হামলার জের-ইরানে ব্রিটিশ দূতাবাস বন্ধ-লন্ডনে ইরানি দূতাবাস বন্ধ এবং ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কূটনীতিকদের ব্রিটেন ত্যাগের নির্দেশ

রানের সঙ্গে ব্রিটেনের কূটনৈতিক দ্বন্দ্ব চরমে উঠৈছে। তেহরানের ব্রিটিশ দূতাবাস বন্ধ করে দিয়ে সব কূটনীতিকদের সরিয়ে নিয়েছে লন্ডন। তেহরানে গত মঙ্গলবার ব্রিটিশ দূতাবাসে হামলার পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এছাড়া শুক্রবারের মধ্যে লন্ডনে অবস্থিত ইরানি দূতাবাস খালি করার নির্দেশ দিয়েছে ব্রিটিশ সরকার। গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রী উইলিয়াম হেগ এ নির্দেশের কথা জানান। তিনি বলেন, ইরানি কূটনীতিকদেরও লন্ডন থেকে বহিষ্কার করা হবে।


এদিকে নিরাপত্তার কথা উল্লেখ করে নরওয়ে গতকাল বুধবার তেহরানে তাদের দূতাবাস বন্ধ ঘোষণা করেছে।
হেগ গতকাল পার্লামেন্টে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন, লন্ডনের অবস্থানকারী ইরানি কূটনীতিকদের বহিস্কার করা হবে। তিনি জানান, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাদের ব্রিটেন ছাড়তে হবে। ইরানি দূতাবাসকেও দ্রুত বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি।
তেহরানে যুক্তরাজ্যের দূতাবাস এবং একটি কূটনৈতিক দপ্তরে গত মঙ্গলবার একদল বিক্ষোভকারী হামলা চালায়। হামলার পর ব্রিটিশ কূটনীতিকরা তেহরানে অবস্থিত ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে রাত কাটান। কয়েকজন ওই কূটনৈতিক দপ্তরের ভেতরেও আটকা পড়েন। পরে পুলিশ তাঁদের উদ্ধার করে।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদসহ বিভিন্ন দেশ এ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। ইরান হামলার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে একে 'স্বল্পসংখ্যক বিক্ষোভকারীর অগ্রহণযোগ্য ব্যবহার' হিসেবে বর্ণনা করেছে।
ব্রিটেন গত সপ্তাহে ইরানের বিরুদ্ধে নতুন করে অবরোধ আরোপ করার প্রতিবাদে মঙ্গলবার ওই বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়। ব্রিটিশ কূটনীতিকদের প্রথম দলটি গতকালই দুবাইয়ের উদ্দেশে যাত্রা করেন।
ইরান জানায়, মূলত 'ছাত্ররা' এ বিক্ষোভের আয়োজন করে। তারা শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত ব্রিটিশ দূতাবাসের প্রাচীর ও দরজা টপকে ব্রিটিশ পতাকা নামিয়ে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। দপ্তরের ভেতরে ভাঙচুর ও লুটপাটও চালানো হয়। কয়েক ঘণ্টা ধরে চলা এ তাণ্ডবের সময় বিক্ষোভকারীরা 'ব্রিটেন নিপাত যাক' বলে স্লোগান দেয়।
দূতাবাস ছাড়াও তেহরানের উত্তরাঞ্চলে ব্রিটেনের আরেক কূটনৈতিক প্রাঙ্গণে হামলা হয়। কয়েক শ বিক্ষোভকারী কয়েক ঘণ্টা ধরে ওই প্রাঙ্গণ ঘিরে রাখে। ওই সময় প্রাঙ্গণের এক ভবনের ভেতরে ছয় ব্রিটিশ কূটনীতিক আটকে পড়েন। পুলিশ কয়েক ঘণ্টার চেষ্টার পর তাঁদের বের করে আনে।
হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ। মহাসচিব বান কি মুন গতকাল দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন, 'তেহরানে ব্রিটিশ দূতাবাসে বিক্ষোভকারীদের ঢুকে পড়া, হামলা, দূতাবাসের কর্মচারীদের অপহরণ এবং সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির ঘটনায় আমি বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ।' ইরানের অন্যতম ঘনিষ্ঠ মিত্র রাশিয়াও এ হামলাকে 'অগ্রহণযোগ্য' বলে নিন্দা জানিয়েছে।
তবে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের নিন্দার ব্যাপারে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে ইরান। পার্লামেন্টের স্পিকার আলী লারিজানির বরাত দিয়ে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানায়, 'বড় তাড়াহুড়া' করে প্রতিক্রিয়া দিয়েছে নিরাপত্তা পরিষদ। তিনি বলেন, এক দল ছাত্র 'ব্রিটিশ সরকারের আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে' এ হামলা চালায়। ছাত্ররা আবেগপ্রবণ হয়ে এ কাজ করে ফেলেছে বলে দাবি করেন তিনি।
এদিকে হামলার কারণে তেহরানের নরওয়ে দূতাবাস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে দূতাবাসের কর্মীদের সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। দূতাবাসের মুখপাত্র জানান, তাঁরা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছেন।
প্রসঙ্গত, আজ বৃহস্পতিবার থেকে ব্রাসেলসে ইইউয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ব্রিটিশ দূতাবাসে হামলার পর এ বৈঠক থেকে ইরানের বিরুদ্ধে আরেক দফা অবরোধ দেওয়া হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সূত্র : বিবিসি, এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.