আন্তর্জাতিক নদীতে ভারতের ৬০০ সেচ ও পানিবিদ্যুৎ প্রকল্প by আতাউর রহমান মিলন ও শফিউল আযম
হিমালয়ের ভাটিতে বাংলাদেশের উজানে আন্তর্জাতিক নদীতে ভারত তিন হাজার
৬০০টি বাঁধ দিয়েছে। আরো এক হাজার বাঁধের নির্মাণকাজ প্রায় সমাপ্তির পথে।
গত
চার বছরে ৪০০ বাঁধ ও পানিবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ সম্পন্ন করেছে ভারত।
বাংলাদেশে প্রবাহিত ৫৪টি নদীর পানির উৎস ভারত, নেপাল, তিব্বত ও চীনে। ভারত
একতরফাভাবে প্রত্যেকটি অভিন্ন নদীতে বাঁধ, পানিবিদ্যুৎ, ক্যানাল প্রকল্প,
রিজার্ভারসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করে পানির প্রবাহ আটকে রেখেছে। ফলে
শুষ্ক মওসুমে বাংলাদেশের নদ-নদীতে পরিমাণ মতো পানির প্রবাহ থাকে না। আবার
বর্ষা মওসুমে অতিরিক্ত পানিতে বানে ভাসে এ দেশের মানুষ ও জনপদ।
হিমালয় পর্বতমালার উৎস থেকে যে কয়টি দেশ পানির বিপুল সম্ভার লাভ করে থাকে তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এসব নদীর প্রবাহ সরাসরি বাংলাদেশ পেতে পারে না। কারণ এগুলো ভারতের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত। ভারত এসব নদী ও উপনদীতে অসংখ্য পানিবিদ্যুৎ প্রকল্প, বাঁধ, সøুইস গেট ও রিজার্ভার নির্মাণ করে পানির প্রবাহ আটকে দিয়েছে। প্রাকৃতিক নিয়মের বাইরে এসব প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির ফলে হিমালয়ের ভাটিতে এক ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয় লক্ষ করা যাচ্ছে।
ভারত শুধু ফারাক্কা নয়, গঙ্গা-পদ্মাকেন্দ্রিক বাঁধ, পানির আধার, ক্রসড্যাম, রেগুলেটরসহ অন্তত ৩৩টি অবকাঠামো নির্মাণ করেছে। এর সাথে রয়েছে আনুষঙ্গিক আরো অসংখ্য ছোট-বড় কাঠামো। নতুন করে উত্তরখণ্ড প্রদেশ রাজ্য সরকার ৫৩টি বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
ভারত গঙ্গায় বৃহদাকার তিনটি খাল খনন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে, আপার গঙ্গা ক্যানাল প্রজেক্ট, মধ্য গঙ্গা ক্যানাল প্রজেক্ট এবং নিম্নœ গঙ্গা ক্যানাল প্রজেক্ট। এসব প্রকল্পের হাজার হাজার কিলোমিটার খালের মাধ্যমে তারা গঙ্গার পানি সরিয়ে নিয়ে সেচ দেয়ার ব্যাপক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। আপার গঙ্গা ক্যানাল প্রজেক্টের মাধ্যমে উত্তর প্রদেশের তিন লাখ ৩৩ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে সেচ দেয়ার ল্েয ছয় হাজার কিলোমিটারের বেশি খাল কেটে পদ্মার পানি সরিয়ে নিচ্ছে। মধ্য গঙ্গা ক্যানাল প্রকল্পে মূল ও শাখাসহ খননকৃত খালের মোট দৈর্ঘ্য প্রায় এক হাজার ৬০০ কিলোমিটার। নিম্ন গঙ্গা ক্যানাল প্রজেক্টের জন্য ছয় হাজার কিলোমিটার খাল খনন করা হয়েছে।
উৎসমুখে গঙ্গার অন্যতম প্রদায়ক নদী ভাগীরথীর ওপর ভারত ‘তেহরী বাঁধ’ নির্মাণ করেছে। এর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে গঙ্গা তথা পদ্মা নদীর ওপর। এ কারণে ভাটিতে এসে পদ্মায় পানিপ্রবাহ ব্যাপকভাবে হ্রাস পাচ্ছে। উত্তর প্রদেশের কানপুরে গঙ্গা নদীর ওপর নির্মিত হয়েছে ‘লব-কুশ ব্যারাজ’। এই বাঁধ দিয়ে ভারত প্রতিদিন ১৯ হাজার মিলিয়ন লিটার পানি সরিয়ে নিচ্ছে। এই পানি বিশুদ্ধ করে খাবার পানি হিসেবে ব্যবহার করছে। গঙ্গার আরেক অন্যতম উৎস কর্ণালী নদীর ওপর ভারতের অর্থ সহায়তায় ও প্রয়োজনে নেপালে একটি বড় আকারের বাঁধ ও পানিবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন করা হয়েছে। এই প্রকল্প থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের ৯৫ শতাংশই ব্যবহার করবে ভারত। কর্ণালী নদীর পানিপ্রবাহ ব্যাহত হওয়ার কারণে গঙ্গার প্রবাহও মারাত্মকভাবে তিগ্রস্ত হচ্ছে।
