অচলায়তন ভাঙার গান by অর্ক জ্যোতি
এই বাংলাদেশেই মেয়েদের বলা হতো অবরোধবাসিনী। এই নামে রোকেয়া সাখাওয়াৎ হোসেনের একটা সুন্দর প্রবন্ধের বইও আছে। কিন্তু আলোচনার বিষয় সেটা নয়। আমরা ক্রিকেটে অবরোধবাসিনীদের কথা বলব। যারা এখন ব্যাট আর বল হাতে অচলায়তন ভাঙার গান গাইছে।ঢাকায় এখন চলছে মহিলা বিশ্বকাপ ক্রিকেটের বাছাই পর্ব। খেলছে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আয়ারল্যান্ড, আমেরিকাসহ মোট দশটি দেশ। তো দেশগুলোর নারী স্বাধীনতার চিত্র
বিচার করলে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও জিম্বাবুয়েকে অনগ্রসরই বলতে হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সামাজিক সব ক্ষেত্রেই এসব দেশের নারীরা অনগ্রসর। কিন্তু সেই পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর নারীরাই কিন্তু ব্যাট-বল হাতে নিজ নিজ দেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন। এই প্রচেষ্টাকে অচলায়তন ভাঙার গান অবশ্যই বলা যায়।
স্থানীয় এক হোটেলে মহিলা বিশ্বকাপ ক্রিকেটের বাছাই পর্ব শুরুর আগে চলছিল আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন। স্থানীয় সাংবাদিকরা প্রশ্ন করছিলেন দশ দলের অধিনায়কদের। মাঝখানে বসা ছিলেন বাংলাদেশ মহিলা দলের অধিনায়ক সালমা। কেমন যেন জড়সড় এবং কুণ্ঠিত চেহারা। তার কৃশকায় অনুজ্জ্বল অভিব্যক্তি পাঁচতারা হোটেলের সম্মেলন কক্ষে ঠিক মানাচ্ছিল না। পাকিস্তানি অধিনায়ক সানা মীর অবশ্য ছিলেন স্বতঃস্ফূর্ত এবং উচ্ছল। দারুণ ইংরেজি বলছিলেন। পরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পেশাদার জীবনে তিনি একজন ডেন্টিস্ট। বোঝা যাচ্ছে, পাকিস্তানের মতো রক্ষণশীল এবং তালেবান প্রভাবিত সমাজেও প্রতিষ্ঠিত মেয়েরা ক্রিকেট খেলতে কুণ্ঠিত হন না। কিন্তু বাংলাদেশে এর উল্টো চিত্রই বিদ্যমান। বাংলাদেশ দলের পক্ষে যারা মহিলা বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে অংশগ্রহণ করছেন সেই সালমাদের ক্রিকেটের বাইরের পরিচয় খুব জোরালো নয়। পেশাগত জীবনে তারা কেউ সানা মীরের মতো প্রতিষ্ঠিতও নন। উঠে এসেছেন সমাজের নীচুতলা থেকে। তাই তাদের পারফরম্যান্স নিয়ে প্রশ্ন তোলার আগে ওঠে আসার ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে দশবার ভাবা উচিত। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের এক কর্মকর্তা তো রীতিমতো আক্ষেপের সুরে বলেছেন, 'আমরা মেয়েদের নিয়ে স্কুল ক্রিকেট শুরু করার অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু অভিভাবকদের পক্ষ থেকে নূ্যনতম সাহায্যও পাইনি। কেন জানেন? লম্বা সময় ধরে ক্রিকেট খেললে নাকি মেয়েদের চেহারা নষ্ট হয়ে যাবে। তাছাড়া পড়াশোনার ফাঁকে ওত সময়ই বা কোথায়।' মন্তব্যটা কিন্তু ভেবে দেখার মতো। আমার, আপনার কথাই ধরুন। ঘরের মেয়েদের ক্রিকেট খেলার ব্যাপারে আমরা কিন্তু এক ধরনের রক্ষণশীল মানসিকতার মধ্যে বন্দি হয়ে আছি। সহজে চাইব না আমাদের মেয়ে-বোনরা ক্রিকেট খেলুক। বল-ব্যাট হাতে ছুটে বেড়াক বাইশ গজের মধ্যে। ঠিক এই কারণেই দক্ষ-স্বতঃস্ফূর্ত ক্রিকেটঅন্তপ্রাণ প্রমীলা দল গঠনে সমস্যায় পড়তে হয় নির্বাচকদের। কেউ পারফরম্যান্স খারাপ করলেও বিকল্পের অভাবে তাকে বাদ দেওয়া সম্ভব হয় না। ক্ষোভের সুরে তাই আকরাম খান বলেন, 'মেয়েদের দল গঠনে কত সমস্যা আপনারা তা ভাবতেও পারবেন না। ছেলেদের মতো এখানে খেলোয়াড় তুলে আনার মতো কোনো একাডেমী নেই। ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেও তারা দক্ষতা যাচাই করতে পারে না। তাই প্রতিবন্ধকতা নিয়ে এই পারফরম্যান্সেই খুশি থাকতে হয় আমাদের।' এই যদি অবস্থা হয় তাহলে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের মতো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট আয়োজন করে আমাদের লাভ কী। লাভ অবশ্যই আছে। এই টুর্নামেন্ট বাংলাদেশে মহিলা ক্রিকেটের ক্ষেত্র প্রসারিত করবে। সঙ্গে ভাঙবে রক্ষণশীল মনোভাবের অচলায়তন।
