প্রবাসীদের টাকায় হতে পারে পদ্মা সেতু by তাসনীম সিদ্দিকী
অনিশ্চয়তাকে সঙ্গী করে বিদেশে গিয়ে, পরিবার-পরিজন থেকে বছরের পর বছর দূরে থেকে যাঁরা দেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা পাঠান, তাঁদের জন্য সরকারের কোনো প্রণোদনা নেই; নগদ সহায়তা, ভর্তুকি তাঁদের কপালে জোটে না। জরুরি প্রয়োজনে বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোয় গিয়ে ভালো ব্যবহারটুকুও পান না ওই শ্রমিকরা। বিনিয়োগের সুযোগ বা পরামর্শ না পেয়ে তাঁরা সঞ্চয়ের টাকা ব্যয় করেন জমি কেনা বা বাড়ি করার পেছনে।
কারো কারো জমানো টাকা অলস পড়ে থাকে ব্যাংকে। বিদেশ থেকে ফিরে আসার পর তাঁদের আর কিছুই করার থাকে না। কালের কণ্ঠের প্রতিবেদক রাজীব আহমেদের সঙ্গে আলাপকালে অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা সংস্থা রামরুর চেয়ারপারসন ড. তাসনীম সিদ্দিকী বলেন, উৎপাদনশীল খাতে রেমিট্যান্স ব্যবহার করার পরিবেশ রাষ্ট্রকেই তৈরি করতে হবে।
.
অনিশ্চয়তাকে সঙ্গী করে বিদেশে গিয়ে, পরিবার পরিজন থেকে বছরের পর বছর দূরে থেকে যাঁরা দেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা পাঠান, তাঁদের জন্য সরকারের কোনো প্রণোদনা নেই; নগদ সহায়তা, ভর্তুকি তাঁদের কপালে জোটে না। জরুরি প্রয়োজনে বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোয় গিয়ে ভালো ব্যবহারটুকুও পান না ওই শ্রমিকরা। বিনিয়োগের সুযোগ বা পরামর্শ না পেয়ে তাঁরা সঞ্চয়ের টাকা ব্যয় করেন জমি কেনা বা বাড়ি করার পেছনে। কারো কারো জমানো টাকা অলস পড়ে থাকে ব্যাংকে। বিদেশ থেকে ফিরে আসার পর তাঁদের আর কিছুই করার থাকে না। কালের কণ্ঠের প্রতিবেদক রাজীব আহমেদের সঙ্গে আলাপকালে অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা সংস্থা রামরুর (রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিট) চেয়ারপারসন ড. তাসনীম সিদ্দিকী বলেন, উৎপাদনশীল খাতে রেমিট্যান্স ব্যবহার করার পরিবেশ রাষ্ট্রকেই তৈরি করতে হবে।
গত অর্থবছর দেশে ১১ দশমিক ছয় বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছিল প্রবাসীদের পাঠানো আয় থেকে। পোশাক খাত বছরে ১২ বিলিয়ন ডলারের বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আয় করলেও এর ৬০ শতাংশের বেশি ব্যয় হয় ওই খাতের কাঁচামাল আমদানিতে। সে হিসাবে রেমিট্যান্স বা প্রবাসীদের পাঠানো অর্থই বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান খাত। ড. তাসনীম সিদ্দিকীর মতে, সরকার প্রবাসীদের কাছ থেকে রেমিট্যান্স আহরণে ব্যাপক সাফল্য দেখিয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে টাকা পাঠানোর ব্যবস্থা করায় অবৈধভাবে রেমিট্যান্স পাঠানো কমে গেছে। কিন্তু রেমিট্যান্সের টাকা বিনিয়োগে উৎসাহ দিতে তেমন ভূমিকা নেই সরকারের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ওই শিক্ষকের মতে, সেতু, রাস্তাঘাট, বন্দরসহ বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নে প্রবাসীদের কাছ থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় অর্থ নেওয়া যেতে পারে। এতে যেমন দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন হবে, তেমনি রেমিট্যান্সের টাকার ভালো ব্যবহার নিশ্চিত হবে। পাশাপাশি প্রবাসীরা দেশে ফেরার পর তাঁদের উৎপাদনশীল কাজে নিয়োজিত করতে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
ড. তাসনীম সিদ্দিকী বলেন, আইএলওর একটি গবেষণা অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রবাসীরা তাঁদের পাঠানো টাকার ৭ শতাংশ সঞ্চয় করতে পারেন। তবে তাঁরা পাঠানো টাকা দিয়ে কী করছে, তা অনেকাংশে নির্ভর করে তাঁরা কত বছর ধরে বিদেশে আছে তার ওপর। নতুন যাঁরা প্রবাসে যান, তাঁদের টাকা ঋণ শোধ ও সংসারের ব্যয় মেটাতে চলে যায়। এরপর আস্তে আস্তে তাঁরা টাকা জমাতে শুরু করেন। এই টাকা বীমা, ব্যাংকে জমা রাখা, জমি কেনাসহ বিভিন্ন সম্পদ সংগ্রহে ব্যয় করা হয়। পাশাপাশি এই টাকা থেকে অনেকে তাঁর এলাকায় সম্ভাব্য আয়বর্ধক খাতে বিনিয়োগ করছেন। কেউ কেউ উৎপাদনশীল খাতেও বিনিয়োগ করছেন। অনেকেই উৎপাদনশীল খাতের উদ্যোক্তা হতে আগ্রহী। তবে তাঁরা এ ক্ষেত্রে বেশ কিছু সমস্যার মুখে পড়েন।
