প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন- বিশ্বব্যাংকের জন্য জানুয়ারির পর আর অপেক্ষা নয়
পদ্মা সেতুতে অর্থায়নের বিষয়ে এ মাসের মধ্যেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাতে বিশ্বব্যাংককে সময় বেঁধে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অন্যথায় বিকল্প উপায়ে পদ্মা সেতু নির্মাণ করবে বাংলাদেশ।
গতকাল বুধবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব মন্তব্য করেন। সম্প্রতি তাঁর রাশিয়া সফর উপলক্ষে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। রাশিয়া সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হলেও শেষ পর্যন্ত প্রশ্নোত্তর পর্বে পদ্মা সেতু নির্মাণ, আগামী নির্বাচন, যুদ্ধাপরাধের বিচারসহ নানা প্রসঙ্গ উঠে আসে।
প্রধানমন্ত্রীর এ সময় রাশিয়া সফর ও সমরাস্ত্র কেনার চুক্তির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় বিস্ময় প্রকাশ করেন তিনি। সশস্ত্র বাহিনীকে শক্তিশালী করার স্বার্থে দেশের অভ্যন্তরে এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সহায়তার লক্ষ্যে এসব কেনাকাটা হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, রাশিয়ার কাছ থেকে এই কেনাকাটার মধ্য দিয়ে বৈদেশিক নীতিতে কোনো কৌশলগত পরিবর্তন হয়নি।
সময়সীমা ৩১ জানুয়ারি: পদ্মা সেতুর সর্বশেষ অগ্রগতি জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, এটাও একধরনের ষড়যন্ত্র। পদ্মা সেতু নিয়ে বলা হয়েছে যে এতে দুর্নীতি হয়নি, দুর্নীতির ষড়যন্ত্র হয়েছে। দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের যে ফর্মুলা বের হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, এভাবে ষড়যন্ত্রের কথা বলা হলে বাংলাদেশে কোনো বিনিয়োগ হবে না, কোনো কাজও করা যাবে না। কাজেই দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের কথা বলে পদ্মা সেতুর কাজ বন্ধ করা গ্রহণযোগ্য নয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের কথা বলা হচ্ছে। কেন দেখা হলো, কে দেখা করাল, সেটা বড় না। যে দেখা করাল, সে অপরাধ করল না। কেন দেখা করল, সেটাই অপরাধ। আমাদের বলা হলো, যে দেখা করাল, তাকে বাদ (দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ থেকে) দিতে হবে। আমি আর কিছু বলতে চাই না।’
বিশ্বব্যাংকের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাংক শুধু নিজেই কাজ বন্ধ করেনি, কনসোর্টিয়ামের নেতৃত্বদানকারী সংস্থা হিসেবে অন্য দাতা সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও জাপানের আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাকেও (জাইকা) কাজ করতে নিষেধ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতু আমরা করব। আমি আপনাদের এটুকু আশ্বাস দিতে পারি যে বিকল্প ব্যবস্থা আমাদের আছে। বিশ্বব্যাংকের কাছে আমরা জানুয়ারির মধ্যে জানতে চাই। জানুয়ারির মধ্যে আমরা ফাইনাল কথা চাই, তারা অর্থায়ন করবে কি করবে না। এরপর আমরা বিকল্প উপায়ে কাজ শুরু করব।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা জানি, আমরা কোনো অন্যায় করিনি। যে যেভাবে তদন্ত করতে চায়, তা করুক।’
