ফলনের সাফল্যে উদ্যমী কৃষক- মিষ্টি কুমড়া চাষে দারিদ্র্য জয়
তিস্তা নদীর তীরে জেগে ওঠা বালুকাময় চরগুলো এখন সবুজে ভরে উঠেছে। এমন শুষষ্ক বালিতেও যে শস্য ফলানো যায় তা প্রমাণ করেছেন মঙ্গাকবলিত রংপুরের গঙ্গাচড়ার আলে কিশামত চরবাসী কয়েকজন চাষী।
গত দু'বছর ঘরে তারা তিস্তার অনাবাদি বালু চরে মিষ্টি কুমড়ার চাষ করে নিজেদের ভাগ্য বদলিয়েছেন। অথচ দু'বছর আগেও এ এলাকার কেউ কল্পনাই করতে পারতেন না এরকম ঊষর জমিতে ফসল ফলানো সম্ভব। গঙ্গাচড়া উপজেলার তিস্তা পারের চারটি চরের ৩০ একর অনাবাদি জমিতে এবার মিষ্টি কুমড়ার চাষ করা হয়েছে। চাষীরা আশা করছেন সবকিছু ঠিক থাকলে মাত্র ৫০ হাজার টাকা উৎপাদন খরচ করে তারা ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার কুমড়া বিক্রয় করবেন। অর্থাৎ এক মৌসুমে লাভ করবেন দু' লাখ টাকা।গঙ্গাচড়া উপজেলার আলে কিশামত চরের মনোয়ারম্নল ইসলাম(৩৫)। গৃহস্থ ঘরের ছেলে। জমাজমি সবই ছিল। কিন্তু তিন/চার বছর আগে তিসত্মার করাল গ্রাসে সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েন। গৃহস্থ ঘরের ছেলে হওয়ায় অন্যের জমিতে কিষাণ খাটতেও লজ্জা পান। তাই সারাণ নদীর বুকে জেগে ওঠা চরের দিকে তাকিয়ে দিন কাটত তার । ছয় সদস্যের পরিবারের খাবার জুটবে কিভাবে এ চিন্তায় কেটে যেত নির্ঘুম রাত । অবশেষে এক শুভদিনে তার সঙ্গে দেখা হয় কেয়ার এর ব্রীফ-সৌহার্দ্য প্রোগ্রামের এক কর্মকর্তার। ঐ কর্মকর্তা মনোয়ারকে উদ্বুদ্ধ করেন বালু চরে মিষ্টি কুমড়া চাষ করতে। প্রথমে বিশ্বাস না হলেও এক পর্যায়ে কাজ শুরম্ন করে দেন তিনি।
মনোয়ার জনকণ্ঠকে বলে, গত বছর সাহস করে মাত্র ২০ শতাংশ জমিতে ১২০টি গাছ লাগাই। এতে প্রায় আড়াই হাজার টাকা উৎপাদন খরচ করে আমার আয় হয় প্রায় নয় হাজার টাকা। তিনি জানান, এবছর তিনি চার একর জমিতে ১০ হাজার গাছ লাগিয়েছেন। প্রতিটি গাছে কমপ েচার/পাঁচটি কুমড়া ধরে। এক একটি কুমড়া পাঁচ কেজির কম নয়, যার প্রতিটির মূল্য গড়ে ৩০টাকা। অথচ গাছ প্রতি তার খরচ পড়ে ২০/২২ টাকা বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, 'আমি নিজে যেখানে খেতে পেতাম না, এখন আমার জমিতে ৪/৫ জন লোক কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
মনোয়ারের সাফল্যে এলাকার অনেকেই উৎসাহী হয়ে উঠেছে চরের পতিত জমিতে কুমড়া চাষে। বিননিনিয়া চরের ফেরদৌস, আলীম, হাকিম, আউয়াল, কিশামত চরের জাদু মিয়া, ছইদার, নুরম্ন মিয়া, বাকডোহরা চরের জসিম, সাইফুলসহ মোট ১৮ জন চাষী এ বছর মিষ্টি কুমড়া চাষ করেছে। তারা বলেন, "শুকনা মৌসুমের জন্য সাময়িক জেগে ওঠা চরগুলোতে কোন ফসল হয়না । ফলে মালিকানাও কেউ দাবি করে না। ফলে আমরা ভূমিহীনরা নিজের জমির মতই যতটুকু দরকার চাষ করতে পারি। তারা ধারণা করছেন, আগামী বছর এ চরের আরও ব্যাপক এলাকায় মিষ্টি কুমড়ার চাষ হবে।
ব্রীফ-সৌহাদর্্য প্রোগ্রামের কারিগরী কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার দাস বলেন, বিশ্বে প্রতিনিয়ত জনসংখ্যা বাড়ছে এবং কমছে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ । ফলে খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি এখন খুবই গুত্বপূর্ণ ইস্যু। বাংলাদেশের প্রোপটে এটি আরও গুরম্নত্বপূর্ণ। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে আমাদের খাদ্য শষ্য উৎপাদনের উপর জোর দিতে হবে এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে চাষের অনুপোযুক্ত জমিতেও চাষের ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি বলেন, "সে ল্যেই আমরা চরের অনাবাদি জমিতে খাদ্য শস্য উৎপাদনের জন্য চরবাসীদের প্রশিণ ও লজিস্টিক সাপোর্ট দিয়ে সহযোগিতা করছি। শুধু তিসত্মার দু'পাড়ে যে হাজার হাজার একর অনাবাদি চর আছে সেগুলোতে মিষ্টি কুমড়া আবাদ করে চরবাসীর দারিদ্র মোচন করা সম্ভব বলে তিনি জানান। উলেস্নখ্য, ব্রীফ-সৌহাদর্্য প্রোগ্রামের আওতায় তারা গঙ্গাচড়া উপজেলার চারটি ইউনিয়নের ১৬টি গ্রামে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ প্রকল্প বাসত্মবায়ন করছে।
তিনি আরও জানান, গঙ্গাচড়ার প্রধান কৃষি পণ্য তামাক। কিন্তু তামকের চেয়ে মিষ্টি কুমড়ার চাষে খরচ কম, লাভ অনেক বেশী। তা ছাড়া মিষ্টি কুমড়া চাষে সময় লাগে অনেক কম, মাত্র দ'ু মাস। তাই ইতোমধ্যে বেশ কিছু চাষী তামাক ছেড়ে মিষ্টি কুমড়া চাষ শুরম্ন করেছে। তিনি আশা প্রকাশ করছেন, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এ এলাকায় মিষ্টি কুমড়া তামাক হটিয়ে তামাকের জায়গা দখল করবে।
০ আব্দুর রউফ সরকার, রংপুর
No comments