ভারত গঙ্গার গুরুত্বপূর্ণ উৎস কোশি নদীতে বাঁধসহ বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করায় পদ্মা নদীতে মারাত্মক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। নেপালের সাথে দ্বিপীয় চুক্তি মোতাবেক এই কার্যক্রম হাতে নেয়া হলেও এর মূল উপকারভোগী হলো ভারত। গঙ্গার উৎস রামগঙ্গা নদীতেও ভারত একটি বৃহৎ ও বহুমুখী প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এতে রয়েছে একটি দীর্ঘ বাঁধ, পানি প্রত্যাহারের জন্য কৃত্রিম খাল ও একটি বিশাল রিজার্ভার। এই প্রকল্পের মাধ্যমে রামগঙ্গা নদীর পানি একটি বিদ্যুৎ ও সেচ প্রকল্পের রিজার্ভারে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। ফলে মূল গঙ্গায় পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ ছাড়াও গঙ্গা নদীতে পানির প্রবাহ বৃদ্ধির অন্যতম সহায়ক নদী হলো ঘাগরা, কোশি ও গণ্ডক। নেপাল থেকে উৎসারিত এসব নদীতে নিজ এলাকায় ভারত বাঁধ নির্মাণ করেছে। ফলে গঙ্গার প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আর এ কারণে স্বাভাবিকভাবেই ফারাক্কা পয়েন্টে পানির প্রবাহ হ্রাস পাচ্ছে বলে জানা গেছে। গত বছর ও এ বছর ফারাক্কা পয়েন্টে পানিপ্রবাহ সবচেয়ে কম।
আন্তর্জাতিক নদী সংকোশের স্রোত গঙ্গায় নিয়ে যাওয়ার ল্েয ভারতীয় একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ এগিয়ে চলেছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ যেমন সংকোশের সরাসরি প্রবাহ থেকে বঞ্চিত হবে, অন্য দিকে ব্রহ্মপুত্রে সংকোশের পানির উৎসমুখও বন্ধ হয়ে যাবে। ব্রহ্মপুত্রের অন্যতম উৎস ও প্রদায়ক রাঙ্গানদীর ওপর ভারত বাঁধ নির্মাণ করেছে। ব্রহ্মপুত্রে পানির প্রবাহ হ্রাস পাওয়া এর অন্যতম কারণ বলে জানা গেছে। আসামে ব্রহ্মপুত্র নদের অন্যতম উৎস পাগলাদিয়ায় একটি বিশাল বাঁধ নির্মাণ করছে ভারত। এই বাঁধের মাধ্যমে ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচসুবিধা সম্প্রসারণ করা যাবে। এ জন্য পাগলাদিয়ার পানি বাঁধের ভেতর প্রত্যাহার করা হচ্ছে। এতে বাংলাদেশের ব্রহ্মপুত্র-যমুনা অংশে পানির সঙ্কট হচ্ছে। ভারত ব্রহ্মপুত্রের আরেক উৎস লাংপি নদীর ওপর একটি বাঁধ তৈরি করে পানির প্রবাহ আটকে দিয়েছে।
ব্রহ্মপুত্র-যমুনার প্রবাহের গুরুত্বপূর্ণ উৎস রাইডাক নদীতে ভুটান-ভারত যৌথ উদ্যোগে বৃহৎ একটি পানিবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে তুলেছে। এই প্রকল্পের জন্য যে পরিমাণ পানি প্রত্যাহার করা হচ্ছে তাতে ব্রহ্মপুত্র নদে পানির সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। ব্রহ্মপুত্রের অপর গুরুত্বপূর্ণ উৎস কপিলি নদীকে কেন্দ্র করে ভারত বেশ ক’টি বাঁধ ও রিজার্ভার নির্মাণ করেছে। সেচব্যবস্থার সম্প্রসারণের পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদন এই বাঁধ প্রকল্পের ল্য। এটি নির্মিত হওয়ায় ব্রহ্মপুত্রে পানি প্রবাহে সঙ্কট দেখা দিচ্ছে।
