ভারত-রাহুল গান্ধীর ওয়াটার লু উত্তর প্রদেশ by পার্থ চট্টোপাধ্যায়
কিন্তু ২০১৪ পর্যন্ত যে এ সরকার টিকবে_ তাও জোর দিয়ে বলা যায় না। তবে ২০১২ সালে ইউপি নির্বাচনে কংগ্রেস যদি দেখে তাদের অবস্থা বেশ ভালো তাহলে সোনিয়াই হয়তো এক বছর আগে তার দুর্বল সরকার ভেঙে দিয়ে নতুন করে সাধারণ নির্বাচনের জন্য সুপারিশ দেবেন। রাহুল তার জন্যতৈরি থাকবেন২০১২ সালের গোড়ায় উত্তর প্রদেশ বিধানসভার নির্বাচনকে ২০১৪ সালের ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ড্রেস রিহার্সাল বলতে পারেন।
তাই এই নির্বাচনের দিকে পাখির চোখ রেখে খুব সাবধানে এগোচ্ছেন রাহুল গান্ধী। কংগ্রেসীদের কাছে যিনি ইতিমধ্যেই যুবরাজ বা ক্রাউন প্রিন্স বলে পরিচিত। কে না জানে কংগ্রেসচালিত ইউপিএ ক্ষমতায় এলে রাহুলই হবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। তখন তার বয়স হবে ৪৬ বছর।
উত্তর প্রদেশ নির্বাচনের কমান্ড ইতিমধ্যেই নিয়ে নিয়েছেন রাহুল। উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতীর বিরুদ্ধে তিনি ঘন ঘন তোপ দেগে চলেছেন। নয়দার জমি আন্দোলনে ইতিমধ্যেই তিনি কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। রাহুল এখন যতটা পারেন উত্তর প্রদেশে পড়ে থাকেন। তিনি জানেন, এই উত্তর প্রদেশই নেহরু পরিবারের দুর্গ। জওয়াহেরলাল নেহরু, ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধী, রাজীব গান্ধীর বাবা ও ইন্দিরার স্বামী ফিরোজ গান্ধী এবং ফিরোজ গান্ধীর নাতি রাহুল_ সবাই উত্তর প্রদেশ থেকে ভোটে দাঁড়িয়ে জিতেছেন।
ইন্দিরা তার স্বামী ফিরোজ গান্ধী থেকে আলাদা থাকতেন। কিন্তু নেহরু ১৯৫২ সালে জামাইকে উত্তর প্রদেশের রায়বেরিলি থেকে দাঁড় করিয়ে জিতিয়ে আনেন। ১৯৫৭ সালেও ফিরোজ রায়বেরিলি থেকে এমপি হন। স্বামীর মৃত্যুর পর ইন্দিরা গান্ধী ১৯৬৭ সালে ৬৬ শতাংশ ভোট পেয়ে প্রথম লোকসভায় আসেন। এর আগে তিনি প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন ১৯৬৬ সালের ২৪ জানুয়ারি। তখন তিনি রাজ্যসভার সদস্য ছিলেন। এখন যেমন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং রাজ্যসভার সদস্য। ১৯৬৭ সালে দ্বিতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সময় ইন্দিরা উত্তর প্রদেশের রায়বেরিলি কেন্দ্রটি বেছে নিয়েছিলেন। সেবার তিনি ৬৬ শতাংশ ভোট পেয়ে জেতেন। ১৯৮০ সালেও তিনি রায়বেরিলি থেকে জিতেছিলেন। ২০০৪ সালে রায়বেরিলির জমির দখল নেন সোনিয়া গান্ধী। তিনি ২০০৪ ও ২০০৯-এর লোকসভা নির্বাচনে রায়বেরিলি থেকে ৭২ শতাংশ ভোট পেয়ে জিতেছেন। উত্তর প্রদেশের আরেকটি কেন্দ্র আমেথি। এটি কংগ্রেসেরই কেন্দ্র। ২০০৯ সাল পর্যন্ত ১২ বার কংগ্রেস প্রার্থীকে জিতিয়েছে আমেথি। এখান থেকে ইন্দিরা সঞ্জয় গান্ধীকে জিতিয়ে আনেন। বিমান দুর্ঘটনায় সঞ্জয়ের মৃত্যুর পর (১৯৮০) রাজীব গান্ধী আমেথি থেকে দাঁড়ান ও জেতেন। সঞ্জয়ের মৃত্যুর কিছুকাল পর সঞ্জয়-পত্নী মানেকা গান্ধীর সঙ্গে ইন্দিরার বিরোধ বাধে। তখন মানেকা ১৯৮৯ সালে আমেথি থেকে দাঁড়িয়ে রাজীবকে হারানোর চেষ্টা করেন, কিন্তু রাজীবই জেতেন। সেবার কংগ্রেস একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও রাজীব কংগ্রেসী মন্ত্রিসভা গঠন