'আমি শেখ হাসিনার প্রতিনিধি'

গুড়ার ঐতিহাসিক মহাস্থানগড় এলাকাটি শিবগঞ্জ ইউনিয়নের রায়নগর ইউনিয়নের মধ্যে অবস্থিত। স্বাভাবিক কারণে এই ইউনিয়নের গুরুত্ব অন্য ইউনিয়নের চেয়ে অনেক বেশি। সে কারণেই বগুড়া-২ শিবগঞ্জ আসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত এমপি শওকত আরার ডিও লেটারে (ডেলিভারি অর্ডার) এই ইউনিয়নের টিআর-কাবিখার একাধিক প্রকল্পও এসেছে। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।


ঘুষ দিয়ে কিনে নেওয়া এসব প্রকল্পের টাকা পুরোপুরিই আত্মসাৎ করা হয়েছে_এমন অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী শাহজাহান। তিনি জানান, এমপির মনোনীত কিছু দালাল রয়েছে। তারা প্রকল্প বিক্রি করে টাকা নেয়। ৫০ হাজার টাকার একটি প্রকল্পের জন্য দালালদের দিতে হয় ৩০ হাজার টাকা। টাকা না দিলে ডিও লেটার মিলে না। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, 'ধার করা এমপি দিয়ে এভাবে দলের কার্যক্রম চলতে পারে না। তাঁর এসব দুর্নীতির কারণে আমরা মানুষের কাছে মুখ দেখাতে পারি না। মানুষ ছি ছি করে।'
একই রকম অভিযোগ করেছেন শিবগঞ্জের বুড়িগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি কামরুল ইসলাম। তিনি জানান, মহাস্থানগড়ের এমপি শওকত আরার মনোনীত শাহীন নামের একজন দালাল রয়েছেন। তিনি মূলত চুক্তি ও কালেকশনের বিষয়টি দেখেন। কামরুল জানান, কিছু দিন আগে টিআর প্রকল্পের চার টন গমের ডিও লেটার নিতে তিনি এমপির দালাল শাহীনের কাছে ১৬ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। বাজারে এই চার টন গমের মূল্য হচ্ছে ৫২ হাজার টাকা। তিনি ভেবেছিলেন ১৬ হাজার টাকা বাদ দিয়ে যে টাকা থাকবে সেটা দিয়ে এলাকার একটি রাস্তার কাজ করাবেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে আরো বেশি টাকা পাওয়ায় মোকামতলার একজনের কাছে সেই ডিও লেটার বিক্রি করা হয়। তাঁর দেওয়া ১৬ হাজার টাকা ফিরিয়ে দেয় শাহীন।
এ ধরনের আরো একাধিক অভিযোগ রয়েছে বগুড়া-২ আসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মহিলা সংসদ সদস্য শওকত আরার বিরুদ্ধে।
ইতিমধ্যেই এই সংসদ সদস্যকে কেন্দ্র করে শিবগঞ্জে আওয়ামী লীগের মধ্যে দেখা দিয়েছে বিভাজন। দল-উপদলে বিভক্ত হয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।
শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা আরেফিন হক আফতাব বলেন, 'ভাই কী আর বলব। আমাদের এই এমপি তো পুলিশ দরদি। জনগণ, নেতা-কর্মীদের ব্যাপারে তাঁর কোনো খেয়াল না থাকলেও দরদ রয়েছে পুলিশের প্রতি। এ কারণেই তিনি শুরু করেছেন পুলিশের বদলি বাণিজ্য। মাত্র তিন বছরে পাঁচজন ওসি বদল করাই তাঁর বড় প্রমাণ।' ঘটনাটি জানতে শিবগঞ্জ থানায় গিয়ে দেখা গেছে, রেকর্ড অনুযায়ী ওসি হিসেবে এ বি এম জাহিদুল ইসলাম এসেছেন ২০০৮ সালের ৮ জুলাই। চলে গেছেন ২০১০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি। এরপর মিজানুর রহমান ২০১০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি এসে ১৫ অক্টোবর চলে যান। আবু মোকাদ্দেম আলী এসেছেন ১৫ অক্টোবর, গেছেন ২০১১ সালের ১৫ অক্টোবর, বিমান চন্দ্র দাস এসেছেন চলতি সালের ২ নভেম্বর, আর গেছেন একদিন পর অর্থাৎ ৩ নভেম্বর, সর্বশেষ হাবিবুর রহমান এসেছেন ৫ নভেম্বর। তিনি এখন পর্যন্ত আছেন। এমপির বিরুদ্ধে আরেফিন হক আফতাব অভিযোগ করেন, তিনি মোটা টাকার বিনিময়ে পুলিশের এই বদলি বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন।
রায়নগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী শাহজাহান জানান, মহাস্থানগড় রেস্ট হাউস রায়নগর ইউনিয়নের মধ্যে অবস্থিত। সংসদ সদস্য শওকত আরা শিবগঞ্জে এলে উপজেলা সদরে না গিয়ে পাঁচ কিলোমিটার দূরের এই রেস্টহাউসে ওঠেন। শাহজাহান আলী জানান, তিনি একবার সংসদ সদস্য শওকত আরাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, 'ম্যাডাম আপনি আমার এলাকায় এসে থাকেন, হাতে গোনা দুই একজনের সঙ্গে বৈঠক করেন, সেটা আমাদের জানান না কেন? জানলে আমরাও আপনার সঙ্গে বসতে পারি।' উত্তরে সংসদ সদস্য তাঁকে বলেন, 'আমি শেখ হাসিনার প্রতিনিধি। এগুলো আপনাদের জানাতে হবে কেন। আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে সরাসরি শেখ হাসিনাকে জানান। আপনাদের সঙ্গে আমার কোনো দরকার নেই।'
তবে এত সব অভিযোগ প্রসঙ্গে সংসদ সদস্য শওকত আরা বেগমের সঙ্গে কালের কণ্ঠের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'এলাকায় আওয়ামী লীগে কোনো বিভাজন নেই। আপনারা এতদিন কোনো খোঁজ নিলেন না, এখন হঠাৎ করে খোঁজ নেওয়া শুরু করলেন কেন? অন্যান্য অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি কোনো কথা বলতে চাননি। তার আগেই মোবাইল ফোনের লাইন কেটে দেন।

No comments

Powered by Blogger.