নিজের বক্তব্যেই ফেঁসে গেলেন ডিএডি হাবিব

বিডিআর বিদ্রোহের সঙ্গে তৃতীয় কোনো পক্ষ জড়িত ছিল। বিদ্রোহ সংঘটিত করতে তিনটি তারিখ বেছে নেওয়া হয়। বিডিআর জওয়ান নয়, বিদ্রোহের সঙ্গে সেনাসদস্যরা জড়িত ছিলেন। বিডিআর বিদ্রোহের পর আওয়ামী লীগের সাংসদ ফজলে নূর তাপসকে হত্যাচেষ্টা ঘটনায় মেজর হেলাল নামে এক সেনা কর্মকর্তা জড়িত ছিলেন। ওই কর্মকর্তা তৎকালীন বিডিআর মহাপরিচালকের একান্ত সচিব ছিলেন। বিডিআর থেকে খোয়া যাওয়া অস্ত্র-গোলাবারুদ ব্যবহার


করে তাপসের ওপর হামলা চালানো হয়। পিলখানা হত্যা মামলার ষষ্ঠ সাক্ষী মেজর মোঃ আসাদ-উদ-দৌলাকে জেরা করার সময় এসব কথা বলেন আসামি ডিএডি মির্জা হাবিবুর রহমান। আসামির এমন বক্তব্যকে অসত্য বলে মন্তব্য করেন সাক্ষী। ডিএডির
অসংলগ্ন বক্তব্যের পর একাধিকবার আদালত তাকে সতর্ক করে দেন। গতকাল বুধবার সকালে মামলার কার্যক্রম শুরু হয়ে শেষ হয় বিকেল ৪টার দিকে। ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত আদালত মুলতবি করা হয়। ঢাকা মহানগর দায়রা জজ জহুরুল হক আদালতে বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন। ডিএডি হাবিবেরর এমন বক্তব্যের পর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, উত্তেজিত হয়ে হাবিব যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে তিনি নিজেই ফেঁসেছেন।
রাষ্ট্রপক্ষের কেঁৗসুলি অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, বিদ্রোহের বিষয়ে ডিএডি হাবিব অনেক কিছু জানেন-এটা তার বক্তব্যে বের হয়ে এলো। তার বক্তব্যে তিনি নিজেই ফেঁসেছেন।
এদিকে পিলখানা হত্যা মামলার বিচার কার্যক্রম দ্রুত শেষ করতে বাৎসরিক ছুটির মধ্যেও বিশেষ ব্যবস্থায় আদালত চলবে বলে জানিয়েছেন সরকারি কেঁৗসুলি অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল। অপরদিকে গতকাল প্রথমবারের মতো বিচার কার্যক্রম চলাকালে আদালতে উপস্থিত ছিলেন আসামিপক্ষের স্বজনরা। গতকাল ষষ্ঠ সাক্ষীর জেরা শেষে সপ্তম সাক্ষী হিসেবে আদালতে বক্তব্য রাখেন মেজর তারেক মোহাম্মদ ভাওয়ালী। পিলখানা বিদ্রোহের সময় তারেক ৪৫ রাইফেল ব্যাটালিয়নে কর্মরত ছিলেন।
সাক্ষীকে জেরা :ডিএডি মির্জা হাবিবুর রহমান সাক্ষী আসাদ- উদ-দৌলার কাছে জানতে চান, ফজলে নূর তাপসের ওপর হামলার ঘটনায় মেজর হেলাল নামে এক সেনা কর্মকর্তা জড়িত ছিলেন, যিনি তৎকালীন বিডিআর ডিজির পিএস ছিলেন। ওই সেনা কর্মকর্তাকে পরে চাকরিচ্যুত করা হয়- আপনি কি বিষয়টি জানেন? উত্তরে সাক্ষী বলেন, হেলাল নামে একজন তৎকালীন ডিজির একান্ত সচিব ছিলেন। তবে তাপসের ওপর হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত হেলাল আর ডিজির পিএস হেলাল একই ব্যক্তি কি-না আমার জানা নেই।
বিডিআর বিদ্রোহে জড়িত তৃতীয় শক্তি খুঁজে বের করার সময় সেনাবাহিনীর একটি অংশ ফজলে নূর তাপসের ওপর হামলা করে পলাতক বিডিআর জওয়ানদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে_ ডিএডি হাবিবুরের এ বক্তব্যকে অসত্য বলে মন্তব্য করেন সাক্ষী।
হাবিবুর সাক্ষীর কাছে প্রশ্ন করেন, ঘটনার দিন দরবার হলে উপস্থিত ছিলেন না_ এমন কোনো সেনা কর্মকর্তাকে হত্যার কথা আপনার জানা আছে? উত্তরে সাক্ষী বলেন, কর্নেল মজিবুর, মেজর সালামসহ কয়েকজনের কথা আমার জানা আছে। এর পর সাক্ষী বলেন, তারা দু'জনই দরবার হলে উপস্থিত ছিলেন। তবে তাদের দরবার হলের বাইরে হত্যা করা হয়।
হাবিবুর রহমান বলেন, চোরের ধর্ম মানুষকে এড়িয়ে চলা_ এ কারণে ডিজি নিয়মিত দরবার ডাকতেন না। এ ধরনের অশালীন বক্তব্যের পর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, মাননীয় আদালত আইনের ভাষায় আসামির এমন বক্তব্যের প্রতিবাদ না জানানো হলে আমরা লিখিত আবেদন করতে বাধ্য হব। এ সময় আদালত বলেন, আপনার কাছে অনেক তথ্য জানতে পারছি। অসংযত, উত্তেজিত হয়ে বক্তব্যের মাধ্যমে জেরা করতে পারবেন না। আপনাকে নিয়ম মেনে জেরা করতে হবে। এটা আদালতের ভাষা নয়। এটা আপনার ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।
ডিএডি হাবিব প্রশ্ন করেন, ২৪ ফেব্রুয়ারি আনসার মহাপরিচালক তার গাড়িতে অস্ত্র নিয়ে পিলখানায় প্রবেশের সময় ৪ নম্বর গেটে অস্ত্রসহ ধরা পড়েন। এ ঘটনায় তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়_ আপনি বিষয়টি জানেন? উত্তরে সাক্ষী বলেন, সত্য নয়। হাবিব বলেন ২৪ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি নৈশভোজে এবং ১ মার্চ পিলখানা বিদ্রোহের পরিকল্পনা করা হয়েছিল।
হাবিব বলেন, পিলখানায় এমআই সেলে বিডিআর জওয়ানদের জিজ্ঞাসাবাদের সময় এমন কিছু সরঞ্জাম দেখানো হয়, যাতে অনেক বিডিআর সদস্য হার্ট অ্যাটাক করে মারা যান_ আসামির এমন বক্তব্যের পর সাক্ষী বলেন, এটা অসত্য।
পিলখানা হত্যা মামলায় সপ্তম সাক্ষীর বক্তব্যে মেজর তারেক ভাওয়ালী বলেন, ২১ ফেব্রুয়ারি বিডিআরের বিভিন্ন দাবিদাওয়া সংবলিত একটি লিফলেট ছাড়া হয়। এর পর ১১ জন মেজর পদমর্যদার কর্মকর্তাকে কোয়ার্টার গার্ডে পালাক্রমে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এদিকে গতকাল আদালত চলাকালে আসামি পক্ষের ১০টি পরিবারের সদস্যকে বিচার কার্যক্রম দেখার ব্যবস্থা করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.