কোটি কোটি টাকার ফার্নেস অয়েল পাচার হয়ে যাচ্ছে by আরিফুজ্জামান তুহিন
প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমারে পাচার হয়ে যাচ্ছে ভর্তুকি দিয়ে আমদানি করা কোটি কোটি টাকার ফার্নেস অয়েল। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) আওতাধীন তিনটি কম্পানি থেকে ভুয়া ডিও লেটারে প্রতিদিন চুরি হয়ে যাচ্ছে আড়াই কোটি টাকার জ্বালানি তেল। সে হিসাবে গত এক বছরে একটি চক্র পাচার করে দিয়েছে কমপক্ষে এক হাজার ১০০ কোটি টাকার তেল। এর সঙ্গে জড়িত খোদ বিপিসি ও অধীনস্থ তিন কম্পানির কর্মকর্তারা।
যোগসাজশ রয়েছে সরকারদলীয় নেতা-কর্মীদেরও। কালের কণ্ঠের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য।
জানা গেছে, দেশে বছরে ১২ লাখ টন ফার্নেস অয়েলের চাহিদার মধ্যে কেবল বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্যই প্রয়োজন হয় সাড়ে আট লাখ টন। বাকিটা শিল্প উৎপাদনের জ্বালানি। কিন্তু শিল্প উৎপাদনের নামে বরাদ্দের উল্লেখযোগ্য অংশই ভুয়া ডিও লেটারে উত্তোলন শেষে পাচার হয়ে যাচ্ছে মিয়ানমার ও ভারতে। কেননা সরকারি ভর্তুকির কারণে বাংলাদেশে ফার্নেস অয়েলের দাম ভারত ও মিয়ানমারের তুলনায় কম। এ কারণে ওই দুটি দেশে চোরাই ফার্নেস অয়েলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। হিসাব মতে, পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা থেকে চলতি বছরে দুই লাখ টন ফার্নেস অয়েল চোরাই মার্কেটে চলে গেছে, যা আন্তর্জাতিক বাজার থেকে সরকারকে কিনতে হয়েছে এক হাজার ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে।
বর্তমানে দেশে প্রতি লিটার ফার্নেস অয়েলের দাম ৫৫ টাকা। এর বিপরীতে আমদানিতে বিপিসির খরচ হয় ৫৯ টাকা ৯৭ পয়সা। এ খাতে চলতি অর্থবছরে সরকার ভর্তুকি দেবে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে এটা আরো বেশি ছিল। সে সময় ফার্নেস অয়েলে প্রতি লিটারে ভর্তুকি ছিল প্রায় ২৬ টাকা।
সরেজমিন তদন্তকালে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, চোরাই পথে ফার্নেস অয়েল বিক্রির সঙ্গে খোদ বিপিসি ও তিন কম্পানির উঁচু পদের কর্মকর্তারা সরাসরি জড়িত। তাঁরা ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙিয়ে নিজেদের পকেট ভারী করে চলেছেন।
ফার্নেস অয়েল পাওয়ার ক্ষেত্রে বিপিসিকে কিছু নিয়মনীতি বেঁধে দেওয়া আছে। কোনো কম্পানি ফার্নেস অয়েলের জন্য আবেদন করলে বিষয়টি বরাদ্দ কমিটির অধীনে তদন্ত হবে। তদন্তে সংশ্লিষ্ট কম্পানির প্রয়োজনীয়তা নিশ্চিত হলেই কেবল অনুমোদন মিলবে। এরপর সেই বরাদ্দপত্রের বিপরীতে অর্থ জমা দিয়ে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা ডিপো থেকে তেল উত্তোলন করবে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু অনুসন্ধানে মিলেছে ভিন্নচিত্র।
পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা থেকে প্রতিদিন ৬০টির মতো ডিও লেটার দেওয়া হয়। প্রতিটি ডিও লিটারে সর্বনিম্ন আট হাজার লিটার তেলের বরাদ্দ থাকে। কিন্তু যেসব কম্পানিকে তেল বরাদ্দের অনুমোদন দেওয়া হয়, বাস্তবে সেসব কম্পানির অস্তিত্বই নেই। আর এসব জেনেই বরাদ্দ দেওয়া হয়।
