বাহরাইনে নিহতদের দাফন-আরেক দফা শোকের মাতম

১০ দিন আগেই বাহরাইনে আগুনে পুড়ে ছারখার হয়ে গেছে ১৩ বাংলাদেশীর পরিবারের সব স্বপ্ন। নিহতদের লাশ গত মঙ্গলবার দেশে পৌঁছলে বিমানবন্দরে সৃষ্টি হয় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের।
স্বজনদের শোকের মাতমে ভারী হয়ে ওঠে সেখানকার পরিবেশ। গতকাল নিজ নিজ গ্রামের বাড়িতে লাশ পৌঁছলে শুরু হয় আরেক দফা শোকের মাতম। জন্মের পর বাবার ছবি দেখে দেখে বড় হওয়া নাজমা সুলতানা (৮) কিছুতেই মিলাতে পারছিল না ঝলসে যাওয়া লাশের সাথে ছবির বাবাকে।

গতকাল নামাজে জানাজা শেষে নিহতদের লাশ নিজ নিজ গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নবীনগর সংবাদদাতা জানান, নবীনগরের পাঁচজনের লাশ গতকাল ভোরে এলাকায় পৌঁছার পর এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। পরে স্বপন, সবুজ ও জসিমের নামাজে জানাজা শেষে তাদের পারিবারিক গোরস্তানে দাফন করা হয়।

নামাজে জানাজায় অংশ নিতে আসা স্থানীয় সংসদ সদস্য শাহ জিকরুল আহমেদ খোকন তার বেতনের টাকা থেকে নিহত পাঁচ পরিবারের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে অনুদান দেন। এ ছাড়া সরকারিভাবে জন প্রতি ৩৫ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। আরো দুই লাখ টাকা সরকারিভাবে অনুদান দেয়ার কথা জানান সংসদ সদস্য। এ ছাড়া বিদ্যাকুট ইউনিয়নের ভৈরবনগর গ্রামের ঝারু মিয়া, গুড়িগ্রামের আনোয়ার মিয়ার নামাজে জানাজা ও দাফন পৃথকভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

এ দিকে বাহরাইনে অগ্নিকাণ্ডে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের পাঁচজনের মৃত্যুতে তিন দিনের শোক কর্মসূচি নেয়া হয়েছে।

নবীনগরের কাইতলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: আবদুল মান্নান জানান, এলাকাবাসীর সিদ্ধান্ত মোতাবেক গতকাল বুধবারসহ আগামী দুই দিন নিহতদের স্মরণে শোক পালন করা হবে। আজ কাইতলা যজ্ঞেশ্বর উচ্চবিদ্যালয় মাঠে শোকসভা হবে। আগামীকাল জুমার নামাজে এলাকার প্রতিটি মসজিদে নিহতদের রূহের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হবে।

পটিয়া-চন্দনাইশ (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, বাহরাইনের নিহত চট্টগ্রামের তিন শ্রমিকের লাশ গতকাল নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

আগে থেকে লাশ আসার খবর পেয়ে বাড়ির আশপাশে আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীরা জড়ো হন। লাশ দেখার সাথে সাথেই সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। এ সময় স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।

নিহত জামালের ছোট মেয়ে নাজমা সুলতানা (৮) জন্মের পর থেকে বাবার ছবি দেখে বড় হয়েছে। বাড়িতে লাশ দেখে ছবির সাথে কিছুতেই যেন বাবার সাথে মিলাতে পারছিল না ছোট্ট মেয়েটি। তার বড় বোন নাইমা সুলতানা ইভা (১২) চার বছর বয়সে শেষবার তার বাবাকে দেখেছিল। ঝলসানো লাশের মুখ দেখে সে-ও ছিল নির্বাক।

চাঁদপুর সংবাদদাতা জানান, বাহরাইনে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে নিহত চাঁদপুরের তিন শ্রমিকের দাফন গতকাল সম্পন্ন হয়েছে। নিহতদের নামাজে জানজায় হাজার হাজার মানুষ অংশ নেন। চাঁদপুরের কচুয়ায় ব্যবসায়ী শাহ আলমের দুই ছেলে নিহত হওয়ায় নাঁওপুরা গ্রামের স্থানীয় বাজারের দোকানপাঠ আজ অর্ধবেলা বন্ধ রেখে শোক পালন করবেন ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া গতকাল এলাকাবাসী কালো ব্যাজ ধারণ করে শোক পালন করেন। এর আগে রাতে লাশ এসে পৌঁছলে এলাকায় শুরু হয় শোকের মাতম। নিহতদের স্বজনদের কান্নায় অনেকেই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি।

নোয়াখালী সংবাদদাতা জানান, বাহরাইনের রাজধানী মানামার মুকারকা এলাকায় অগ্নিকাণ্ডে নিহত ১৩ জনের একজন নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীর বারগাঁও ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাশিপুর গ্রামের ওসমান গনির লাশ গতকাল তার গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে গ্রামের বাড়িতে লাশ আনা হলে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা ঘটে। আদরের ও সংসারের একমাত্র উপার্জনম ব্যক্তিকে হারিয়ে মা, দুই বোন ও মাদরাসাপড়–য়া একমাত্র ছোট ভাই সাইফুল ইসলাম সজীব বাকরুদ্ধ। তাদের আহাজারিতে আকাশ-বাতাশ ভারী হয়ে ওঠে।

No comments

Powered by Blogger.