লক্ষ্য ছিল পাহাড়ে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ছড়িয়ে দেয়া
পাহাড়ে সহিংসতার দাবানল ছড়িয়ে দেয়ার গোপন ষড়যন্ত্র আপাতত থমকে গেছে। গত ১৯ ও ২০ ফেব্রুয়ারি প্রথমে বাঘাইছড়ি এবং পরবর্তীতে ২৩ ফেব্রম্নয়ারি খাগড়াছড়ি জেলা শহরে সৃষ্ট সহিংসতা পুরো পার্বত্য অঞ্চলে ছড়িয়ে দেয়ার নীলনকশা প্রণীত হয়েছিল।
কিন্তু সরকারের নীতিনির্ধারক মহল অত্যনত্ম ঠা-া মাথায় কঠোরভাবে পরিস্থিতি সামাল দিতে সম হওয়ায় আপাতত আর ডালপালা ছড়াতে পারেনি। ফলে দীর্ঘস্থায়ী বড় ধরনের সংঘাত থেকে রা পেয়েছে পাহাড়বাসী। এ খবর গোয়েন্দাসহ দায়িত্বশীল বিভিন্ন সূত্রের। বাঘাইছড়ি ইসু্যকে কাজে লাগিয়ে পাহাড়ে বাঙালী-পাহাড়ীর দীর্ঘদিনের সমপ্রীতির বন্ধন বিচ্ছিন্ন করাই ছিল ষড়যন্ত্রকারীদের মূল উদ্দেশ্য। যার কারণে বাঘাইছড়ির পর খাগড়াছড়ির ঘটনা ব্যাপকতর রূপ নেয়। কিন্তু শেষ পর্যনত্ম তাদের প্রণীত ষড়যন্ত্রে পুরোপুরি সফলতা আসেনি। টার্গেট ছিল পুরো পার্বত্য চট্টগ্রাম জুড়ে পাহাড়ী-বাঙালীদের মাঝে সামপ্রদায়িক উন্মাদনা সৃষ্টি করা। খাগড়াছড়ি ও বাঘাইছড়িতে সংঘর্ষের ঘটনার পর তাৎণিকভাবে ১৪৪ ধারা, কাফর্ু জারি, সেনা মোতায়েন করে যৌথ অভিযান পরিচালিত হওয়ায় পাহাড়ে ১৯৮৬ সালে সংঘটিত দাঙ্গার পুনরাবৃত্তি ঘটেনি। সূত্রে জানা গেছে, ২৩ ফেব্রম্নয়ারি দিনে খাগড়াছড়িতে সংঘর্ষের ঘটনার পর রাতে বড় ধরনের অপারেশনের রণপ্রস্তুতি ছিল। পাহাড়ের বিভিন্ন স্থান থেকে জড়ো করা হয়েছিল উপজাতীয় সশস্ত্র ক্যাডারদের। ১৪৪ ধারা, কাফর্ু এবং সেনা টহলের কারণে থমকে যায় সশস্ত্র ক্যাডারদের পরবতর্ী তৎপরতা। ২৪ ফেব্রম্নয়ারি রাতে খাগড়াছড়ি শহরে অগি্নসংযোগ ছড়াতে গান পাউডার ব্যবহার করা হয়। এ ধরনের তৎপরতায় লিপ্ত ৪ যুবককে ঐদিন রাতে সেনা সদস্যরা আটক করতে সম হয়। সূত্রে জানানো হয়, ঐদিন রাতে দীঘিনালার বোয়ালখালি বাজার জ্বালিয়ে দেয়ার প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু বিষয়টি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় সিভিল ও সেনা প্রশাসন তৎপর হলে অনাকাঙ্ৰিত ঘটনা রোধ হয়।আরও জানা গেছে, বাঘাইছড়ি ঘটনার পর ব্যাপকভাবে গুজব ছড়িয়ে পাহাড়ের সর্বত্র নাশকতা ছড়িয়ে দেয়ার ব্যাপক পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু এ গোপন পরিকল্পনা আপাতত ভেসত্মে গেলেও ষড়যন্ত্রকারীরা গোপন তৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানানো হয়েছে।
এদিকে, শানত্মিপ্রিয় পাহাড়বাসীর মাঝে জিজ্ঞাসার সৃষ্টি হয়েছে পাহাড়ে অস্ত্র ও আগুনের খেলা আর কত?