করেননি। বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং তখন প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। তিনিও উত্তর প্রদেশের। স্বাধীনতার পর ভারতে এ পর্যন্ত ১৪ জন প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৯ জনই উত্তর প্রদেশের। ৫ জন অন্যান্য রাজ্যের। ২ জন মাত্র দক্ষিণ ভারতের_ এইচডি দেবগৌড়া ও নরসিমা রাও। দু'জন পাঞ্জাবের_ ইন্দর কুমার গুজরাল ও ড. মনমোহন সিং (তাও মনমোহন রাজ্যসভার আসনে আসামের প্রতিনিধি)। পশ্চিম ভারত থেকে এ পর্যন্ত একজন প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন_ মোরারজি দেশাই। তিনি গুজরাটের লোক ছিলেন। পূর্ব ভারত থেকে এ পর্যন্ত কেউ প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি হতে পারেননি। বিহার ও আসাম থেকে তবু একজন করে রাষ্ট্রপতি হয়েছেন, কিন্তু সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে বাঙালির ভাগ্যে এখনও রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর পদ জোটেনি। ২০০৯ সালে বামফ্রন্ট যখন কংগ্রেসের সঙ্গে কোয়ালিশনে ছিল তখন সিপিএমের প্রকাশ কারাত প্রণব মুখার্জির নাম রাষ্ট্রপতি পদের জন্য সুপারিশ করেন। প্রণব বাবু কংগ্রেসের প্রবীণতম রাজনীতিক। কিন্তু সোনিয়া গান্ধী প্রতিভা পাতিলকেই রাষ্ট্রপতির পদে সুপারিশ করেন।
যাই হোক, ভারতের রাজনীতিতে উত্তর প্রদেশ খুব গুরুত্বপূর্ণ। এবার সেই হৃতরাজ্য উদ্ধার করার জন্য জিহাদে নেমেছেন রাহুল গান্ধী। রাজনৈতিক দিক থেকে উত্তর প্রদেশ ভারতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। রাজ্যটি থেকে একটা বড় অংশ উত্তরাখণ্ডে চলে গেলেও এখনও ২ লাখ ৪০ হাজার ৯২৮ বর্গকিলোমিটার নিয়ে উত্তর প্রদেশ। বাংলাদেশের চেয়েও বড় একটি রাজ্য। বাংলাদেশের প্রায় দ্বিগুণ আয়তন। ১ লাখ ৪৮ হাজার ৩৯৩ বর্গকিলোমিটার নিয়ে বাংলাদেশ। তবে জনসংখ্যায় দুটিই প্রায় সমান। ১৬ কোটি করে মানুষের বাস। ৯৭ হাজার ৯৪২টি গ্রাম আর ৭০৪টি শহরের এই বিশাল রাজ্যটিতে ৮০টি আসন আছে লোকসভায়। তাই ভারত সিংহাসনের ভাবী উত্তরাধিকারীদের সবার চোখ উত্তর প্রদেশের দিকে। ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে রাহুল নিজে তো উত্তর প্রদেশ থেকে নির্বাচিত হয়ে লোকসভায় এসেছেনই, উপরন্তু কংগ্রেসকে ২১টি আসন (৮০টির মধ্যে) এনে দিয়ে সবার নজর কেড়েছেন। এই ২১টি আসনের মধ্যে বিধানসভায় ১৫০টি আসন পড়ে। উত্তর প্রদেশ বিধানসভায় ৪০৩টি আসন আছে। উত্তর প্রদেশে বিধান পরিষদও আছে, যার মোট আসন ১০০।
এখন কংগ্রেসকে বিধানসভা দখল করতে হলে অন্তত ২০৩টি আসন এককভাবে দখল করতে হবে। এটা কখনও সম্ভব নয়। তবে উত্তর প্রদেশে ত্রিমুখী লড়াই হয়, সেখানে বিজেপি একটা ভালো শক্তি। বিজেপির বর্তমান সভাপতি নীতিন গড়করি উত্তর প্রদেশের লোক। নেহরু পরিবারের আরেকজন প্রতিদ্বন্দ্বী সঞ্জয়-মানেকার ছেলে বরুণ গান্ধী ইউপি থেকে এমপি হয়েছেন। বাবরি মসজিদ না ভাঙলে আরও বেশ কিছুকাল ইউপিতে বিজেপি মন্ত্রিসভা থেকে যেত। কিন্তু বিজেপি ইউপিতে মোটেই দুর্বল নয়। তবে ইউপি তথা উত্তর প্রদেশের বড় শক্তি এখন মায়াবতী; বিএসপি দলনেত্রী। তিনিই এখন উত্তর প্রদেশের জবরদস্ত মুখ্যমন্ত্রী। দলিত সম্প্রদায়ের ত্রাতা বলে পরিচিত। এতদিন মায়াবতী শুধু দলিত রাজনীতি করতেন। এতে বর্ণ হিন্দুরা তার ওপর চটে গিয়ে দলে দলে বিজেপিকে ভোট দিত। কিন্তু গত বিধানসভা নির্বাচনের পর মায়াবতী বর্ণ হিন্দু ও মুসলমানদের জন্যও কিছু কনসেশন দিয়েছেন।