কিছুদিন আগে রামরু যেসব প্রবাসী দেশে এসে উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ করে উৎপাদন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন, তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে 'সোনার মানুষ' বলে আখ্যায়িত করে সম্মাননা দিয়েছে। তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে তাঁরা ব্যাংকের ঋণ, ব্যবসা পরামর্শ ও প্রশিক্ষণের অভাব বোধ করে।
ড. তাসনীম বলেন, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের প্রবাসীদের ঋণ দেওয়ার কথা রয়েছে। তবে ওই ঋণ কিভাবে দেওয়া হবে, তার কোনো নীতিমালা এখনো তৈরি হয়নি। পাশাপাশি বিদেশফেরত শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেওয়ার কোনো সরকারি সেবাও এখন নেই।
তিনি মনে করেন, প্রবাসীদের টাকা দিয়েই পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্ভব। পাশাপাশি বন্দর, রাস্তাঘাটসহ অন্যান্য যে অবকাঠামো তৈরি করা প্রয়োজন, তার জন্য প্রবাসীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া যায়। এ জন্য সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের ভিত্তিতে প্রকল্প তৈরি করতে হবে। মুনাফার টাকা প্রবাসীদের দেওয়ার নিশ্চয়তা দিতে হবে। বৈদেশিক মুদ্রায় প্রবাসীদের কাছ থেকে এসব টাকা নেওয়া হবে বলে ওইসব প্রকল্পে বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজনও মিটবে বলে তিনি মনে করেন।
তবে পরিবারের পেছনে প্রবাসীদের যে ব্যয় হয়, তাকে অনুৎপাদনশীল খাত বলতে নারাজ ড. তাসনীম। তিনি মনে করেন, ওই খাতে ব্যয়ের ফলে পরিবারের সদস্যদের শিক্ষার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে, তাদের স্বাস্থ্যের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। এতে দেশের মানব সম্পদ উন্নয়ন হচ্ছে, স্বাস্থ্যের উন্নতি হচ্ছে। তিনি বলেন, এখন গ্রামেও ইংরেজিমাধ্যমের বিদ্যালয় হচ্ছে। এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগ রেমিট্যান্স গ্রহীতাদের পরিবারের সন্তান। কোনো সদস্য বিদেশে থাকলে পরিবারের অন্য সদ্যস্যরা অসুখ-বিসুখে ভালো চিকিৎসা পায়। এমনকি দূরের আত্মীয় ও গ্রামের মানুষরাও প্রবাসীদের কাছ থেকে চিকিৎসার জন্য সহায়তা পায়। রেমিট্যান্স প্রবাসীদের পরিবারের প্রবীণ সদস্যদের কাছে একটি নিশ্চয়তা হিসেবে কাজ করে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
.
অনিশ্চয়তাকে সঙ্গী করে বিদেশে গিয়ে, পরিবার পরিজন থেকে বছরের পর বছর দূরে থেকে যাঁরা দেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা পাঠান, তাঁদের জন্য সরকারের কোনো প্রণোদনা নেই; নগদ সহায়তা, ভর্তুকি তাঁদের কপালে জোটে না। জরুরি প্রয়োজনে বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোয় গিয়ে ভালো ব্যবহারটুকুও পান না ওই শ্রমিকরা। বিনিয়োগের সুযোগ বা পরামর্শ না পেয়ে তাঁরা সঞ্চয়ের টাকা ব্যয় করেন জমি কেনা বা বাড়ি করার পেছনে। কারো কারো জমানো টাকা অলস পড়ে থাকে ব্যাংকে। বিদেশ থেকে ফিরে আসার পর তাঁদের আর কিছুই করার থাকে না। কালের কণ্ঠের প্রতিবেদক রাজীব আহমেদের সঙ্গে আলাপকালে অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা সংস্থা রামরুর (রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিট) চেয়ারপারসন ড. তাসনীম সিদ্দিকী বলেন, উৎপাদনশীল খাতে রেমিট্যান্স ব্যবহার করার পরিবেশ রাষ্ট্রকেই তৈরি করতে হবে।