যমুনা অয়েল কম্পানির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'চট্টগ্রামের প্রায় সব স্টিল মিলই চলে গ্যাস দিয়ে। তাহলে স্টিল মিলের নামে বরাদ্দ ফার্নেস অয়েল যায় কোথায়? এসব ফার্নেস অয়েলের ক্রেতা শনাক্ত করতে পারলে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে।'
জানা যায়, গত অর্থবছরে শুধু যমুনা অয়েল কম্পানি ফার্নেস অয়েল বিক্রি করেছে এক লাখ ৯২ হাজার টন। এখান থেকে গত বছরের ডিসেম্বরে মাত্র ৯ দিনে ২৩টি ভুয়া কম্পানি তেল বরাদ্দ পেয়েছে সাত লাখ ৫২ হাজার ২৮৮ লিটার। একই চিত্র পদ্মা ও মেঘনায়ও। এসব তেলের একটি বড় অংশই পাচার হয়ে গেছে।
ভুয়া বরাদ্দের সত্যতা স্বীকার করে যমুনার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মাহিদুর রহমান টেলিফোনে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'কমিটির মাধ্যমেই বরাদ্দ দেওয়ার কথা থাকলেও মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, উপদেষ্টারা আমাদের ফোন করে নির্দেশ দেন। অনেকে আবেদনপত্রের ওপর সুপারিশ করে দেন। এ ছাড়া রয়েছে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের লোকজন। স্থানীয় মাস্তানচক্র তো আছেই। এরা আমার অফিসে এসে বসে থাকে। মারধরের ভয় দেখায়। তখন আর সরেজমিন অনুসন্ধানের সুযোগ থাকে না। এভাবে অনেক ভুয়া কম্পানিকে আমরা ফার্নেস অয়েল দিতে বাধ্য হয়েছি।'
মেঘনার জিএম (মার্কেটিং) আলিমউদ্দিনও টেলিফোনে প্রায় একই কথা বলেন। তিনি বলেন, 'ভুয়া কম্পানির নামে তেল বরাদ্দের বিষয়টি বিপিসিও জানে।' সুপারিশ ছাড়াও অর্থের বিনিময়ে বরাদ্দ দেওয়া-সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'আমি ভুয়া কম্পানিকে বরাদ্দ দিয়েছি সত্য। তবে টাকা নিইনি।'
সুপারিশও ভুয়া
ফার্নেস অয়েল বরাদ্দ পেতে কম্পানির ছাপানো প্যাডে আবেদন করতে হয়। প্রায় প্রতিটি আবেদনপত্রে ক্ষমতাবানদের সুপারিশ রয়েছে। সুপারিশের তালিকায় প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা থেকে শুরু করে মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা এবং বিপিসি ও পেট্রোবাংলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রয়েছেন। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব সুপারিশের বেশির ভাগই ভুয়া।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কথিত মেসার্স আল নূর স্টিল ইন্ডাস্ট্রিজ নামের একটি ভুয়া কম্পানির আট হাজার লিটার ফার্নেস অয়েলের বরাদ্দ আবেদনপত্রে জ্বালানি উপদেষ্টা গত ৪ এপ্রিল জোর সুপারিশ করেছেন। উপদেষ্টার সিল ও স্বাক্ষর রয়েছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, জ্বালানি উপদেষ্টার স্বাক্ষরের সঙ্গে আবেদনপত্রের স্বাক্ষরের মিল নেই। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একটি স্মারক নম্বর রয়েছে। ওই নামে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে কোনো কাগজপত্রও নেই। অথচ ওই নামে তেল উত্তোলন হয়ে গেছে যথাসময়েই। এ রকম অসংখ্য জাল সুপারিশের মাধ্যমে ফার্নেস অয়েল তুলে চোরাই মার্কেটে বিক্রি করছে সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট। মূলত পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে বিপিসির পাশাপাশি পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সরাসরি সম্পৃক্ততা থাকার প্রমাণ মিলেছে।
