একসঙ্গে জ্বলে উঠল ৪০ হাজার প্রদীপ by এসএম মুন্না
রাত ১২টা ১ মিনিট। বিজয়ের ৪০ বছর পূর্তির ঐতিহাসিক ক্ষণ। এ সময় একসঙ্গে জ্বলে উঠল ৪০ হাজার প্রদীপ। নতুন আলোয় যেন নতুন করে চোখ মেললো শিল্পকলা একাডেমী। এর চারপাশে বিজয়ের আনন্দ। অনন্যসুন্দর এ আনন্দযজ্ঞে হাজারো মানুষ যোগ দিলে প্রকৃত অর্থেই অসাধারণ হয়ে ওঠে মধ্যরাত।৪০ শিশুর সমবেত কণ্ঠে 'আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে' পরিবেশনের মধ্য দিয়ে ব্যতিক্রমী এ আয়োজনের উদ্বোধন করেন তথ্য ও সংস্কৃতিমন্ত্রী আবুল
কালাম আজাদ। এ সময় শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, বিশিষ্ট নাট্যজন মামুনুর রশীদ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সহসভাপতি গোলাম কুদ্দুছসহ বিভিন্ন অঙ্গনের বিশিষ্টজনরাও প্রদীপ প্রজ্বালনে অংশ নেন। ৪০ হাজার প্রদীপের আলোয় ধরা দেয় বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের ঐতিহাসিক মুহূর্ত। দাবি ওঠে_ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই। যখন সব প্রদীপ একসঙ্গে জ্বলে ওঠে, তখন সর্বত্র ছড়িয়ে যায় বিজয়োল্লাস। জাতীয় নাট্যশালার দেয়ালে ভেসে ওঠে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি। শিল্পকলা একাডেমীর জাতীয় নাট্যশালা, চিত্রশালা, সঙ্গীত ও প্রশাসনিক ভবনের ছাদ অবধি জ্বালানো হয় প্রদীপ। সবমিলিয়ে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। এর মধ্য দিয়ে শুরু হয় বিজয়ের মাস।
সন্ধ্যা থেকেই নাচ, গান, আবৃত্তিতে মুখরিত হয়ে ওঠে শিল্পকলা একাডেমী। চারটি ফানুস ওড়ানোর মধ্য দিয়ে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালা। উৎসব উপলক্ষে একাডেমীর সবুজ চত্বর চমৎকারভাবে সাজানো হয়। মঞ্চে দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে উদীচী, সুরের ধারা, ঋষিজ, বহ্নিশিখা ও নিবেদন। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে দিব্য সাংস্কৃতিক সংগঠন, নৃত্যালোক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, ধৃতি, নৃত্যনন্দন ও বাংলাদেশ একাডেমী অব ফাইন আর্টস। একক আবৃত্তি করেন কবি নির্মলেন্দু গুণ। দলীয় আবৃত্তি করে মুক্তধারা। বাউল সঙ্গীত পরিবেশন করেন কুদ্দুস বয়াতি, সমীর বাউল, আমজাদ দেওয়ান, জয়দেব কর্মকার, পাগলা বাবুল, মমতা দাসী ও তাদের দল। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন আকরামুল ইসলাম, অনুপ ভট্টাচার্য, কানন বালা সরকার, এএমএম মহিউজ্জামান চৌধুরী, আরতি ধর প্রমুখ। শিল্পীদের কণ্ঠে গীত 'ও আমার দেশের মাটি', 'জনতার সংগ্রাম চলবেই, আমাদের সংগ্রাম চলবেই', 'সোনায় মোড়ানো বাংলা মোদের শ্মশান করেছে কে', 'এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা', 'তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর', 'ধন ধান্য পুষ্প ভরা', 'পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে', 'বিজয় নিশান উড়ছে', 'মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো ফলে যুদ্ধ করি' ইত্যাদি গান শ্রোতাদের মনে নতুন করে একাত্তরের স্মৃতি তুলে ধরে। এভাবে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলে আয়োজন। এরপর রাত ১২টা ১ মিনিটে শুরু হয় মূল পর্ব।
একাডেমীর পরিত্যক্ত ডোবাটি নতুনভাবে সাজিয়ে উপস্থাপন করা হয়। এখানে তৈরি করা হয় কাঠের সিঁড়ি। ৩০টি ধাপ তৈরি করা হয় ৩০ লাখ শহীদ স্মরণে। স্থাপন করা হয় বাংলাদেশের পতাকা। একাডেমীর বিভিন্ন স্থানে আলোক প্রক্ষেপণের মধ্য দিয়ে তুলে ধরা হয় '৭১-এর গণহত্যা, বধ্যভূমি, নারী নির্যাতনের নানা চিত্র। 'ভেবো না গো মা তোমার ছেলেরা, হারিয়ে গিয়েছে পথে/ওরা আছে মাগো হাজার মনের বিপ্লবী চেতনাতে' শিরোনামে ইনস্টলেশনের মাধ্যমে দেখানো হয় গণহত্যা। উপস্থাপন করা হয় একাত্তরের গণকবর। এর নিচে লেখা রয়েছে_ 'দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা/কারও দানে পাওয়া নয়'। দুটি স্থানে দেখানো হয়ে বধ্যভূমি, যার একটি ছিল 'তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা', অন্যটি 'ভোলেনি বাংলাদেশ ভোলেনি অত্যাচার/কতো যে ঘৃণ্য খানসেনা আর বর্বর রাজাকার'। জাতীয় চিত্রশালা প্লাজার পূর্ব প্রান্তের পাথরের স্তূপটিকে ঢেকে দেওয়া হয়েছে লাল-সবুজ কাপড় দিয়ে। ওপরে পতপত করে উড়ছিল জাতীয় পতাকা। উৎসবের প্রথম দিন আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠানমঞ্চে থাকছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
No comments