ব্রহ্মপুত্র নদের গুরুত্বপূর্ণ উৎস সুবানসিঁড়ি নদীর পানি প্রত্যাহারসহ বেশ ক’টি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজে হাত দিয়েছে ভারত। এর বিরূপ প্রভাবে ব্রহ্মপুত্র নদ ব্যাপকভাবে পানি সঙ্কটের সম্মুখীন হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর মধ্যে লোয়ার সুবানসিঁড়ি প্রকল্প সমাপ্তির পথে রয়েছে। এর ফলে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হয়ে ব্রপুত্রের ধারা বিপন্ন হবে। ভারতের নাগাল্যান্ডে ডয়াং নদীর ওপর নির্মিত একটি ড্যাম ব্রহ্মপুত্রের প্রবাহে বাধার সৃষ্টি করছে।
ব্রহ্মপুত্রের অপর উৎস উমিয়াম নদীতে বাঁধ দিয়ে অন্তত চারটি বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন করেছে ভারত। এর প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশে যমুনা নদীতে পানির প্রবাহে টান পড়ছে। এই প্রকল্পের আওতায় ব্রহ্মপুত্রের উপনদী উমিয়ামের পানি সরিয়ে নিয়ে ‘ উপক্র’ নামক নদীতে প্রবাহিত করা হচ্ছে। পানি প্রত্যাহারের ফলে কার্যত এই অন্যতম উপনদীর পানি থেকে ব্রহ্মপুত্র নদ প্রায় সম্পূর্ণ বঞ্চিত হচ্ছে।
ভারত পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে গজলডোবা নামক স্থানে তিস্তা নদীর ওপর একটি ব্যারাজ নির্মাণ করেছে, যা একটি বৃহৎ সেচ প্রকল্প হিসেবে কাজ করছে। এবার ভারত তিস্তার তার অংশের পুরোটা কাজে লাগিয়ে আগামী ১০ বছরের মধ্যে ৫০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিশাল প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এই প্রকল্পের আওতায় পানির বৃহৎ রির্জাভার গড়ে তোলা হবে এবং এগুলোর শক্তিশালী প্রবাহ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে।
তিস্তা নদী ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং-জলপাইগুড়ি হয়ে বাংলাদেশের লালমনিরহাট দিয়ে কুড়িগ্রামের চিলমারীতে প্রবেশ করে ব্রহ্মপুত্র নদে মিলিত হয়েছে। বাংলাদেশে তিস্তার দৈর্ঘ্য ১১২ কিলোমিটার। ফলে এটি শুধু স্বাধীন একটি নদী নয়, তিস্তা বাংলাদেশেরও নদী এবং তা ব্রহ্মপুত্রের পানি প্রবাহের অন্যতম উৎস। তিস্তার প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়া মানেই ভাটিতে বাংলাদেশের তিস্তার অপমৃত্যু এবং সেই সাথে ব্রহ্মপুত্র তথা যমুনার প্রবাহ ব্যাপকভাবে তিগ্রস্ত হওয়া। এই নদীর অস্তিত্বের সাথে বিস্তীর্ণ এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশ নির্ভরশীল।
ভারত বাংলাদেশের তেঁতুলিয়া সীমান্তের পশ্চিম-উত্তর কোণে মহানন্দা নদীর ওপর একটি বাঁধ নির্মাণ করেছে। এর মাধ্যমে ভারত এক দিকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে, অন্য দিকে ৬৭৫ বর্গকিলোমিটার এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ করছে। সেই সাথে প্রতি বছর শুষ্ক মওসুমে ফিডার ক্যানালের সাহায্যে পানি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ ও বিহার রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে সেচকাজে ব্যবহার করছে। বিপরীতে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ এলাকার ভূগর্ভের পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় সেচ বিঘিœত হচ্ছে। ভারত