সজীব ওয়াজেদ জয়, আপনাকেই কিছু কথা by শাখাওয়াৎ নয়ন
একবার এক রাজা তাঁর সভাসদদের বললেন, যাও
তোমরা আমার পক্ষ থেকে দেশের মানুষকে ভালোবাসা পৌঁছে দাও। রাজার আদেশ
বাস্তবায়নে তাঁর কর্মীবাহিনী হন্তদন্ত হয়ে পড়লো। তারা রাজার ভালোবাসা
প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে দেশের মানুষকে চুমু দেয়ার সিদ্ধান্ত নিল।
কার্যত ফলাফল হলো অন্যরকম। তারা চুমু দেয়ার পরিবর্তে দেশের মানুষকে কামড় দিয়ে দিয়ে রক্তাক্ত করে ফেললো।
সম্প্রতি, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজয়ের কারণ অনুসন্ধানে দলটির কর্তাব্যক্তিরা এবং বুদ্ধিজীবীরা বলেছেন, আওয়ামী লীগ তাঁর সাফল্যসমুহ জনগণের কাছে ঠিকমত তুলে ধরতে পারেনি। তাই এমন ভরাডুবি হয়েছে। সুতরাং সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রচার করতে গিয়ে ঢাকা শহরের ৮০% বিলবোর্ড বিনা নোটিশে দখল করে ফেলেছে। ভালো কাজ করতে গিয়ে খারাপ কাজ করে ফেলেছে।
সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আশাতীত সাফল্যের কারণে বিএনপির হালে ভালই পানি পেয়েছে। সুযোগ কে ছাড়ে? তাই অবস্থা বুঝে জিয়াতনয় তারেক রহমানের শরীর স্বাস্থ্যও ভালো হওয়া শুরু করেছে। মোক্ষম সময়ে তাহার আগমনী বার্তা বাঙ্গাল মুল্লুকে প্রচার শুরু হলো। আপনাদের দল আওয়ামী লীগ আর যায় কোথায়? উপায় খুব একটা হাতে নাই, বাকি আছে একটাই।
তলোয়ারের বিপরীতে তলোয়ার। পুত্রের বিরুদ্ধে পুত্র। যথারীতি ভেপু বাজিয়ে মাতৃসালতানাতে আপনার আগমন বঙ্গবাসী প্রত্যক্ষ করিল। আপনি এসেই আপনার প্রতিপক্ষকে ভালোই ঘায়েল করেছেন। তারেক রহমানকে মিডিয়া থেকে সাফল্যের সাথে যথাসম্ভব বিদায় করতে পেরেছেন। প্রাথমিক ফলাফল- জিপিএ ৫। একথা না বলে উপায় নাই।
কয়েকদিন আগে একটি টেলিভিশন চ্যানেলে আপনার একটি সাক্ষাৎকার দেখলাম। আপনার বাংলা বলার ধরন অনেকটা ন্যাশনাল জিওগ্রাফি চ্যানেলের বাংলা অনুবাদের ভাষার মতো। তাতে কি? লেখাপড়ায় যে আপনি তারেক রহমানের থেকে অনেক ভালো একথা সবাই স্বীকার করবে। আর বাংলা ভাষাজ্ঞান কিংবা উচ্চারণ? এসব কোনো সমস্যা না।
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানও বাংলা ভালোভাবে বলতে পারতেন না। তিনিও আপনার মতই বিদেশে বড় হয়েছেন। পার্থক্য শুধু তিনি পাকিস্তানে আর আপনি ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রে। তিনি কথায় কথায় ইংরেজি বলতেন। বাংলাদেশের মানুষ ইংরেজি জানা লোকদেরকে বিরাট জ্ঞানী মনে করে। আর হাল আমলে কম্পিউটার জানলে তো কথাই নাই।
কিছুদিন আগে কিছু বিদ্যান(অনেকে তাদেরকে দুর্জনও বলে) লোক যেমন মওদুদ আহমেদ, এমাজউদ্দিন আহমেদ, মনিরুজ্জান সাহেবরা তারেক রহমানকে পারলে দার্শনিক বানিয়ে ফেলার চেষ্টা করেছেন। ‘প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ভাবনা’ নিয়ে নাকি তারেক রহমান বিস্তর কাজ করেছেন, স্বপ্ন দেখেছেন। সাবেক পদাধিকারীরা এবং ভবিষ্যতে বড় পদপ্রত্যাশীরা সবিস্তারে তাহা লিপিবদ্ধ করিয়া ‘এনসাইক্লোপিডিয়া অফ চাট্টুকারিতা’য় একখানি নতুন বই সংযোজন করিয়াছেন। যদিও আমরা এতকাল এসবের কিছুই জানতে পারি নাই।
টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে আপনি নিজে দাবি করিয়াছেন, গত নির্বাচনে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের স্লোগান’টি আপনার দেয়া। আগামী নির্বাচনের স্লোগান কি হবে? এমন প্রশ্নে আপনি দলের সিদ্ধান্তের প্রতি আস্থা রেখে বিনয়ের সাথে উত্তরটি দিয়েছেন।
বিএনপি সরকারের আমলে এনটিভিতে এক সাক্ষাৎকারে তারেক রহমান বেশ কয়েকটি প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, ‘এটা গোপন থাক’, ‘এ বিষয়টিও গোপন থাক’ এবং ‘এটাও গোপন থাক’। তাদের গোপন পরিকল্পনা বাংলাদেশের মানুষের কাছে আর গোপন থাকেনি। হয়তো আগেই জেনে গিয়েছিল, তাই তাদেরকে ভোট দেয়নি।
সম্প্রতি বাংলাদেশ নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে ফিচার, চিঠি এবং আর্টিকেল ছাপা হওয়াটা স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত হয়েছে। কোনো কোনোটি খুবই ইতিবাচক, আবার কোনো কোনোটি খুবই নেতিবাচক। সংশ্লিষ্ট মহল এসবকে আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জামায়াতের উদ্দেশ্যমূলক প্রপাগাণ্ডা মনে করছেন। যত ধরনের প্রচার হয়েছে তম্মধ্যে, অমর্ত্য সেনের সদ্য প্রকাশিত পুস্তক ‘আইডিয়াস অফ জাস্টিজ” অন্যতম।
উক্ত পুস্তকে তিনি উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতি এবং সামাজিক অগ্রগতির বিভিন্ন সুচকের ভিত্তিতে একটি তুলনামুলক চিত্র উপস্থাপন করেছেন। বাংলাদেশের উন্নয়ন সাফল্যকে অন্যদের জন্য অনুসরণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন। একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে বিষয়টি আমাদের জন্য গৌরবের।
জনাব সজীব ওয়াজেদ জয়, আপনি টেলিভিশনে জনগণকে বিএনপির সাথে আওয়ামী লীগের তুলনা করতে বলেছেন। তুলনা করে ভোট দিতে অনুরোধ করেছেন। ভালো কথা, খুব ভালো কথা। আপনার আগমনের পরে দেশে একটা ইতিবাচক প্রচারের বাতাস বইছিল। তাই বলে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের প্রচার কি অবৈধভাবে কারো বিলবোর্ড দখল করে করতে হবে? যদি বিলবোর্ডের মালিক এবং ইজারাদারদের প্রাপ্য টাকা দিয়ে কাজটি করা হতো? তাহলে কত টাকা লাগতো? আপনি নিশ্চয়ই জানেন, জিয়াউর রহমানের আরেক পুত্র কোকো’র অ্যাড এজেন্সির কেলেংকারীর কথা? মাহী বি চৌধুরীর বিটিভির চাঙ্ক ব্যবসা’র কথা।
ইতিবাচক প্রচার দরকার আছে। শুধু আমাদের দেশে নয়, সব দেশেই তা করা হয়। ৭ সেপ্টেম্বর অস্ট্রেলিয়ার সাধারন নির্বাচন। এরইমধ্যে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে লেবার এবং লিবারেল পার্টি তাদের কর্মকাণ্ডের প্রচার করছে। আমি তো মনে করি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উচিৎ টাকা খরচ করে সবগুলো ক্যাবল নেটওয়ার্কসহ, দেশী-বিদেশী যেসব টিভি চ্যানেল বেশী সংখ্যক মানুষ দেখে, সেসব চ্যানেলে প্রচার চালানো এবং অবিলম্বে বিলবোর্ডের মালিকদেরকে ক্ষতিপূরণ দিয়ে দেয়া। আপনাদের পক্ষে কি এটা সম্ভব নয়? আমার মতো একজন সাধারণ নাগরিকের কথা প্রধানমন্ত্রীর কানে সহজে পৌঁছায় না। আপনি তাঁর প্রিয় পুত্র, আপনি বললে নিশ্চয়ই পৌঁছাবে।