ইউপির আরেকটি রাজনৈতিক শক্তি মুলায়ম সিং যাদবের সমাজবাদী দল। মুলায়মও জাতপাতের রাজনীতি করেন। যাদব বা গোয়ালা সম্প্রদায়ের মধ্যেই তার প্রতিপত্তি। তিনি ইউপির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী। কয়েক বছর আগেও সমাজবাদী দলের খুব রমরমা ছিল। তখন সমাজবাদী দলের সম্পাদক ছিলেন অমর সিং। ঘোড়া কেনাবেচায় ওস্তাদ এক ঝানু রাজনীতিক। এক সময় কলকাতায় কংগ্রেস রাজনীতি করতেন। অমিতাভ বচ্চন পরিবারের অভিন্নহৃদয় বন্ধু ছিলেন তিনি। দেনার দায়ে অমিতাভ যখন ডুবে যাচ্ছিলেন তখন অমরই তাকে টাকা ধার দিয়ে উদ্ধার করেন। অভিষেক আর ঐশ্বরিয়ার বিয়েটাও অমর দাঁড়িয়ে থেকে দিয়েছেন। অমর, চিত্রতারকা শর্মিলা ঠাকুর আর জয়াপ্রদাকে সমাজবাদী দলে টেনে নিয়ে এসে তাদের রাজ্যসভার সদস্য করেন। তিনি নিজেও রাজ্যসভার সদস্য হন।
প্রথম ইউপিএ সরকারকে পতনের হাত থেকে বাঁচাতে বিজেপির কিছু সাংসদকে ঘুষ দিয়ে মনমোহন সরকারকে আস্থা ভোট দিতে নাকি প্ররোচিত করা হয়েছিল। আর সে ব্যাপারে নাকি উদ্যোগ নিয়েছিলেন অমর সিং। কারা সে টাকা জুগিয়েছিল_ তা আজও রহস্য। তবে সে সময় বামরা যখন একযোগে ইউপিএ সরকার থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয় তখন সমাজবাদী দল প্রকাশ্যেই ইউপিএ সরকারকে আস্থা ভোট দেয়। এর পর অমর সিংয়ের সঙ্গে সমাজবাদী দলের বিরোধ শুরু হয়। সমাজবাদী দলের সংশ্রব ত্যাগ করেন অমর সিং। এর পর আরেকটি কাণ্ড ঘটে। ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার হয়ে জেলে যান অমর সিং। জেলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এখন তিনি জামিনে মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর যাওয়ার অনুমতি চেয়েছেন। মায়াবতীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও স্বজন পোষণের অভিযোগের তদন্ত চলছে। এককথায়, ইউপি রাজনীতির সব বলিষ্ঠ নেতাই কোনো না কোনো কেলেঙ্কারির অভিযোগে অভিযুক্ত।
রাহুল এখনও স্বেচ্ছায় ক্ষমতার রাজনীতি থেকে দূরে আছেন। তাই তিনি আশা করছেন, ইউপি নির্বাচনে এবার কংগ্রেসকে জিতিয়ে সেখানে কংগ্রেসচালিত সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন। এ ব্যাপারে ইউপির প্রয়াত কৃষক নেতা ও ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী চরণ সিংয়ের ছেলে অজিত সিংয়ের সাহায্য পেয়েছেন। কয়েকটি জেলায় অজিত সিংয়ের যথেষ্ট প্রভাব আছে।
প্রধানমন্ত্রীর দৌড়ে বিজেপিও কিন্তু পিছিয়ে নেই। ৮৭ বছরের এলকে আদভানি এখন রথযাত্রা করে ভারত পরিক্রমণ করছেন। উদ্দেশ্য দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনমত গঠন করা। আসল উদ্দেশ্য প্রধানমন্ত্রী পদে তার গ্রহণযোগ্যতা যাচাই করা। তবে কি-না বিজেপির মধ্যে প্রধানমন্ত্রী পদের দাবিদার আরও দু'জন। গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আর বিজেপির সভাপতি নীতিন গড়করি। তিন জনই রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের কট্টর সদস্য। বাবরি মসজিদ ভাঙার