বাঁধ, রিজার্ভারসহ অসংখ্য অবকাঠামো তৈরির মাধ্যমে নদ-নদীর পানি আটকে রাখায় শুষ্ক মওসুমে বাংলাদেশের খরস্রোতা নদ-নদীগুলো ক্ষীণ ধারায় প্রবাহিত হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের অভিমত, প্রকৃতিগত দিক দিয়ে নদী বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম বুনিয়াদ। পেশাগত দিক থেকে জীবন-জীবিকার একটি অংশ নির্ভরশীল এ দেশের নদ-নদীর ওপর। এ দেশের কৃষিসম্পদ, যোগাযোগব্যবস্থা, ব্যবসায়বাণিজ্য, পরিবেশÑ এর সবই নদীনির্ভর। অর্থাৎ নদীকে বাদ দিয়ে এ দেশের উন্নয়ন তথা মানুষের জীবন কল্পনাই করা যায় না। সংখ্যার দিক থেকে মতপার্থক্য থাকলেও কমপে চার শতাধিক নদ-নদী জালের মতো বিস্তার করে আছে পুরো দেশে। বিশেষজ্ঞদের ভবিষ্যদ্বাণী হচ্ছে, কখনো যদি ৮ রিখটার স্কেলে কোনো ভূমিকম্প বাংলাদেশে হয় তাহলে প্রধান প্রধান নদীগুলোর প্রবাহপথ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র এই চারটি নদ-নদীর ওপর আঘাত এলেই এর অন্তর্গত শাখা ও উপনদীগুলো তিগ্রস্ত হবে এবং শুকিয়ে মরে যাবে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব¡ ও খনিজসম্পদ বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. চৌধুরী সারওয়ার জাহান সজল বলেন, ভারত-বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত অভিন্ন নদীগুলো আন্তর্জাতিক নদী হিসেবে চিহ্নিত। ফলে এসব নদীর উজানে কিছু করতে হলে আন্তর্জাতিক আইন মেনেই করতে হবে। কিন্তু ভারত এই আইনের কোনো তোয়াক্কাই করছে না। ভারত কোনো বিশেষ এলাকার মানুষের তির চেয়ে সাময়িক লাভালাভকেই অগ্রাধিকার দিতে চায়। এখনই বিদ্যুৎ চাই, সেচের পানি চাইÑ এই চাহিদাকে অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে তিকর হওয়া সত্ত্বে¡ও তারা এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চায়। এতে দীর্ঘমেয়াদের তি বা প্রতিবেশী দেশের কোনো বিপর্যয়কে তারা আমলে নিতে চায় না। এটা তাদের সাম্রাজ্যবাদী মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ ছাড়া আর কিছু নয়। ভারত গঙ্গায় বহু বাঁধ নির্মাণ করে উত্তরখণ্ড, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন সেচ প্রকল্প এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করছে।
এ বিষয়ে অভিমত দেন, বিশিষ্ট নদী বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী কামরুন নেছা। তিনি বলেন, পানির অভাবে বাংলাদেশে বড় ধরনের সামাজিক সমস্যার উদ্ভব হবে, যা পাশের দেশকেও আক্রান্ত করতে পারে। তাই সর্বপ্রথম ভারতীয় কর্তৃপকে তাদের আগ্রাসী নীতি পরিত্যাগ করতে হবে। পানি সমস্যা দ্বিপীয়ভাবেও সমাধান করা যাবে না। নেপালে পানির আধার নির্মাণ করে হিমালয়ের পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করা গেলে শুষ্ক মওসুমে ফারাক্কায় পানির প্রবাহ এক লাখ ৩০ হাজার কিউসেক থেকে এক লাখ ৯০ হাজার কিউসেক পর্যন্ত বৃদ্ধি করা সম্ভব। তাতে সবাই লাভবান হবে। তা ছাড়া পানির আাধারের সাহায্যে নেপাল প্রতি বছর প্রায় সাড়ে ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সম, যা নেপাল বাংলাদেশেও রফতানি করতে পারে।