গত অর্থবছর দেশে ১১ দশমিক ছয় বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছিল প্রবাসীদের পাঠানো আয় থেকে। পোশাক খাত বছরে ১২ বিলিয়ন ডলারের বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আয় করলেও এর ৬০ শতাংশের বেশি ব্যয় হয় ওই খাতের কাঁচামাল আমদানিতে। সে হিসাবে রেমিট্যান্স বা প্রবাসীদের পাঠানো অর্থই বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান খাত। ড. তাসনীম সিদ্দিকীর মতে, সরকার প্রবাসীদের কাছ থেকে রেমিট্যান্স আহরণে ব্যাপক সাফল্য দেখিয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে টাকা পাঠানোর ব্যবস্থা করায় অবৈধভাবে রেমিট্যান্স পাঠানো কমে গেছে। কিন্তু রেমিট্যান্সের টাকা বিনিয়োগে উৎসাহ দিতে তেমন ভূমিকা নেই সরকারের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ওই শিক্ষকের মতে, সেতু, রাস্তাঘাট, বন্দরসহ বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নে প্রবাসীদের কাছ থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় অর্থ নেওয়া যেতে পারে। এতে যেমন দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন হবে, তেমনি রেমিট্যান্সের টাকার ভালো ব্যবহার নিশ্চিত হবে। পাশাপাশি প্রবাসীরা দেশে ফেরার পর তাঁদের উৎপাদনশীল কাজে নিয়োজিত করতে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
ড. তাসনীম সিদ্দিকী বলেন, আইএলওর একটি গবেষণা অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রবাসীরা তাঁদের পাঠানো টাকার ৭ শতাংশ সঞ্চয় করতে পারেন। তবে তাঁরা পাঠানো টাকা দিয়ে কী করছে, তা অনেকাংশে নির্ভর করে তাঁরা কত বছর ধরে বিদেশে আছে তার ওপর। নতুন যাঁরা প্রবাসে যান, তাঁদের টাকা ঋণ শোধ ও সংসারের ব্যয় মেটাতে চলে যায়। এরপর আস্তে আস্তে তাঁরা টাকা জমাতে শুরু করেন। এই টাকা বীমা, ব্যাংকে জমা রাখা, জমি কেনাসহ বিভিন্ন সম্পদ সংগ্রহে ব্যয় করা হয়। পাশাপাশি এই টাকা থেকে অনেকে তাঁর এলাকায় সম্ভাব্য আয়বর্ধক খাতে বিনিয়োগ করছেন। কেউ কেউ উৎপাদনশীল খাতেও বিনিয়োগ করছেন। অনেকেই উৎপাদনশীল খাতের উদ্যোক্তা হতে আগ্রহী। তবে তাঁরা এ ক্ষেত্রে বেশ কিছু সমস্যার মুখে পড়েন।
কিছুদিন আগে রামরু যেসব প্রবাসী দেশে এসে উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ করে উৎপাদন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন, তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে 'সোনার মানুষ' বলে আখ্যায়িত করে সম্মাননা দিয়েছে। তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে তাঁরা ব্যাংকের ঋণ, ব্যবসা পরামর্শ ও প্রশিক্ষণের অভাব বোধ করে।
ড. তাসনীম বলেন, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের প্রবাসীদের ঋণ দেওয়ার কথা রয়েছে। তবে ওই ঋণ কিভাবে দেওয়া হবে, তার কোনো নীতিমালা এখনো তৈরি হয়নি। পাশাপাশি বিদেশফেরত শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেওয়ার কোনো সরকারি সেবাও এখন নেই।
তিনি মনে করেন, প্রবাসীদের টাকা দিয়েই পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্ভব। পাশাপাশি বন্দর, রাস্তাঘাটসহ অন্যান্য যে অবকাঠামো তৈরি করা প্রয়োজন, তার জন্য প্রবাসীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া যায়। এ জন্য সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের ভিত্তিতে প্রকল্প তৈরি করতে হবে। মুনাফার টাকা প্রবাসীদের দেওয়ার নিশ্চয়তা দিতে হবে। বৈদেশিক মুদ্রায় প্রবাসীদের কাছ থেকে এসব টাকা নেওয়া হবে বলে ওইসব প্রকল্পে বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজনও মিটবে বলে তিনি মনে করেন।
তবে পরিবারের পেছনে প্রবাসীদের যে ব্যয় হয়, তাকে অনুৎপাদনশীল খাত বলতে নারাজ ড. তাসনীম। তিনি মনে করেন, ওই খাতে ব্যয়ের ফলে পরিবারের সদস্যদের শিক্ষার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে, তাদের স্বাস্থ্যের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। এতে দেশের মানব সম্পদ উন্নয়ন হচ্ছে, স্বাস্থ্যের উন্নতি হচ্ছে। তিনি বলেন, এখন গ্রামেও ইংরেজিমাধ্যমের বিদ্যালয় হচ্ছে। এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগ রেমিট্যান্স গ্রহীতাদের পরিবারের সন্তান। কোনো সদস্য বিদেশে থাকলে পরিবারের অন্য সদ্যস্যরা অসুখ-বিসুখে ভালো চিকিৎসা পায়। এমনকি দূরের আত্মীয় ও গ্রামের মানুষরাও প্রবাসীদের কাছ থেকে চিকিৎসার জন্য সহায়তা পায়। রেমিট্যান্স প্রবাসীদের পরিবারের প্রবীণ সদস্যদের কাছে একটি নিশ্চয়তা হিসেবে কাজ করে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
No comments