উচ্চ আদালতে বিচার 'ফেস ভ্যালু' দেখে হয়-ব্যারিস্টার রফিক-উল হক
ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা ও কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক। তিনি বলেছেন, আইনি রীতি-নীতি অনুসরণ করে নয়, উচ্চ আদালতে মামলার কাজ চলছে চেহারা দেখে। বিচার এখন আইনে হয় না,'ফেস ভ্যালু' দিয়ে হয়। অর্থাৎ মানুষটা কে, আইনজীবী কে, কোন রাজনৈতিক দলের_ এসব দেখে হচ্ছে। এ জন্য ভুক্তভোগীরা আদালতে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
গতকাল শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন আয়োজিত 'অ্যাকসেস টু জাস্টিস' শীর্ষক এক সেমিনারে সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ এ আইনজীবী এসব কথা বলেন। সেমিনারে বিচারক, আইন মন্ত্রণালয়, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, সাংবাদিক, র্যাব, পুলিশ ও বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বেশকিছু ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। সংগঠনের প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট এলিনা খানের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শহীদুল হক মলি্লক, র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার এম সোহায়েল, বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের উপ-পরিচালক (যুগ্ম জেলা জজ) মোহাম্মদ আল মামুন, ঢাকার জ্যেষ্ঠ মুখ্য মহানগর হাকিম মোঃ তাজুল ইসলাম ও মুখ্য মহানগর হাকিম ওয়াসিম শেখ, ঢাকার নারী ও শিশু আদালতের স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট আলী আজগর স্বপন, বেসরকারি টিভি চ্যানেল আরটিভির প্রধান প্রতিবেদক মাজাহারুল ইসলাম প্রমুখ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বলেন,
'শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়া বাংলাদেশের প্রধান দুই নেত্রী। তারা একে অপরের প্রতি সম্মান দেখাবেন, শ্রদ্ধা রেখে কথা বলবেন_ জনগণ এটাই চায়। এটাই যেখানে তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না সেখানে ন্যায়বিচার বিষয়ে আমরা নিজেরা বলে কী লাভ!' এ সময় 'মানবাধিকার' ও 'গণতন্ত্র' রক্ষায় সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হলে ব্যারিস্টার রফিক বলেন, ''এ দুটো বিষয় সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার বা পলিসি। সংবিধানে এ দুটি বিষয়কে জনগণের মৌলিক অধিকার হিসেবে যুক্ত করা হয়নি। আগে 'গণতন্ত্র' ও 'মানবাধিকার'_ এ দুটো বিষয় জনগণের মৌলিক অধিকার হিসেবে সংবিধানে সংযুক্ত করতে হবে। তা না হলে এ বিষয়ে আমাদের আলোচনায় লাভ হবে না।'' তিনি বলেন, বিচারক, আইনজীবী ও পুলিশকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। উচ্চ আদালতের অবস্থা এমন পর্যায়ে পেঁৗছেছে যে, বিচারের জন্য হাইকোর্টে মামলা নিয়ে যাওয়াটাও বড় পাপ। ১/১১-এর সময় থেকে জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা তাদের 'সম্মানী' এক-দুই লাখ টাকায় নির্ধারণ করেছেন। কারও টাকা থাকলেও উপায় নেই। বিচারক 'ফেস ভ্যালু' দেখে মামলা পরিচালনা করেন। বিচারকদের মানসিকতা পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়ে ব্যারিস্টার রফিক-উল হক আরও বলেন, 'উচ্চ আদালত চাইলে সিরিজ তথ্য-প্রমাণ দিতে পারব। তাতে আদালত অবমাননা হবে। এই বুড়ো বয়সে আমাকে নিয়ে টানাহেঁচড়া চাই না।'
সেমিনারে চিকিৎসকদের ভুয়া সার্টিফিকেট দেওয়ার ফলে মামলার বিচার কার্যক্রম প্রভাবিত হয় বলে অভিযোগ করা হয়। এর জবাবে ঢাকা মেডিকেল কলেজের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শহীদুল হক মলি্লক বলেন, গত ছয়-সাত মাসে পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে। এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে বিলবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার এম সোহায়েল অভিযোগ করে বলেন, 'জলদস্যু গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেলে দেশের প্রায় ৫০০ মানবাধিকার সংগঠন সোচ্চার হয়। অথচ পুলিশ বা আমি যদি সন্ত্রাসীদের হাতে মারা যাই তাহলে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর প্রতিক্রিয়া হয় না। এভাবে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হতে পারে না।'
বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের উপ-পরিচালক (যুগ্ম জেলা জজ) মোহাম্মদ আল মামুন বলেন, ন্যায়বিচার পাওয়া জনগণের অভিপ্রায়। সে অনুযায়ী আদালত সর্বোত্তম চেষ্টা করে থাকেন। মুখ্য মহানগর হাকিম ওয়াসিম শেখ বলেন, ঢাকার আদালতে এজলাস সংকট তীব্র। পর্যায়ক্রমে বিচারকদের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে জনগণের ভোগান্তি যেমন বাড়ছে তেমনি কমছে না মামলাজটও।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধে ফতোয়া, সীমা ধর্ষণ মামলার আলামত, ডিআইজি আনিসুর রহমানের সাত সন্তান মামলা, বিজয় রুদ্রের ঘটনা ও মামলাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।
No comments