সাদাকালো-কঠোর শাস্তির আইনই নারী নির্যাতন কমাতে পারে by আহমদ রফিক
কিছুদিন ধরে বড় অবিশ্বাস্য ঘটনা বিস্ময়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে যত্রতত্র খুন, ধর্ষণ ও এসিড-সন্ত্রাস। কাগজের পাতায় বড় একটা অংশজুড়ে রয়েছে এমন লোমহর্ষক ঘটনা, যা সবাইকেই আলোড়িত করে তুলেছে।
এর প্রতিবাদে কাগজে কাগজে নিবন্ধ, মতামত, সম্পাদকীয় আর টিভি টক শোতে আলোচনা। এমন নয় যে এসব ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি। বিশ্বের সব দেশেই এমন ঘটনার নজির রয়েছে। কিন্তু এতটা ব্যাপক হারে নয়।
জানি না, বিষয়টি কাকতালীয় কি না, দিলি্লতে জ্যোতি সিং পান্ডে নামের কলেজছাত্রীকে বাসে ছয় দুর্বৃত্ত যুবক ধর্ষণের পর প্রচারমাধ্যম ও সমাজে যে আলোড়ন ও প্রতিক্রিয়া-প্রতিবাদ দেখা দেয়, তারপর যেমন ভারতে তেমনি বাংলাদেশে যেন ধর্ষণ ও গণধর্ষণের ধুম পড়ে যায়। প্রতিদিন কাগজে একের পর এক ঘটনার প্রকাশ। টাঙ্গাইল, চট্টগ্রাম, সাভার, শরীয়তপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় চলছে পাষণ্ডদের নির্বিকার দুর্বৃত্তপনা। মনে হয়, এর শেষ নেই।
দিলি্লর ঘটনা সেখানে ও বিশ্বজুড়ে যত আলোড়ন তৈরি করুক, রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে যত প্রতিকার ঘোষণাই আসুক না কেন, বিচার বিভাগীয় কর্মকাণ্ডের যতটুকু জানা যাচ্ছে তাতে মনে হয়, কিছুদিনের মধ্যে জলের ক্ষুব্ধ আলোড়ন স্তব্ধ হয়ে এত বড় বর্বরতার সাদামাটা অবসান ঘটাবে। নানা আইনি অজুহাতে গুরুতর পাপে লঘুদণ্ড বা বেকসুর খালাসও হয়ে যেতে পারে। ঔপনিবেশিক আমলের বিচারব্যবস্থার গণতান্ত্রিক পরিণতি এমনই হয়ে থাকে বা হতে দেখা যায়।
আমাদের দেশের প্রচারমাধ্যমগুলোর প্রশংসনীয় ইতিবাচক ভূমিকা সত্ত্বেও অবস্থার কোনো হেরফের দেখছি না। বিদেশের বাঙালি বাসিন্দা কলাম লিখেছেন 'নয়াদিলি্লর জ্যোতি ও শরীয়তপুরের হেনা'কে নিয়ে। একটি দৈনিকে চার কলামের শিরোনাম 'কাপাসিয়ার সেই পশু দম্পতির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রয়োজন'। আইনজীবী লিখেছেন, 'ধর্ষকের সাজা হতেই হবে' আর রাজনীতিক লিখেছেন, 'এই পশুবৃত্তি নিরসনে সোচ্চার হতে হবে'। একই কাগজে এক শিক্ষার্থীর ঘোষণা- 'নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করুন।'
আর পরিস্থিতির কী পরিহাস- ওই একই কাগজের শেষ পাতায় এক কলামের খবর 'হবিগঞ্জের এক কিশোরী গার্মেন্টকর্মীকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে রাতভর ধর্ষণ করেছে একদল যুবক। হাত-পা বেঁধে রেখে পরদিনও চলেছে নির্যাতন। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।' একই তারিখের অন্য একটি কাগজে প্রকাশিত খবর দুই কলামের শিরোনামে : 'বাণিজ্যিক ভবন থেকে শিশুর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার'- 'বিচার দাবিতে রাস্তা অবরোধ'। এ খবরের নেপথ্য কাহিনী হলো : 'অফিসে খাবার পরিবহনকারী ১০ বছরের বালিকা রিতুকে অফিস ভবনে ধর্ষণের পর হত্যা'। আরেকটি কাগজে শেষ পাতায় দুই কলামের শিরোনাম : 'বিভিন্ন স্থানে শিশুসহ ৪ জন ধর্ষণের শিকার : গ্রেফতার ২'। সব খবর একই দিনের অর্থাৎ ২০ জানুয়ারির (২০১৩)।
এ রকম অনেক খবর কাগজ থেকে তুলে ধরা যাবে। আবার অনেক ধর্ষণের খবর সামাজিক কারণে চেপে রাখা হয়, কাগজে প্রকাশিত হয় না। এমনকি ধর্ষণের শিকার কিশোরী, তরুণী বা গৃহবধূ অনেক সময় প্রবল মানসিক প্রতিক্রিয়ায় আত্মহননের পথ বেছে নেন। সেসব খবর কখনো প্রকাশিত হয়, কখনো অজানা থেকে যায়। তবে সাম্প্রতিক পরিস্থিতি হলো : ধর্ষণ, গণধর্ষণ সামাজিক ব্যাধির আকার ধারণ করেছে। শুধু লিখিত প্রতিবাদ, কলাম বা গোলটেবিল বৈঠকে এর সমাধান নেই।
প্রতিকার বা সমস্যা সমাধানের চিন্তাভাবনা বা ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তাবাদির আগে একটা কথা বলি : এক সপ্তাহের কাগজগুলো জড়ো করে পড়ে দেখলেই বুঝতে পারা যাবে, সমাজে পুরুষদের মধ্যে মানসিক বিকৃতি কতদূর এবং কোথায় গিয়ে পেঁৗছেছে। মনে হয়, দেশটা বুঝি ধর্ষকে ভরে গেছে। নারী নিরাপত্তাহীন, হোক বালিকা, কিশোরী, তরুণী বা যুবতী গৃহবধূ। সমাজ এখন দুর্বৃত্তদের হাতে জিম্মি। হোক না তারা সমাজের অতিশয় সংখ্যালঘু অংশ।
তবু তাদের দাপটে সমাজ অস্থির। সমাজে মূল্যবোধ সম্ভবত প্রায় শূন্যের কোঠায় গিয়ে পেঁৗছেছে। তাই আমাদের পড়তে হয় এমন খবর যে 'গাজীপুরের এক সংসদ সদস্যের একজন সহকারী একান্ত সচিবের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।' শুধু যৌন কারণই নয়, সাদামাটা কারণেও মানুষ খুন যেন একটা নিত্যদিনের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিশু অপহরণ ও মুক্তিপণের দাবি এবং পেয়ে, না-পেয়ে খুন, ছাত্র অপহরণ ও তার ক্ষতবিক্ষত গলিত লাশ উদ্ধারসহ এন্তার ঘটনা চরম সামাজিক অবক্ষয়ের পরিচয় দিচ্ছে। এমনই আরেকটি খবর 'জামাইয়ের হাতে শাশুড়িসহ পাঁচ জেলায় ৫ খুন'।
দুই
সামাজিক ব্যাধি, সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ইত্যাদি বক্তব্যের পরও এসব ঘটনার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে অনেক কথা থেকে যায়। এই যে এত কথা, এত লেখা, এত টক শো বা গোলটেবিল বৈঠকের মতো নান্দনিক তৎপরতার পরও ঘটনা ঠিকই ঘটে চলেছে। পাষণ্ড ও দুর্বৃত্তের দল এত এত বিশেষণ ব্যবহারের পরও নারীদেহের ওপর দাঁড়িয়ে প্রেতনৃত্য করে চলেছে, এর অবসান ঘটাতে সমাজের প্রভাবশালী বা মননশীল সদস্যরা কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন? তাঁরা এ বিষয়ে এগিয়ে আসছেন না কেন?
