১৮ দলীয় জোটের গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ
নির্দলীয় সরকারের দাবিতে বুধবার সারাদেশে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করেছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। ৭৫টি সাংগঠনিক জেলায় এ কর্মসূচী পালনে নেতৃত্ব দিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা।
দুপুরে রাজধানীর ধোলাইখালে ঋষিকেশ দাস রোড এলাকায় গণসংযোগ লিফলেট বিতরণকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি ও সরকারের অন্যায়-অত্যাচারের প্রতিবাদে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতেই এ গণসংযোগ ও লিফলেট বিলি কর্মসূচী পালন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে জনগণ সরকারের প্রতি অনাস্থা জানাবে। সরকার যদি জনগণের এ অনাস্থার প্রতি সম্মান দেখিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি মেনে নির্বাচন না দেয়, তাহলে জনগণ তাদের বিরুদ্ধে শেষ বাঁশি বাজাবে। গণসংযোগ চলাকালে চট্টগ্রাম ও পটুয়াখালীতে ১৮ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। এ ছাড়া সারাদেশের অন্যান্য জায়গায় শান্তিপূর্ণভাবেই এ কর্মসূচী পালিত হয়েছে বলে জানা গেছে।এ সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে সন্ত্রাসের পৃষ্ঠপোষকতা করছে অভিযোগ করে তরিকুল বলেন, বিরোধী দলের চিফ হুইপকে পেটানো পুলিশ কর্মকর্তা হারুনকে পুরস্কৃত করায় তা প্রমাণিত হয়েছে। বিরোধীদলীয় চিফ হুইপকে পেটানোর জন্য এসি হারুনকে পুরস্কৃত করা হয়েছে বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্যের জবাবে তরিকুল বলেন, এ ধরনের বক্তব্যের চেয়ে স্বৈরাচারী আচরণ আর কি হতে পারে। তিনি বলেন, সরকারের মন্ত্রীদের যে অহমিকা ও দম্ভ তা দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না। এ সরকার মানবতাবিরোধী। তাদের হত্যা, গুম, ধর্ষণ ও নির্যাতনে দেশ আজ মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে। তাই এ সরকার ক্ষমতায় থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়ে ফেলেছে।
তরিকুল বলেন, বিরোধী দল সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। সরকার নির্দলীয় সরকারের দাবি মেনে না নিলে কঠোর কর্মসূচীর মাধ্যমে তাদের দাবি মানতে বাধ্য করা হবে। সরকারকে সবক্ষেত্রে ব্যর্থ উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশ পরিচালনার নৈতিক অধিকার হারিয়েছে সরকার। তাই তাদের উচিত অবিলম্বে পদত্যাগ করে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দেয়া। নির্দলীয় সরকার ছাড়া এদেশে কোন নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। জনগণও দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন কোনভাবে মেনে নেবে না।
তরিকুল বলেন, আকাশচুম্বি দ্রব্যমূল্যে দেশের মানুষ আজ দুর্বিষহ জীবন-যাপন করছে। তারা আর এ সরকারকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তিনি বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কয়েক হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে সরকার তাদের কারাগারে আটকে রেখেছে।
গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণকালে তরিকুল ইসলামের সঙ্গে ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিন-উন-নবী খান সোহেল ও সাধারণ সম্পাদক শরাফত আলী সপু, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নিরব, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, ৭৯নং ওয়ার্ড বিএনপি আহ্বায়ক কাজী মোস্তাফিজুর রহমান কাওসার, ৭৮নং ওয়ার্ড সভাপতি হারুনুর রশিদ, ৭৫নং ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার মোজাম্মেল হোসেন মুক্তা, ৭৭নং ওয়ার্ড সাবেক কমিশনার লিয়াকত আলী, ৮০নং ওয়ার্ড সাবেক কমিশনার এম শাহেদ মন্টু, ৮৭নং ওয়ার্ড সাবেক কমিশনার মোবারক হোসেন, গে-ারিয়া থানা বিএনপি সভাপতি মকবুল ইসলাম খান দিপু ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের। ধোলাইখাল এলাকার পর রায়সাহেব বাজার ও ইংলিশ রোড এলাকায় গণসংযোগ ও প্রচারপত্র বিলি করেন তরিকুল।
গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ কর্মসূচীতে অন্যান্য সাংগঠনিক জেলায় বিএনপির সিনিয়র নেতাদের মধ্যে নেতৃত্ব দিয়েছেন সিলেটে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নারায়ণগঞ্জে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, পঞ্চগড়ে লে. জে. (অব) মাহবুবুর রহমান, চট্টগ্রামে এমকে আনোয়ার, ময়মনসিংহে (দক্ষিণ) ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, রংপুরে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আ স ম হান্নান শাহ, জামালপুরে ড. আব্দুল মঈন খান, রাজশাহীতে মির্জা আব্বাস, দিনাজপুরে ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, যশোরে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বগুড়ায় নজরুল ইসলাম খান, ঠাকুরগাঁওয়ে ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাাহ আল নোমান, খুলনায় সেলিমা রহমান ও বরিশালে সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবর রহমান সরোয়ার।
ট্রাইব্যুনাল ভেঙ্গে দেয়ার দাবিসম্বলিত লিফলেট বিতরণ করেছে জামায়াত ॥ গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণকালে দলের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে কারাবন্দী নেতাদের মুক্তি ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ভেঙ্গে দেয়ার দাবি সম্বলিত প্রচারপত্র বিলি করেছে জামায়াত। বুধবার সকালে রাজধানীর ফকিরাপুল এলাকায় জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা এ প্রচারপত্র বিলি করেন। এ সময় ঢাকা মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমির হামিদুর রহমান, ঢাকা মহানগরীর সহকারী সেক্রেটারি মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন ও শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি দেলোয়ার হোসাইন। উল্লেখ্য, ২৬ ডিসেম্বর রাজধানীতে গণসংযোগ কর্মসূচী পালনকালেও জামায়াত শিবিরের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে ট্রাইব্যুনাল ভেঙ্গে দেয়ার দাবি জানিয়ে সেøাগান দেয়।
গণঅভ্যুত্থান দিবসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন খালেদা জিয়া ॥ ২৪ জানুয়ারি গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে একটি বিবৃতি প্রদান করেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। বিবৃতিতে তিনি উনসত্তরের গণআন্দোলনসহ সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আত্মদানকারী শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও রুহের মাগফেরাত কামনা করেছেন। তিনি বলেন, ২৪ জানুয়ারি আমাদের জাতীয় ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পর ১৯৬৯ সালের এ দিনে তদানীন্তন পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতা দৃঢ় প্রতিরোধ গড়ে তোলে। গণআন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে পরিণত হয় গণঅভ্যুত্থানে। পতন নিশ্চিত হয় স্বৈরশাসকের। আর এরই ধারাবাহিকতায় উন্মুক্ত হয় আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের পথ।
খালেদা জিয়া বলেন, জাতীয় জীবনে উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের তাৎপর্য অপরিসীম। এ দিবস আমাদের গণতন্ত্র ও স্বাধিকার অর্জনের চেতনাকে শানিত করে এবং সব অন্যায়, অবিচার ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হতে অনুপ্রেরণা জোগায়। আজকের এ মহান দিনে স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র, মানুষের মৌলিক ও মানবাধিকার নিশ্চিত করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
No comments