কৃষক ফসল না ফলালে প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে by ইফতেখার আহমেদ টিপু
বহু বছর বাংলাদেশের তকমা ছিল খাদ্যঘাটতির দেশ। এখন এ অপবাদ ঘুচে গেছে। আনন্দের বিষয়, বিশ্বব্যাপী যখন খাদ্যের আসন্ন সংকট নিয়ে উদ্বেগ, তখন বাংলাদেশে গোলাভরা ধান। এর পেছনে বর্তমান সরকারের কৃষিবান্ধব নীতি ও কর্মকৌশলের অবদান অনস্বীকার্য। এর প্রধান অবদান কৃষকদেরই।
সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, এবার আমন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তিন লাখ টন। কিন্তু এবার আমন চালের উৎপাদন হবে এক কোটি ৩৩ লাখ টন। সেই হিসাবে সরকার মোট উৎপাদনের ২.২ শতাংশ চাল সংগ্রহ করছে। এবার সরকার আমন চালের সংগ্রহমূল্য ধার্য করেছে প্রতি কেজি ২৬ টাকা। তাতে প্রতি কেজি ধানের দাম দাঁড়ায় ১৭ দশমিক ১৬ টাকা। সরকার প্রতি মণ চাল সংগ্রহ করছে এক হাজার ৪০ টাকায়, সে হিসাবে প্রতি মণ ধানের দাম পড়ছে ৬৮৬ টাকা। কৃষকরা এখন প্রতি মণ আমন ধান বিক্রি করছে ৫২০ থেকে ৫৫০ টাকায়। অথচ তাদের মণপ্রতি ধানের উৎপাদন খরচ হচ্ছে ৬০০ টাকার ওপরে। সরকার যে দাম নির্ধারণ করে মিলারদের কাছ থেকে চাল নিচ্ছে, সেই দামে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে চাল কিনলে কৃষক কিছুটা হলেও লাভের মুখ দেখবে।
ইদানীং দেশের বিভিন্ন এলাকায় কৃষকরা বোরো চাষের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। কৃষকদের চাষের আগ্রহ হারিয়ে ফেলার প্রধান কারণ হলো চাল, ডাল, তেলসহ সব নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়লেও ধান-চালের সংগ্রহমূল্য ধার্য করা হচ্ছে কম। এর ওপর কৃষি উপকরণ ও বিদ্যুৎ-জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে দফায় দফায়, এমনকি ক্ষেতমজুরদেরও মজুরি বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে কৃষকরা বৈষম্য ও বঞ্চনার শিকার হচ্ছে। কৃষি অর্থনীতিনির্ভর বাংলাদেশের কৃষকরা ন্যায্য মূল্য যদি না পায় তাহলে তারা চাষাবাদ ছেড়ে অন্য পেশায় নিয়োজিত হবে, যার প্রভাব পড়বে আমাদের অর্থনীতিতে। ধানের দাম আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়ায় কৃষকের মাথায় হাত। উৎপাদন খরচের চেয়ে ফসলের দাম কম হওয়ায় ভবিষ্যতে কৃষকরা ধান উৎপাদনে আদৌ উৎসাহী হবে কি না, সে প্রশ্নও জোরেশোরে উঠছে সর্বত্র।
পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে দেখা যায়, প্রতি মণ ধানে কমপক্ষে ৮০ টাকা লোকসান দিচ্ছে কৃষকরা। বিদেশে প্রতি কেজি চালের গড় দাম এখন ৪৬ টাকা। দেশে সরকার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে ২৬ টাকা। ২০১০-১১ সালে প্রতি কেজির দাম নির্ধারিত ছিল ২৯ টাকা, গত বছর কমিয়ে করা হয় ২৮ টাকা। এবার আরো কমিয়ে করা হয় ২৬ টাকা। অথচ প্রতিবছর বাড়ছে উৎপাদনব্যয়, কমছে উৎপাদিত ধানের দাম। কৃষক মূল্যস্ফীতির অর্থ হয়তো ঠিকভাবে বোঝে না, কিন্তু নিশ্চিতভাবেই তারা এর চরম শিকার। চাল-ডাল-মাছ থেকে শুরু করে ধান ফলানোর সার-বীজ-সেচের পানি, এক কথায় সবই তাদের কিনতে হয় চড়া দামে। জীবনযাপনে ব্যয়ের পরিমাণও বাড়ছে। উৎপাদিত প্রধান ফসলের দাম না পেলে সংসারের ব্যয় কিভাবে বহন করবে? নতুন বিনিয়োগের অর্থই বা আসবে কোত্থেকে? পাটের উৎপাদন করে তারা লাভ পায় না। বোরো ধানে লোকসান গেছে। আমনেও লোকসান। কৃষক কত খেসারত দেবে?