মামলা এখনও ঝুলছে আদভানির বিরুদ্ধে। গুজরাট দাঙ্গায় জড়িত থাকার অভিযোগ থেকে সর্বোচ্চ আদালত নরেন্দ্র মোদিকে অব্যাহতি দিয়েছেন। নরেন্দ্র মোদি কিছুদিন আগে আত্মশুদ্ধির জন্য অনশনে বসেছিলেন। সেখানে অনেক মুসলিম নেতা এসে তার প্রতি নৈতিক সমর্থন জানিয়ে যান। কিন্তু সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে মোদির গ্রহণযোগ্যতা কম। আর নীতিন গড়করি তো সাংবাদিকদের কাছে বলেছেন, তিনি মোটেই মৌলবাদী হিন্দু নন। তিনি হিন্দু হলেও পুজো-অর্চনা করেন না। মন্দিরে যান না। বিজেপি সরকারিভাবে বলছে, আমরা এখনও প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য কাউকে আগে থেকে ঠিক করে রাখছি না। যখন সময় আসবে তখন এ নিয়ে ভাবা যাবে। কিন্তু কংগ্রেসের কাছে এটি দিনের আলোর মতো স্পষ্ট যে, তাদের প্রধানমন্ত্রী রাহুল গান্ধী। অপ্রতিদ্বন্দ্বী এবং অবিসংবাদী।
ওয়েস্টমিনস্টার ধাঁচে গণতন্ত্রের সুবিধা হচ্ছে, দেশ যিনি চালাবেন সেই নেতাকে জনতার রায় নিতে হয় না। দলের অধিকাংশ এমপি যার দিকে তিনিই প্রধানমন্ত্রী। তিনিই দেশের ভাগ্য-বিধাতা। ইন্দিরা গান্ধীকে দলের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয়েছিল। মোরারজি দেশাইকে হারিয়ে তবে তিনি প্রধানমন্ত্রী হতে পেরেছিলেন। তার ছেলে রাজীবকে আর দলের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয়নি। রাহুলকেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে না।
কিন্তু তার আগে কংগ্রেসকে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা তো পেতে হবে। এখন যেমন ৫৪৩ আসনের লোকসভায় কংগ্রেসের নিজস্ব ২০৬টি আসন আছে। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে গেলে অন্তত ২৭২ আসন পেতে হবে। কংগ্রেস তাই অন্য দলের সঙ্গে কোয়ালিশন করে আছে। এখনও কিন্তু ইউপিএ একটি মাইনরিটি সরকার চালাচ্ছে। ইউপিএর মোট এমপি এখন ২৬১, এনডিএর ১৫৮। সমাজবাদী দলের ২২, বহুজন সমাজবাদী দলের ২১ ও লালুপ্রসাদ যাদবের আরজেডির ৪ জনসহ মোট ৪৭ জন এমপি বাইরে থেকে সমর্থন করছেন বলে মনমোহন সিংয়ের সরকার এখনও টিকে আছে। মাইনরিটি সরকার হলে যা হয়_ সমর্থক দল ও শরিক দলগুলো সরকারের ওপর ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। একটা সময় তামিলনাড়ূর ডিএমকে শরিক এভাবে সরকারকে বোকা বানিয়ে কোটি কোটি টাকার টেলি কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েছিল। প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী সবাই চোখ বুজে ছিলেন। সরকারি রিপোর্টে এই দুর্নীতি ধরা পড়তেই বিরোধীরা তার সূত্র ধরে মামলা রুজু করেন। তারপরই হৈচৈ শুরু হয়ে যায়।
ঠিক এ মুহূর্তে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির চাপে ভারতের সাধারণ মানুষ জেরবার। তদুপরি ২০১১ সালেই কয়েক বার পেট্রোলের দাম বেড়ে এখন হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে প্রতি লিটার ৭৩ টাকা ১৫ পয়সা। মমতার তৃণমূল এর প্রতিবাদ করে বলেছে, দরকার হলে আমরা ইউপিএ থেকে বেরিয়ে আসব। অবশ্য শরিক দলগুলো যেভাবে সুযোগ-সুবিধা আদায় করে নিয়েছে ও নিচ্ছে তারা স্বেচ্ছায় ইউপিএ থেকে বেরিয়ে আসবে_ এটা মনে করা ভুল। তারা বড়জোর আরও চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