ভুয়া বরাদ্দের সিন্ডিকেট ও দালালচক্র
ফার্নেস অয়েল বরাদ্দ কমিটির তিন সদস্য হলেন মেঘনার জিএম (মার্কেটিং) আলিমউদ্দিন, পদ্মার এজিএম আবুল বাসার ও যমুনার মাহিদুর রহমান। এসব কম্পানির নিজেদেরও পাঁচ সদস্যের একটি করে কমিটি রয়েছে। এ কমিটি সরেজমিন অনুসন্ধানের পর তেল বরাদ্দের ব্যাপারে সুপারিশ করা হয়। উলি্লখিত তিন কর্মকর্তা ছাড়া আরো বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ভুয়া ডিও লেটারে তেল বরাদ্দের অভিযোগ রয়েছে। তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন মেঘনার এজিএম (সেলস) মুসলিমউদ্দীন চৌধুরী, রিজিওনাল ম্যানেজার মুসলেহউদ্দীন মজুমদার, ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল খায়ের; পদ্মার ডিজিএম (সেলস) কফিলউদ্দিন, জিএম (ফাইন্যান্স) আশরাফুজ্জামান; যমুনার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান ও বিপিসির মার্কেটিং পরিচালক নূরুল আলম। তাঁদের বেশির ভাগ কর্মকর্তাই আবার রাজনৈতিক নেতা ও প্রভাবশালীদের সঙ্গে আত্মীয়তার যোগসূত্রের পরিচয় দিয়ে থাকেন।
এদিকে কর্মকর্তাদের কাজটি সুষ্ঠুভাবে করে টুপাইস পাইয়ে দেওয়ার কাজটি করে দালালচক্র। তাদের মধ্যে চট্টগ্রামের হালিশহর থানা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সজীব, মহানগর ছাত্রলীগের সদস্য মাসুদ, শহরের মোগলটুলির ইয়াসিন গলির স্বপন, বন্দর এলাকার আজম ও শান্তিবাগের এরশাদ অন্যতম।
দালাল ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চট্টগ্রামের এক প্রভাবশালী অয়েল ট্যাংক ব্যবসায়ী অধিকাংশ তেল কিনে নেন ডিওপ্রতি আট হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা দামে। তারপর এ তেল তাঁর ট্যাংকে করে পাচার হয়ে যায় মিয়ানমার ও ভারতে।
বিপিসির চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিকীর মতামত জানতে তাঁর ব্যক্তিগত টেলিফোন নম্বরে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
জানা গেছে, দেশে বছরে ১২ লাখ টন ফার্নেস অয়েলের চাহিদার মধ্যে কেবল বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্যই প্রয়োজন হয় সাড়ে আট লাখ টন। বাকিটা শিল্প উৎপাদনের জ্বালানি। কিন্তু শিল্প উৎপাদনের নামে বরাদ্দের উল্লেখযোগ্য অংশই ভুয়া ডিও লেটারে উত্তোলন শেষে পাচার হয়ে যাচ্ছে মিয়ানমার ও ভারতে। কেননা সরকারি ভর্তুকির কারণে বাংলাদেশে ফার্নেস অয়েলের দাম ভারত ও মিয়ানমারের তুলনায় কম। এ কারণে ওই দুটি দেশে চোরাই ফার্নেস অয়েলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। হিসাব মতে, পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা থেকে চলতি বছরে দুই লাখ টন ফার্নেস অয়েল চোরাই মার্কেটে চলে গেছে, যা আন্তর্জাতিক বাজার থেকে সরকারকে কিনতে হয়েছে এক হাজার ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে।
বর্তমানে দেশে প্রতি লিটার ফার্নেস অয়েলের দাম ৫৫ টাকা। এর বিপরীতে আমদানিতে বিপিসির খরচ হয় ৫৯ টাকা ৯৭ পয়সা। এ খাতে চলতি অর্থবছরে সরকার ভর্তুকি দেবে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে এটা আরো বেশি ছিল। সে সময় ফার্নেস অয়েলে প্রতি লিটারে ভর্তুকি ছিল প্রায় ২৬ টাকা।
