দক্ষিণ এশীয় সোশ্যাল ফোরাম-জনগণের ঐক্যই পরিবর্তনের চাবিকাঠি
রাষ্ট্রীয় বৈষম্য ও বহুজাতিক আধিপত্যের বিপরীতে জনগণের সঙ্গে জনগণের ঐক্যের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়াকে বদলে দেওয়ার আহ্বান ধ্বনিত হয়েছে গত শুক্রবার ঢাকায় শুরু হওয়া আঞ্চলিক ফোরাম থেকে। অদলীয় সামাজিক ফোরাম বিশ্ব সোশ্যাল ফোরামের আদলে শুরু হওয়া দক্ষিণ এশীয় সোশ্যাল ফোরাম তাদের এই নাগরিক উদ্যোগের মাধ্যমে গোটা অঞ্চলের জনগণকে শোষণ, বঞ্চনা, নির্যাতন, দারিদ্র্য, ক্ষুধা থেকে মুক্তি এবং মানবাধিকার সংরক্ষণ ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার তাগিদ দেয়।
ফোরামের ঘোষিত নীতি ও কর্মসূচির মধ্যে সবার উপরে জনগণের ক্ষমতা ও কর্তৃত্বকে স্থান দেওয়া হয়েছে। সমাজকে রূপান্তর করতে হলে গণতন্ত্র সর্বোত্তম উপায়_ এই সত্যটি এবারের ফোরামের মূল প্রতিপাদ্য হওয়ার মূল কারণ সম্ভবত এই অঞ্চলের অধিকাংশ দেশেই এখনও গণতন্ত্র শক্ত ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি বলেই। গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে হলে জনগণের সক্রিয়তার যে বিকল্প নেই, তা তো স্বতঃসিদ্ধ। আর জনগণকে সক্রিয় সামাজিক শক্তি হিসেবে সংগঠিত আকারে পেতে হলে তাদের সামনে শোষণ-বঞ্চনা, দারিদ্র্যের মূল কারণগুলো উন্মোচিত করে এ সম্পর্কে প্রকৃত উপলব্ধি জাগ্রত করতে হবে। দক্ষিণ এশিয়ায় নাগরিক সচেতনতা সৃষ্টিতে অবদান রাখতে পারে এই ফোরামের মতো সামাজিক ফোরামগুলো। ঢাকায় অনুষ্ঠিত ফোরামের আলোচনায় ইতিমধ্যে কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ সংগঠক ও বিশিষ্ট নাগরিক অংশ নিয়েছেন। দক্ষিণ এশিয়া ছাড়াও বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের সামাজিক আন্দোলনের সংগঠক ও বিশিষ্টজনেরা আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন। বিভিন্ন বিষয়ে তাদের সারগর্ভ বক্তব্য ও কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের জনগণ, দক্ষিণ এশিয়া এমনকি অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দুর্যোগকবলিত বিশ্বের অনেক মানুষ সাগ্রহে পর্যবেক্ষণ করছেন। ঢাকায় অনুষ্ঠানরত ফোরাম শোষণ, বঞ্চনা, দারিদ্র্য, বহুজাতিক করপোরেশনের আধিপত্যের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে সামান্যও যদি অবদান রাখতে সক্ষম হয়, তাহলেই এ ধরনের আঞ্চলিক মহা-আয়োজনের সার্থকতা মিলবে। ভারতের প্রবীণ সাংবাদিক কুলদীপ নায়ার দক্ষিণ এশিয়ার অগ্রগতির জন্য এই অঞ্চলের দেশ অগ্রসর ভারতকেই অপরাপর দেশের সাহায্যে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। আসলে ভারতের ইতিবাচক মনোভাব গ্রহণের ওপরই নির্ভর করছে দক্ষিণ এশিয়ার একাঙ্গীকরণের বাধা দূর হওয়ার বিষয়টি। তবে ভারতের উন্নয়নের ফসলও সে দেশের গরিষ্ঠ মানুষ পাচ্ছে না। সামাজিক আন্দোলন উন্নয়নের সুফল যাতে ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণী-জাতপাত নির্বিশেষে সবার ঘরে পেঁৗছে তার তাগিদ দেয় এবং নিজেদের পাওনা ও অধিকার বুঝে নিতে সাধারণ মানুষকে সচেতন-সক্রিয় করে তোলে। আমরা সবাই জানি, দক্ষিণ এশিয়ার অধিকাংশ দেশে গণতন্ত্র এখনও ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে। অধিকাংশ দেশে সুশাসন, ন্যায়বিচার, মানবাধিকার উপেক্ষিত থাকছে। এ কারণে জনগণের সব অংশ সমানভাবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে উপকৃত হচ্ছে না। সামাজিক অসাম্য ও উচ্চ-নীচ ব্যবধান প্রকট থেকে প্রকটতর হচ্ছে। সরকারগুলো এসব ব্যাপারে নিজেদের থেকেই উদ্যোগ নেবে_ তার লক্ষণ নেই। এমনকি ভারতের মতো বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রেও দুর্নীতি-অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে নাগরিক সমাজকে রাস্তার আন্দোলনে নেমে, জেল-জুলুম সয়ে সরকারকে পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য করার উদ্যোগ নিতে হয়েছে। তাই দক্ষিণ এশিয়ায় সামাজিক পরিবর্তনের জন্য জনগণের সঙ্গে জনগণের ঐক্য গড়ে তোলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষিণ এশীয় সোশ্যাল ফোরাম এ ক্ষেত্রে প্রভাবদায়ী ভূমিকা পালন করতে পারে।
No comments