কিন্তু ২০১৪ পর্যন্ত যে এ সরকার টিকবে_ তাও জোর দিয়ে বলা যায় না। তবে ২০১২ সালে ইউপি নির্বাচনে কংগ্রেস যদি দেখে তাদের অবস্থা বেশ ভালো তাহলে সোনিয়াই হয়তো এক বছর আগে তার দুর্বল সরকার ভেঙে দিয়ে নতুন করে সাধারণ নির্বাচনের জন্য সুপারিশ দেবেন। রাহুল তার জন্য তৈরি থাকবেন।
উত্তর প্রদেশই এখন তার ওয়াটার লু।
ড. পার্থ চট্টোপাধ্যায় : ভারতীয় সাংবাদিক
উত্তর প্রদেশ নির্বাচনের কমান্ড ইতিমধ্যেই নিয়ে নিয়েছেন রাহুল। উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতীর বিরুদ্ধে তিনি ঘন ঘন তোপ দেগে চলেছেন। নয়দার জমি আন্দোলনে ইতিমধ্যেই তিনি কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। রাহুল এখন যতটা পারেন উত্তর প্রদেশে পড়ে থাকেন। তিনি জানেন, এই উত্তর প্রদেশই নেহরু পরিবারের দুর্গ। জওয়াহেরলাল নেহরু, ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধী, রাজীব গান্ধীর বাবা ও ইন্দিরার স্বামী ফিরোজ গান্ধী এবং ফিরোজ গান্ধীর নাতি রাহুল_ সবাই উত্তর প্রদেশ থেকে ভোটে দাঁড়িয়ে জিতেছেন।
ইন্দিরা তার স্বামী ফিরোজ গান্ধী থেকে আলাদা থাকতেন। কিন্তু নেহরু ১৯৫২ সালে জামাইকে উত্তর প্রদেশের রায়বেরিলি থেকে দাঁড় করিয়ে জিতিয়ে আনেন। ১৯৫৭ সালেও ফিরোজ রায়বেরিলি থেকে এমপি হন। স্বামীর মৃত্যুর পর ইন্দিরা গান্ধী ১৯৬৭ সালে ৬৬ শতাংশ ভোট পেয়ে প্রথম লোকসভায় আসেন। এর আগে তিনি প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন ১৯৬৬ সালের ২৪ জানুয়ারি। তখন তিনি রাজ্যসভার সদস্য ছিলেন। এখন যেমন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং রাজ্যসভার সদস্য। ১৯৬৭ সালে দ্বিতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সময় ইন্দিরা উত্তর প্রদেশের রায়বেরিলি কেন্দ্রটি বেছে নিয়েছিলেন। সেবার তিনি ৬৬ শতাংশ ভোট পেয়ে জেতেন। ১৯৮০ সালেও তিনি রায়বেরিলি থেকে জিতেছিলেন। ২০০৪ সালে রায়বেরিলির জমির দখল নেন সোনিয়া গান্ধী। তিনি ২০০৪ ও ২০০৯-এর লোকসভা নির্বাচনে রায়বেরিলি থেকে ৭২ শতাংশ ভোট পেয়ে জিতেছেন। উত্তর প্রদেশের আরেকটি কেন্দ্র আমেথি। এটি কংগ্রেসেরই কেন্দ্র। ২০০৯ সাল পর্যন্ত ১২ বার কংগ্রেস প্রার্থীকে জিতিয়েছে আমেথি। এখান থেকে ইন্দিরা সঞ্জয় গান্ধীকে জিতিয়ে আনেন। বিমান দুর্ঘটনায় সঞ্জয়ের মৃত্যুর পর (১৯৮০) রাজীব গান্ধী আমেথি থেকে দাঁড়ান ও জেতেন। সঞ্জয়ের মৃত্যুর কিছুকাল পর সঞ্জয়-পত্নী মানেকা গান্ধীর সঙ্গে ইন্দিরার বিরোধ বাধে। তখন মানেকা ১৯৮৯ সালে আমেথি থেকে দাঁড়িয়ে রাজীবকে হারানোর চেষ্টা করেন, কিন্তু রাজীবই জেতেন। সেবার কংগ্রেস একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও রাজীব কংগ্রেসী মন্ত্রিসভা গঠন করেননি। বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং তখন প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। তিনিও উত্তর প্রদেশের। স্বাধীনতার পর ভারতে এ পর্যন্ত ১৪ জন প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৯ জনই উত্তর প্রদেশের। ৫ জন অন্যান্য রাজ্যের। ২ জন মাত্র দক্ষিণ ভারতের_ এইচডি দেবগৌড়া ও নরসিমা রাও। দু'জন পাঞ্জাবের_ ইন্দর কুমার গুজরাল ও ড. মনমোহন সিং (তাও মনমোহন রাজ্যসভার আসনে আসামের প্রতিনিধি)। পশ্চিম ভারত থেকে এ পর্যন্ত একজন প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন_ মোরারজি দেশাই। তিনি গুজরাটের লোক ছিলেন। পূর্ব ভারত থেকে এ পর্যন্ত কেউ প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি হতে পারেননি। বিহার ও আসাম থেকে তবু একজন করে রাষ্ট্রপতি হয়েছেন, কিন্তু সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে বাঙালির ভাগ্যে এখনও রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর পদ জোটেনি। ২০০৯ সালে বামফ্রন্ট যখন কংগ্রেসের সঙ্গে কোয়ালিশনে ছিল তখন সিপিএমের প্রকাশ কারাত প্রণব মুখার্জির নাম রাষ্ট্রপতি পদের জন্য সুপারিশ করেন। প্রণব বাবু কংগ্রেসের প্রবীণতম রাজনীতিক। কিন্তু সোনিয়া গান্ধী প্রতিভা পাতিলকেই রাষ্ট্রপতির পদে সুপারিশ করেন।
যাই হোক, ভারতের রাজনীতিতে উত্তর প্রদেশ খুব গুরুত্বপূর্ণ। এবার সেই হৃতরাজ্য উদ্ধার করার জন্য জিহাদে নেমেছেন রাহুল গান্ধী। রাজনৈতিক দিক থেকে উত্তর প্রদেশ ভারতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। রাজ্যটি থেকে একটা বড় অংশ উত্তরাখণ্ডে চলে গেলেও এখনও ২ লাখ ৪০ হাজার ৯২৮ বর্গকিলোমিটার নিয়ে উত্তর প্রদেশ। বাংলাদেশের চেয়েও বড় একটি রাজ্য। বাংলাদেশের প্রায় দ্বিগুণ আয়তন। ১ লাখ ৪৮ হাজার ৩৯৩ বর্গকিলোমিটার নিয়ে বাংলাদেশ। তবে জনসংখ্যায় দুটিই প্রায় সমান। ১৬ কোটি করে মানুষের বাস। ৯৭ হাজার ৯৪২টি গ্রাম আর ৭০৪টি শহরের এই বিশাল রাজ্যটিতে ৮০টি আসন আছে লোকসভায়। তাই ভারত সিংহাসনের ভাবী উত্তরাধিকারীদের সবার চোখ উত্তর প্রদেশের দিকে। ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে রাহুল নিজে তো উত্তর প্রদেশ থেকে নির্বাচিত হয়ে লোকসভায় এসেছেনই, উপরন্তু কংগ্রেসকে ২১টি আসন (৮০টির মধ্যে) এনে দিয়ে সবার নজর কেড়েছেন। এই ২১টি আসনের মধ্যে বিধানসভায় ১৫০টি আসন পড়ে। উত্তর প্রদেশ বিধানসভায় ৪০৩টি আসন আছে। উত্তর প্রদেশে বিধান পরিষদও আছে, যার মোট আসন ১০০।
এখন কংগ্রেসকে বিধানসভা দখল করতে হলে অন্তত ২০৩টি আসন এককভাবে দখল করতে হবে। এটা কখনও সম্ভব নয়। তবে উত্তর প্রদেশে ত্রিমুখী লড়াই হয়, সেখানে বিজেপি একটা ভালো শক্তি। বিজেপির বর্তমান সভাপতি নীতিন গড়করি উত্তর প্রদেশের লোক। নেহরু পরিবারের আরেকজন প্রতিদ্বন্দ্বী সঞ্জয়-মানেকার ছেলে বরুণ গান্ধী ইউপি থেকে এমপি হয়েছেন। বাবরি মসজিদ না ভাঙলে আরও বেশ কিছুকাল ইউপিতে বিজেপি মন্ত্রিসভা থেকে যেত। কিন্তু বিজেপি ইউপিতে মোটেই দুর্বল নয়। তবে ইউপি তথা উত্তর প্রদেশের বড় শক্তি এখন মায়াবতী; বিএসপি দলনেত্রী। তিনিই এখন উত্তর প্রদেশের জবরদস্ত মুখ্যমন্ত্রী। দলিত সম্প্রদায়ের ত্রাতা বলে পরিচিত। এতদিন মায়াবতী শুধু দলিত রাজনীতি করতেন। এতে বর্ণ হিন্দুরা তার ওপর চটে গিয়ে দলে দলে বিজেপিকে ভোট দিত। কিন্তু গত বিধানসভা নির্বাচনের পর মায়াবতী বর্ণ হিন্দু ও মুসলমানদের জন্যও কিছু কনসেশন দিয়েছেন।
