মিথ্যা ঘোষণায় আমদানির অভিযোগ-১৪ কনটেইনার কাগজ চট্টগ্রাম বন্দরে আটক

ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে কাগজ আমদানির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঈদের আগে গত ৪ নভেম্বর বন্দরে আসা ১৪ কনটেইনার কাগজের চালানটি কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আটক করে।জানা যায়, বেশি জিএসএম বা গ্রাম পার স্কয়ার মিটারের ২১৮ টন কাগজের এ চালানটি ৫ শতাংশ শুল্ক ঘোষণা দিয়ে ছাড় করানোর চেষ্টা করছিল ঢাকার আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান গাজী ট্রেডিং।


কাস্টমস কর্মকর্তারা বলছেন, যে হারমোনাইজড সিস্টেম (এইচএস) কোডের ঘোষণা দিয়ে গাজী ট্রেডিং চালানটি এনেছে সেটা ওই শুল্কহারের আওতায় পড়ে না। পণ্য আমদানি ও রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কায়নের জন্য রাজস্ব বোর্ডের এই কোড ব্যবহার করা হয়। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান কাগজের চালানটি ৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। প্রাথমিক ধারণায় মনে হচ্ছে, এই চালানের শুল্কায়ন হবে ২৫ শতাংশ হারে।
এ বিষয়ে জানার জন্য প্রতিষ্ঠানটির মালিক নেওয়াজ আলী গাজীর সঙ্গে গত মঙ্গলবার বিকেলে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয়। তিনি প্রথমে বিষয়টি অস্বীকার করেন। পরে আমদানির সব তথ্য তুলে ধরে এ প্রতিবেদক কথা বলতে চাইলে তিনি ঘটনাটি স্বীকার করে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমি শুনেছি। তবে সর্বশেষ অবস্থা আমার জানা নেই।' প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়ে কাগজ আটকের ঘটনা তাঁর না জানার কারণ জানতে চাইলে নেওয়াজ আলী ফোনের সংযোগ কেটে দেন। এরপর বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও তাঁকে আর ফোনে পাওয়া যায়নি।
কাস্টমস সূত্র জানায়, গাজী ট্রেডিং ইন্দোনেশিয়া থেকে এই কাগজ আমদানি করেছে। কাগজের চালানটি ২০ ফুট দৈর্ঘ্যের ১৪ কনটেইনারে চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। এইচএস কোড ৪৮০২৫৫০০ অনুযায়ী চালানটি 'আনকোটেড উড ফ্রি' হিসেবে দেখানো হয়। এতে কাগজের জিএসএম ঘোষণা দেওয়া হয় ৭০ থেকে ৮০। সে হিসাবে চালানটি ৫ শতাংশ হারে শুল্কায়ন করার কথা।
তবে চালানটির ব্যাপারে কাস্টমস কমিশনারের কাছে বেশ কয়েকটি অভিযোগ আসায় সেটা আটকে দেয় কাস্টমস গোয়েন্দাদল (এআরআই)। এরপর সিঅ্যান্ডএফ ও এআরআই শাখার কর্মকর্তার উপস্থিতিতে ১৪ কনটেইনার পণ্যের শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করা হয়।
এআরআই শাখার প্রধান ওমর ফারুক চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করার পর কাগজের জিএসএম ও ফাইবার কনটেন্ট যাচাই করার জন্য নমুনা পরীক্ষাগারে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়।'
তবে এখনো নমুনা পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়নি বলে জানা গেছে। কোন পরীক্ষাগারে পাঠানো হবে তা নিয়েও দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছেন কাস্টমস কর্মকর্তারা। কারণ কাস্টমসের পরীক্ষাগারে জিএসএম পরীক্ষা হলেও কাগজে কী পরিমাণ ফাইবার কনটেন্ট আছে তা নির্ণয় করা সম্ভব নয়। এ জন্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট), বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) কিংবা আধুনিক কোনো পরীক্ষাগারে নমুনা পাঠানো হতে পারে। এ নিয়ে গোপনীয়তা অবলম্বন করছে কাস্টমস।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কাস্টমস কর্মকর্তা বলেন, কোন পরীক্ষাগারে পাঠানো হবে সেটি নিয়মানুযায়ী আগে জানানো হয় না। বিষয়টি ফাঁস হয়ে গেলে অভিযুক্তরা পরীক্ষার প্রতিবেদন পাল্টানোর সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে।
অন্য একটি সূত্র বলেছে, এই গোপনীয়তার মধ্যেই আমদানিকারক, কাস্টমস ও পরীক্ষাগার কর্তৃপক্ষ যোগসাজশ করে আমদানিকারকের পক্ষে প্রতিবেদন নিয়ে নেয়। এ কারণে মিথ্যা ঘোষণার বিষয়টি চাপা পড়ে যায়।
গাজী ট্রেডিংয়ের আটক কাগজ পরীক্ষার ক্ষেত্রে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যদি এমন ঘটনা ঘটে তাহলে আমদানি করা প্রায় দেড় কোটি টাকা দামের এ কাগজে সরকার শুল্ক হারাবে অন্তত ৮৪ লাখ টাকা।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এমপল ট্রেডিংয়ের মালিক জাকির হোসেন বলেন, 'শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হতে ল্যাবরেটরি রিপোর্ট আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এ ছাড়া এইচএস কোড অনুযায়ী কাগজের ফাইবার কনটেন্ট ১০ পয়েন্টের ওপরে থাকলে এবং তা যদি রোল আকারে আমদানি হয় তাহলে শুল্কহার ৫ শতাংশই প্রযোজ্য হবে। চালানটি এই ক্যাটাগরিভুক্ত।'
কাস্টমস গোয়েন্দা ও একাধিক সিঅ্যান্ডএফ মালিক জানান, এ ধরনের একাধিক কাগজের চালান বন্দরে আছে। আটককৃত চালানের শুল্কায়ন ও জরিমানার হার দেখার অপেক্ষায় আছেন তাঁরা।

No comments

Powered by Blogger.