কাজের ফাঁকে ব্রেক by শামিমা আক্তার রিমা
বর্তমানে মানুষের জীবনটা রোবটের মতো। রোবটের মতো জীবনে একটু ব্রেক নিতে হয়। কাজের চাপে নিঃশ্বাস নেয়ার সময়টুকুও পাচ্ছেন না! কিন্তু প্রয়োজনীয় ব্রেক না নিলে ভাল করে কাজ করাও অসম্ভব।
প্রায় প্রতিদিনই টিফিনভরা বক্স বাড়িতে ফেরত আনে দিশ । কাজের এত চাপ যে টিফিন খাওয়ার সময় নাকি সে কোনভাবেই করে উঠতে পারে না। কলিগরা টিফিনের কথা মনে করিয়ে দিলেও কোন রকমে দু’এক টুকরো মুখে তুলতে না তুলতেই বক্স বন্ধ করে কাজে ফেরার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আসলে এটাই দিশার সমস্যা। ও দায়িত্ব নিতে ভালবাসে। দায়িত্ব নিয়ে কাজও করে। কাজে এতটাই মশগুল হয়ে থাকতে ভালবাসে যে, পুরোপুরি বাহ্যজ্ঞানমূল্য হয়ে পড়ে। এমনকি ক্ষুধা-তৃষ্ণার কথাও তখন মনে থাকে না। ওর ওই কাজপাগল স্বভাবের জন্য বাড়ির লোকেরা ভীষণ বিরক্ত। কলিগদের কাছেও ঠাট্টার পাত্র। এভাবে নিজের শরীর-মনকে অবহেলা করার কারণে অন্যদের কাজ করতে করতে যখন সহকর্মীদের মন্তব্য কানে আসে তখন বড্ড একা লাগে। অফিসে তো আমরা কাজ করতেই যাই। কিন্তু কাজ যখন অবসেশনে বদলে যায় সমস্যা তৈরি হয় তখনই। যে কোন অবসেশন শরীর এবং মনের সুস্থতার পক্ষে ক্ষতিকারক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খুব একলাও করে দেবে আপনাকে। সেজন্য মন দিয়ে কাজ করা ঠিক যতটা জরুরী; কাজের ফাঁকে ব্রেক নেয়াও প্রায় ততটাই। কাজের চাপ কাটিয়ে নিশ্বাস ফেলার সময়টুকু খুঁজে নেয়ার ব্যাপারে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়।*যত ব্যস্ততাই থাকুক আপনার যে ব্রেক বা বিশ্রাম প্রাপ্য সে প্রয়োজনবোধ করাই ব্রেক নেয়ার প্রথম ধাপ। একটানা কাজ করে চললে আপনি যত বড় কর্মীই হোন, এক সময়ে একঘেয়ে এবং ক্লান্ত লাগতে বাধ্য। একটা ছোট্ট ব্রেক সেই একঘেয়েমি কাটাতে খানিকটা হলেও সাহায্য করে। ফলে ভাল করে কাজ করার জন্যই ব্রেক নেয়া প্রয়োজন। কাজ ট্যাকল করার সময়ে একটা নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে চলুন। সব চেয়ে ভাল হয় যদি দিনের শুরুতেই প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে কাজ সাজিয়ে নিতে পারেন, তাহলে ব্রেক নেয়া সহজ হবে।
*একটানা ১ ঘণ্টা কাজ করার পর অন্তত ১০ মিনিটের একটা ব্রেক নিন। যাঁরা কম্পিউটারে কাজ করেন তাঁদের ক্ষেত্রে এই ব্রেক আরও বেশি জরুরী। ব্রেক নেয়ার সময় স্ক্রিন থেকে দূরে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকুন। চেয়ারে বসে একটু স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ করে নিন। হাতে সময় বেশি থাকলে একটু করিডর বা বাইরে হেঁটে আসতে পারেন। এই সময় চা, কফি না খেয়ে ফ্রেশ ফ্রুট জুস বা ড্রাই ফ্রুটস খেলে এনার্জি পাবেন।
*অফিস আওয়ারের মধ্যে একবার অবশ্যই লাঞ্চ ব্রেক নেবেন। যে সময় অফিসে লাঞ্চ ব্রেক হয় সে সময় হাতে কাজ থাকলেও চেষ্টা করুন একটু পরে সারতে। কলিগদের সঙ্গে বসে লাঞ্চ সারুন। স্পেশাল কিছু রান্না করলে ওঁদের সঙ্গে শেয়ার করুন। ছোটখাট অকেশনে সবাই মিলে চাঁদা তুলে বাইরে খেতে গেলেও প্রতিদিনকার একঘেয়েমি থেকে মুক্তি পাবেন। খাওয়ার সময় হাসিঠাট্টা করলেও ক্ষতি নেই। লাঞ্চ ব্রেক একসঙ্গে কাটালে সহকর্মীদের মধ্যে বন্ডিং মজবুত হবে। এর ফলে কাজেও প্রচুর সুবিধে হবে।
*অফিসে যখন কাজের চাপ কম থাকবে তখন ১-২ দিনের ছুটি নিন। সাপ্তাহিক ছুটির সঙ্গে এই ছুটি যোগ করে নিলে তো আর কথাই নেই। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর সঙ্গে সঙ্গে নিজের জন্য খানিকটা সময় রাখুন না-পড়া বই পড়ে ফেলা, ব্যাঙ্কের কাজকর্ম, পার্লারে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসার মতো ব্যক্তিগত কাজ এই ছুটিতে সেরে ফেলতে পারেন। প্রয়োজনে অফিসের সঙ্গে অবশ্যই যোগাযোগ করবেন। কিন্তু ছুটির সময় কাজের টেনশন বাড়িতে বয়ে না আনাই শ্রেয়। এতে অফিসের কাজও এগোবে না। নিজের মনের মতো করে ব্রেকও এনজয় করতে পারবেন না।
No comments