তিনি বলেন, গঙ্গার পানি বণ্টনের সাথে ব্রহ্মপুত্রসহ অন্য নদ-নদীর বিষয়ও আলোচনাভুক্ত করতে হবে। আন্তর্জাতিক নদীর পানির সুষ্ঠু ব্যবহারের স্বার্থে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও চীনের পানি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি আঞ্চলিক পানি ফোরাম গঠন করা যেতে পারে। পানি বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তার সাথে সম্পৃক্ত হয়ে গেছে। এই নিরাপত্তার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।
হিমালয় পর্বতমালার উৎস থেকে যে কয়টি দেশ পানির বিপুল সম্ভার লাভ করে থাকে তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এসব নদীর প্রবাহ সরাসরি বাংলাদেশ পেতে পারে না। কারণ এগুলো ভারতের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত। ভারত এসব নদী ও উপনদীতে অসংখ্য পানিবিদ্যুৎ প্রকল্প, বাঁধ, সøুইস গেট ও রিজার্ভার নির্মাণ করে পানির প্রবাহ আটকে দিয়েছে। প্রাকৃতিক নিয়মের বাইরে এসব প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির ফলে হিমালয়ের ভাটিতে এক ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয় লক্ষ করা যাচ্ছে।
ভারত শুধু ফারাক্কা নয়, গঙ্গা-পদ্মাকেন্দ্রিক বাঁধ, পানির আধার, ক্রসড্যাম, রেগুলেটরসহ অন্তত ৩৩টি অবকাঠামো নির্মাণ করেছে। এর সাথে রয়েছে আনুষঙ্গিক আরো অসংখ্য ছোট-বড় কাঠামো। নতুন করে উত্তরখণ্ড প্রদেশ রাজ্য সরকার ৫৩টি বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
ভারত গঙ্গায় বৃহদাকার তিনটি খাল খনন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে, আপার গঙ্গা ক্যানাল প্রজেক্ট, মধ্য গঙ্গা ক্যানাল প্রজেক্ট এবং নিম্নœ গঙ্গা ক্যানাল প্রজেক্ট। এসব প্রকল্পের হাজার হাজার কিলোমিটার খালের মাধ্যমে তারা গঙ্গার পানি সরিয়ে নিয়ে সেচ দেয়ার ব্যাপক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। আপার গঙ্গা ক্যানাল প্রজেক্টের মাধ্যমে উত্তর প্রদেশের তিন লাখ ৩৩ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে সেচ দেয়ার ল্েয ছয় হাজার কিলোমিটারের বেশি খাল কেটে পদ্মার পানি সরিয়ে নিচ্ছে। মধ্য গঙ্গা ক্যানাল প্রকল্পে মূল ও শাখাসহ খননকৃত খালের মোট দৈর্ঘ্য প্রায় এক হাজার ৬০০ কিলোমিটার। নিম্ন গঙ্গা ক্যানাল প্রজেক্টের জন্য ছয় হাজার কিলোমিটার খাল খনন করা হয়েছে।
উৎসমুখে গঙ্গার অন্যতম প্রদায়ক নদী ভাগীরথীর ওপর ভারত ‘তেহরী বাঁধ’ নির্মাণ করেছে। এর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে গঙ্গা তথা পদ্মা নদীর ওপর। এ কারণে ভাটিতে এসে পদ্মায় পানিপ্রবাহ ব্যাপকভাবে হ্রাস পাচ্ছে। উত্তর প্রদেশের কানপুরে গঙ্গা নদীর ওপর নির্মিত হয়েছে ‘লব-কুশ ব্যারাজ’। এই বাঁধ দিয়ে ভারত প্রতিদিন ১৯ হাজার মিলিয়ন লিটার পানি সরিয়ে নিচ্ছে। এই পানি বিশুদ্ধ করে খাবার পানি হিসেবে ব্যবহার করছে। গঙ্গার আরেক অন্যতম উৎস কর্ণালী নদীর ওপর ভারতের অর্থ সহায়তায় ও প্রয়োজনে নেপালে একটি বড় আকারের বাঁধ ও পানিবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন করা হয়েছে। এই প্রকল্প থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের ৯৫ শতাংশই ব্যবহার করবে ভারত। কর্ণালী নদীর পানিপ্রবাহ ব্যাহত হওয়ার কারণে গঙ্গার প্রবাহও মারাত্মকভাবে তিগ্রস্ত হচ্ছে।