সুশীল সমাজ, সুজন, নাগরিক ঐক্য এবং অনুরূপ সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের বিশিষ্টজন কি শুধু কলাম লিখে, বক্তৃৃতা দিয়ে, টিভি টক শোতে অংশ নিয়ে তাঁদের দায় শেষ করবেন? একইভাবে রাজনৈতিক দলগুলোও কি শুধু প্রতিবাদী বক্তব্য দিয়ে কর্তব্য শেষ করবেন? শাসনযন্ত্রের কি এদিক থেকে অর্থাৎ ভয়ংকর সব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিকারমূলক বা আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের কথা ভাববার নেই? ভাবতে পারা যায়, একটি আধুনিক সভ্য রাষ্ট্রে 'গত এক বছরে ধর্ষণের শিকার ৯০ শিশু'! এ খবরও তো আংশিক। যৌন ধর্ষকামীদের হাত থেকে শিশুও রক্ষা পাচ্ছে না- হোক তার বয়স চার, পাঁচ বা আট-দশ বছর। দ্বিতীয় যে বিষয়টি আমাদের বিবেচনার, তা হলো ঘটনার পর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের প্রতি ততটা গুরুত্ব আরোপ করা হচ্ছে না। অর্থাৎ পুলিশি তদন্ত, অপরাধবিষয়ক চার্জশিট এবং আইন-আদালতে অগ্রগতির খবরাখবর সাংবাদিকদের জন্য খুব একটি আকর্ষণীয় না হওয়ায় পরবর্তী ঘটনাদি কোনো কাগজেই বড় একটা প্রকাশিত হয় না। ফলে পাঠক যেমন সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হতে পারছেন না, তেমনি সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরের নৈতিক চাপ প্রশাসন বা আদালতের ওপর পড়ছে না।
ফলে তদন্তের ফাঁকফোকর খোলা থেকে যাচ্ছে। দুর্নীতিগ্রস্ত সমাজের সংশ্লিষ্ট অংশ বা সদস্য তার প্রতাপে, দাপটে, বিত্তের প্রভাবে নয়কে সহজেই ছয় করে ফেলতে সক্ষম হয়। শেষ পর্যন্ত দেখা যায়, অপরাধীর শাস্তি হওয়া দূরে থাক, অপরাধীর দাপটে ভয়ে-আতঙ্কে নির্যাতিতাকেই প্রাণ বাঁচাতে বা সম্ভ্রম রক্ষা করতে আত্মগোপন করে থাকতে হচ্ছে। অথবা চাপের মুখে মামলা তুলে নিতে হচ্ছে। এ ধরনের একাধিক ঘটনা কাগজে প্রকাশিত হয়েছে।
স্বভাবতই অপরাধীর মনে আইনের ভয়, সাজা-শাস্তির ভয় কাজ করে না। বরং অন্যায় ও অপরাধ সংঘটনে তার আগ্রহ বাড়ে। দিনকয়েক আগে একটি খবরে পড়েছিলাম, 'জনৈক ধর্ষক জামিন পেয়ে এলাকায় ফিরে ধর্ষিতাকে পুনরায় ধর্ষণের পর হত্যা করেছে, যাতে তার পক্ষে আইনের সাহায্য নেওয়া সম্ভব না হয়।' তখন আক্ষেপে বলতে হয়- কী আজব এ দেশ! আমরা তাই অবাক হই না কাগজে এমন শিরোনাম দেখে যে 'প্রশাসনের গাফিলতির কারণে নারী নির্যাতন বাড়ছে'।
নারী নির্যাতনের ঘটনা সম্প্রতি এ পর্যায়ে পেঁৗছেছে যে অবিলম্বে এ বিষয়ে সামাজিক ও শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। মনে হচ্ছে, সাধারণ আইনি ব্যবস্থা, প্রচলিত আইন এখন আর এ ব্যাধি নিরাময়ে যথেষ্ট নয়। কারণ এ ব্যাধি সংক্রামক চরিত্র অর্জন করে নিয়েছে। দ্রুত এর বিস্তার ঘটছে। অচিরে তা মহামারির আকার ধারণ করে সামাজিক স্বাস্থ্য ও স্থিতি নষ্ট করতে থাকবে। পরিস্থিতি প্রতিকার-প্রতিরোধের বাইরে চলে যাওয়ার আগেই কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া তাই জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ জন্য দরকার তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা গ্রহণ। যেমন সামাজিক খাতে, তেমনি শাসনযন্ত্রের দিক থেকে। দু-একটি আইন সালিশ কেন্দ্র বা মানবাধিকার কমিশনের সাধ্য কি এই ব্যাপক অপরাধ ও অপরাধপ্রবণতাকে প্রতিহত করে। তাই আইনি ব্যবস্থাকে এ বিষয়ে দ্রুত সংগঠিত করতে হবে। কিন্তু তার আগে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারব্যবস্থার মতো ধর্ষণ ও সংশ্লিষ্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করতে বিশেষ বিচার সংস্থা বা ট্রাইব্যুনাল গঠন করা দরকার, যাতে এ-সংক্রান্ত সুবিচার নিরপেক্ষভাবে দ্রুত সম্পন্ন হয়। প্রচলিত দীর্ঘসূত্রী বিচারব্যবস্থায় এসব অপরাধ ফেলে রাখলে চলবে না। আর তদন্তকারী সংস্থার ওপর নৈতিক চাপ, ন্যায়ভিত্তিক প্রশাসনিক চাপ না থাকলে গোড়াতেই সব কিছু ভেস্তে যাবে।
আমার মনে হয়, এ জন্য বিশেষ আদালতের বিচারব্যবস্থা অতীব জরুরি। এ ব্যবস্থা দ্রুত সম্পন্ন করা সম্ভব। ধর্ষকদের জামিন দেওয়া বা মারাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে, ওপরে উলি্লখিত একটি ঘটনা থেকে তার প্রমাণ মেলে। প্রকৃতপক্ষে এ জাতীয় ঘটনার সংখ্যা যে অনেক, তা অনুমান করা চলে। শুধু জামিন নামঞ্জুরই নয়, এসব বিচার দ্রুত সম্পাদনের ব্যবস্থা রাখা দরকার।
মনে রাখা দরকার, নারী নির্যাতন ও হত্যা জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ ক্ষেত্রে অবহেলা, কালক্ষেপণ, আইনি মারপ্যাঁচের কোনো সুযোগ নেই। শাসনযন্ত্রের পাশাপাশি এ বিষয়ে সামাজিক সচেতনতা খুবই অপরিহার্য। আমার মনে হয়, এ বিষয়ে আইনজীবীদের নৈতিক সচেতনতা বোধহয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যেনতেন প্রকারে ধর্ষককে মামলায় জেতানোর মানসিকতা দূরে রাখা, এ ক্ষেত্রে সমাজসচেতনতার সমান্তরাল। পেশাগত বাধ্যবাধকতা পালন করেও এই মানবিক-নৈতিক সমাজচেতনার প্রকাশ মানুষ হিসেবে আইনজীবীমাত্রের কাছেই আমাদের দাবি। তাঁরা যেন অর্থের কাছে, প্রতাপের চাপে, ক্ষমতার ভয়ের কাছে বিকিয়ে না যান।
এ বিষয়ে সামাজিক সংগঠনগুলোর দায়ও কম নয়। সমাজচেতনা বাড়াতে যেমন সাংস্কৃতিক তৎপরতা জরুরি, তেমনি অপরিহার্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা, যা সামাজিক-রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর অপরিহার্য দায়। দীর্ঘমেয়াদি এসব তৎপরতার পাশাপাশি আমরা সাংসদদের প্রতি আহ্বান জানাব, তাঁরা যাতে দলমত বিভেদ-বিবেচনা আবর্জনার স্তূপে ফেলে রেখে জরুরি ভিত্তিতে নারী নির্যাতন ও হত্যার মতো ব্যাধির প্রতিরোধে অবিলম্বে কঠোর আইন পাসের ব্যবস্থা নেন। সে আইনে এ অপরাধের নিঃসংশয় প্রমাণ সাপেক্ষে মৃত্যুদণ্ডের ব্যবস্থা থাকবে।