পদ্মা সেতুর বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের দেওয়া চিঠিকে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদন প্রকাশ করায় নাম উল্লেখ না করে তিনি একটি পত্রিকার সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘আপনাদের কাছে একটা প্রশ্ন করতে চাই। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চুক্তি হয়েছিল যে দুই পক্ষের কোনো আলোচনা, চিঠি চালাচালি গোপন রাখা হবে। অথচ বিশ্বব্যাংকের একটি চিঠি দুদকে পৌঁছানোর আগেই একটি পত্রিকায় পৌঁছে গেল কীভাবে? আমরা, দুদক, অর্থ মন্ত্রণালয় কিছু জানল না। একটি পত্রিকায় হুবহু চিঠিটি ছাপা হলো। তাই এর পেছনে কোনো দুরভিসন্ধি আছে কি না, সেটি আপনাদের খুঁজে বের করার সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাই।’
মামলা নিয়ে চিন্তা করি না: প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রাশিয়া থেকে সমরাস্ত্র কেনায় এত কথা উঠেছে, অথচ চীন থেকে আমরা ৪৪টি ট্যাংক কিনেছি। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশ থেকে মিসাইল, যুদ্ধজাহাজ, জরিপ জাহাজ কিনেছি। দেশের প্রয়োজনে যার কাছ থেকে যত সহজভাবে পাব, সেভাবেই সশস্ত্র বাহিনীর জন্য সেটা নেব। যেহেতু কাজের পরিধি বেড়েছে, তাই যা যা লাগে, তা সংগ্রহ করা হবে।’ এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় ঋণ ইতিপূর্বেও নিয়েছি, এটি নতুন নয়।’
রাশিয়া থেকে সমরাস্ত্র কেনার জন্য ভবিষ্যতে মামলা হবে কি না, জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘শোনেন, আমি রাজনীতিবিদ। মামলা হতেই পারে। আমি মামলা নিয়ে চিন্তা করি না। নিজের কাছে পরিষ্কার থাকাটাই মূল কথা। এর আগে চীন থেকে ট্যাংক কিনলাম, সেটা নিয়ে তো কথা উঠল না। তা-ও আবার বাজেটের টাকা থেকে সরাসরি কিনলাম। চীন থেকেও ঋণ নেওয়া হয়েছিল। রাশিয়ার তুলনায় বেশি সুদেই ওই ঋণ নেওয়া হয়েছিল। এবার রাশিয়া থেকে রাষ্ট্রীয় ঋণে কিনছি। আর ঋণ পরিশোধ করতে হবে পাঁচ বছর পরে।’ তিনি বলেন, ‘রাশিয়া থেকে অনেক কম দামে তাদের কারখানা মূল্যেই মিগ কিনেছিলাম।’
বিরোধী দলের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকে বলেন, অস্ত্র কেনার কী দরকার! আবার আকাশে যখন ওগুলো ওড়ে, তখন তো ভালোই লাগে। স্বাধীনতার পরে মিগ-২১ আমাদের জন্য আনা হয়। এর আগেরবার মিগ-২৯ এনেছিলাম। আসলে তাঁরা কি চান না সামরিক বাহিনী আধুনিক হোক, শক্তিশালী হোক, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় উপযুক্ত হোক? তা তাঁরা চান না। জাতির পিতার নির্দেশে ১৯৭৪ সালেই প্রতিরক্ষানীতি প্রণয়ন করা হয়। এই নীতির আলোকেই সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নে “গোল ২০৩০” প্রণয়ন করা হচ্ছে।’
অস্ত্র কেনা নিয়ে ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভায় আলোচনা না হওয়ার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব বিষয় সাধারণত মন্ত্রিসভায় উত্থাপিত হয় না। বাজেট থেকে বরাদ্দ সরাসরি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হয়। অস্ত্র কেনা নিয়ে অতীতে প্রকাশ্যে আলোচনা হয়েছে, এমন একটি দৃষ্টান্তও দেওয়া যাবে না।
সমরাস্ত্র কেনাকাটায় সরকার কমিশন নিয়েছে বলে বিএনপির মওদুদ আহমদের মন্তব্য নিয়ে জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দুই দেশের সরকার আলোচনার ভিত্তিতে এই ঋণ চূড়ান্ত করেছে। এটি দুই সরকারের মধ্যে হবে, মাঝখানে কেউ থাকবে না। কাজেই যাদের কমিশন খাওয়ার অভ্যাস আছে, তারাই কমিশনের কথা ভালো বলতে পারবে। ওনার কাছে গেলেই পথঘাট সব চিনিয়ে দেবেন। উনি খালি কমিশন খাওয়ায় এক্সপার্ট নন, মৃত ব্যক্তির পাওয়ার অব অ্যাটর্নি হওয়া, ভোল পাল্টাতে পারদর্শী। যদি কিছু শিখতে চান, ওনার কাছে চলে যান।’