ইউপির আরেকটি রাজনৈতিক শক্তি মুলায়ম সিং যাদবের সমাজবাদী দল। মুলায়মও জাতপাতের রাজনীতি করেন। যাদব বা গোয়ালা সম্প্রদায়ের মধ্যেই তার প্রতিপত্তি। তিনি ইউপির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী। কয়েক বছর আগেও সমাজবাদী দলের খুব রমরমা ছিল। তখন সমাজবাদী দলের সম্পাদক ছিলেন অমর সিং। ঘোড়া কেনাবেচায় ওস্তাদ এক ঝানু রাজনীতিক। এক সময় কলকাতায় কংগ্রেস রাজনীতি করতেন। অমিতাভ বচ্চন পরিবারের অভিন্নহৃদয় বন্ধু ছিলেন তিনি। দেনার দায়ে অমিতাভ যখন ডুবে যাচ্ছিলেন তখন অমরই তাকে টাকা ধার দিয়ে উদ্ধার করেন। অভিষেক আর ঐশ্বরিয়ার বিয়েটাও অমর দাঁড়িয়ে থেকে দিয়েছেন। অমর, চিত্রতারকা শর্মিলা ঠাকুর আর জয়াপ্রদাকে সমাজবাদী দলে টেনে নিয়ে এসে তাদের রাজ্যসভার সদস্য করেন। তিনি নিজেও রাজ্যসভার সদস্য হন।
প্রথম ইউপিএ সরকারকে পতনের হাত থেকে বাঁচাতে বিজেপির কিছু সাংসদকে ঘুষ দিয়ে মনমোহন সরকারকে আস্থা ভোট দিতে নাকি প্ররোচিত করা হয়েছিল। আর সে ব্যাপারে নাকি উদ্যোগ নিয়েছিলেন অমর সিং। কারা সে টাকা জুগিয়েছিল_ তা আজও রহস্য। তবে সে সময় বামরা যখন একযোগে ইউপিএ সরকার থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয় তখন সমাজবাদী দল প্রকাশ্যেই ইউপিএ সরকারকে আস্থা ভোট দেয়। এর পর অমর সিংয়ের সঙ্গে সমাজবাদী দলের বিরোধ শুরু হয়। সমাজবাদী দলের সংশ্রব ত্যাগ করেন অমর সিং। এর পর আরেকটি কাণ্ড ঘটে। ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার হয়ে জেলে যান অমর সিং। জেলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এখন তিনি জামিনে মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর যাওয়ার অনুমতি চেয়েছেন। মায়াবতীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও স্বজন পোষণের অভিযোগের তদন্ত চলছে। এককথায়, ইউপি রাজনীতির সব বলিষ্ঠ নেতাই কোনো না কোনো কেলেঙ্কারির অভিযোগে অভিযুক্ত।
রাহুল এখনও স্বেচ্ছায় ক্ষমতার রাজনীতি থেকে দূরে আছেন। তাই তিনি আশা করছেন, ইউপি নির্বাচনে এবার কংগ্রেসকে জিতিয়ে সেখানে কংগ্রেসচালিত সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন। এ ব্যাপারে ইউপির প্রয়াত কৃষক নেতা ও ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী চরণ সিংয়ের ছেলে অজিত সিংয়ের সাহায্য পেয়েছেন। কয়েকটি জেলায় অজিত সিংয়ের যথেষ্ট প্রভাব আছে।
প্রধানমন্ত্রীর দৌড়ে বিজেপিও কিন্তু পিছিয়ে নেই। ৮৭ বছরের এলকে আদভানি এখন রথযাত্রা করে ভারত পরিক্রমণ করছেন। উদ্দেশ্য দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনমত গঠন করা। আসল উদ্দেশ্য প্রধানমন্ত্রী পদে তার গ্রহণযোগ্যতা যাচাই করা। তবে কি-না বিজেপির মধ্যে প্রধানমন্ত্রী পদের দাবিদার আরও দু'জন। গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আর বিজেপির সভাপতি নীতিন গড়করি। তিন জনই রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের কট্টর সদস্য। বাবরি মসজিদ ভাঙার মামলা এখনও ঝুলছে আদভানির বিরুদ্ধে। গুজরাট দাঙ্গায় জড়িত থাকার অভিযোগ থেকে সর্বোচ্চ আদালত নরেন্দ্র মোদিকে অব্যাহতি দিয়েছেন। নরেন্দ্র মোদি কিছুদিন আগে আত্মশুদ্ধির জন্য অনশনে বসেছিলেন। সেখানে অনেক মুসলিম নেতা এসে তার প্রতি নৈতিক সমর্থন জানিয়ে যান। কিন্তু সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে মোদির গ্রহণযোগ্যতা কম। আর নীতিন গড়করি তো সাংবাদিকদের কাছে বলেছেন, তিনি মোটেই মৌলবাদী হিন্দু নন। তিনি হিন্দু হলেও পুজো-অর্চনা করেন না। মন্দিরে যান না। বিজেপি সরকারিভাবে বলছে, আমরা এখনও প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য কাউকে আগে থেকে ঠিক করে রাখছি না। যখন সময় আসবে তখন এ নিয়ে ভাবা যাবে। কিন্তু কংগ্রেসের কাছে এটি দিনের আলোর মতো স্পষ্ট যে, তাদের প্রধানমন্ত্রী রাহুল গান্ধী। অপ্রতিদ্বন্দ্বী এবং অবিসংবাদী।
