ম্যাজিক পাইপ_অর্ধেক পানি সাশ্রয়, খরচও কম- ইরি ব্রি ও আরডিএ'র যৌথ উদ্ভাবন
ম্যাজিক পাইপে মাটির নিচে পানির মাপ দেখে সেচ দিলে অর্ধেক পানি কমানো যায়। খরচও কমে যায় অনেক এবং প্রতিবিঘায় অনত্মত আধা মণ বাড়তি ধান ফলে।
এই ম্যাজিক পাইপ জমিতে বসিয়ে আবাদ করে সফলতা এসেছে কৃষক সাবেদ আলীর ঘরে। বললেন, জমিতে ভাসানো পানি না দেখলে মন ভরত না, এই পানির যে শুধু অর্ধেক কাজে লাগে তাও জানতেন না। ম্যাজিক পাইপ জমির মধ্যে গেড়ে দিয়ে পাইপের মধ্যে পানির মাপ দেখে সেচ দিয়ে পানির এবং উৎপাদন খরচের অপচয় রোধ করেছেন। বগুড়া পলস্নী উন্নয়ন একাডেমীর (আরডিএ) কৃষিবিজ্ঞানী জাকারিয়া বলেন, সেচনির্ভর বোরো আবাদে আমাদের কৃষককের ভ্রানত্মধারণা চারা রোপণের পর গোড়ায় সব সময় পানি না দেখলে তাদের মন ভরে না। অখচ এই পানির অর্ধেকের বেশি হয় অপচয়। এই অপচয় রোধে আনত্মজর্াতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ইরি), বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) ও আরডিএ যৌথভাবে উদ্ভাবন করেছে ওয়ের্টিং এ্যান্ড ড্রাইং পদ্ধতি। কৃষকরা উপকার পেয়ে যার নাম দিয়েছে ম্যাজিক পাইপ। এই পাইপ এক ফুট লম্বা পস্নাস্টিক অথবা বাঁশের তৈরি। বিনা খরচেই বানানো যায়। বড় আকারের মিনারেল ওয়াটারের বোতল অথবা পেপসি, সেভেন আপের বোতলের দুই মুখ কেটে দিয়ে পাইপের অর্ধেক অংশ গরম শিক দিয়ে ছিদ্র করে নিতে হয়। প্রতিবিঘা জমিতে এ রকম দু'টি পাইপের ছিদ্র করা অংশটুকু খাড়াভাবে মাটির নিচে বসিয়ে দিতে হয়। ছিদ্রহীন অংশটি থাকবে মাটির ওপরে, যাতে পাইপের ভেতরে ময়লা ঢুকতে না পারে। চারা রোপণের দুই সপ্তাহ পর্যনত্ম ওই পাইপের মধ্যে দুই ইঞ্চি পরিমাণ পানি থাকলে মাটিতে চারা ভালভাবে লেগে যায়। সঙ্গে প্রাথমিক পর্যায়েই আগাছা দমনও হবে। এর পর ধানের ফুল আসা পর্যনত্ম মাটির নিচে পাইপের মধ্যে জড়ো হওয়া পানি দেখে সেচ দিতে হবে। পাইপের দৈর্ঘ্য ৬ ইঞ্চি এবং ধানের শিকড় ৬ ইঞ্চি পর্যনত্ম হয় তাই পাইপের মধ্যে পানি দেখা গেলে বুঝে নিতে হবে শিকড় প্রয়োজনীয় পানি পাচ্ছে। এই সময়ে সেচের কোন প্রয়োজন নেই। যখন পাইপের তলায় মাটি দেখা যাবে তখনই বুঝতে হবে মাটির ভেতরে পানি শিকড়ের নাগালের বাইরে চলে গেছে। তখন একদ- দেরি না করে মাটির ভেতরে দুই ইঞ্চি পরিমাণ সেচ দেয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে। ধানের ফুল আসার পর পরবতর্ী দুই সপ্তাহ পাইপের মধ্যে দুই ইঞ্চি পরিমাণ পানি সব সময়ই রাখতে হবে। ধানের গর্ভকালের এই সময়ে পানির ঘাটতি হলে ফলন কমে যাবে।দেশের ২৮ জেলায় গবেষণা করে দেখা গেছে বোরো আবাদে কৃষক এলাকা ভেদে ১৪ থেকে ১৬টা (কোথাও ২০টা) সেচ দেয়। এই পাইপ ব্যবহার করে পানির মাপ দেখে সেচ দিয়ে তা ৮টিতে নামিয়ে আনা গেছে। কোথাও ৫ বার সেচ দিয়েই ফলন মিলেছে। এভাবে অনত্মত ৪০ শতাংশ পানির সাশ্রয় করা গেছে। কমেছে উৎপাদন খরচ। প্রতিবিঘায় অনত্মত আধা মণ করে ফলন বেড়েছে। ফলন বেড়ে যাওয়ার কারণ হলো- প্রচলিত সেচে গাছ পানিতে দীর্ঘ সময় ডুবিয়ে রাখায় জিঙ্ক ও সালফারের ঘাটতি হয়। পানির চাপে গাছের ওই খাদ্য উপাদানগুলো শিকড়ের আওতার বাইরে মাটির অনেক গভীরে চলে যায়। মাটিতে অক্সিজেন ঢুকতেও পারে না। ম্যাজিক পাইপ দেখে সেচ দিলে মাটির উপরিভাগ একবার ভেজানো একবার শুকানোর কারণে খাদ্যগ্রহণ বেড়ে শিকড় তরতাজা থাকে। ফলবান কুশির সংখ্যা গড়ে ৪টা বেড়ে যায়। ফলনও যায় বেড়ে। আরডিএ'র কৃষিবিজ্ঞানী জাকারিয়া জানালেন, কৃষকের দেয়া নামের এই ম্যাজিক পাইপ দেখে সেচ দিলে দেশে প্রায় পাঁচ মিলিয়ন (৫০ লাখ) হেক্টরে বোরো আবাদে ডিজেলের সাশ্রয় হবে অনত্মত এক হাজার কোটি টাকা।
No comments