নির্দিষ্ট সময়েই নির্বাচন: বিরোধী দল সংসদে যোগ দেবে কি না, বিষয়টি একান্তভাবে বিরোধী দলের ব্যাপার বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সরকারের চার বছরের শাসনামলে স্থানীয় সরকার, সংসদের উপনির্বাচন, পৌরসভা, মেয়র নির্বাচনসহ বিভিন্ন পর্যায়ে পাঁচ হাজার ৫০৯টি নির্বাচন হয়েছে। এত নির্বাচন হলো, আপনারা তো কোনো নিউজ লিখতে পারেন নাই। কারণ, এসব নির্বাচনে মারামারি হয় নাই, গোলমাল হয় নাই, খুনখারাবি হয় নাই। এর পরও আবার বলবেন অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব না বা সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না?’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসন নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকে। নির্বাচন কমিশন চাইলে যেকোনো কর্মকর্তাকে পরিবর্তন করতে পারে। বিভিন্ন পর্যায়ের যেসব নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, তাতে আমাদের দলের প্রার্থী হেরে গেছে। জনগণ ভোট দিয়েছে, যা দিয়েছে আমরা তা মাথা পেতে নিয়েছি। আমরা তো কেড়ে নিতে যাইনি। আর নির্বাচন কীভাবে হবে? পৃথিবীর অন্য গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে যেভাবে নির্বাচন হয়, সেভাবেই নির্বাচন হবে। এর পরও যদি বিরোধী দলের কোনো কথা বলার থাকে, তারা সংসদে এসে কথা বলুক।’ তিনি বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্দিষ্ট সময়েই হবে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র: সেপ্টেম্বরে রূপপুরে দুই হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মস্কো সফরের সময় ১৬ জানুয়ারি রাশিয়ার আণবিক শক্তি করপোরেশনের (রোসাটম) মহাপরিচালক সের্গেই কিরেনকো তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। এ বছরের মধ্যে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল নির্মাণকাজ শুরু করার ব্যাপারে বিশেষ আগ্রহ দেখিয়েছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পারমাণবিক নিরাপত্তার বিষয়টিতে আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। আমি জানি, পারমাণবিক বিদ্যুতের জন্য জনগণের আকাঙ্ক্ষা আছে। আবার একটি ভীতিও কাজ করে। তাদের মধ্যে একটা অজানা ভয় কাজ করে। পারমাণবিক চুল্লির নিরাপত্তার প্রতিটি বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী চুল্লিতে ব্যবহূত তেজস্ক্রিয় বর্জ্য রাশিয়ায় ফিরিয়ে নেওয়া হবে। রাশিয়ার ৯০ শতাংশ অর্থায়নে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে। রাশিয়া সহজ শর্তে এই ঋণ দেবে।’
গ্যাস না দেওয়ায় ২০০১ সালের নির্বাচনে হারতে হয়েছিল। আগামী নির্বাচনের আগে এমন আশঙ্কা তিনি করেন কি না—এই প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘গ্যাসের মালিক এক দেশ আর কিনবে আরেক দেশ, তা হতে পারে না। এই অবস্থানে এখনো আছি।’
সব শেষে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এক-এগারো-পরবর্তী সময়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশে ফিরে এসেছি। সে সময় ফিরে এসেছিলাম বলেই আজ গণতন্ত্র রয়েছে। কারণ, পট পরিবর্তনের সময় তো ১০ বছরের পরিকল্পনা করে ক্ষমতা নেওয়া হয়েছিল। আর গরিবের ঘরে সম্পদ থাকা তো দুশ্চিন্তার বিষয়। চুন খেয়ে গাল পুড়েছে, তাই দই দেখলেই ভয় লাগে!’
