জনপ্রত্যাশা পূরণের বিচার by মো. মেফতাউল ইসলাম
দীর্ঘ ৪২ বছর পর বাঙালি যেন পূর্ণ স্বাধীনতার স্বাদ পেতে শুরু করেছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় প্রদান শুরু হওয়ার মাধ্যমে। প্রথম রায়ে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সদস্য আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
আশা করা হচ্ছে, এর মাধ্যমে সব যুদ্ধাপরাধীর বিচারের আওতায় এনে দেশকে অভিশাপমুক্ত করার পালা শুরু হয়েছে। দেশবাসী সুষ্ঠুভাবে অন্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ করা এবং রায় কার্যকর করার অবিস্মরণীয় মাহেন্দ্রক্ষণ দেখার অপেক্ষায়।
১৯৭১-এ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নৃশংস হত্যাকাণ্ডে বাঙালিরা যখন দিশেহারা, তখন সেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকেই সহায়তা করেছিল আজকের যুদ্ধাপরাধীরা। বাঙালির দুর্দিনে এই রাজাকার-আলবদর-আলশামস বাহিনী তাদের নিজের ভাইয়ের বুকে বন্দুক চালিয়ে তাজা রক্ত পান করেছিল। শুধু তাজা রক্ত তাদের ক্ষান্ত করতে পারেনি বরং নিরীহ নারীদের দেহকে নিয়েও তারা আনন্দে মেতে উঠেছিল। সম্ভ্রমহানি করেছিল দু'লাখ মা-বোনের। লুণ্ঠন করেছিল ধন-সম্পদ। হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ, লুণ্ঠন ও অগি্নসংযোগে মেতে উঠেছিল বাংলার এই দুশমনরা। তাদের সহায়তা আর আশকারা পেয়ে পাকিস্তানি পশুরা ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বাঙালির ওপর। ফলে মাত্র নয় মাসের যুদ্ধে ৩০ লাখ বাঙালিকে প্রাণ দিতে হয়েছিল, দু'লাখ মা-বোনকে তাদের ইজ্জত সমর্পণ করতে হয়েছিল এবং প্রায় এক কোটি বাঙালিকে পাড়ি জমাতে হয়েছিল পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে। কিন্তু বাঙালিদের অদম্য সাহস আর মুক্তিস্পৃৃহার কাছে পরাজিত হয়েছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের সহযোগী মীরজাফরের দল। দেশ স্বাধীন হলেও ওই মীরজাফরের দলকে দেশ থেকে দূর করা সম্ভব হয়নি। বরং তারা পরে আরও শক্তিশালী হয়েছে। তারা বারবার ব্যাহত করেছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া। কিন্তু এবার হাওয়া বদলাতে শুরু করেছে। জনগণের দাবি আর সরকারের সদিচ্ছায় এবার এ কলঙ্কিত দুর্গের নিশ্চিত পতন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
যুদ্ধাপরাধ, গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের এমন বিচার বিশ্বে নতুন কোনো ঘটনা নয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ন্যুরেমবার্গ ট্রায়ালের মধ্য দিয়ে এ ধরনের অপরাধের বিচার শুরু হয়েছিল। সেই ট্রায়ালে জার্মানিকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল এবং প্রায় ২০ জন শীর্ষ সামরিক ও রাজনৈতিক নাৎসি নেতার বিচার করা হয়েছিল। এ ছাড়া ১৯৪৫ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার যুদ্ধাপরাধীর বিচার করা হয় ইউরোপ ও জাপানে। এখনও রুয়ান্ডা, যুগোস্লাভিয়া, কম্বোডিয়া ও সিয়েরালিওনে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার কার্যক্রম চলছে। তাই বাংলাদেশেও এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া এবং এতে বিশ্ববাসীর সমর্থনও রয়েছে, যদিও কিছু মুসলিম দেশ এ বিচারের বিরোধী। তবে বিচারের মানদণ্ড যথাযথভাবে বজায় থাকলে এবং নিরপেক্ষ বিচার হলে তা বিশ্ববাসীর অকুণ্ঠ সমর্থন পেতে বাধ্য।