কঠোর শাস্তির বিধান এবং তা বাস্তবায়ন ছাড়া নারী নির্যাতন ও হত্যার ভয়ংকর সামাজিক দূষণ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হবে না। আইন প্রণয়ন যেমন জরুরি, তেমনি তার প্রয়োগ নিশ্চিত করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। আর সে প্রয়োগ নিশ্চিত করতে দরকার বিশেষ আদালতের বিচারব্যবস্থা। এ বিষয়ে যেমন পুরুষদের তেমনি নারী সমাজকেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। বাংলাদেশে অনেক নারী সংগঠন রয়েছে। চোখের সামনে নারী নির্যাতন ও বীভৎস হত্যা দেখেও তারা এ বিষয়ে কেন কার্যকর ব্যবস্থা নিতে এগিয়ে আসছে না, তা দুর্বোধ্য।
এ বিষয়ে আন্দোলনের পূর্ব পর্যায় হিসেবে নিয়মতান্ত্রিক ব্যবস্থা গ্রহণেও তাদের উদ্যোগী হতে দেখা যাচ্ছে না। মহিলা সাংসদরাই তো এ বিষয়ে কঠোর আইন প্রণয়নের জন্য সংসদে আলোচনা শুরু করতে পারেন, সুনির্দিষ্ট বিল আনতে পারেন। আমরা আশা করব, বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কাজটি তাঁরা করবেন তাঁদের বোন বা কন্যাপ্রতিমদের সম্মান ও জীবন রক্ষার মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত লেখায় বা বক্তৃতায় একটি বিষয়ে সবার অভিন্ন মত যে 'কঠোর শাস্তি অপরাধ কমাবে' এবং সে জন্য অবিলম্বে তেমন আইন প্রণয়ন করা জরুরি।
লেখক : কবি, গবেষক ও কলাম লেখক
জানি না, বিষয়টি কাকতালীয় কি না, দিলি্লতে জ্যোতি সিং পান্ডে নামের কলেজছাত্রীকে বাসে ছয় দুর্বৃত্ত যুবক ধর্ষণের পর প্রচারমাধ্যম ও সমাজে যে আলোড়ন ও প্রতিক্রিয়া-প্রতিবাদ দেখা দেয়, তারপর যেমন ভারতে তেমনি বাংলাদেশে যেন ধর্ষণ ও গণধর্ষণের ধুম পড়ে যায়। প্রতিদিন কাগজে একের পর এক ঘটনার প্রকাশ। টাঙ্গাইল, চট্টগ্রাম, সাভার, শরীয়তপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় চলছে পাষণ্ডদের নির্বিকার দুর্বৃত্তপনা। মনে হয়, এর শেষ নেই।
দিলি্লর ঘটনা সেখানে ও বিশ্বজুড়ে যত আলোড়ন তৈরি করুক, রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে যত প্রতিকার ঘোষণাই আসুক না কেন, বিচার বিভাগীয় কর্মকাণ্ডের যতটুকু জানা যাচ্ছে তাতে মনে হয়, কিছুদিনের মধ্যে জলের ক্ষুব্ধ আলোড়ন স্তব্ধ হয়ে এত বড় বর্বরতার সাদামাটা অবসান ঘটাবে। নানা আইনি অজুহাতে গুরুতর পাপে লঘুদণ্ড বা বেকসুর খালাসও হয়ে যেতে পারে। ঔপনিবেশিক আমলের বিচারব্যবস্থার গণতান্ত্রিক পরিণতি এমনই হয়ে থাকে বা হতে দেখা যায়।
আমাদের দেশের প্রচারমাধ্যমগুলোর প্রশংসনীয় ইতিবাচক ভূমিকা সত্ত্বেও অবস্থার কোনো হেরফের দেখছি না। বিদেশের বাঙালি বাসিন্দা কলাম লিখেছেন 'নয়াদিলি্লর জ্যোতি ও শরীয়তপুরের হেনা'কে নিয়ে। একটি দৈনিকে চার কলামের শিরোনাম 'কাপাসিয়ার সেই পশু দম্পতির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রয়োজন'। আইনজীবী লিখেছেন, 'ধর্ষকের সাজা হতেই হবে' আর রাজনীতিক লিখেছেন, 'এই পশুবৃত্তি নিরসনে সোচ্চার হতে হবে'। একই কাগজে এক শিক্ষার্থীর ঘোষণা- 'নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করুন।'