লেখক: গবেষক, ইউনিভার্সিটি অফ নিউক্যাসল, অস্ট্রেলিয়া।
ইমেইলঃ nayonshakhawat@yahoo.com
সম্প্রতি, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজয়ের কারণ অনুসন্ধানে দলটির কর্তাব্যক্তিরা এবং বুদ্ধিজীবীরা বলেছেন, আওয়ামী লীগ তাঁর সাফল্যসমুহ জনগণের কাছে ঠিকমত তুলে ধরতে পারেনি। তাই এমন ভরাডুবি হয়েছে। সুতরাং সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রচার করতে গিয়ে ঢাকা শহরের ৮০% বিলবোর্ড বিনা নোটিশে দখল করে ফেলেছে। ভালো কাজ করতে গিয়ে খারাপ কাজ করে ফেলেছে।
সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আশাতীত সাফল্যের কারণে বিএনপির হালে ভালই পানি পেয়েছে। সুযোগ কে ছাড়ে? তাই অবস্থা বুঝে জিয়াতনয় তারেক রহমানের শরীর স্বাস্থ্যও ভালো হওয়া শুরু করেছে। মোক্ষম সময়ে তাহার আগমনী বার্তা বাঙ্গাল মুল্লুকে প্রচার শুরু হলো। আপনাদের দল আওয়ামী লীগ আর যায় কোথায়? উপায় খুব একটা হাতে নাই, বাকি আছে একটাই।
তলোয়ারের বিপরীতে তলোয়ার। পুত্রের বিরুদ্ধে পুত্র। যথারীতি ভেপু বাজিয়ে মাতৃসালতানাতে আপনার আগমন বঙ্গবাসী প্রত্যক্ষ করিল। আপনি এসেই আপনার প্রতিপক্ষকে ভালোই ঘায়েল করেছেন। তারেক রহমানকে মিডিয়া থেকে সাফল্যের সাথে যথাসম্ভব বিদায় করতে পেরেছেন। প্রাথমিক ফলাফল- জিপিএ ৫। একথা না বলে উপায় নাই।
কয়েকদিন আগে একটি টেলিভিশন চ্যানেলে আপনার একটি সাক্ষাৎকার দেখলাম। আপনার বাংলা বলার ধরন অনেকটা ন্যাশনাল জিওগ্রাফি চ্যানেলের বাংলা অনুবাদের ভাষার মতো। তাতে কি? লেখাপড়ায় যে আপনি তারেক রহমানের থেকে অনেক ভালো একথা সবাই স্বীকার করবে। আর বাংলা ভাষাজ্ঞান কিংবা উচ্চারণ? এসব কোনো সমস্যা না।
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানও বাংলা ভালোভাবে বলতে পারতেন না। তিনিও আপনার মতই বিদেশে বড় হয়েছেন। পার্থক্য শুধু তিনি পাকিস্তানে আর আপনি ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রে। তিনি কথায় কথায় ইংরেজি বলতেন। বাংলাদেশের মানুষ ইংরেজি জানা লোকদেরকে বিরাট জ্ঞানী মনে করে। আর হাল আমলে কম্পিউটার জানলে তো কথাই নাই।
কিছুদিন আগে কিছু বিদ্যান(অনেকে তাদেরকে দুর্জনও বলে) লোক যেমন মওদুদ আহমেদ, এমাজউদ্দিন আহমেদ, মনিরুজ্জান সাহেবরা তারেক রহমানকে পারলে দার্শনিক বানিয়ে ফেলার চেষ্টা করেছেন। ‘প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ভাবনা’ নিয়ে নাকি তারেক রহমান বিস্তর কাজ করেছেন, স্বপ্ন দেখেছেন। সাবেক পদাধিকারীরা এবং ভবিষ্যতে বড় পদপ্রত্যাশীরা সবিস্তারে তাহা লিপিবদ্ধ করিয়া ‘এনসাইক্লোপিডিয়া অফ চাট্টুকারিতা’য় একখানি নতুন বই সংযোজন করিয়াছেন। যদিও আমরা এতকাল এসবের কিছুই জানতে পারি নাই।
টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে আপনি নিজে দাবি করিয়াছেন, গত নির্বাচনে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের স্লোগান’টি আপনার দেয়া। আগামী নির্বাচনের স্লোগান কি হবে? এমন প্রশ্নে আপনি দলের সিদ্ধান্তের প্রতি আস্থা রেখে বিনয়ের সাথে উত্তরটি দিয়েছেন।
