রুখতে হবে যৌতুক লোভীদের-যৌতুক দিয়ে সংসার কিছুতেই নয় _ফারজানা
মিডিয়া এবং সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে কথা বলতে বলতে ক্লান্ত ফারজানা। তারপরও সময় দিলেন। টেলিফোনে কথা হলো নারীস্থান প্রতিবেদক কনিকা হকের সঙ্গে। কথোপকথনের কিছু অংশ তুলে ধরা হলো_কেমন আছেন?ষষ ভালো আছি। হালকা লাগছে নিজেকে।ষ এক সপ্তাহ পার হতে চলল, কেমন অনুভূতি হচ্ছে আপনার?ষষ আলাদা কোনো অনুভূতি হচ্ছে না। কোনো পরিবর্তনও হয়নি জীবনে। আগের মতোই স্বাভাবিক চলছে জীবন।
তবে ভাবি, যে যৌতুকের বিরুদ্ধে আমি ছিলাম, কোনো মেয়ে অত্যাচারিত হলে আমার সীমিত গণ্ডি থেকে প্রতিবাদ করতাম। আমার জীবনে এমনটি ঘটে গেল। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পেরেছি_ এটা খুব ভালো লাগছে।
ষ এমন প্রতিবাদ করার সাহস কোথায় পেলেন?
ষষ আমি লেখাপড়া করেছি। আত্মমর্যাদা সম্পর্কে আমি যথেষ্ট সচেতন। আমি একটি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে চাকরি করি। নিজের পায়ে দাঁড়ানো আমার প্রথম লক্ষ্য। কিন্তু বাবা বিয়ে ঠিক করলেন। আমার ছোট বোন আছে। সবার কথা ভেবেই বিয়েতে মত দিই। যার সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয়েছে তিনি শিক্ষক। বিশ্বাস ছিল, শিক্ষক মানুষ, তার মধ্যে নীতিবোধ এবং আদর্শ থাকবে। বিয়ে ঠিক হয়েছে এক মাস আগে। তখন যৌতুকের কোনো কথা আসেনি। অথচ আমাকে যখন তার হাতে তুলে দেওয়া হবে তখন তার ফুফু ফ্রিজ, টিভি, মোটরসাইকেল দাবি করে বসলেন। তারা হয়ত ভেবেছিলেন উপহার হিসাবে এসব জিনিস এমনিতেই দেওয়া হবে। তা না হওয়াতে আসল রূপ প্রকাশ পেল। শুধু তাই নয়, না দেওয়া হলে আমাকে তুলে নেওয়া হবে না। আমি বিস্মিত হয়ে গেলাম এমন আচরণে। আমি জানতে চাইলাম বরের কাছে তার মতামত। তিনি জানালেন, তার ফুফুর সিদ্ধান্ত তার সিদ্ধান্তই। বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারিনি আমি। বারবার মনে হচ্ছিল, আমি কি পণ্য? এমন লোকের সঙ্গে কীভাবে সংসার করব! রুচিতে বাধছিল। আত্মমর্যাদাবোধই আমাকে সাহসী করে তুলেছিল।
জানালেন যৌতুক সম্পর্কে তার দেখা তিক্ত কিছু অভিজ্ঞতার কথা। বললেন, আশপাশে অনেককে দেখেছি যৌতুকের কারণে কি অমানুষিক নির্যাতন ভোগ করছে। তারপরও সংসার টিকিয়ে রাখতে চেষ্টা করে মেয়েগুলো। এমন সংসারের কী কোনো অর্থ আছে বলেন! যে একবার যৌতুক চায় সে বারবারই চায়।
ষ আপনার সিদ্ধান্তে আপনার বাবা-মায়ের সায় ছিল?
ষষ আমাদের সমাজব্যবস্থায় বাবা-মা এখনও এতটা উদার হয়নি। তারাও চাননি আমি তালাক দিই। একটা সমঝোতায় আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমি আমার সিদ্ধান্তে অটল ছিলাম।
ষ এখন কি তাদের সহযোগিতা পাচ্ছেন?
ষষ হ্যাঁ, তারা পুরোপুরি আমার সঙ্গে আছেন। আমাকে কোনোরকম দোষারোপ করছেন না। মিডিয়ার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ, তারা বিষয়টি সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। সবাই আমাকে সমর্থন জানিয়েছেন, আমাকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন। তাতে মনে হয়, আমি ভুল করিনি।
ষ জীবন কি এখন কিছুটা কঠিন হয়ে গেল ?
ষষ মেয়েদের জীবন এমনিতেই খুব সহজ নয়। তার ওপর নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে আমি। কঠিনের মধ্য দিয়েই তো এতদূর এগিয়েছি। কাজেই কী হবে না হবে তা জানি না। দেখুন, দীর্ঘদিন সংসার করেও অনেক মেয়ের সংসার ভেঙে যায়। তাই বলে কি তাদের জীবন শেষ হয়ে গেছে? বিয়েই জীবনের সবকিছু নয়। একজন নীতিভ্রষ্ট, অসৎ, প্রতারক মানুষের সঙ্গে সংসার করার চেয়ে না করাই ভালো বলে মনে করি আমি। তবে হ্যাঁ, কিছু কথা হয়তো শুনতে হবে আমাকে। যেমন_ হিরণের পরিবার বলা শুরু করেছে, আমার কারও সঙ্গে প্রেম আছে, তাকে বিয়ে করার জন্য আমি এমন করেছি। কিন্তু প্রেম করলে তো তাকে বিয়ে করতে রাজি হতাম না। আমার পরিবারে অতটুকু স্বাধীনতা আছে আমার। আমি এখন সামনে এগিয়ে যাওয়ার কথাই ভাবছি। এখন আমার একটা ভালো ও স্থায়ী চাকরি দরকার। আমি নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই এবং অসহায় দরিদ্র মেয়েদের জন্য কিছু করতে চাই।
ষ আপনি অফিস করছেন। কোনো সমস্যা হচ্ছে কি সেখানে?
ষষ না, অফিসে কেউ কোনো খারাপ মন্তব্য করেননি। এ ঘটনা আমার কাজে কোনো প্রভাব ফেলছে না। বরং সবাই আমাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। আমার বসও আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। এমন একটি সিদ্ধান্তে মানুষ যেভাবে আমাকে সমর্থন করেছেন। তাতে আমার দায়িত্ব অনেক বেড়ে গেছে। আমি অনুরোধ করব কোন মেয়ে যেন যৌতুক দিয়ে বিয়ে না করেন। আমাদের সাহসী হতে হবে এবং অভিভাবকদেরও সচেতন হতে হবে।
No comments