সাঈদীর পক্ষে যুক্তিতর্ক আজকের মধ্যে শেষ করার আদেশ- যুদ্ধাপরাধী বিচার
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে পুনরায় যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপন আজকের মধ্যে শেষ করার আদেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।
চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ রবিবার এই আদেশ প্রদান করেছেন। ট্রাইব্যুনালে অন্য দু’সদস্য ছিলেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি আনোযারুল হক।উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ও ২ এ বিচারিক ও তদন্তসহ ১৪টি মামলার মধ্যে বাচ্চু রাজাকার হিসেবে পরিচিত আবুল কালাম আজাদের মামলার রায় ২১ জানুয়ারি ঘোষণা করা হয়েছে। ঐ রায়ে তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- প্রদান করা হয়েছে। এখন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষাধীন (সিএভি) রাখা হয়েছে। যে কোন দিন তার বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করা হবে। রায় ঘোষণার আগের দিন জানিয়ে দেয়া হবে। পাশাপািশ আরও ৭টি মামলার অগ্রগতি হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে হত্যা, গণত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে। একই সঙ্গে অভিযুক্ত আরও ১১ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। রবিবার সাঈদীর মামলায় আসামিপক্ষ ষষ্ঠ দিনের মতো যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে। মামলার কার্যক্রম আজ পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের যুক্তিতর্কের জবাবে যদি আইনী পয়েন্টে কিছু বলার থাকে তবে তা আজ উপস্থাপন করতে প্রসিকিউশনকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। এর আগে গত ১৭ জানুয়ারি প্রসিকিউশনের পক্ষে সৈয়দ হায়দার আলী সাঈদীর বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেন। প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী সাংবাদিকদের বলেন, সাঈদীর বিরুদ্ধে ২০টি অভিযোগে যুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৯টি অভিযোগে সাক্ষীরা ট্রাইব্যুনালে এসে সাক্ষ্য দিয়েছে এবং একটি অভিযোগের বিষয়ে বিভিন্ন ডকুমেন্ট উপস্থাপন করা হয়েছে। আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হলে প্রসিকিউশনের জবাব দেয়ার থাকলে তা দেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, প্রসিকিউশন থেকে সাঈদীর বিরুদ্ধে যেসব সাক্ষ্য প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে তাতে তার সর্বোচ্চ শাস্তি হবে বলে আশা করছি এবং ট্রাইব্যুনালের কাছে এটাই প্রার্থনা করেছি।
এর আগে গত ৬ ডিসেম্বর উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে সাঈদীর মামলার রায় যে কোন দিন দেয়া হবে উল্লেখ করে মামলাটির রায় ঘোষণা অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখে ট্রাইব্যুনাল-১। ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালÑ১ এর চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করলে বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরকে চেয়ারম্যান করে পুনর্গঠন করা হয় এ ট্রাইব্যুনাল। এ পুনর্গঠনের কারণে সাঈদীর মামলার যুক্তিতর্ক ফের শুরু হয়।
উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে আইন অনুসারে সাঈদীর মামলার রায় ঘোষণার তারিখ ধার্য হবে। এ মামলায় সাঈদীর বিরুদ্ধে ২০১১ সালের ৭ ডিসেম্বর প্রসিকিউশনের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। তার বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ (আইও) ২৭ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দেয়। তাদের মধ্যে ২০ জন মামলায় আনীত অভিযোগ বিষয়ে এবং ৭জন জব্দ তালিকার বিষয়ে সাক্ষ্য দেয়। আসামিপক্ষ তাদের জেরা করে। এছাড়া প্রসিকিউশনের আবেদনের প্রেক্ষিতে মামলার আইও’র কাছে দেয়া ১৫ সাক্ষীর জবানবন্দী সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়। গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর থেকে সাঈদীর পক্ষের সাক্ষীদের সাফাই সাক্ষ্যগ্রহণ শুুরু হয়। সাঈদীর পক্ষে সাফাই সাক্ষী হিসেবে ১৭ জন সাক্ষ্য দেয়। প্রসিকিউশন এ সাক্ষীদের জেরা করে।
No comments