএসপির কর্মকর্তারা বলেন, আগামী জানুয়ারি মাস নাগাদ যন্ত্রগুলো চালু হবে। এর আগেই অপারেটরদের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন ও রি-এজেন্ট সংগ্রহ করা হবে।
এইডস রোগীদের চিকিৎসায় কী ওষুধ লাগবে_ সেটির একটি তালিকা এনজিওগুলো সরকারের কাছে জমা দিয়েছে। সর্বশেষ তথ্য বলছে, প্রস্তাবনাটি কেন্দ্রীয় ঔষধাগারে (সিএমএসডি) পাঠিয়ে ওষুধ দ্রুত কেনার তাগিদ দিয়েছে এনএএসপি।
বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের সাবেক উপাচার্য ও এইডস বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, এইডস হলে মরতে হবে_ এটি রোগীরা জানে। ওষুধের ঘাটতি ও সেবাকাজে শৈথিল্য মৃত্যুকে এগিয়ে নিয়ে আসবে। তাই এ ক্ষেত্রে কোনো অজুহাত চলবে না।
এইডস সেবা প্রদানে সক্ষম কোনো পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্র সরকারি খাতে তৈরি হয়নি। জাতীয় সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে ওয়ার্ড থাকলেও নামমাত্র সেবা চলে। জরুরি প্রয়োজনে এনজিও থেকে রোগী পাঠানোর পর তাদের জন্য কাঁথা-বালিশ পর্যন্ত সরবরাহ করতে হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হয় বাইরে থেকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক এনজিও কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে আসলে ভর্তি করে ফেলে রাখা ছাড়া রোগের কোনো চিকিৎসা হয় না।
এনএএসপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রেষণে পাঠানো হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দায়িত্ব দেওয়া হয় চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার এক বছর আগে। এতে করে কর্মসূচি বাস্তবায়নে বিঘ্ন হয়। বর্তমান লাইন ডিরেক্টর ও প্রোগ্রাম ম্যানেজারের চাকরি ডিসেম্বরে শেষ হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কাজ বুঝতেই প্রশাসন থেকে আসা কর্মকর্তাদের সময় ফুরিয়ে যায়। কয়েক বছর কাজ করতে পারবেন_ এমন কর্মকর্তাদেরই পাঠানো উচিত।
দিবস পালনে কর্মসূচি
সরকারের জাতীয় এইডস/এসটিডি কর্মসূচি (এনএএসপি) এবং বিভিন্ন এনজিও ও সামাজিক সংগঠন দিবস পালনে বিস্তারিত কর্মসূচি পালন করছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকাল ৯টায় জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে ওসমানী মিলনায়তন পর্যন্ত র্যালি, সকাল সাড়ে ১০টায় সেমিনার এবং সভা শেষে এইচআইভি পজেটিভ রোগীদের উপস্থাপনায় সাংস্কৃতিক পর্ব ইত্যাদি। সেমিনারে প্রধান অতিথি থাকবেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক। এইডস নিয়ে কর্মরত এনজিওগুলোর সংগঠন পিএলএইচআইভি সকাল ১০টায় ওসমানী মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করেছে।
No comments