সরেজমিন তদন্তকালে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, চোরাই পথে ফার্নেস অয়েল বিক্রির সঙ্গে খোদ বিপিসি ও তিন কম্পানির উঁচু পদের কর্মকর্তারা সরাসরি জড়িত। তাঁরা ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙিয়ে নিজেদের পকেট ভারী করে চলেছেন।
ফার্নেস অয়েল পাওয়ার ক্ষেত্রে বিপিসিকে কিছু নিয়মনীতি বেঁধে দেওয়া আছে। কোনো কম্পানি ফার্নেস অয়েলের জন্য আবেদন করলে বিষয়টি বরাদ্দ কমিটির অধীনে তদন্ত হবে। তদন্তে সংশ্লিষ্ট কম্পানির প্রয়োজনীয়তা নিশ্চিত হলেই কেবল অনুমোদন মিলবে। এরপর সেই বরাদ্দপত্রের বিপরীতে অর্থ জমা দিয়ে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা ডিপো থেকে তেল উত্তোলন করবে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু অনুসন্ধানে মিলেছে ভিন্নচিত্র।
পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা থেকে প্রতিদিন ৬০টির মতো ডিও লেটার দেওয়া হয়। প্রতিটি ডিও লিটারে সর্বনিম্ন আট হাজার লিটার তেলের বরাদ্দ থাকে। কিন্তু যেসব কম্পানিকে তেল বরাদ্দের অনুমোদন দেওয়া হয়, বাস্তবে সেসব কম্পানির অস্তিত্বই নেই। আর এসব জেনেই বরাদ্দ দেওয়া হয়।
যমুনা অয়েল কম্পানির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'চট্টগ্রামের প্রায় সব স্টিল মিলই চলে গ্যাস দিয়ে। তাহলে স্টিল মিলের নামে বরাদ্দ ফার্নেস অয়েল যায় কোথায়? এসব ফার্নেস অয়েলের ক্রেতা শনাক্ত করতে পারলে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে।'
জানা যায়, গত অর্থবছরে শুধু যমুনা অয়েল কম্পানি ফার্নেস অয়েল বিক্রি করেছে এক লাখ ৯২ হাজার টন। এখান থেকে গত বছরের ডিসেম্বরে মাত্র ৯ দিনে ২৩টি ভুয়া কম্পানি তেল বরাদ্দ পেয়েছে সাত লাখ ৫২ হাজার ২৮৮ লিটার। একই চিত্র পদ্মা ও মেঘনায়ও। এসব তেলের একটি বড় অংশই পাচার হয়ে গেছে।
ভুয়া বরাদ্দের সত্যতা স্বীকার করে যমুনার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মাহিদুর রহমান টেলিফোনে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'কমিটির মাধ্যমেই বরাদ্দ দেওয়ার কথা থাকলেও মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, উপদেষ্টারা আমাদের ফোন করে নির্দেশ দেন। অনেকে আবেদনপত্রের ওপর সুপারিশ করে দেন। এ ছাড়া রয়েছে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের লোকজন। স্থানীয় মাস্তানচক্র তো আছেই। এরা আমার অফিসে এসে বসে থাকে। মারধরের ভয় দেখায়। তখন আর সরেজমিন অনুসন্ধানের সুযোগ থাকে না। এভাবে অনেক ভুয়া কম্পানিকে আমরা ফার্নেস অয়েল দিতে বাধ্য হয়েছি।'
মেঘনার জিএম (মার্কেটিং) আলিমউদ্দিনও টেলিফোনে প্রায় একই কথা বলেন। তিনি বলেন, 'ভুয়া কম্পানির নামে তেল বরাদ্দের বিষয়টি বিপিসিও জানে।' সুপারিশ ছাড়াও অর্থের বিনিময়ে বরাদ্দ দেওয়া-সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'আমি ভুয়া কম্পানিকে বরাদ্দ দিয়েছি সত্য। তবে টাকা নিইনি।'
সুপারিশও ভুয়া