প্রশ্ন হলো, কেবল এই নয়জনের বিচার কেন? মানবতাবিরোধী সবারই বিচার হতে হবে, তারা যে দলেরই হোক না কেন। তা না হলে এই বিচারের মান নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাবে। তাই চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীসহ দলমত নির্বিশেষে সব যুদ্ধাপরাধীর বিচার না করতে পারলে ৩০ লাখ শহীদের আত্মা কখনোই শান্তি পাবে না।
মো. মেফতাউল ইসলাম :আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, জাবি
১৯৭১-এ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নৃশংস হত্যাকাণ্ডে বাঙালিরা যখন দিশেহারা, তখন সেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকেই সহায়তা করেছিল আজকের যুদ্ধাপরাধীরা। বাঙালির দুর্দিনে এই রাজাকার-আলবদর-আলশামস বাহিনী তাদের নিজের ভাইয়ের বুকে বন্দুক চালিয়ে তাজা রক্ত পান করেছিল। শুধু তাজা রক্ত তাদের ক্ষান্ত করতে পারেনি বরং নিরীহ নারীদের দেহকে নিয়েও তারা আনন্দে মেতে উঠেছিল। সম্ভ্রমহানি করেছিল দু'লাখ মা-বোনের। লুণ্ঠন করেছিল ধন-সম্পদ। হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ, লুণ্ঠন ও অগি্নসংযোগে মেতে উঠেছিল বাংলার এই দুশমনরা। তাদের সহায়তা আর আশকারা পেয়ে পাকিস্তানি পশুরা ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বাঙালির ওপর। ফলে মাত্র নয় মাসের যুদ্ধে ৩০ লাখ বাঙালিকে প্রাণ দিতে হয়েছিল, দু'লাখ মা-বোনকে তাদের ইজ্জত সমর্পণ করতে হয়েছিল এবং প্রায় এক কোটি বাঙালিকে পাড়ি জমাতে হয়েছিল পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে। কিন্তু বাঙালিদের অদম্য সাহস আর মুক্তিস্পৃৃহার কাছে পরাজিত হয়েছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের সহযোগী মীরজাফরের দল। দেশ স্বাধীন হলেও ওই মীরজাফরের দলকে দেশ থেকে দূর করা সম্ভব হয়নি। বরং তারা পরে আরও শক্তিশালী হয়েছে। তারা বারবার ব্যাহত করেছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া। কিন্তু এবার হাওয়া বদলাতে শুরু করেছে। জনগণের দাবি আর সরকারের সদিচ্ছায় এবার এ কলঙ্কিত দুর্গের নিশ্চিত পতন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
যুদ্ধাপরাধ, গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের এমন বিচার বিশ্বে নতুন কোনো ঘটনা নয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ন্যুরেমবার্গ ট্রায়ালের মধ্য দিয়ে এ ধরনের অপরাধের বিচার শুরু হয়েছিল। সেই ট্রায়ালে জার্মানিকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল এবং প্রায় ২০ জন শীর্ষ সামরিক ও রাজনৈতিক নাৎসি নেতার বিচার করা হয়েছিল। এ ছাড়া ১৯৪৫ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার যুদ্ধাপরাধীর বিচার করা হয় ইউরোপ ও জাপানে। এখনও রুয়ান্ডা, যুগোস্লাভিয়া, কম্বোডিয়া ও সিয়েরালিওনে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার কার্যক্রম চলছে। তাই বাংলাদেশেও এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া এবং এতে বিশ্ববাসীর সমর্থনও রয়েছে, যদিও কিছু মুসলিম দেশ এ বিচারের বিরোধী। তবে বিচারের মানদণ্ড যথাযথভাবে বজায় থাকলে এবং নিরপেক্ষ বিচার হলে তা বিশ্ববাসীর অকুণ্ঠ সমর্থন পেতে বাধ্য।
প্রশ্ন হলো, কেবল এই নয়জনের বিচার কেন? মানবতাবিরোধী সবারই বিচার হতে হবে, তারা যে দলেরই হোক না কেন। তা না হলে এই বিচারের মান নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাবে। তাই চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীসহ দলমত নির্বিশেষে সব যুদ্ধাপরাধীর বিচার না করতে পারলে ৩০ লাখ শহীদের আত্মা কখনোই শান্তি পাবে না।
মো. মেফতাউল ইসলাম :আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, জাবি
No comments