আর পরিস্থিতির কী পরিহাস- ওই একই কাগজের শেষ পাতায় এক কলামের খবর 'হবিগঞ্জের এক কিশোরী গার্মেন্টকর্মীকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে রাতভর ধর্ষণ করেছে একদল যুবক। হাত-পা বেঁধে রেখে পরদিনও চলেছে নির্যাতন। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।' একই তারিখের অন্য একটি কাগজে প্রকাশিত খবর দুই কলামের শিরোনামে : 'বাণিজ্যিক ভবন থেকে শিশুর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার'- 'বিচার দাবিতে রাস্তা অবরোধ'। এ খবরের নেপথ্য কাহিনী হলো : 'অফিসে খাবার পরিবহনকারী ১০ বছরের বালিকা রিতুকে অফিস ভবনে ধর্ষণের পর হত্যা'। আরেকটি কাগজে শেষ পাতায় দুই কলামের শিরোনাম : 'বিভিন্ন স্থানে শিশুসহ ৪ জন ধর্ষণের শিকার : গ্রেফতার ২'। সব খবর একই দিনের অর্থাৎ ২০ জানুয়ারির (২০১৩)।
এ রকম অনেক খবর কাগজ থেকে তুলে ধরা যাবে। আবার অনেক ধর্ষণের খবর সামাজিক কারণে চেপে রাখা হয়, কাগজে প্রকাশিত হয় না। এমনকি ধর্ষণের শিকার কিশোরী, তরুণী বা গৃহবধূ অনেক সময় প্রবল মানসিক প্রতিক্রিয়ায় আত্মহননের পথ বেছে নেন। সেসব খবর কখনো প্রকাশিত হয়, কখনো অজানা থেকে যায়। তবে সাম্প্রতিক পরিস্থিতি হলো : ধর্ষণ, গণধর্ষণ সামাজিক ব্যাধির আকার ধারণ করেছে। শুধু লিখিত প্রতিবাদ, কলাম বা গোলটেবিল বৈঠকে এর সমাধান নেই।
প্রতিকার বা সমস্যা সমাধানের চিন্তাভাবনা বা ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তাবাদির আগে একটা কথা বলি : এক সপ্তাহের কাগজগুলো জড়ো করে পড়ে দেখলেই বুঝতে পারা যাবে, সমাজে পুরুষদের মধ্যে মানসিক বিকৃতি কতদূর এবং কোথায় গিয়ে পেঁৗছেছে। মনে হয়, দেশটা বুঝি ধর্ষকে ভরে গেছে। নারী নিরাপত্তাহীন, হোক বালিকা, কিশোরী, তরুণী বা যুবতী গৃহবধূ। সমাজ এখন দুর্বৃত্তদের হাতে জিম্মি। হোক না তারা সমাজের অতিশয় সংখ্যালঘু অংশ।
তবু তাদের দাপটে সমাজ অস্থির। সমাজে মূল্যবোধ সম্ভবত প্রায় শূন্যের কোঠায় গিয়ে পেঁৗছেছে। তাই আমাদের পড়তে হয় এমন খবর যে 'গাজীপুরের এক সংসদ সদস্যের একজন সহকারী একান্ত সচিবের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।' শুধু যৌন কারণই নয়, সাদামাটা কারণেও মানুষ খুন যেন একটা নিত্যদিনের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিশু অপহরণ ও মুক্তিপণের দাবি এবং পেয়ে, না-পেয়ে খুন, ছাত্র অপহরণ ও তার ক্ষতবিক্ষত গলিত লাশ উদ্ধারসহ এন্তার ঘটনা চরম সামাজিক অবক্ষয়ের পরিচয় দিচ্ছে। এমনই আরেকটি খবর 'জামাইয়ের হাতে শাশুড়িসহ পাঁচ জেলায় ৫ খুন'।
দুই
সামাজিক ব্যাধি, সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ইত্যাদি বক্তব্যের পরও এসব ঘটনার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে অনেক কথা থেকে যায়। এই যে এত কথা, এত লেখা, এত টক শো বা গোলটেবিল বৈঠকের মতো নান্দনিক তৎপরতার পরও ঘটনা ঠিকই ঘটে চলেছে। পাষণ্ড ও দুর্বৃত্তের দল এত এত বিশেষণ ব্যবহারের পরও নারীদেহের ওপর দাঁড়িয়ে প্রেতনৃত্য করে চলেছে, এর অবসান ঘটাতে সমাজের প্রভাবশালী বা মননশীল সদস্যরা কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন? তাঁরা এ বিষয়ে এগিয়ে আসছেন না কেন?