১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর বহুল আকাঙ্ৰিত শানত্মিচুক্তির পূর্বে দু'দশকেরও বেশি সময় জুড়ে পাহাড়ে জ্বলেছে, অস্ত্রের ঝনঝনানিতে লাশ পড়েছে অকাতরে। চুক্তি সম্পাদিত হওয়ার পর কিছু সময় পরিস্থিতি শানত্ম থাকলেও শানত্মিচুক্তিবিরোধী পাহাড়ের একটি গ্রম্নপ এবং বাঙালী-পাহাড়ীদের সংঘর্ষের ঘটনা নতুন করে শুরম্ন হয়। ভিন্ন স্টাইলে শুরম্ন হয় অপহরণ ও খুনের ঘটনা। অব্যাহতভাবে এসব ঘটনা চলতে থাকার প্রোপটে সর্বশেষ দৃষ্টানত্ম হয়েছে বাঘাইছড়ি ও খাগড়াছড়ির সংঘর্ষ, খুন ও অগি্নসংযোগের ঘটনা। পাহাড়ে অঘোষিত সেনা শাসনে যেমন এসব ঘটনা ঘটেছে, তেমনি বর্তমান গণতান্ত্রিক শাসনাধীনেও চলছে। এ চলার শেষ কোথায়, এর সমাধানের পথ কি_ তা নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারক মহল জরম্নরী ভিত্তিতে পদপে গ্রহণ না করলে গোটা পাহাড় আবারও অগি্নগর্ভে পরিণত হতে পারে বলে বিশেস্নষকদের বদ্ধমূল ধারণা। কিন্তু এ ধরনের পরিস্থিতি কখনও কাম্য হতে পারে না।
পাহাড়ের মূল সমস্যা ভূমির মালিকানা নিয়ে বিরোধ। যা একেবারে চরম পর্যায়ে। পার্বত্যাঞ্চলে উপজাতীয়দের যেমন ভূমির মালিকানা রয়েছে, তেমনি রয়েছে যুগ যুগ ধরে বসবাসরত বাঙালীদেরও। তবে '৭৯ সালের পর থেকে অভিবাসিত (সেটেলার) বাঙালিদের ভূমির মালিকানা নিয়েই মূল সমস্যার শেকড় প্রোথিত হয়েছে। শানত্মিচুক্তির আগে যেসব পাহাড়ী ভারতে শরণাথর্ী হয়েছিল পরবতর্ীতে তারা ফিরে এলেও অনেকের জমি হাতছাড়া হয়ে যায়। আবার সেটেলারদের মধ্যে যেসব বাঙালী সরকার কবুলিয়ত (দলিল) নিয়ে পাহাড়ে জমি পেয়েছে তাদের অনেকেরও জমি হাতছাড়া হয়ে গেছে।
এদিকে খাগড়াছড়ি শহরের সচেতন মানুষ বলছেন, ১৯৯৭ সালে শানত্মিচুক্তি সম্পাদনের পর জেলার অন্যন্য স্থানে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও খাগড়াছড়ি শহরে এমন ঘটনা ঘটল একযুগ পর। শহরের সচেতন পাহাড়ী-বাঙালীদের কাছে এ ধরনের ঘটনা ছিল আশাতীত। শহরবাসীদের অনেকে বলছেন, পুলিশের দায়িত্বে অবহেলা, অবরোধকারীদের অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি আর ধ্বংসাত্মক কর্মকা-ই সুযোগ সন্ধানীদের ষড়যন্ত্রের আগুনে ঘি ঢেলে ভয়াবহ এই সংঘর্ষের মতো ঘটনার জন্ম দিয়েছে।
No comments