এপার-ওপার-ভিসার ঝঞ্ঝাট সাফ by অমিত বসু
১৯২৯ সালে ভারতে প্রথম মোটরগাড়ি আসার পর মাত্র চারজন বাঙালি গাড়ি কিনেছিলেন। সেই ভাগ্যবানরা হলেন সি বসাক, হেমেন্দ্র মোহন বসু, স্যার সুরেশ প্রসাদ সর্বাধিকারী ও স্যার নীলরতন সরকার। তাঁদের মধ্যে দুজন বিশেষভাবে পরিচিত।
বাঙালি যাতে কোনো কারণে মাথা গরম না করে সে জন্য 'কুন্তলীন' মাথার তেল আবিষ্কার করেছিলেন হেমেন্দ্র মোহন। সে নামে সাহিত্য পুরস্কারও চালু করেন। ১৯০৩ সালে 'মন্দির' গল্প লিখে পুরস্কারটি প্রথম পান শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। নীলরতন সরকার ছিলেন রবীন্দ্রনাথের চিকিৎসক। গাড়ির সংখ্যা বাড়তে শুরু করায় প্রতিবাদ ওঠে। বলা হয়, গাড়িই বাঙালির সর্বনাশ করবে। বিলাতি কালচারে অভ্যস্ত হয়ে নিজের ঐতিহ্য হারাবে। আপত্তি পাত্তা পায়নি। ঝড়ের গতিতে এসে ঢাকা-কলকাতার রাস্তা ভরিয়েছে। অবস্থা এখন এমন, গাড়ি চলার রাস্তা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। গাড়ি পেয়েও ইংরেজদের অনুসরণ করতে ব্যর্থ বাঙালি। ঢাকা-কলকাতার মধ্যে গাড়ি চলাচল সুগম হয়নি। বাস যায়, মোটরগাড়ি নয়। ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে কিন্তু মোটরগাড়ির অবাধ যাতায়াত। লন্ডন-প্যারিস, বার্লিন-হেলসিংকি, জুরিখ-বার্লিন- মোটরগাড়ি চড়ে নিমেষে উড়ে যাওয়া যায়। বাঙালি পারে না। নিজের দেশে ঘোরাঘুরি করতেও হাজার ঝঞ্ঝাট।
পাশাপাশি দুটি দেশ- বাংলাদেশ-ভারত বিচ্ছিন্ন। বাস, ট্রেন, প্লেন রুট আছে। যাতায়াতে বিস্তর বাধা। ভিসা সহজলভ্য নয়। কাঠখড় পুড়িয়ে ভিসা হাতে পেতে সফরের আনন্দ পুড়ে ছাই। ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাস অত্যন্ত কৃপণ। হাত দিয়ে ভিসা গলে না। ঢাকার এক বন্ধু বিরক্ত হয়ে বলেছিলেন, এবার বেড়াতে গেলে কলকাতা নয়, সিঙ্গাপুর যাব। এত ঝামেলা করে ভিসা পাওয়া পোষায় না। এ রাগ সংগত। কুন্তলীনের মতো আয়ুর্বেদিক তেল মাথায় ঘষেও উষ্মা প্রশমিত হওয়ার নয়।
যাতায়াত না থাকলে, দেখা-সাক্ষাৎ না হলে, চুটিয়ে খাওয়াদাওয়া না চললে বন্ধুত্ব বৃথা। মৈত্রীর বিড়ম্বনা। সেটাই হচ্ছে। রাজনৈতিক, কূটনৈতিক জটিলতায় বন্ধুত্বকে বলি দেওয়া চূড়ান্ত অবিবেচনার কাজ। সন্ত্রাসীরা খুশি। এটাই চেয়েছে তারা। ব্যবধানে তাদের বাড়বাড়ন্ত। বুকভরা অভিমান নিয়ে একে অপরের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে বসে থাকুক। অন্ধকারের কারবারিরা নৈরাজ্য গড়ে তুলুক।
এ বিষয়ে দোষটা বাংলাদেশের চেয়ে ভারতের বেশি। গুলশানে ভারতীয় দূতাবাসে সকাল থেকে সন্ধ্যা ভিসার জন্য তদবির। ভিসা পাওয়াটা বেড়ানোর ভাগ্যে শিকে ছেঁড়ার মতো। ভ্রমণ, শিক্ষা, চিকিৎসা- এ তিনটি ক্ষেত্রে ভিসার চাহিদা বেশি। এটা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অত্যন্ত মানবিক দিক। সেখানে প্রত্যাখ্যান মানে চূড়ান্ত অপমান। সম্পর্কের ভিত নষ্ট। তার পরও কি বলা যায়, দুটি দেশ মানে একই পাখির দুটি ডানা।