ওয়েস্টমিনস্টার ধাঁচে গণতন্ত্রের সুবিধা হচ্ছে, দেশ যিনি চালাবেন সেই নেতাকে জনতার রায় নিতে হয় না। দলের অধিকাংশ এমপি যার দিকে তিনিই প্রধানমন্ত্রী। তিনিই দেশের ভাগ্য-বিধাতা। ইন্দিরা গান্ধীকে দলের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয়েছিল। মোরারজি দেশাইকে হারিয়ে তবে তিনি প্রধানমন্ত্রী হতে পেরেছিলেন। তার ছেলে রাজীবকে আর দলের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয়নি। রাহুলকেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে না।
কিন্তু তার আগে কংগ্রেসকে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা তো পেতে হবে। এখন যেমন ৫৪৩ আসনের লোকসভায় কংগ্রেসের নিজস্ব ২০৬টি আসন আছে। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে গেলে অন্তত ২৭২ আসন পেতে হবে। কংগ্রেস তাই অন্য দলের সঙ্গে কোয়ালিশন করে আছে। এখনও কিন্তু ইউপিএ একটি মাইনরিটি সরকার চালাচ্ছে। ইউপিএর মোট এমপি এখন ২৬১, এনডিএর ১৫৮। সমাজবাদী দলের ২২, বহুজন সমাজবাদী দলের ২১ ও লালুপ্রসাদ যাদবের আরজেডির ৪ জনসহ মোট ৪৭ জন এমপি বাইরে থেকে সমর্থন করছেন বলে মনমোহন সিংয়ের সরকার এখনও টিকে আছে। মাইনরিটি সরকার হলে যা হয়_ সমর্থক দল ও শরিক দলগুলো সরকারের ওপর ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। একটা সময় তামিলনাড়ূর ডিএমকে শরিক এভাবে সরকারকে বোকা বানিয়ে কোটি কোটি টাকার টেলি কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েছিল। প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী সবাই চোখ বুজে ছিলেন। সরকারি রিপোর্টে এই দুর্নীতি ধরা পড়তেই বিরোধীরা তার সূত্র ধরে মামলা রুজু করেন। তারপরই হৈচৈ শুরু হয়ে যায়।
ঠিক এ মুহূর্তে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির চাপে ভারতের সাধারণ মানুষ জেরবার। তদুপরি ২০১১ সালেই কয়েক বার পেট্রোলের দাম বেড়ে এখন হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে প্রতি লিটার ৭৩ টাকা ১৫ পয়সা। মমতার তৃণমূল এর প্রতিবাদ করে বলেছে, দরকার হলে আমরা ইউপিএ থেকে বেরিয়ে আসব। অবশ্য শরিক দলগুলো যেভাবে সুযোগ-সুবিধা আদায় করে নিয়েছে ও নিচ্ছে তারা স্বেচ্ছায় ইউপিএ থেকে বেরিয়ে আসবে_ এটা মনে করা ভুল। তারা বড়জোর আরও চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
কিন্তু ২০১৪ পর্যন্ত যে এ সরকার টিকবে_ তাও জোর দিয়ে বলা যায় না। তবে ২০১২ সালে ইউপি নির্বাচনে কংগ্রেস যদি দেখে তাদের অবস্থা বেশ ভালো তাহলে সোনিয়াই হয়তো এক বছর আগে তার দুর্বল সরকার ভেঙে দিয়ে নতুন করে সাধারণ নির্বাচনের জন্য সুপারিশ দেবেন। রাহুল তার জন্য তৈরি থাকবেন।
উত্তর প্রদেশই এখন তার ওয়াটার লু।
ড. পার্থ চট্টোপাধ্যায় : ভারতীয় সাংবাদিক
No comments