মানবাধিকার বিষয়ে সাধারণ মানুষের কাছে ধর্মোপদেশ পৌঁছে দিন- আলেম-ওলামাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেউ যাতে মানবাধিকার লঙ্ঘন করতে না পারে অথবা ইসলামের নামে ভুল না করে তার জন্য সর্বসাধারণের কাছে ধর্মোপদেশ পৌঁছে দিতে দেশের আলেম-ওলামাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘জনগণ যাতে সঠিক পথ বেছে নেয় এবং অবিচার, জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করে তার জন্য তাদের ধর্মোপদেশ দিতে আপনাদের (আলেম-ওলেমা) প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’প্রধানমন্ত্রী রবিবার সকালে নগরীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শ্রেষ্ঠ ইমামদের জাতীয় সম্মেলন ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান ২০১২-এ ভাষণ দেয়ার সময় এ আহ্বান জানান। খবর বাসসর।
ইসলামকে শান্তি, সম্প্রীতি ও সংহতির ধর্ম উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এই পবিত্র ধর্মের মর্যাদা রক্ষা করা সকলের কর্তব্য। তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ইসলামের নামে ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনকারী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে। তিনি আরও বলেন, তারা তাদের কৃত অপরাধের দায় অন্যের ঘাড়ে চাপাতে চায়। শেখ হাসিনা পুনরায় জোর দিয়ে বলেন, ১৯৭১ সালের দুষ্কৃতকারীদের বিচার অবশ্যই সম্পন্ন করা হবে। তিনি বলেন, এমন তো হতে পারে না যে, বাংলার মাটিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তিনি আরও বলেন, কিন্তু ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী পরবর্তী সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়। শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকার তার নির্বাচনী ইশতেহারেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের অঙ্গীকার করেছিল। তিনি বলেন, ওই উদ্যোগের অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত একজন আসামির বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই রায় ঘোষণা করেছে। মহান আল্লাহ ও রাসুল হযরত মুহাম্মদের (সা) অন্যতম শিক্ষা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাঁর সরকার বিশ্বাস করে যে, মানুষের ধর্মীয় মর্যাদা রক্ষার পাশাপাশি তাদের জীবনযাত্রার মানোয়ন্ননে সার্বিক সহযোগিতা দেয়া সরকারের দায়িত্ব। তিনি আরও বলেন, এই লক্ষ্যে আমরা কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং আলেম-ওলামাদের জীবনমানের উন্নয়নে কাজ করছি। ইসলামিক ফাউন্ডেশন পরিচালিত মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কর্মসূচীর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমান সরকার এ প্রকল্পের কর্মকা- পুনরায় শুরু করেছে। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার প্রকল্পটি বন্ধ করে দিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের কল্যাণে তাঁর সরকার একটি ইমাম এবং মুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করেছে। এ ট্রাস্টের আওতায় বয়স্ক ইমামদের অর্থনৈতিক সহায়তা দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ধর্মীয় বিষয় শিক্ষা দেয়ার জন্য দেশের প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আমরা ধর্মীয় শিক্ষকের একটি পদ সৃষ্টি করার উদ্যোগ নিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার একটি আরবী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এবং কওমী মাদ্রাসা থেকে পাস করা আলেম-ওলামাদের কওমী সনদপত্র দেয়ার জন্য কওমী মাদ্রাসা ও শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, হজ ব্যবস্থাপনায় তাঁর সরকার নজিরবিহীন সাফল্য অর্জন করেছে এবং গতবছর রেকর্ডসংখ্যক ১ লাখ ১০ হাজার হজযাত্রী বাংলাদেশ থেকে হজ পালন করেছে। প্রধানমন্ত্রী আরও উল্লেখ করেন, বঙ্গবন্ধুর সরকার ইসলামের প্রচার ও প্রসারে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। বিশ্ব এজতেমার জন্য তুরাগের তীরে জমি বরাদ্দ দেন। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড গঠন করেন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা এবং অন্যান্য ইসলামবিরোধী কর্মকা- নিষিদ্ধ করেন। ধর্মবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী আলহাজ এ্যাডভোকেট এম শাজাহান মিয়ার সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী হাবিবুল আউয়াল এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজালও বক্তৃতা করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় ও বিভাগীয় পর্যায়ের শ্রেষ্ঠ প্রশিক্ষিত ইমামদের মধ্যে চেক, ক্রেস্ট ও সনদপত্র বিতরণ করেন।
No comments