ঝড়ে লণ্ডভণ্ড, হাজার হাজার টাকার বই নষ্ট- বইমেলা প্রতিদিন
প্রবাদ আছে 'সকাল দেখলেই বোঝা যায় দিনটি কেমন যাবে'। বুধবার সকালের মেঘলা আকাশ দেখেই বোঝা গেছে, আজ দিন বৃষ্টির। সকাল প্রায় ন'টা পর্যনত্ম দেখা মেলেনি সূর্যের।
মাঝে মধ্যে সূর্য মেঘের আড়াল পেরিয়ে দু'এক ঝলক রোদের দু্যতি ছড়িয়ে আবার যাচ্ছিল হারিয়ে। এমনই লুকোচুরি খেলা চলেছে বেলা বারোটা পর্যনত্ম। তারপর রোদ দেখা গেলেও, তাতে তেমন তেজ ছিল না। ফলে দিনের ঘোরলাগা ভাব আর কাটেনি। বিকেল চারটার পর থেকেই মেঘ আবার রাজত্ব বিসত্মার করে আকাশে। বইতে শুরম্ন করে বসনত্মের হিমেল হাওয়া। আর আবহাওয়া এতটাই নাতিশীতোষ্ণ হয়ে পড়ে যে, মানুষ ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে শুরম্ন করে। ইতোমধ্যেই বইমেলায় নেমে আসে প্রাণের উচ্ছ্বাস। সময় যতই গড়াতে থাকে, মুখর হয়ে উঠতে থাকে মেলা প্রাঙ্গণ। শিশু, বুড়ো, তরম্নণ-তরম্নণীর প্রাণচাঞ্চল্যে গমগম করতে থাকে মেলা চত্বর। পাঁচটার দিকেই পশ্চিমাকাশ অন্ধকার হয়ে আসে। ঠিক ৫টা ১৭ মিনিটে শুরম্ন হয়ে যায় ধূলিঝড়। মেলার আকাশে উড়তে থাকে হাজার হাজার শুকনো পাতা ও বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় থাকা অসংখ্য পাখি। সে এক অভূত পূর্ব দৃশ্য। চোখে না দেখলে অনুভব করা কষ্ট। বসনত্মের এই ঝড়ো হাওয়ায় শুরম্ন হয়ে যায় দু'জনের ছুটে চলার অসম প্রতিযোগিতা। যেন দু'জনেরই নিরাপদ গনত্মব্যে পেঁৗছানোর রয়েছে তাড়া। এদিকে মেলায় আগত মানুষেরও ছুটোছুটি শুরম্ন হয়ে যায়। কেউ আশ্রয় নেয় বর্ধমান হাউসে, কেউ প্রশাসনিক ভবনে, কেউ আবার একাডেমীর মূল মঞ্চে। আবেগতাড়িত অনেককে আবার মৌসুমের প্রথম বারিধারায় মনের আনন্দে ভিজতেও দেখা গেছে। তবে শিলা বৃষ্টি শুরম্ন হলে মনোকষ্ট নিয়ে অনেকেই আশ্রয় নেয় নিরাপদ স্থানে। তবে এই ঝড়বৃষ্টির কারণে সিক্ত হয় গাছের শাখা প্রশাখা ও পুষ্পপলস্নব। আর মেলার কোন কোন পথ ডুবে যায় ৬ থেকে ১০ ইঞ্চি পানির নিচে এবং কোন কোন পথ জলে কাদায় হয়ে পড়ে পিচ্ছিল। প্রায় ৪০ মিনিটের শিলা বৃষ্টিতে মেলা হয়ে যায় ভ-ুল। প্রাণের যে উচ্ছ্বাস দেখা গেছে বৃষ্টির আগে, তা আর দেখা যায়নি বৃষ্টির পর। অনেককেই চলে যেতে দেখা গেছে মেলা প্রাঙ্গণ ছেড়ে। কারণ অধিকাংশ স্টলই ল-ভ- হয়ে যাওয়ায় মেলা প্রাঙ্গণ ছেড়ে যায় অনেকে। তবে অনেককে আবার দেখা গেছে মেলা প্রাঙ্গণ থেকে বের হয়ে বৃষ্টিসিক্ত হিমেল হাওয়ার সি্নগ্ধ পরিবেশে ঘুরতে।বইমেলা ল-ভ- ধূলিঝড় শুরম্ন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি স্টলেই শুরম্ন হয় বই গোছানোর কাজ। কিন্তু কারোরই শেষ রৰা হয়নি। ধূলিঝড় শুরম্নর দু'মিনিটের মধ্যেই শুরম্ন হয়ে যায় মুশল ধারে বৃষ্টি। সঙ্গে পড়তে থাকে বেশ বড় বড় শিলা। তাই কেউই হাতে বা পলিথিন দিয়ে কোনভাবেই রৰা করতে পারেনি নিজেদের বই। অধিকাংশ স্টলেরই হাজার হাজার টাকার বই ভিজে গেছে। যেসব স্টলের ভিতরে পানি ঠুকে গেছে, তাদের ৰতির পরিমাণ আরও বেশি। অনেক স্টলেরই ছাদের তিরপল ভেদ করে পানি পড়েছে নিচে। এমন কোন স্টল খুঁজে পাওয়া যায়নি, যার ৰতি হয়নি। ছোট ছোট প্রকাশকদের তো মাথায় হাত, সারা মাসের লাভ বুঝি একদিনেই চলে গেল।
নতুন বই এই বৃষ্টির মধ্যেও এদিন মেলায় নতুন বই এসেছে ৯২টি। তবে বৃষ্টির আগে বইয়ের এই লিস্ট তৈরি হয়ে যাওয়ায় এ সংখ্যাটি জানানো গেল। আর যদি একাডেমী বই জমা নেয়ার আগে বৃষ্টি হতো তাহলে এই সংখ্যাটিও জানানো সম্ভব হতো না। এদিন মেলায় সবচেয়ে বেশি বই এসেছে কবিতার_ ২৬টি। এর পরে রয়েছে উপন্যাস ২৩টি, আর গল্প ১১টি।
No comments