যুদ্ধাপরাধী বিচারে আমেরিকা ও ব্রিটেনের সমর্থন
যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের বিচারকে তারা সমর্থন করে। তবে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে, এ ধরনের মামলার বিচার হতে হবে অবাধ, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গত সোমবার আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির আদেশের পর মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর বাংলাদেশ সময় গতকাল বুধবার সকালে এক প্রতিক্রিয়ায় এ মন্তব্য করেছে।যুক্তরাষ্ট্র সময় মঙ্গলবার রাতে দেয়া এই বিবৃতিতে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ভিক্টরিয়া নুল্যান্ড বলেছেন, এ ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধ যারা করে তাদের বিচারের আওতায় আনাকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করে। একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে, এ বিচার অবশ্যই অবাধ, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে হতে হবে। এবং এ বিচার হতে হবে বাংলাদেশের নিজস্ব আইন ও আন্তর্জাতিকমান বজায় রেখে। কেননা, বাংলাদেশ বেসামরিক ও রাজনৈতিক অধিকারবিষয়ক চুক্তিসহ আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলো মেনে নিতে সম্মত। বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হওয়ার পর এই প্রথম যুক্তরাষ্ট্র বিবৃতি দিল। এদিকে ব্রিটেনের জুনিয়র মন্ত্রী ব্যারোনেস ওয়ার্সিও মঙ্গলবার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে সমর্থন করে একটি বিবৃতি দিয়েছেন। তবে তিনি বলেছেন, যুক্তরাজ্য সব ক্ষেত্রেই মৃত্যুদ-ের বিরোধী। খবর এএফপির।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ভিক্টরিয়া নুল্যান্ড বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংঘটিত গণহত্যার বিচার শুরু হয়েছে এবং শীঘ্রই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও কয়েকটি মামলার রায় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এসব মামলার বিচারেও আন্তর্জাতিক সনদ অনুসরণ ও আইনের শাসনের নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দফতরের জুনিয়র মন্ত্রী ব্যারনেস ওয়ার্সি বিবৃতিতে বলেন, তাঁর সরকার এ রায় পর্যবেক্ষণ করছে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে নৃশংসতার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের মুখোমুখি করার যে উদ্যোগ বাংলাদেশ নিয়েছে, যুক্তরাজ্য সরকার তা সমর্থন করে। বিবৃতিতে বলা হয়, কিছু এনজিও এবং আইন পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কার্যধারা সম্পর্কে যেসব উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, যুক্তরাজ্য সরকার সেসব বিষয়েও সজাগ রয়েছে। ব্যারনেস ওয়ার্সি বলেন, ‘আমরা আশা করব, এসব উদ্বেগ দ্রুত এবং পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে নিষ্পত্তির জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পদক্ষেপ নেবে, যাতে করে বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার সততা, স্বাধীনতা ও সুনাম বজায় থাকে।
মার্কিন বিবৃতির প্রতিক্রিয়া ॥ এদিকে বিডিনিউজ জানিয়েছে, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেছেন, স্বচ্ছতার সঙ্গেই এ বিচার চলছে এবং তা নিয়ে কোন ধরনের প্রশ্নের অবকাশ নেই। বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন জানালেও দেশটি বিচারের স্বচ্ছতার ওপর জোর দিয়েছে। আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, স্বচ্ছতার সঙ্গে এবং আন্তর্জাতিকমান বজায় রেখে যুদ্ধাপরাধের বিচার চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ নিয়ে সন্দেহ থাকার অবকাশ নেই।’ কামরুল বলেন, ‘যারা এই নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, তারা মিথ্যাচার করছে। এ বিচারের মধ্য দিয়ে আমরা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই।’
একাত্তরে পাকিস্তানের পক্ষে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান অবস্থানকে স্বাগত জানান শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী। তিনি বলেন, একাত্তরে তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ছিল। এখন বিচারে সমর্থন জানানোয় তাদের ধন্যবাদ জানাই।
শ্যামলী নাসরিন অবশ্য বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সরকারকে সংলাপে বসার মার্কিন রাষ্ট্রদূতের পরামর্শের সমালোচনা করেন। ‘তারা নিজ দেশের জন্য এক নীতি, অন্যদের জন্য আরেক নীতি অবলম্বন করে। তারা তালেবানের সঙ্গে তো সংলাপ করে না। কীভাবে তারা জামায়াতের সঙ্গে আলোচনায় বসার পরামর্শ দেয়?’ সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সহ-সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল কেএম সফিউল্লাহ যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনকে ইতিবাচক মনে করেন।
‘আমি তাদের বিবৃতি পড়েছি। যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন রয়েছে বিচারে। মান নিশ্চিতের বিষয়ে তাদের বক্তব্যটা তাদের বিশ্বাস। এখানে সর্বোচ্চ মান বজায় রেখে বিচার হচ্ছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থানকে যুগান্তকারী মনে করছে ওয়্যার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি। কমিটির আহ্বায়ক এম এ হাসান বলেন, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নেয়া প্রভাবশালী এ দেশের সমর্থন খুবই ইতিবাচক। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ১৯৯৯ সালের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের পরিবর্তনের সূচনা হয় বলে মনে করেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের বিবৃতি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এমকে আনোয়ার। তিনি বলেন, ‘আমার দলের অবস্থান ইতোমধ্যে আমরা তুলে ধরেছি। নতুন করে বলার কিছু নেই। যুক্তরাষ্ট্রের বিবৃতি নিয়ে আমাদেরও বলার কিছু নেই।’
No comments