ভারত গঙ্গার গুরুত্বপূর্ণ উৎস কোশি নদীতে বাঁধসহ বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করায় পদ্মা নদীতে মারাত্মক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। নেপালের সাথে দ্বিপীয় চুক্তি মোতাবেক এই কার্যক্রম হাতে নেয়া হলেও এর মূল উপকারভোগী হলো ভারত। গঙ্গার উৎস রামগঙ্গা নদীতেও ভারত একটি বৃহৎ ও বহুমুখী প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এতে রয়েছে একটি দীর্ঘ বাঁধ, পানি প্রত্যাহারের জন্য কৃত্রিম খাল ও একটি বিশাল রিজার্ভার। এই প্রকল্পের মাধ্যমে রামগঙ্গা নদীর পানি একটি বিদ্যুৎ ও সেচ প্রকল্পের রিজার্ভারে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। ফলে মূল গঙ্গায় পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ ছাড়াও গঙ্গা নদীতে পানির প্রবাহ বৃদ্ধির অন্যতম সহায়ক নদী হলো ঘাগরা, কোশি ও গণ্ডক। নেপাল থেকে উৎসারিত এসব নদীতে নিজ এলাকায় ভারত বাঁধ নির্মাণ করেছে। ফলে গঙ্গার প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আর এ কারণে স্বাভাবিকভাবেই ফারাক্কা পয়েন্টে পানির প্রবাহ হ্রাস পাচ্ছে বলে জানা গেছে। গত বছর ও এ বছর ফারাক্কা পয়েন্টে পানিপ্রবাহ সবচেয়ে কম।
আন্তর্জাতিক নদী সংকোশের স্রোত গঙ্গায় নিয়ে যাওয়ার ল্েয ভারতীয় একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ এগিয়ে চলেছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ যেমন সংকোশের সরাসরি প্রবাহ থেকে বঞ্চিত হবে, অন্য দিকে ব্রহ্মপুত্রে সংকোশের পানির উৎসমুখও বন্ধ হয়ে যাবে। ব্রহ্মপুত্রের অন্যতম উৎস ও প্রদায়ক রাঙ্গানদীর ওপর ভারত বাঁধ নির্মাণ করেছে। ব্রহ্মপুত্রে পানির প্রবাহ হ্রাস পাওয়া এর অন্যতম কারণ বলে জানা গেছে। আসামে ব্রহ্মপুত্র নদের অন্যতম উৎস পাগলাদিয়ায় একটি বিশাল বাঁধ নির্মাণ করছে ভারত। এই বাঁধের মাধ্যমে ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচসুবিধা সম্প্রসারণ করা যাবে। এ জন্য পাগলাদিয়ার পানি বাঁধের ভেতর প্রত্যাহার করা হচ্ছে। এতে বাংলাদেশের ব্রহ্মপুত্র-যমুনা অংশে পানির সঙ্কট হচ্ছে। ভারত ব্রহ্মপুত্রের আরেক উৎস লাংপি নদীর ওপর একটি বাঁধ তৈরি করে পানির প্রবাহ আটকে দিয়েছে।
ব্রহ্মপুত্র-যমুনার প্রবাহের গুরুত্বপূর্ণ উৎস রাইডাক নদীতে ভুটান-ভারত যৌথ উদ্যোগে বৃহৎ একটি পানিবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে তুলেছে। এই প্রকল্পের জন্য যে পরিমাণ পানি প্রত্যাহার করা হচ্ছে তাতে ব্রহ্মপুত্র নদে পানির সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। ব্রহ্মপুত্রের অপর গুরুত্বপূর্ণ উৎস কপিলি নদীকে কেন্দ্র করে ভারত বেশ ক’টি বাঁধ ও রিজার্ভার নির্মাণ করেছে। সেচব্যবস্থার সম্প্রসারণের পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদন এই বাঁধ প্রকল্পের ল্য। এটি নির্মিত হওয়ায় ব্রহ্মপুত্রে পানি প্রবাহে সঙ্কট দেখা দিচ্ছে।
ব্রহ্মপুত্র নদের গুরুত্বপূর্ণ উৎস সুবানসিঁড়ি নদীর পানি প্রত্যাহারসহ বেশ ক’টি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজে হাত দিয়েছে ভারত। এর বিরূপ প্রভাবে ব্রহ্মপুত্র নদ ব্যাপকভাবে পানি সঙ্কটের সম্মুখীন হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর মধ্যে লোয়ার সুবানসিঁড়ি প্রকল্প সমাপ্তির পথে রয়েছে। এর ফলে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হয়ে ব্রপুত্রের ধারা বিপন্ন হবে। ভারতের নাগাল্যান্ডে ডয়াং নদীর ওপর নির্মিত একটি ড্যাম ব্রহ্মপুত্রের প্রবাহে বাধার সৃষ্টি করছে।