বিএনপি সরকারের আমলে এনটিভিতে এক সাক্ষাৎকারে তারেক রহমান বেশ কয়েকটি প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, ‘এটা গোপন থাক’, ‘এ বিষয়টিও গোপন থাক’ এবং ‘এটাও গোপন থাক’। তাদের গোপন পরিকল্পনা বাংলাদেশের মানুষের কাছে আর গোপন থাকেনি। হয়তো আগেই জেনে গিয়েছিল, তাই তাদেরকে ভোট দেয়নি।
সম্প্রতি বাংলাদেশ নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে ফিচার, চিঠি এবং আর্টিকেল ছাপা হওয়াটা স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত হয়েছে। কোনো কোনোটি খুবই ইতিবাচক, আবার কোনো কোনোটি খুবই নেতিবাচক। সংশ্লিষ্ট মহল এসবকে আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জামায়াতের উদ্দেশ্যমূলক প্রপাগাণ্ডা মনে করছেন। যত ধরনের প্রচার হয়েছে তম্মধ্যে, অমর্ত্য সেনের সদ্য প্রকাশিত পুস্তক ‘আইডিয়াস অফ জাস্টিজ” অন্যতম।
উক্ত পুস্তকে তিনি উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতি এবং সামাজিক অগ্রগতির বিভিন্ন সুচকের ভিত্তিতে একটি তুলনামুলক চিত্র উপস্থাপন করেছেন। বাংলাদেশের উন্নয়ন সাফল্যকে অন্যদের জন্য অনুসরণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন। একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে বিষয়টি আমাদের জন্য গৌরবের।
জনাব সজীব ওয়াজেদ জয়, আপনি টেলিভিশনে জনগণকে বিএনপির সাথে আওয়ামী লীগের তুলনা করতে বলেছেন। তুলনা করে ভোট দিতে অনুরোধ করেছেন। ভালো কথা, খুব ভালো কথা। আপনার আগমনের পরে দেশে একটা ইতিবাচক প্রচারের বাতাস বইছিল। তাই বলে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের প্রচার কি অবৈধভাবে কারো বিলবোর্ড দখল করে করতে হবে? যদি বিলবোর্ডের মালিক এবং ইজারাদারদের প্রাপ্য টাকা দিয়ে কাজটি করা হতো? তাহলে কত টাকা লাগতো? আপনি নিশ্চয়ই জানেন, জিয়াউর রহমানের আরেক পুত্র কোকো’র অ্যাড এজেন্সির কেলেংকারীর কথা? মাহী বি চৌধুরীর বিটিভির চাঙ্ক ব্যবসা’র কথা।
ইতিবাচক প্রচার দরকার আছে। শুধু আমাদের দেশে নয়, সব দেশেই তা করা হয়। ৭ সেপ্টেম্বর অস্ট্রেলিয়ার সাধারন নির্বাচন। এরইমধ্যে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে লেবার এবং লিবারেল পার্টি তাদের কর্মকাণ্ডের প্রচার করছে। আমি তো মনে করি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উচিৎ টাকা খরচ করে সবগুলো ক্যাবল নেটওয়ার্কসহ, দেশী-বিদেশী যেসব টিভি চ্যানেল বেশী সংখ্যক মানুষ দেখে, সেসব চ্যানেলে প্রচার চালানো এবং অবিলম্বে বিলবোর্ডের মালিকদেরকে ক্ষতিপূরণ দিয়ে দেয়া। আপনাদের পক্ষে কি এটা সম্ভব নয়? আমার মতো একজন সাধারণ নাগরিকের কথা প্রধানমন্ত্রীর কানে সহজে পৌঁছায় না। আপনি তাঁর প্রিয় পুত্র, আপনি বললে নিশ্চয়ই পৌঁছাবে।
লেখক: গবেষক, ইউনিভার্সিটি অফ নিউক্যাসল, অস্ট্রেলিয়া।
ইমেইলঃ nayonshakhawat@yahoo.com
No comments