যুদ্ধাপরাধের কোন ২ রায় কার্যকর? by সাজেদুল হক
আইন প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলাম
হলফ করেই বলেছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের কমপক্ষে দু’টি মামলার রায় বর্তমান
সরকারের মেয়াদে কার্যকর হবে। একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলকে এ কথা বলেছেন
তিনি।
অন্যদিকে, অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল এম কে রহমান
প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন ১৫ই সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্ট খোলার পরপরই আব্দুল
কাদের মোল্লার রায় ঘোষণা করা হবে। এ অবস্থায় উদ্বিগ্ন জামায়াত। প্রতিটি
মুহূর্তই এখন গুরুত্বপূর্ণ তাদের কাছে। ঘড়ির কাঁটার দিকে খেয়াল রাখছে দলটি।
পর্দার আড়ালে ও প্রকাশ্যে চলছে কৌশলের লড়াই। যতদূর সম্ভব সময় নিতে চাইছেন
জামায়াত নেতারা। তবে এটি নিশ্চিত করেই বলা যায়, আব্দুল কাদের মোল্লার
মামলায় আপিল শুনানি শেষ হওয়ার পর যুদ্ধাপরাধের বিচার এক যুগসন্ধিক্ষণে
উপনীত হয়েছে। যদিও পুরনো ক্ষতে মলম লাগানোর প্রয়াসে যে বিচার শুরু হয়েছিল
বলে বলা হয়ে থাকেসে ক্ষত কতটা সারছে তা নিয়ে সারা দুনিয়াতেই বিতর্ক হচ্ছে।
সে ইস্যু আলাদা। বর্তমান সরকারের মেয়াদে কতটি রায় কার্যকর হবে এখন সেদিকেই
দৃষ্টি রাখছেন সবাই। পর্যবেক্ষকদের স্মরণ থাকার কথা, মাস কয়েক আগেই
বৃটেনের বিখ্যাত ম্যাগাজিন দি ইকোনমিস্ট পরিষ্কার বলেছিল, বর্তমান সরকারের
মেয়াদে যুদ্ধাপরাধ মামলার একটি অথবা দু’টি রায় কার্যকর হবে। অবস্থাদৃষ্টে
মনে হচ্ছে, পরিস্থিতি সেদিকেই এগোচ্ছে। কারণ, সুপ্রিম কোর্টের ক্যালেন্ডার
অনুযায়ী আগামী তিন মাসে সুপ্রিম কোর্টের ২০ কার্যদিবস রয়েছে। সেপ্টেম্বরে
১২ দিন এবং অক্টোবরে আট দিন আপিল বিভাগে বিচার কার্যক্রম চলবে। এটর্নি
জেনারেল মাহবুবে আলম জানিয়েছিলেন, ছুটিতে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার শুনানি
চালিয়ে যাওয়ার জন্য আবেদন দায়েরের বিষয়টি তারা বিবেচনা করছেন। কিন্তু
সরকারপক্ষ এ ধরনের কোন আবেদন করেনি। জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা
দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলায় আপিল শুনানির দিন ধার্য্য রয়েছে ১৫ই
সেপ্টেম্বর। জামায়াতের সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের
মামলায় ১৭ই সেপ্টেম্বরের মধ্যে সারসংক্ষেপ জমা দিতে আসামীপক্ষকে বলা
হয়েছে। এ অবস্থায় মূলত তিনটি মামলার দিকে সর্বোচ্চ নজর দিচ্ছে সরকার ও
আসামিপক্ষ। স্বভাবতই গুরুত্বের তালিকার শীর্ষে এ মূহর্তে রয়েছে কাদের
মোল্লার মামলাটি। সুপ্রিম কোর্ট খোলার পর যেকোন দিন এ মামলার রায় ঘোষণা করা
হতে পারে। ট্রাইব্যুনালের রায়ে যাবজ্জীন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত কাদের মোল্লাকে
নিয়ে জামায়াত এবং তার পরিবার উদ্বিগ্ন। যুদ্ধাপরাধ মামলায় আপিল বিভাগের
রায়ের পর পরাজিত পক্ষের রিভিউ আবেদন দায়েরের সুযোগ রয়েছে কিনা তা স্পষ্ট
নয়। কারণ ’৭৩ সালের ট্রাইব্যুনালস আইনে সুপ্রিম কোর্টের কর্মপদ্ধতির
ব্যাপারে স্পষ্ট কোন নির্দেশনা নেই। শুধু চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির সংশোধনীতে
আপিল নিষ্পত্তির জন্য ৬০ দিন সময় বেঁধে দেয়া হয়। যদিও এরই মধ্যে এটা
প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, এ নির্দেশনা মানা বাধ্যতামূলক নয়। তবে এটা নিশ্চিত
আপিল বিভাগে পরাজিত পক্ষ রিভিউ আবেদন দায়ের করবে। সে রিভিউ আবেদনের ভাগ্য
নির্ধারণ করবে আপিল বিভাগই। যদিও ভারতের একজন বিখ্যাত বিচারপতি বলেছিলেন,
রিভিউ হচ্ছে চাঁদে যাওয়ার মতো। এক্ষেত্রে রিভিউ আবেদনের ফলের চেয়েও
গুরুত্বপূর্ণ হবে সময়ক্ষেপণের বিষয়টি। রাজপথে আন্দোলন আর আপিল বিভাগে সময়
নেয়ার কৌশল অবলম্বন করবে জামায়াত। অন্যদিকে, সরকার পক্ষের কৌশল থাকবে অন্তত
দু’টি রায় বর্তমান সরকারের মেয়াদেই কার্যকর করা। আর এটিই হবে আগামী
নির্বাচনে সরকারের অন্যতম প্রচারণার হাতিয়ার।
No comments