সুশীল সমাজ, সুজন, নাগরিক ঐক্য এবং অনুরূপ সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের বিশিষ্টজন কি শুধু কলাম লিখে, বক্তৃৃতা দিয়ে, টিভি টক শোতে অংশ নিয়ে তাঁদের দায় শেষ করবেন? একইভাবে রাজনৈতিক দলগুলোও কি শুধু প্রতিবাদী বক্তব্য দিয়ে কর্তব্য শেষ করবেন? শাসনযন্ত্রের কি এদিক থেকে অর্থাৎ ভয়ংকর সব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিকারমূলক বা আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের কথা ভাববার নেই? ভাবতে পারা যায়, একটি আধুনিক সভ্য রাষ্ট্রে 'গত এক বছরে ধর্ষণের শিকার ৯০ শিশু'! এ খবরও তো আংশিক। যৌন ধর্ষকামীদের হাত থেকে শিশুও রক্ষা পাচ্ছে না- হোক তার বয়স চার, পাঁচ বা আট-দশ বছর। দ্বিতীয় যে বিষয়টি আমাদের বিবেচনার, তা হলো ঘটনার পর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের প্রতি ততটা গুরুত্ব আরোপ করা হচ্ছে না। অর্থাৎ পুলিশি তদন্ত, অপরাধবিষয়ক চার্জশিট এবং আইন-আদালতে অগ্রগতির খবরাখবর সাংবাদিকদের জন্য খুব একটি আকর্ষণীয় না হওয়ায় পরবর্তী ঘটনাদি কোনো কাগজেই বড় একটা প্রকাশিত হয় না। ফলে পাঠক যেমন সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হতে পারছেন না, তেমনি সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরের নৈতিক চাপ প্রশাসন বা আদালতের ওপর পড়ছে না।
ফলে তদন্তের ফাঁকফোকর খোলা থেকে যাচ্ছে। দুর্নীতিগ্রস্ত সমাজের সংশ্লিষ্ট অংশ বা সদস্য তার প্রতাপে, দাপটে, বিত্তের প্রভাবে নয়কে সহজেই ছয় করে ফেলতে সক্ষম হয়। শেষ পর্যন্ত দেখা যায়, অপরাধীর শাস্তি হওয়া দূরে থাক, অপরাধীর দাপটে ভয়ে-আতঙ্কে নির্যাতিতাকেই প্রাণ বাঁচাতে বা সম্ভ্রম রক্ষা করতে আত্মগোপন করে থাকতে হচ্ছে। অথবা চাপের মুখে মামলা তুলে নিতে হচ্ছে। এ ধরনের একাধিক ঘটনা কাগজে প্রকাশিত হয়েছে।
স্বভাবতই অপরাধীর মনে আইনের ভয়, সাজা-শাস্তির ভয় কাজ করে না। বরং অন্যায় ও অপরাধ সংঘটনে তার আগ্রহ বাড়ে। দিনকয়েক আগে একটি খবরে পড়েছিলাম, 'জনৈক ধর্ষক জামিন পেয়ে এলাকায় ফিরে ধর্ষিতাকে পুনরায় ধর্ষণের পর হত্যা করেছে, যাতে তার পক্ষে আইনের সাহায্য নেওয়া সম্ভব না হয়।' তখন আক্ষেপে বলতে হয়- কী আজব এ দেশ! আমরা তাই অবাক হই না কাগজে এমন শিরোনাম দেখে যে 'প্রশাসনের গাফিলতির কারণে নারী নির্যাতন বাড়ছে'।
নারী নির্যাতনের ঘটনা সম্প্রতি এ পর্যায়ে পেঁৗছেছে যে অবিলম্বে এ বিষয়ে সামাজিক ও শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। মনে হচ্ছে, সাধারণ আইনি ব্যবস্থা, প্রচলিত আইন এখন আর এ ব্যাধি নিরাময়ে যথেষ্ট নয়। কারণ এ ব্যাধি সংক্রামক চরিত্র অর্জন করে নিয়েছে। দ্রুত এর বিস্তার ঘটছে। অচিরে তা মহামারির আকার ধারণ করে সামাজিক স্বাস্থ্য ও স্থিতি নষ্ট করতে থাকবে। পরিস্থিতি প্রতিকার-প্রতিরোধের বাইরে চলে যাওয়ার আগেই কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া তাই জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ জন্য দরকার তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা গ্রহণ। যেমন সামাজিক খাতে, তেমনি শাসনযন্ত্রের দিক থেকে। দু-একটি আইন সালিশ কেন্দ্র বা মানবাধিকার কমিশনের সাধ্য কি এই ব্যাপক অপরাধ ও অপরাধপ্রবণতাকে প্রতিহত করে। তাই আইনি ব্যবস্থাকে এ বিষয়ে দ্রুত সংগঠিত করতে হবে। কিন্তু তার আগে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারব্যবস্থার মতো ধর্ষণ ও সংশ্লিষ্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করতে বিশেষ বিচার সংস্থা বা ট্রাইব্যুনাল গঠন করা দরকার, যাতে এ-সংক্রান্ত সুবিচার নিরপেক্ষভাবে দ্রুত সম্পন্ন হয়। প্রচলিত দীর্ঘসূত্রী বিচারব্যবস্থায় এসব অপরাধ ফেলে রাখলে চলবে না। আর তদন্তকারী সংস্থার ওপর নৈতিক চাপ, ন্যায়ভিত্তিক প্রশাসনিক চাপ না থাকলে গোড়াতেই সব কিছু ভেস্তে যাবে।