এটা ঠিক যে চালের দাম কম থাকলে দরিদ্র জনগোষ্ঠী খুশি থাকে। শহরের বিত্তবান, সচ্ছল ক্রেতাদেরও এটাই পছন্দ। কিন্তু তার দায় কেন ধানের উৎপাদক কৃষকরা বহন করবে? সরকারের ভাবা উচিত, বাংলাদেশ আবার খাদ্য ঘাটতির দেশে পরিণত হলে এতে ক্ষতি হবে কার? দেশের সুনাম কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? খাদ্য নিরাপত্তা পড়বে শঙ্কায়। সরকার সার-বীজ-সেচের জন্য ভর্তুকি দিলে এ শঙ্কা থাকবে না। এতে উৎপাদক ও ক্রেতা সবারই লাভ। বাম্পার ফলনের কারণে সরকার ১০-১২ লাখ টন চাল রপ্তানির বিষয়েও জরুরি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে।
ধান উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করেছে। খাদ্য আমদানি বাবদ হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের দুর্ভোগ থেকে দেশ রক্ষা পেয়েছে। ন্যায্য মূল্য না পেয়ে কৃষকরা যদি উৎপাদন বন্ধ করে দেয় তাহলে দেশের অর্থনীতি আবারও হোঁচট খাবে। খাদ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার স্বপ্ন ধূলিসাৎ হবে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উচ্চহার বজায় রাখা অসম্ভব হয়ে পড়বে। বাংলাদেশ আবার তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত হবে। তাই বলছি, কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে, বাঁচবে দেশের অর্থনীতি।
লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক দৈনিক নবরাজ, চেয়ারম্যান ইফাদ গ্রুপ
chairman@ifadgroup.com
ইদানীং দেশের বিভিন্ন এলাকায় কৃষকরা বোরো চাষের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। কৃষকদের চাষের আগ্রহ হারিয়ে ফেলার প্রধান কারণ হলো চাল, ডাল, তেলসহ সব নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়লেও ধান-চালের সংগ্রহমূল্য ধার্য করা হচ্ছে কম। এর ওপর কৃষি উপকরণ ও বিদ্যুৎ-জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে দফায় দফায়, এমনকি ক্ষেতমজুরদেরও মজুরি বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে কৃষকরা বৈষম্য ও বঞ্চনার শিকার হচ্ছে। কৃষি অর্থনীতিনির্ভর বাংলাদেশের কৃষকরা ন্যায্য মূল্য যদি না পায় তাহলে তারা চাষাবাদ ছেড়ে অন্য পেশায় নিয়োজিত হবে, যার প্রভাব পড়বে আমাদের অর্থনীতিতে। ধানের দাম আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়ায় কৃষকের মাথায় হাত। উৎপাদন খরচের চেয়ে ফসলের দাম কম হওয়ায় ভবিষ্যতে কৃষকরা ধান উৎপাদনে আদৌ উৎসাহী হবে কি না, সে প্রশ্নও জোরেশোরে উঠছে সর্বত্র।
পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে দেখা যায়, প্রতি মণ ধানে কমপক্ষে ৮০ টাকা লোকসান দিচ্ছে কৃষকরা। বিদেশে প্রতি কেজি চালের গড় দাম এখন ৪৬ টাকা। দেশে সরকার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে ২৬ টাকা। ২০১০-১১ সালে প্রতি কেজির দাম নির্ধারিত ছিল ২৯ টাকা, গত বছর কমিয়ে করা হয় ২৮ টাকা। এবার আরো কমিয়ে করা হয় ২৬ টাকা। অথচ প্রতিবছর বাড়ছে উৎপাদনব্যয়, কমছে উৎপাদিত ধানের দাম। কৃষক মূল্যস্ফীতির অর্থ হয়তো ঠিকভাবে বোঝে না, কিন্তু নিশ্চিতভাবেই তারা এর চরম শিকার। চাল-ডাল-মাছ থেকে শুরু করে ধান ফলানোর সার-বীজ-সেচের পানি, এক কথায় সবই তাদের কিনতে হয় চড়া দামে। জীবনযাপনে ব্যয়ের পরিমাণও বাড়ছে। উৎপাদিত প্রধান ফসলের দাম না পেলে সংসারের ব্যয় কিভাবে বহন করবে? নতুন বিনিয়োগের অর্থই বা আসবে কোত্থেকে? পাটের উৎপাদন করে তারা লাভ পায় না। বোরো ধানে লোকসান গেছে। আমনেও লোকসান। কৃষক কত খেসারত দেবে?
এটা ঠিক যে চালের দাম কম থাকলে দরিদ্র জনগোষ্ঠী খুশি থাকে। শহরের বিত্তবান, সচ্ছল ক্রেতাদেরও এটাই পছন্দ। কিন্তু তার দায় কেন ধানের উৎপাদক কৃষকরা বহন করবে? সরকারের ভাবা উচিত, বাংলাদেশ আবার খাদ্য ঘাটতির দেশে পরিণত হলে এতে ক্ষতি হবে কার? দেশের সুনাম কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? খাদ্য নিরাপত্তা পড়বে শঙ্কায়। সরকার সার-বীজ-সেচের জন্য ভর্তুকি দিলে এ শঙ্কা থাকবে না। এতে উৎপাদক ও ক্রেতা সবারই লাভ। বাম্পার ফলনের কারণে সরকার ১০-১২ লাখ টন চাল রপ্তানির বিষয়েও জরুরি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে।
ধান উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করেছে। খাদ্য আমদানি বাবদ হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের দুর্ভোগ থেকে দেশ রক্ষা পেয়েছে। ন্যায্য মূল্য না পেয়ে কৃষকরা যদি উৎপাদন বন্ধ করে দেয় তাহলে দেশের অর্থনীতি আবারও হোঁচট খাবে। খাদ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার স্বপ্ন ধূলিসাৎ হবে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উচ্চহার বজায় রাখা অসম্ভব হয়ে পড়বে। বাংলাদেশ আবার তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত হবে। তাই বলছি, কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে, বাঁচবে দেশের অর্থনীতি।
লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক দৈনিক নবরাজ, চেয়ারম্যান ইফাদ গ্রুপ
chairman@ifadgroup.com
No comments