রাঙ্গুনিয়াতেও শেখ হাসিনার বিশাল জনসভা ॥ সন্ত্রাসের জনপদেও মানুষ শান্তিতে ঘুমাতে পারেন- ফের জনগণের সেবা করার সুযোগ চাই ॥ প্রধানমন্ত্রী by হাসান নাসির
উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আবারও নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘বিএনপির দুই গুণÑ দুর্নীতি আর মানুষ খুন।
’ ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসের মধ্যে সংসদ নির্বাচন করতে হবে। সে নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আবারও দেশের জনগণের সেবা করার সুযোগ চাই।শনিবার বিকেলে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় এক বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপরোক্ত কথাগুলো বলেন। বিশাল জনসমুদ্রে পরিণত হয় এ সমাবেশ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের মানুষ কিছু পায়। আর বিএনপি ক্ষমতায় এলে লুট করে বিদেশে অর্থ পাচার করে। নৌকা মার্কা জনগণের মার্কা। মানুষ যখনই এ প্রতীকে ভোট দিয়েছে, তখনই কিছু না কিছু পেয়েছে। ১৯৭১ সালে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে স্বাধীনতা পেয়েছে। ১৯৯৬ সালে ভোট দিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার স্বীকৃতি আদায় করে নিয়েছে বাংলা ভাষা। আওয়ামী লীগ সরকারের ঐ মেয়াদ ছিল দেশের ইতিহাসে স্বর্ণযুগ। ২০০৮ সালে নৌকা প্রতীকে বিজয়ী করে এ জাতি পাচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। ওরা জাতির কপালে যে কলঙ্কটিকা এঁকে দিয়েছিল আমরা তার অবসান করব। জাতিকে কলঙ্কমুক্ত ও রাহুমুক্ত করব। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে। ইতোমধ্যে আমরা একটি রায় পেয়েছি। বাকি রায়গুলোও পাব ইনশাল্লাহ।
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া পাইলট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের এ জনসভায় ঐ এলাকা এবং আশপাশের উপজেলা থেকে নারী, পুরুষ, কিশোর-যুবক থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষের ঢল নামে। অসংখ্য মানুষ ব্যানার ফেস্টুন হাতে জনসভায় যোগ দেয়। বিরামহীন সেøাগানে প্রকম্পিত হয় জনসভাস্থল। স্কুলমাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে সড়কের বিশাল অংশজুড়ে ছিল শুধু মানুষ আর মানুষ। যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর এ নির্বাচনী এলাকায় বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। বর্তমানে তিনি বন ও পরিবেশমন্ত্রী। আগতদের মুখে ছিল যুদ্ধাপরাধী সাকা চৌধুরীর বিচার দাবিতে সেøাগান। সর্বত্র ছিল নির্বাচনী আমেজ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সরকারের উন্নয়ন কর্মকা- ও বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, এ রাঙ্গুনিয়া ছিল সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য। বিগত সংসদ নির্বাচনে আমি এ আসনে হাছান মাহমুদকে মনোনয়ন দিয়েছি। আপনারা হাছানকে জয়যুক্ত করেছেন। আর আমরা আপনাদের একজন মন্ত্রী উপহার দিয়েছি। এ সরকারের ৪ বছরে রাঙ্গুনিয়ায় প্রায় ৬শ’ কোটি টাকার উন্নয়ন হয়েছে। প্রচুর রাস্তাঘাট হয়েছে। এখানে করা হয়েছে পক্ষীশালা, যা পাখিদের বিচরণের অভয়ারণ্য। এ ৪ বছরে এলাকার মানুষ শান্তিতে, নিরাপদে ঘুমাতে পারছে। বিএনপি আমলে তাদের বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিল এ এলাকার মানুষ।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আওয়ামী লীগ মানুষের জন্য কাজ করতে ক্ষমতায় আসে। আর বিএনপি মানুষের ধনসম্পদ লুট করে বিদেশে পাচার করে। জিয়া পরিবারের বিত্তবৈভব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দুর্নীতি করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী এত টাকা করেছিলেন যে, জরিমানা দিয়ে তাঁকে কালো টাকা সাদা করতে হয়েছে। সিঙ্গাপুরে ধরা পড়েছে তাঁর পুত্রের টাকা। ওরা পাচার করে আর আমরা ফিরিয়ে আনি। আমরা বিদ্যুত উৎপাদন করেছি, আপনারা এখন বিদ্যুত পাচ্ছেন। ইউনিয়ন পর্যায়ে তথ্যকেন্দ্র করেছি। কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে আমরা কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছি। চার বছরে ৪ লাখ বেকার যুবক সরকারী চাকরি পেয়েছে। সরকারী-বেসরকারী মিলে প্রায় ৭৮ লাখ যুবকের কর্মসংস্থান হয়েছে এ সময়ের মধ্যে। বিদেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও আমরা কাজ করছি। মালয়েশিয়ায় যেতে এখন আর দালালদের টাকা দিতে হচ্ছে না। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের সহায়তায় অল্প খরচে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশী শ্রমিক প্রেরণ করা হচ্ছে। স্কুলের শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বই দেয়া হচ্ছে। প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভবন করে দিচ্ছি। স্কুলগুলোতে কম্পিউটার দিচ্ছি। এসএসসি পরীক্ষায় আমাদের ছেলেমেয়েরা এখন ভাল ফল করছে। আমরা চাই এদেশের সন্তানরা লেখাপড়া করে গড়ে উঠুক। কিন্তু বিরোধীদলীয় নেত্রী তা চান না। কারণ বিএনপি নেত্রী লেখাপড়া করেননি। তিনি এসএসসিতে অঙ্ক, উর্দু ও বাংলাÑ এ তিন বিষয় ছাড়া বাকি সব বিষয়ে ফেল করেছিলেন। সন্তানদেরও তিনি লেখাপড়া করাননি। অথচ, জিয়ার মৃত্যুর পর ছেলেদের লেখাপড়ার জন্য সরকারী কোষাগার থেকে মাসে ১৫শ’ টাকা করে ভাতা নিয়েছিলেন। কিন্তু এ ভাতায় তিনি মানি লন্ডারিং ও দুর্নীতির শিক্ষা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী ছেলেমেয়েদের প্রতি লেখাপড়া করে গড়ে ওঠার আহ্বান জানান।
রাঙ্গুনিয়ায় কর্ণফুলী জুট মিল ও ফোরাত কার্পেট মিলের উৎপাদন উদ্বোধন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত বিএনপি সরকার আমলে এ দুটি কারখানার উৎপাদন বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। দেশের পাটের বাজার তুলে দেয়া হয়েছিল। আমরা ক্ষমতায় এসে ২৭টি পাটকল পুনরায় চালু করেছি। সরকারের সহায়তায় পাটের জন্ম রহস্য আবিষ্কৃত হয়েছে। কল-কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের বেতন ৬০ থেকে ৭০ ভাগ বাড়িয়েছি। কৃষকরা ১০ টাকায় হিসাব খুলতে পারছে। আদা, পিঁয়াজ, রসুন ও বিভিন্ন ধরনের মসলা উৎপাদনে আগ্রহী কৃষকদের আমরা মাত্র শতকরা ৪ ভাগ সুদে ঋণ প্রদান করছি। কর্মসংস্থান বৃদ্ধির লক্ষ্যে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বিশেষ অর্থনীতি অঞ্চল করতে স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। সেখানে এখন কাজ শুরু হয়েছে। চাল, ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমিয়ে আমরা মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে এনেছি। বিএনপি শাসন আমলে ৩০ মেট্রিক টন খাদ্যঘাটতি ছিল। আমরা সে ঘাটতি পূরণ করে ৩ কোটি ৪০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য উৎপাদন করেছি। মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রবিরোধ নিষ্পত্তি মামলায় আমাদের জয় হয়েছে। আমরা ১ লাখ ১১ হাজার ৬৭১ বর্গকিলোমিটার সমুদ্র এলাকা জয় করেছি। ভারতের সঙ্গেও আমরা আন্তর্জাতিক আদালতে গিয়েছি। ২০১৪ সালে সে মামলার রায় হবে। বয়স্কভাতা ও দরিদ্র মহিলাদের জন্য বিধবাভাতা আমরাই চালু করেছি। দরিদ্রদের মাতৃত্বকালীন ভাতাও চালু করেছি। দেশের প্রতিটি থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৩১ বেড থেকে ৫১ বেডে উন্নীত করছি। শুধু উন্নয়নের ক্ষেত্রেই নয়, বিনোদন ও খেলাধুলার দিকেও আমরা উন্নয়নসাধন করছি। ক্রিকেটসহ সব ধরনের খেলায় সাফল্য এসেছে। আমাদের বাংলাদেশ উন্নত, সমৃদ্ধ ও মধ্য আয়ের একটি দেশে পরিণত হবে। যে উন্নয়নের ধারা সূচিত হয়েছে তা অব্যাহত রাখতে আবারও নৌকা মার্কাকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমান সরকারের সময়ে ৫ হাজার ৫০৯টি নির্বাচন হয়েছে। কোন নির্বাচনেই শান্তি ভঙ্গের ঘটনা ঘটেনি। নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগও আসেনি। আগামী নির্বাচনও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা আওয়ামী লীগ খলিলুর রহমান চৌধুরী। আরও বক্তব্য রাখেন পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, বন ও পরিবেশমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বীর বাহাদুর এমপি, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, গণশিক্ষা মন্ত্রী ডা. আফসারুল আমিন, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি এবিএম আবুল কাশেম এমপি, নুরুল ইসলাম বিএসসি এমপি, চেমন আরা তৈয়ব এমপি, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রশাসক এমএ সালাম, ছাত্রলীগ সাবেক সভাপতি এনামুল হক শামীম, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য আমিনুল ইসলাম আমিন ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মোছলেম উদ্দিন আহমেদ।
No comments