প্রধানমন্ত্রীর এ সময় রাশিয়া সফর ও সমরাস্ত্র কেনার চুক্তির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় বিস্ময় প্রকাশ করেন তিনি। সশস্ত্র বাহিনীকে শক্তিশালী করার স্বার্থে দেশের অভ্যন্তরে এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সহায়তার লক্ষ্যে এসব কেনাকাটা হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, রাশিয়ার কাছ থেকে এই কেনাকাটার মধ্য দিয়ে বৈদেশিক নীতিতে কোনো কৌশলগত পরিবর্তন হয়নি।
সময়সীমা ৩১ জানুয়ারি: পদ্মা সেতুর সর্বশেষ অগ্রগতি জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, এটাও একধরনের ষড়যন্ত্র। পদ্মা সেতু নিয়ে বলা হয়েছে যে এতে দুর্নীতি হয়নি, দুর্নীতির ষড়যন্ত্র হয়েছে। দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের যে ফর্মুলা বের হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, এভাবে ষড়যন্ত্রের কথা বলা হলে বাংলাদেশে কোনো বিনিয়োগ হবে না, কোনো কাজও করা যাবে না। কাজেই দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের কথা বলে পদ্মা সেতুর কাজ বন্ধ করা গ্রহণযোগ্য নয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের কথা বলা হচ্ছে। কেন দেখা হলো, কে দেখা করাল, সেটা বড় না। যে দেখা করাল, সে অপরাধ করল না। কেন দেখা করল, সেটাই অপরাধ। আমাদের বলা হলো, যে দেখা করাল, তাকে বাদ (দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ থেকে) দিতে হবে। আমি আর কিছু বলতে চাই না।’
বিশ্বব্যাংকের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাংক শুধু নিজেই কাজ বন্ধ করেনি, কনসোর্টিয়ামের নেতৃত্বদানকারী সংস্থা হিসেবে অন্য দাতা সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও জাপানের আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাকেও (জাইকা) কাজ করতে নিষেধ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতু আমরা করব। আমি আপনাদের এটুকু আশ্বাস দিতে পারি যে বিকল্প ব্যবস্থা আমাদের আছে। বিশ্বব্যাংকের কাছে আমরা জানুয়ারির মধ্যে জানতে চাই। জানুয়ারির মধ্যে আমরা ফাইনাল কথা চাই, তারা অর্থায়ন করবে কি করবে না। এরপর আমরা বিকল্প উপায়ে কাজ শুরু করব।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা জানি, আমরা কোনো অন্যায় করিনি। যে যেভাবে তদন্ত করতে চায়, তা করুক।’
পদ্মা সেতুর বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের দেওয়া চিঠিকে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদন প্রকাশ করায় নাম উল্লেখ না করে তিনি একটি পত্রিকার সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘আপনাদের কাছে একটা প্রশ্ন করতে চাই। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চুক্তি হয়েছিল যে দুই পক্ষের কোনো আলোচনা, চিঠি চালাচালি গোপন রাখা হবে। অথচ বিশ্বব্যাংকের একটি চিঠি দুদকে পৌঁছানোর আগেই একটি পত্রিকায় পৌঁছে গেল কীভাবে? আমরা, দুদক, অর্থ মন্ত্রণালয় কিছু জানল না। একটি পত্রিকায় হুবহু চিঠিটি ছাপা হলো। তাই এর পেছনে কোনো দুরভিসন্ধি আছে কি না, সেটি আপনাদের খুঁজে বের করার সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাই।’