ফার্নেস অয়েল বরাদ্দ পেতে কম্পানির ছাপানো প্যাডে আবেদন করতে হয়। প্রায় প্রতিটি আবেদনপত্রে ক্ষমতাবানদের সুপারিশ রয়েছে। সুপারিশের তালিকায় প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা থেকে শুরু করে মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা এবং বিপিসি ও পেট্রোবাংলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রয়েছেন। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব সুপারিশের বেশির ভাগই ভুয়া।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কথিত মেসার্স আল নূর স্টিল ইন্ডাস্ট্রিজ নামের একটি ভুয়া কম্পানির আট হাজার লিটার ফার্নেস অয়েলের বরাদ্দ আবেদনপত্রে জ্বালানি উপদেষ্টা গত ৪ এপ্রিল জোর সুপারিশ করেছেন। উপদেষ্টার সিল ও স্বাক্ষর রয়েছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, জ্বালানি উপদেষ্টার স্বাক্ষরের সঙ্গে আবেদনপত্রের স্বাক্ষরের মিল নেই। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একটি স্মারক নম্বর রয়েছে। ওই নামে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে কোনো কাগজপত্রও নেই। অথচ ওই নামে তেল উত্তোলন হয়ে গেছে যথাসময়েই। এ রকম অসংখ্য জাল সুপারিশের মাধ্যমে ফার্নেস অয়েল তুলে চোরাই মার্কেটে বিক্রি করছে সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট। মূলত পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে বিপিসির পাশাপাশি পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সরাসরি সম্পৃক্ততা থাকার প্রমাণ মিলেছে।
ভুয়া বরাদ্দের সিন্ডিকেট ও দালালচক্র
ফার্নেস অয়েল বরাদ্দ কমিটির তিন সদস্য হলেন মেঘনার জিএম (মার্কেটিং) আলিমউদ্দিন, পদ্মার এজিএম আবুল বাসার ও যমুনার মাহিদুর রহমান। এসব কম্পানির নিজেদেরও পাঁচ সদস্যের একটি করে কমিটি রয়েছে। এ কমিটি সরেজমিন অনুসন্ধানের পর তেল বরাদ্দের ব্যাপারে সুপারিশ করা হয়। উলি্লখিত তিন কর্মকর্তা ছাড়া আরো বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ভুয়া ডিও লেটারে তেল বরাদ্দের অভিযোগ রয়েছে। তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন মেঘনার এজিএম (সেলস) মুসলিমউদ্দীন চৌধুরী, রিজিওনাল ম্যানেজার মুসলেহউদ্দীন মজুমদার, ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল খায়ের; পদ্মার ডিজিএম (সেলস) কফিলউদ্দিন, জিএম (ফাইন্যান্স) আশরাফুজ্জামান; যমুনার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান ও বিপিসির মার্কেটিং পরিচালক নূরুল আলম। তাঁদের বেশির ভাগ কর্মকর্তাই আবার রাজনৈতিক নেতা ও প্রভাবশালীদের সঙ্গে আত্মীয়তার যোগসূত্রের পরিচয় দিয়ে থাকেন।
এদিকে কর্মকর্তাদের কাজটি সুষ্ঠুভাবে করে টুপাইস পাইয়ে দেওয়ার কাজটি করে দালালচক্র। তাদের মধ্যে চট্টগ্রামের হালিশহর থানা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সজীব, মহানগর ছাত্রলীগের সদস্য মাসুদ, শহরের মোগলটুলির ইয়াসিন গলির স্বপন, বন্দর এলাকার আজম ও শান্তিবাগের এরশাদ অন্যতম।
দালাল ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চট্টগ্রামের এক প্রভাবশালী অয়েল ট্যাংক ব্যবসায়ী অধিকাংশ তেল কিনে নেন ডিওপ্রতি আট হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা দামে। তারপর এ তেল তাঁর ট্যাংকে করে পাচার হয়ে যায় মিয়ানমার ও ভারতে।
বিপিসির চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিকীর মতামত জানতে তাঁর ব্যক্তিগত টেলিফোন নম্বরে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
No comments