উচ্চসুদে ৫০ কোটি ডলার বিদেশী ঋণ নেয়ার উদ্যোগ-ছাড়া হচ্ছে রাষ্ট্রীয় বন্ড by আশরাফুল ইসলাম

দেশে আপদকালীন ব্যয় মেটানোর মতো পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ থাকার পরও সরকার গ্যারান্টি দিয়ে বিদেশ থেকে উচ্চসুদে ৫০ কোটি ডলার ঋণ নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
এ জন্য সভরেন বন্ড ছাড়ার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। বন্ডের মেয়াদ ও সুদ নির্ধারণসহ একটি কৌশলপত্র প্রণয়ন করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সূত্র জানায়, একটি দেশের আপদকালীন ব্যয় মেটানোর জন্য পর্যাপ্ত মজুদ রাখতে হয়। সাধারণত তিন মাসের কেনাকাটা করার মতো বৈদেশিক মুদ্রা মজুদ রাখতে হয়। পণ্য আমদানির বর্তমান প্রবাহ অনুযায়ী তিন মাসের আপদকালীন ব্যয় মেটানোর জন্য প্রয়োজন ৯০০ কোটি ডলার। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে এখন রেকর্ড পরিমাণ এক হাজার ৩০০ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ রয়েছে, যা দিয়ে আপদকালীন ব্যয় মেটানোর পরও ৪০০ কোটি ডলার অতিরিক্ত থাকবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা প্রণান, পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ থাকার পরও সভরেন বন্ড ছেড়ে বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করা কতটুকু যুক্তিসঙ্গত, তা সরকারই ভালো বলতে পারবে।

জানা গেছে, এর বাইরে আরো ৫০ কোটি মার্কিন ডলার সংগ্রহ করা হচ্ছে। এ জন্য দি ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড, দি ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড ও দি ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড ছাড়া হয়েছে। বন্ডগুলো গ্রাহকদের কাছে আকর্ষণীয় করতে ইতোমধ্যে সুদের হারসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। আর বন্ড বিক্রি করতে বিভিন্ন দেশে রোডশো করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, সভরেন বন্ড ছাড়ার কৌশল প্রণয়ন করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ডেপুটি গভর্নরকে আহ্বায়ক করে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রথম বৈঠক গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে সূত্র জানায়, সভরেন বন্ড ছাড়ার জন্য একটি কৌশলপত্র প্রণয়ন করা হবে। এ কৌশলপত্রে বন্ডের মেয়াদ কত দিনের হবে, কী হারে ক্রেতা দেশকে সুদ দেয়া হবে, এসব বিষয় নির্ধারিত থাকবে। এ জন্য বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রীয় বন্ডের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বব্যাংকের সাথে দ্বন্দ্ব-সঙ্ঘাতের কারণে চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি অর্থায়ন নিয়ে এখনই বিকল্প ভাবনা শুরু করেছে সরকার। চলতি অর্থবছরের বাজেটে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বিদেশী ঋণ না পেলে বাজেট ঘাটতি অর্থায়নের বিকল্প উৎস হিসেবেই বন্ডের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত অর্থবছরে অনুদান বাদে মূল বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছিল ৪৫ হাজার ২০৪ কোটি টাকা। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বিদেশী ঋণ অবমুক্ত না হওয়ায় পরে সংশোধন করে ঘাটতি ৪৬ হাজার ৩২৮ কোটি টাকা ধরা হয়। একই সাথে ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ১৮ হাজার ৯৫৭ কোটি থেকে বাড়িয়ে ২৯ হাজার ১১৫ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়।

গত বছর লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বিদেশী ঋণ অবমুক্তি না হলেও চলতি অর্থবছরের বাজেটে অনুদান বাদে ৫২ হাজার ৬৮ কোটি টাকার ঘাটতি বাজেটে ২০ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকার বিদেশী ঋণপ্রাপ্তি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৩ হাজার কোটি টাকা।

গত বছরের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ব্যাংকিং খাত থেকে অধিক মাত্রায় ঋণ নেয়ায় বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমে গেছে। এবার বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ ঠিক রাখতে হলে ব্যাংকিং খাত থেকে কম ঋণ নিতে হবে। আর তা হলে বাজেট ঘাটতি মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অধিক মাত্রায় ধার নিতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে সরকারের ঋণের জোগান দিলে মূল্যস্ফীতি আরো খারাপ অবস্থানে চলে যাবে, যা সরকারের মেয়াদের শেষ বছরে খারাপ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এ আশঙ্কা থেকেই সভরেন বন্ড ছাড়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
       

No comments

Powered by Blogger.