মামলা নিয়ে চিন্তা করি না: প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রাশিয়া থেকে সমরাস্ত্র কেনায় এত কথা উঠেছে, অথচ চীন থেকে আমরা ৪৪টি ট্যাংক কিনেছি। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশ থেকে মিসাইল, যুদ্ধজাহাজ, জরিপ জাহাজ কিনেছি। দেশের প্রয়োজনে যার কাছ থেকে যত সহজভাবে পাব, সেভাবেই সশস্ত্র বাহিনীর জন্য সেটা নেব। যেহেতু কাজের পরিধি বেড়েছে, তাই যা যা লাগে, তা সংগ্রহ করা হবে।’ এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় ঋণ ইতিপূর্বেও নিয়েছি, এটি নতুন নয়।’
রাশিয়া থেকে সমরাস্ত্র কেনার জন্য ভবিষ্যতে মামলা হবে কি না, জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘শোনেন, আমি রাজনীতিবিদ। মামলা হতেই পারে। আমি মামলা নিয়ে চিন্তা করি না। নিজের কাছে পরিষ্কার থাকাটাই মূল কথা। এর আগে চীন থেকে ট্যাংক কিনলাম, সেটা নিয়ে তো কথা উঠল না। তা-ও আবার বাজেটের টাকা থেকে সরাসরি কিনলাম। চীন থেকেও ঋণ নেওয়া হয়েছিল। রাশিয়ার তুলনায় বেশি সুদেই ওই ঋণ নেওয়া হয়েছিল। এবার রাশিয়া থেকে রাষ্ট্রীয় ঋণে কিনছি। আর ঋণ পরিশোধ করতে হবে পাঁচ বছর পরে।’ তিনি বলেন, ‘রাশিয়া থেকে অনেক কম দামে তাদের কারখানা মূল্যেই মিগ কিনেছিলাম।’
বিরোধী দলের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকে বলেন, অস্ত্র কেনার কী দরকার! আবার আকাশে যখন ওগুলো ওড়ে, তখন তো ভালোই লাগে। স্বাধীনতার পরে মিগ-২১ আমাদের জন্য আনা হয়। এর আগেরবার মিগ-২৯ এনেছিলাম। আসলে তাঁরা কি চান না সামরিক বাহিনী আধুনিক হোক, শক্তিশালী হোক, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় উপযুক্ত হোক? তা তাঁরা চান না। জাতির পিতার নির্দেশে ১৯৭৪ সালেই প্রতিরক্ষানীতি প্রণয়ন করা হয়। এই নীতির আলোকেই সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নে “গোল ২০৩০” প্রণয়ন করা হচ্ছে।’
অস্ত্র কেনা নিয়ে ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভায় আলোচনা না হওয়ার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব বিষয় সাধারণত মন্ত্রিসভায় উত্থাপিত হয় না। বাজেট থেকে বরাদ্দ সরাসরি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হয়। অস্ত্র কেনা নিয়ে অতীতে প্রকাশ্যে আলোচনা হয়েছে, এমন একটি দৃষ্টান্তও দেওয়া যাবে না।
সমরাস্ত্র কেনাকাটায় সরকার কমিশন নিয়েছে বলে বিএনপির মওদুদ আহমদের মন্তব্য নিয়ে জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দুই দেশের সরকার আলোচনার ভিত্তিতে এই ঋণ চূড়ান্ত করেছে। এটি দুই সরকারের মধ্যে হবে, মাঝখানে কেউ থাকবে না। কাজেই যাদের কমিশন খাওয়ার অভ্যাস আছে, তারাই কমিশনের কথা ভালো বলতে পারবে। ওনার কাছে গেলেই পথঘাট সব চিনিয়ে দেবেন। উনি খালি কমিশন খাওয়ায় এক্সপার্ট নন, মৃত ব্যক্তির পাওয়ার অব অ্যাটর্নি হওয়া, ভোল পাল্টাতে পারদর্শী। যদি কিছু শিখতে চান, ওনার কাছে চলে যান।’
