যিনি ছিলেন ক্রিকেটে বর্ণবাদবিরোধিতার প্রতীক

বাসিল ডি'অলিভেইরার শোকগাথায় কেন যেন লেখক জন আরলটের নামটা আগে চলে আসে! অশ্বেতাঙ্গ সাবেক এ ক্রিকেটারকে তো কেপটাউনের গলি থেকে টেস্ট ক্রিকেটের আঙিনায় তুলে এনেছিলেন তিনিই। এরপর অলিভেইরাকে কেন্দ্র করে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন শুরুর কাহিনী অনেকেরই জানা। সেই বাসিল, যাঁকে সুহৃদরা ডাকতেন 'ডলি' বলে, নশ্বর পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন শনিবার, ৮০ বছর বয়সে। মৃত্যুর কারণ, পার্কিনসন্স।


৪৪ টেস্টে ৪০ গড় নিয়ে যে কেউ গর্ব করতে পারেন। তবে বর্ণবাদ থেকে পরিত্রাণ পেতে জন আরলটের হাত ধরে ইংল্যান্ডে পাড়ি জমানো কিংবা ১৯৬৮ সালে ওভালে অ্যাশেজে নাটকীয়ভাবে সমতা আনা ১৫৮ রানের ইনিংসের চেয়ে বাসিল ডি'অলিভেইরার নামটা ইতিহাসে লেখা আছে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে ক্রিকেটের জোরালো প্রতিবাদ হিসেবে। ক্রিকেটে বিতর্ক আছে। তবে অলিভেইরাকে কেন্দ্র করে ইংল্যান্ড দলের দক্ষিণ আফ্রিকা সফর বাতিল করা সম্ভবত সব বিতর্কেরই শীর্ষে। সফরসূচি নিশ্চিত হওয়ার পর থেকে এ দুই দেশ তো বটেই, সে সময়কার পুরো ক্রিকেট-বিশ্বেরই প্রধান দেখার বিষয় ছিল অলিভেইরাকে স্কোয়াডে রাখবে তো ইংল্যান্ড? যদি রাখেও, দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার কি প্রবেশাধিকার দেবে? ওভালে ওরকম একটা ইনিংসের পরও দক্ষিণ আফ্রিকাগামী ১৬ জনের এমসিসি (তখন এ নামেই ক্রিকেট খেলত ইংল্যান্ড) স্কোয়াডে জায়গা হয়নি তাঁর। পরে টম কার্টরাইটের ইনজুরি বর্ণবাদের বিরুদ্ধে ব্যাট ধরার সুযোগ করে দিয়েছিল অলিভেইরাকে। কিন্তু এ অলরাউন্ডারকে দলভুক্ত করায় প্রকাশ্যে আপত্তি জানায় দক্ষিণ আফ্রিকা। সে আপত্তির কারণে শেষমেশ সফরটাই বাতিল করে দেয় এমসিসি।
যে দেশ তাঁকে এতটা সন্মান দিয়েছে, সেই ইংল্যান্ডের মাটিতেই মৃত্যুবরণ করেন বাসিল ডি'অলিভেইরা। তবে দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদের কালো ছায়া আর নেই। তাই প্রথম শোকবার্তাটাও দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নির্বাহী জেরার্ড মায়োলার, 'তিনি ছিলেন আত্মসম্মানবোধের অনন্য এক উদাহরণ। যাবতীয় প্রতিকূলতার মধ্যেও যিনি বিশ্বের দরবারে নিজের নাম লিখে গেছেন। আমরা শুধু ধারণা করতে পারি, যদি ২০ বছর বয়স থেকেই তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে খেলতে পারতেন, তাহলে আরো কত কীর্তি গড়ে যেতে পারতেন।'
ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি মিডিয়াম পেস বোলিংয়ে ৪৭ টেস্ট উইকেটও আছে বাসিল ডি'অলিভেইরার। গায়ের রঙের কারণে জন্মভূমি দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা সম্ভব নয় জেনে ল্যাঙ্কাশায়ার লিগ দিয়ে সে জগতে প্রবেশের পথ তৈরি করতে থাকেন তিনি। একসময় সে পথ তৈরি করেই ফেলেন অলিভেইরা। তত দিনে অবশ্য বয়স হয়ে গিয়েছিল ৩৫। মায়োলার আফসোস বাড়াবাড়ি নয়। যথাসময়ে সুযোগ পেলে আরো ক্রিকেটীয় কীর্তি গড়ে যেতেই পারতেন বাসিল ডি'অলিভেইরা।
অবশ্য রান আর উইকেটই কি জীবনের সব? বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের চরিত্র বাসিল ডি'অলিভেইরা আরো বড় জায়গা নিয়ে আছেন ইতিহাসে। ওয়েবসাইট

No comments

Powered by Blogger.