আমার মনে হয়, এ জন্য বিশেষ আদালতের বিচারব্যবস্থা অতীব জরুরি। এ ব্যবস্থা দ্রুত সম্পন্ন করা সম্ভব। ধর্ষকদের জামিন দেওয়া বা মারাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে, ওপরে উলি্লখিত একটি ঘটনা থেকে তার প্রমাণ মেলে। প্রকৃতপক্ষে এ জাতীয় ঘটনার সংখ্যা যে অনেক, তা অনুমান করা চলে। শুধু জামিন নামঞ্জুরই নয়, এসব বিচার দ্রুত সম্পাদনের ব্যবস্থা রাখা দরকার।
মনে রাখা দরকার, নারী নির্যাতন ও হত্যা জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ ক্ষেত্রে অবহেলা, কালক্ষেপণ, আইনি মারপ্যাঁচের কোনো সুযোগ নেই। শাসনযন্ত্রের পাশাপাশি এ বিষয়ে সামাজিক সচেতনতা খুবই অপরিহার্য। আমার মনে হয়, এ বিষয়ে আইনজীবীদের নৈতিক সচেতনতা বোধহয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যেনতেন প্রকারে ধর্ষককে মামলায় জেতানোর মানসিকতা দূরে রাখা, এ ক্ষেত্রে সমাজসচেতনতার সমান্তরাল। পেশাগত বাধ্যবাধকতা পালন করেও এই মানবিক-নৈতিক সমাজচেতনার প্রকাশ মানুষ হিসেবে আইনজীবীমাত্রের কাছেই আমাদের দাবি। তাঁরা যেন অর্থের কাছে, প্রতাপের চাপে, ক্ষমতার ভয়ের কাছে বিকিয়ে না যান।
এ বিষয়ে সামাজিক সংগঠনগুলোর দায়ও কম নয়। সমাজচেতনা বাড়াতে যেমন সাংস্কৃতিক তৎপরতা জরুরি, তেমনি অপরিহার্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা, যা সামাজিক-রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর অপরিহার্য দায়। দীর্ঘমেয়াদি এসব তৎপরতার পাশাপাশি আমরা সাংসদদের প্রতি আহ্বান জানাব, তাঁরা যাতে দলমত বিভেদ-বিবেচনা আবর্জনার স্তূপে ফেলে রেখে জরুরি ভিত্তিতে নারী নির্যাতন ও হত্যার মতো ব্যাধির প্রতিরোধে অবিলম্বে কঠোর আইন পাসের ব্যবস্থা নেন। সে আইনে এ অপরাধের নিঃসংশয় প্রমাণ সাপেক্ষে মৃত্যুদণ্ডের ব্যবস্থা থাকবে।
কঠোর শাস্তির বিধান এবং তা বাস্তবায়ন ছাড়া নারী নির্যাতন ও হত্যার ভয়ংকর সামাজিক দূষণ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হবে না। আইন প্রণয়ন যেমন জরুরি, তেমনি তার প্রয়োগ নিশ্চিত করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। আর সে প্রয়োগ নিশ্চিত করতে দরকার বিশেষ আদালতের বিচারব্যবস্থা। এ বিষয়ে যেমন পুরুষদের তেমনি নারী সমাজকেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। বাংলাদেশে অনেক নারী সংগঠন রয়েছে। চোখের সামনে নারী নির্যাতন ও বীভৎস হত্যা দেখেও তারা এ বিষয়ে কেন কার্যকর ব্যবস্থা নিতে এগিয়ে আসছে না, তা দুর্বোধ্য।
এ বিষয়ে আন্দোলনের পূর্ব পর্যায় হিসেবে নিয়মতান্ত্রিক ব্যবস্থা গ্রহণেও তাদের উদ্যোগী হতে দেখা যাচ্ছে না। মহিলা সাংসদরাই তো এ বিষয়ে কঠোর আইন প্রণয়নের জন্য সংসদে আলোচনা শুরু করতে পারেন, সুনির্দিষ্ট বিল আনতে পারেন। আমরা আশা করব, বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কাজটি তাঁরা করবেন তাঁদের বোন বা কন্যাপ্রতিমদের সম্মান ও জীবন রক্ষার মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত লেখায় বা বক্তৃতায় একটি বিষয়ে সবার অভিন্ন মত যে 'কঠোর শাস্তি অপরাধ কমাবে' এবং সে জন্য অবিলম্বে তেমন আইন প্রণয়ন করা জরুরি।
লেখক : কবি, গবেষক ও কলাম লেখক
No comments