চরাচর-ব্যাপ্তিতে বিশাল একটি বাড়ি
স্বাধীনতাসংগ্রামের অন্যতম রূপকার ও সংগঠক, মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় চার নেতার অন্যতম কিংবা বাংলার তাজ_যেকোনো বিশেষণ বা উপাধি ছাড়িয়ে যায় যাঁর নাম, তিনি (বঙ্গতাজ) শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ। গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া থানার দরদরিয়া গ্রামে তাজউদ্দীন আহমদের জন্ম ১৯২৫ সালের ২৩ জুলাই। কাপাসিয়া থেকে ১০ কিলোমিটার উত্তরে ছায়া সুনিবিড়, শান্ত, নির্মল ও কোলাহলমুক্ত গ্রামের নাম দরদরিয়া। কাপাসিয়ার উত্তরে
মৈশন মিয়ার বাজার থেকে উত্তর-পশ্চিম দিকে সরু কিন্তু পাকা রাস্তাটি চলে গেছে দরদরিয়ার দিকে। রাস্তার দুই ধারে আখ কিংবা ধানের বিস্তীর্ণ মাঠ এবং আম--জাম-কাঁঠালের সারি ছাড়িয়ে শুধু শালবন। শ্যামল আর সবুজের অপার সমারোহ। এভাবে পাঁচ কিলোমিটার পথ পার হলেই হাতের ডান পাশে মাঠ, মসজিদ। মসজিদের উত্তর পাশে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ পাঠাগার। পাঠাগার পার হলেই ফুলে ফুলে শোভিত একটি বাড়ি। বাড়ির মূল ঘরটি মাটির তৈরি। মাটির তৈরি দোতলা ঘর। প্রথম তলার ছাদ বা দ্বিতীয় তলার ফ্লোরটি শক্ত ও মজবুত কাঠ দিয়ে তৈরি। এ ছাড়া দোতলায় আছে ঝুলবারান্দা। এটিও কাঠ দিয়ে তৈরি। ঝুলবারান্দায় দাঁড়ালে চোখের সামনে ভেসে ওঠে বিশাল পুকুর। পুকুরপাড়ে সারি সারি নারিকেলগাছ। নারিকেলের সারি পেরিয়ে বিশাল আম-কাঁঠালের বাগান। এটিই বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী শহীদ তাজউদ্দীন আহমদের বাড়ি। রঙ্গন, বাগানবিলাস ও মৌছন্দা ফুলে ঢাকা বাড়িটির অভ্যন্তরে আরো অনেক বেশি ফুল ফুটে আছে। সামনের বড় পুকুরটি নারিকেলগাছে আচ্ছাদিত থাকলেও নেই কোনো বাঁধানো ঘাট। যেমন নেই বাড়ির চারপাশে কোনো সীমানাপ্রাচীর বা নিরাপত্তাবেষ্টনী। উত্তর ও পশ্চিম পাশেও আম-কাঁঠালের বাগান। এরপর খানিকটা শস্যমাঠ পেরিয়ে বিস্তীর্ণ শালবন। বাড়িটির সামনে বা পেছনে দাঁড়ালে চোখে ভেসে থাকে সুবিশাল আকাশ, যেন তা জাতীয় নেতার হৃদয়ের বিশালতার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এ এক অন্য রকম অনুভূতি। অনুভূতির তীব্রতা আরো বাড়ে, যখন মাটির ঘরে থাকা এই মহান নেতার ব্যবহার্য কাঠের চৌকিতে হাতের স্পর্শ লাগে। মন কিছুতেই বিশ্বাস করতে চায় না, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ এ চৌকিতে ঘুমাতেন। এ ছাড়া কলকাতা থেকে প্রকাশিত তিন টাকা দামের বইগুলোতেও যেন তাঁর হাতের স্পর্শ লেগে আছে। কোথাও কোনো জৌলুস নেই, নেই আড়ম্বর। এ যেন ঠিক মুকুটহীন বা তাজবিহীন তাজউদ্দীনের মতো জৌলুসহীন, অনাড়ম্বর, কিন্তু অসাধারণ! বাঙালি জাতির এই মহান নেতার মতোই তাঁর বাড়িটি সাদাসিধা কিন্তু ব্যাপ্তিতে বিশাল। শহীদ তাজউদ্দীন আহমদের বাড়িটি যেন বাঙালির স্বাধীনতাস্পৃহার বিমূর্ত প্রতীক।
সাইফুল ইসলাম খান
সাইফুল ইসলাম খান
No comments