ওয়ানডে স্ট্যাটাস
ওয়ানডে স্ট্যাটাস পাওয়ার জন্য এবারের বিশ্বকাপ বাছাইয়ে সেরা ছয় দলের মধ্যে থাকতে হবে বাংলাদেশকে। এরমধ্যে প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে হেরে গেলেও পরের দুটি ম্যাচে জাপান ও আয়ারল্যান্ডকে হারিয়ে 'বি' গ্রুপের তৃতীয় স্থান প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেছে বাংলাদেশের মেয়েরা। তবে গ্রুপের তৃতীয় স্থান নিশ্চিত মানে ওয়ানডে স্ট্যাটাস নিশ্চিত না। স্থান নির্ধারণী ম্যাচ খেলে ষষ্ঠ স্থান নিশ্চিত করতে পারলেই পাওয়া যাবে ওয়ানডে স্ট্যাটাস।
সেঞ্চুরি
ছেলেদের ক্রিকেটের মতো মেয়েদের ক্রিকেটে ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং স্বভাবতই এত উঁচু মানের হওয়ার কথা নয়। তার ওপর সেরা চারটি দল নেই। তবে বাছাই পর্বে ব্যাটিং খারাপ হচ্ছে না। প্রথম দিনে সেঞ্চুরি করেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই ওপেনার আইসিসির বর্ষসেরা নারী ক্রিকেটার স্টেফানি টেলর এবং জুলিয়ানা নেরো।
বোলিং
সেঞ্চুরির পাশাপাশি বল হাতেও নৈপুণ্য কম দেখাচ্ছে না বাছাই পর্ব খেলতে আসা মেয়েরা। এরমধ্যে শ্রীলংকার ডানহাতি মিডিয়াম পেসার চামানি রশি্ন সেনেভিরত্নে পাঁচ উইকেট নিয়েছেন। পাঁচ উইকেট পেয়েছেন আয়ারল্যান্ডের রিচার্ডসনও। তবে এখন পর্যন্ত সেরা বোলিং বাংলাদেশি স্পিনার খাদিজা তুল কুবরার এবং দক্ষিণ আফ্রিকার শবনমি ইসমালের। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৬ উইকেট নিয়েছেন কুবরা আর ডাচদের বিপক্ষে ৬ উইকেট নিয়েছেন শবনমি।
অলরাউন্ডার
এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকজন অলরাউন্ডারের দেখা পাওয়া গেছে মহিলা বাছাই পর্বে। এরমধ্যে ব্যাটে-বলে সেরা নৈপুণ্য দেখিয়েছেন আয়ারল্যান্ডের এইমেয়ার রিচার্ডসন। তিনি জাপানের বিরুদ্ধে ব্যাট হাতে হাফ সেঞ্চুরি করার পর বল হাতেও পাঁচ উইকেট নিয়েছেন।
স্থানীয় এক হোটেলে মহিলা বিশ্বকাপ ক্রিকেটের বাছাই পর্ব শুরুর আগে চলছিল আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন। স্থানীয় সাংবাদিকরা প্রশ্ন করছিলেন দশ দলের অধিনায়কদের। মাঝখানে বসা ছিলেন বাংলাদেশ মহিলা দলের অধিনায়ক সালমা। কেমন যেন জড়সড় এবং কুণ্ঠিত চেহারা। তার কৃশকায় অনুজ্জ্বল অভিব্যক্তি পাঁচতারা হোটেলের সম্মেলন কক্ষে ঠিক মানাচ্ছিল না। পাকিস্তানি অধিনায়ক সানা মীর অবশ্য ছিলেন স্বতঃস্ফূর্ত এবং উচ্ছল। দারুণ ইংরেজি বলছিলেন। পরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পেশাদার জীবনে তিনি একজন ডেন্টিস্ট। বোঝা যাচ্ছে, পাকিস্তানের মতো রক্ষণশীল এবং তালেবান প্রভাবিত সমাজেও প্রতিষ্ঠিত মেয়েরা ক্রিকেট খেলতে কুণ্ঠিত হন না। কিন্তু বাংলাদেশে এর উল্টো চিত্রই বিদ্যমান। বাংলাদেশ দলের পক্ষে যারা মহিলা বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে অংশগ্রহণ করছেন সেই সালমাদের ক্রিকেটের বাইরের পরিচয় খুব জোরালো নয়। পেশাগত জীবনে তারা কেউ সানা মীরের মতো প্রতিষ্ঠিতও নন। উঠে এসেছেন সমাজের নীচুতলা থেকে। তাই তাদের পারফরম্যান্স নিয়ে প্রশ্ন তোলার আগে ওঠে আসার ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে দশবার ভাবা উচিত। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের এক কর্মকর্তা তো রীতিমতো আক্ষেপের সুরে বলেছেন, 'আমরা মেয়েদের নিয়ে স্কুল ক্রিকেট শুরু করার অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু অভিভাবকদের পক্ষ থেকে নূ্যনতম সাহায্যও পাইনি। কেন জানেন? লম্বা সময় ধরে ক্রিকেট খেললে নাকি মেয়েদের চেহারা নষ্ট হয়ে যাবে। তাছাড়া পড়াশোনার ফাঁকে ওত সময়ই বা কোথায়।' মন্তব্যটা কিন্তু ভেবে দেখার মতো। আমার, আপনার কথাই ধরুন। ঘরের মেয়েদের ক্রিকেট খেলার ব্যাপারে আমরা কিন্তু এক ধরনের রক্ষণশীল মানসিকতার মধ্যে বন্দি হয়ে আছি। সহজে চাইব না আমাদের মেয়ে-বোনরা ক্রিকেট খেলুক। বল-ব্যাট হাতে ছুটে বেড়াক বাইশ গজের মধ্যে। ঠিক এই কারণেই দক্ষ-স্বতঃস্ফূর্ত ক্রিকেটঅন্তপ্রাণ প্রমীলা দল গঠনে সমস্যায় পড়তে হয় নির্বাচকদের। কেউ পারফরম্যান্স খারাপ করলেও বিকল্পের অভাবে তাকে বাদ দেওয়া সম্ভব হয় না। ক্ষোভের সুরে তাই আকরাম খান বলেন, 'মেয়েদের দল গঠনে কত সমস্যা আপনারা তা ভাবতেও পারবেন না। ছেলেদের মতো এখানে খেলোয়াড় তুলে আনার মতো কোনো একাডেমী নেই। ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেও তারা দক্ষতা যাচাই করতে পারে না। তাই প্রতিবন্ধকতা নিয়ে এই পারফরম্যান্সেই খুশি থাকতে হয় আমাদের।' এই যদি অবস্থা হয় তাহলে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের মতো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট আয়োজন করে আমাদের লাভ কী। লাভ অবশ্যই আছে। এই টুর্নামেন্ট বাংলাদেশে মহিলা ক্রিকেটের ক্ষেত্র প্রসারিত করবে। সঙ্গে ভাঙবে রক্ষণশীল মনোভাবের অচলায়তন।
ওয়ানডে স্ট্যাটাস
ওয়ানডে স্ট্যাটাস পাওয়ার জন্য এবারের বিশ্বকাপ বাছাইয়ে সেরা ছয় দলের মধ্যে থাকতে হবে বাংলাদেশকে। এরমধ্যে প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে হেরে গেলেও পরের দুটি ম্যাচে জাপান ও আয়ারল্যান্ডকে হারিয়ে 'বি' গ্রুপের তৃতীয় স্থান প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেছে বাংলাদেশের মেয়েরা। তবে গ্রুপের তৃতীয় স্থান নিশ্চিত মানে ওয়ানডে স্ট্যাটাস নিশ্চিত না। স্থান নির্ধারণী ম্যাচ খেলে ষষ্ঠ স্থান নিশ্চিত করতে পারলেই পাওয়া যাবে ওয়ানডে স্ট্যাটাস।
সেঞ্চুরি
ছেলেদের ক্রিকেটের মতো মেয়েদের ক্রিকেটে ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং স্বভাবতই এত উঁচু মানের হওয়ার কথা নয়। তার ওপর সেরা চারটি দল নেই। তবে বাছাই পর্বে ব্যাটিং খারাপ হচ্ছে না। প্রথম দিনে সেঞ্চুরি করেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই ওপেনার আইসিসির বর্ষসেরা নারী ক্রিকেটার স্টেফানি টেলর এবং জুলিয়ানা নেরো।
বোলিং
সেঞ্চুরির পাশাপাশি বল হাতেও নৈপুণ্য কম দেখাচ্ছে না বাছাই পর্ব খেলতে আসা মেয়েরা। এরমধ্যে শ্রীলংকার ডানহাতি মিডিয়াম পেসার চামানি রশি্ন সেনেভিরত্নে পাঁচ উইকেট নিয়েছেন। পাঁচ উইকেট পেয়েছেন আয়ারল্যান্ডের রিচার্ডসনও। তবে এখন পর্যন্ত সেরা বোলিং বাংলাদেশি স্পিনার খাদিজা তুল কুবরার এবং দক্ষিণ আফ্রিকার শবনমি ইসমালের। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৬ উইকেট নিয়েছেন কুবরা আর ডাচদের বিপক্ষে ৬ উইকেট নিয়েছেন শবনমি।
অলরাউন্ডার
এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকজন অলরাউন্ডারের দেখা পাওয়া গেছে মহিলা বাছাই পর্বে। এরমধ্যে ব্যাটে-বলে সেরা নৈপুণ্য দেখিয়েছেন আয়ারল্যান্ডের এইমেয়ার রিচার্ডসন। তিনি জাপানের বিরুদ্ধে ব্যাট হাতে হাফ সেঞ্চুরি করার পর বল হাতেও পাঁচ উইকেট নিয়েছেন।
No comments