শিক্ষকদের দাবি নিয়ে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ-কেন শঠতার আশ্রয়?

আবারো শিক্ষকদের প্রতি হীন আচরণের প্রকাশ ঘটাল সরকার। দীর্ঘ ২৮ বছর পর বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ও চিকিৎসাভাতা যে হারে বাড়িয়েছে, কোনো মতেই তা সম্মানজনক বলার সুযোগ নেই।
বাড়িভাড়া ও চিকিৎসাভাতা বাড়িয়ে যথাক্রমে ৫০০ ও ৩০০ টাকা করেছে সরকার। এর আগে তারা বাড়িভাড়া পেতেন ১০০ টাকা, চিকিৎসাভাতা ১৫০ টাকা। সম্মানজনক না হলেও ২৮ বছর আগে এই এক শ’-দেড় শ’ টাকা দিয়ে কিছু একটা হয়তো করা যেত। কিন্তু তিন শ’ ও পাঁচ শ’ টাকা দিয়ে একটি পরিবারের বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা খরচের কানাকড়িও হবে না এখন। ভিক্ষা দেয়ার মতো ভাতা বাড়িয়ে সরকার শিক্ষকদের কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিয়ে দিলো।

সরকারি ঘোষণার সাথে সাথে তা প্রত্যাখ্যান করে কঠোর জবাব দিয়েছে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের একক বৃহৎ সংগঠন শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোট। মন্ত্রীর ঘোষণার ২ ঘণ্টার মধ্যেই জাতীয় প্রেস কাবের সামনে তারা বিক্ষোভ করেছে। সংগঠনটি চাকরি জাতীয়করণের এক দফা দাবিতে বুধবার জাতীয় প্রেস কাবের সামনে শিক্ষকদের মহা-অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে। সরকারের নীতি-কর্মসূচির বড় সমর্থক শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যপরিষদ এবং প্রবীণ শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় শিক-কর্মচারী ফ্রন্টও শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের ঘোষণাকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। অর্থাৎ শিক্ষকদের প্রতিনিধিত্বকারী কোনো সংগঠনই সরকারের এই শঠতাপূর্ণভাবে ভাতা বাড়ানোকে স্বাগত জানাতে পারেনি।

শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রভূত উন্নতি হয়েছে বলে দাবি করছে সরকার। কিন্তু আমরা দেখছি, যারা জাতি গড়ার কারিগর তাদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করতে দ্বিধা করছে না সরকার। এক দিকে জাতীয়করণের মুলা ঝুলাচ্ছে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি হিসেবে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা বাস্তবায়ন নিয়ে বিন্দুমাত্র অগ্রসর হচ্ছে না। সরকার অস্ত্র কেনার জন্য অবলীলায় আট হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নিয়েছে। বিশাল ব্যয়ের জরুরি প্রয়োজনীয়তার কথা জাতি জানে না। অপর দিকে শিক্ষকেরা ডাল-ভাত খাওয়ার নিশ্চয়তা পাচ্ছেন না। সম্মানজনকভাবে বাঁচার বিষয়টি অনেক দূরের বিষয়। তারা যখন ন্যূনতম চাহিদা মেটানোর দাবি জানাতে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি নিয়ে রাস্তায় নামছেন, তাদের ওপর ভয়ানক অস্ত্রের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে সরকার। হিংস্র পশুদের নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যবহৃত পিপার ¯েপ্র করা হচ্ছে নিরপরাধ শিক্ষকদের ওপর। এ অস্ত্রে এরই মধ্যে একজন শিক্ষক প্রাণ হারিয়েছেন।

শিক্ষকেরা তো ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নন। এরা ক্ষমতার প্রতিদ্বন্দ্বী নন। তাদের আন্দোলন স্রেফ রুটি-রুজিকেন্দ্রিক। কিন্তু তাদের সাথে সরকার প্রতারণা ও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করছে বারবার। মনে হচ্ছে, রহস্যময় আচরণ করছে সরকার। শিক্ষকদের দাবি যদি ন্যায়সঙ্গত হয়, তাহলে কোনো ছলাকলা না করে সেটা মেনে নেয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে সব দাবি যদি পূরণ সম্ভব না হয় তাহলে ধাপে ধাপে পূরণ করার সরল প্রতিশ্রুতি দিতে পারে সরকার। আর যদি শিক্ষকদের দাবি অন্যায় ও অসঙ্গত হয় তাহলে সরকারের উচিত সেটা ব্যাখ্যা করে তাদের বলা। কেন সেটা অন্যায় বা অসঙ্গত। আমরা মনে করি, শিক্ষকদের আন্দোলন নিয়ে সরকার আর শঠতার আশ্রয় নেবে না। তাদের প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে বাস্তবসঙ্গত পদক্ষেপ নেবে। তাদেরকে সন্তুষ্টচিত্রে কাসে ফেরত যাওয়ার পথ করে দেবে।
       

No comments

Powered by Blogger.