ব্রহ্মপুত্রের অপর উৎস উমিয়াম নদীতে বাঁধ দিয়ে অন্তত চারটি বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন করেছে ভারত। এর প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশে যমুনা নদীতে পানির প্রবাহে টান পড়ছে। এই প্রকল্পের আওতায় ব্রহ্মপুত্রের উপনদী উমিয়ামের পানি সরিয়ে নিয়ে ‘ উপক্র’ নামক নদীতে প্রবাহিত করা হচ্ছে। পানি প্রত্যাহারের ফলে কার্যত এই অন্যতম উপনদীর পানি থেকে ব্রহ্মপুত্র নদ প্রায় সম্পূর্ণ বঞ্চিত হচ্ছে।
ভারত পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে গজলডোবা নামক স্থানে তিস্তা নদীর ওপর একটি ব্যারাজ নির্মাণ করেছে, যা একটি বৃহৎ সেচ প্রকল্প হিসেবে কাজ করছে। এবার ভারত তিস্তার তার অংশের পুরোটা কাজে লাগিয়ে আগামী ১০ বছরের মধ্যে ৫০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিশাল প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এই প্রকল্পের আওতায় পানির বৃহৎ রির্জাভার গড়ে তোলা হবে এবং এগুলোর শক্তিশালী প্রবাহ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে।
তিস্তা নদী ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং-জলপাইগুড়ি হয়ে বাংলাদেশের লালমনিরহাট দিয়ে কুড়িগ্রামের চিলমারীতে প্রবেশ করে ব্রহ্মপুত্র নদে মিলিত হয়েছে। বাংলাদেশে তিস্তার দৈর্ঘ্য ১১২ কিলোমিটার। ফলে এটি শুধু স্বাধীন একটি নদী নয়, তিস্তা বাংলাদেশেরও নদী এবং তা ব্রহ্মপুত্রের পানি প্রবাহের অন্যতম উৎস। তিস্তার প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়া মানেই ভাটিতে বাংলাদেশের তিস্তার অপমৃত্যু এবং সেই সাথে ব্রহ্মপুত্র তথা যমুনার প্রবাহ ব্যাপকভাবে তিগ্রস্ত হওয়া। এই নদীর অস্তিত্বের সাথে বিস্তীর্ণ এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশ নির্ভরশীল।
ভারত বাংলাদেশের তেঁতুলিয়া সীমান্তের পশ্চিম-উত্তর কোণে মহানন্দা নদীর ওপর একটি বাঁধ নির্মাণ করেছে। এর মাধ্যমে ভারত এক দিকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে, অন্য দিকে ৬৭৫ বর্গকিলোমিটার এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ করছে। সেই সাথে প্রতি বছর শুষ্ক মওসুমে ফিডার ক্যানালের সাহায্যে পানি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ ও বিহার রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে সেচকাজে ব্যবহার করছে। বিপরীতে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ এলাকার ভূগর্ভের পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় সেচ বিঘিœত হচ্ছে। ভারত বাঁধ, রিজার্ভারসহ অসংখ্য অবকাঠামো তৈরির মাধ্যমে নদ-নদীর পানি আটকে রাখায় শুষ্ক মওসুমে বাংলাদেশের খরস্রোতা নদ-নদীগুলো ক্ষীণ ধারায় প্রবাহিত হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের অভিমত, প্রকৃতিগত দিক দিয়ে নদী বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম বুনিয়াদ। পেশাগত দিক থেকে জীবন-জীবিকার একটি অংশ নির্ভরশীল এ দেশের নদ-নদীর ওপর। এ দেশের কৃষিসম্পদ, যোগাযোগব্যবস্থা, ব্যবসায়বাণিজ্য, পরিবেশÑ এর সবই নদীনির্ভর। অর্থাৎ নদীকে বাদ দিয়ে এ দেশের উন্নয়ন তথা মানুষের জীবন কল্পনাই করা যায় না। সংখ্যার দিক থেকে মতপার্থক্য থাকলেও কমপে চার শতাধিক নদ-নদী জালের মতো বিস্তার করে আছে পুরো দেশে। বিশেষজ্ঞদের ভবিষ্যদ্বাণী হচ্ছে, কখনো যদি ৮ রিখটার স্কেলে কোনো ভূমিকম্প বাংলাদেশে হয় তাহলে প্রধান প্রধান নদীগুলোর প্রবাহপথ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র এই চারটি নদ-নদীর ওপর আঘাত এলেই এর অন্তর্গত শাখা ও উপনদীগুলো তিগ্রস্ত হবে এবং শুকিয়ে মরে যাবে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব¡ ও খনিজসম্পদ বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. চৌধুরী সারওয়ার জাহান সজল বলেন, ভারত-বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত অভিন্ন নদীগুলো আন্তর্জাতিক নদী হিসেবে চিহ্নিত। ফলে এসব নদীর উজানে কিছু করতে হলে আন্তর্জাতিক আইন মেনেই করতে হবে। কিন্তু ভারত এই আইনের কোনো তোয়াক্কাই করছে না। ভারত কোনো বিশেষ এলাকার মানুষের তির চেয়ে সাময়িক লাভালাভকেই অগ্রাধিকার দিতে চায়। এখনই বিদ্যুৎ চাই, সেচের পানি চাইÑ এই চাহিদাকে অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে তিকর হওয়া সত্ত্বে¡ও তারা এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চায়। এতে দীর্ঘমেয়াদের তি বা প্রতিবেশী দেশের কোনো বিপর্যয়কে তারা আমলে নিতে চায় না। এটা তাদের সাম্রাজ্যবাদী মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ ছাড়া আর কিছু নয়। ভারত গঙ্গায় বহু বাঁধ নির্মাণ করে উত্তরখণ্ড, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন সেচ প্রকল্প এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করছে।
এ বিষয়ে অভিমত দেন, বিশিষ্ট নদী বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী কামরুন নেছা। তিনি বলেন, পানির অভাবে বাংলাদেশে বড় ধরনের সামাজিক সমস্যার উদ্ভব হবে, যা পাশের দেশকেও আক্রান্ত করতে পারে। তাই সর্বপ্রথম ভারতীয় কর্তৃপকে তাদের আগ্রাসী নীতি পরিত্যাগ করতে হবে। পানি সমস্যা দ্বিপীয়ভাবেও সমাধান করা যাবে না। নেপালে পানির আধার নির্মাণ করে হিমালয়ের পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করা গেলে শুষ্ক মওসুমে ফারাক্কায় পানির প্রবাহ এক লাখ ৩০ হাজার কিউসেক থেকে এক লাখ ৯০ হাজার কিউসেক পর্যন্ত বৃদ্ধি করা সম্ভব। তাতে সবাই লাভবান হবে। তা ছাড়া পানির আাধারের সাহায্যে নেপাল প্রতি বছর প্রায় সাড়ে ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সম, যা নেপাল বাংলাদেশেও রফতানি করতে পারে।
তিনি বলেন, গঙ্গার পানি বণ্টনের সাথে ব্রহ্মপুত্রসহ অন্য নদ-নদীর বিষয়ও আলোচনাভুক্ত করতে হবে। আন্তর্জাতিক নদীর পানির সুষ্ঠু ব্যবহারের স্বার্থে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও চীনের পানি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি আঞ্চলিক পানি ফোরাম গঠন করা যেতে পারে। পানি বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তার সাথে সম্পৃক্ত হয়ে গেছে। এই নিরাপত্তার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।
No comments