নির্দিষ্ট সময়েই নির্বাচন: বিরোধী দল সংসদে যোগ দেবে কি না, বিষয়টি একান্তভাবে বিরোধী দলের ব্যাপার বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সরকারের চার বছরের শাসনামলে স্থানীয় সরকার, সংসদের উপনির্বাচন, পৌরসভা, মেয়র নির্বাচনসহ বিভিন্ন পর্যায়ে পাঁচ হাজার ৫০৯টি নির্বাচন হয়েছে। এত নির্বাচন হলো, আপনারা তো কোনো নিউজ লিখতে পারেন নাই। কারণ, এসব নির্বাচনে মারামারি হয় নাই, গোলমাল হয় নাই, খুনখারাবি হয় নাই। এর পরও আবার বলবেন অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব না বা সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না?’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসন নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকে। নির্বাচন কমিশন চাইলে যেকোনো কর্মকর্তাকে পরিবর্তন করতে পারে। বিভিন্ন পর্যায়ের যেসব নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, তাতে আমাদের দলের প্রার্থী হেরে গেছে। জনগণ ভোট দিয়েছে, যা দিয়েছে আমরা তা মাথা পেতে নিয়েছি। আমরা তো কেড়ে নিতে যাইনি। আর নির্বাচন কীভাবে হবে? পৃথিবীর অন্য গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে যেভাবে নির্বাচন হয়, সেভাবেই নির্বাচন হবে। এর পরও যদি বিরোধী দলের কোনো কথা বলার থাকে, তারা সংসদে এসে কথা বলুক।’ তিনি বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্দিষ্ট সময়েই হবে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র: সেপ্টেম্বরে রূপপুরে দুই হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মস্কো সফরের সময় ১৬ জানুয়ারি রাশিয়ার আণবিক শক্তি করপোরেশনের (রোসাটম) মহাপরিচালক সের্গেই কিরেনকো তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। এ বছরের মধ্যে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল নির্মাণকাজ শুরু করার ব্যাপারে বিশেষ আগ্রহ দেখিয়েছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পারমাণবিক নিরাপত্তার বিষয়টিতে আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। আমি জানি, পারমাণবিক বিদ্যুতের জন্য জনগণের আকাঙ্ক্ষা আছে। আবার একটি ভীতিও কাজ করে। তাদের মধ্যে একটা অজানা ভয় কাজ করে। পারমাণবিক চুল্লির নিরাপত্তার প্রতিটি বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী চুল্লিতে ব্যবহূত তেজস্ক্রিয় বর্জ্য রাশিয়ায় ফিরিয়ে নেওয়া হবে। রাশিয়ার ৯০ শতাংশ অর্থায়নে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে। রাশিয়া সহজ শর্তে এই ঋণ দেবে।’
গ্যাস না দেওয়ায় ২০০১ সালের নির্বাচনে হারতে হয়েছিল। আগামী নির্বাচনের আগে এমন আশঙ্কা তিনি করেন কি না—এই প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘গ্যাসের মালিক এক দেশ আর কিনবে আরেক দেশ, তা হতে পারে না। এই অবস্থানে এখনো আছি।’
সব শেষে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এক-এগারো-পরবর্তী সময়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশে ফিরে এসেছি। সে সময় ফিরে এসেছিলাম বলেই আজ গণতন্ত্র রয়েছে। কারণ, পট পরিবর্তনের সময় তো ১০ বছরের পরিকল্পনা করে ক্ষমতা নেওয়া হয়েছিল। আর গরিবের ঘরে সম্পদ থাকা তো দুশ্চিন্তার বিষয়। চুন খেয়ে গাল পুড়েছে, তাই দই দেখলেই ভয় লাগে!’
No comments