দেরিতে হলেও ভারতের টনক নড়েছে। ভিসা ব্যবস্থা সহজ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের নেতৃত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে দীর্ঘ আলোচনার পর নতুন রাস্তায় পা ফেলেছে ভারত। বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গিতে এগোনোর সিদ্ধান্ত। ভিসার ফাঁস আলগা করে বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসার পথ সুগম করা হবে। সাধারণ মানুষ সহজে মিশুক। কূটনীতির পুকুর ছেড়ে মৈত্রীর সাগরে ভাসুক। এই মনোভাব নিয়েই সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচনের চেষ্টা।
মনমোহন সিং বিলম্ব না করেই ঢাকায় পাঠাচ্ছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার সিন্ধেকে। ২৮ জানুয়ারি থেকে তিন দিনের সফরে গুরুত্ব পাবে ভিসা সমস্যার সমাধান। উদারভাবে ভিসা দেওয়া হবে ৬৫ বছরের ঊধর্ে্ব যাঁদের বয়স, তাঁদের। ১২ বছরের কম বয়সীরাও সেই সুযোগ পাবে। শিল্পপতি আর বণিকরা যাতে সহজে যাতায়াত করতে পারেন, লক্ষ্য সেদিকেও। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ যাতে ভিসা পাওয়ার ঝক্কি থেকে মুক্তি পায়, নজর থাকবে সেদিকেও। ভিসা শিথিল হলে নিরাপত্তা, উন্নয়ন দুই ক্ষেত্রেই যৌথ উদ্যোগ ত্বরান্বিত করতে অসুবিধা নেই।
ভাবনার মধ্যে এটাও রয়েছে, ভিসা প্রসেসিংয়ের দায়িত্ব কোনো এজেন্সির হাতে দেওয়া যায় কি না। যাতে দূতাবাসের কাজটা লঘু হয়। ভিসাপ্রার্থীর চাপ সামাল দিতে অনেক সময় তারা নাজেহাল। যথেষ্ট কর্মচারী নেই, সেই অভিযোগও ওঠে। এ থেকে পরিত্রাণের জন্য বিকল্প চিন্তা। আঞ্চলিক ভিসা অফিস খোলার কথাও পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে।
সীমান্ত নিরাপত্তায় যৌথ অভিযানের কথা বলা হচ্ছে অনেক দিন ধরে। কাজটা সেভাবে এগোচ্ছে না। সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। সীমান্ত ডিঙিয়ে অপরাধীরা এক দেশ থেকে অন্য দেশে আশ্রয় নিচ্ছে। তাদের গ্রেপ্তার করেও স্বদেশে ফেরত পাঠানো যাচ্ছে না। বিচারে শাস্তি হওয়ার পরও রেখে দিতে হচ্ছে। প্রত্যর্পণ চুক্তি নেই বলেই অপরাধীরা পার পাচ্ছে। ভারতে অপরাধ করে বাংলাদেশে গিয়ে লুকাচ্ছে। বাংলাদেশের অপরাধীরাও ভারতে আশ্রয় নিচ্ছে।
সিন্ধে জানিয়েছেন, সাধারণ মানুষের যাতায়াত বৃদ্ধি পেলে আশ্রয়কারীদের পথ সংকুচিত হবে। সন্ত্রাসীরা চায় সীমান্তে তাদের স্বর্গরাজ্য গড়ে তুলতে, যাতে মৈত্রীপ্রিয় নাগরিকরা আসতে-যেতে ভয় পান। সেই ইচ্ছায় ছাই ফেলা দরকার। সিন্ধে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরের সঙ্গে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবেন। সম্প্রতি ভারত বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত বন্ধুদেশ হিসেবে কয়েকটি দেশের সঙ্গে ভিসা ব্যবস্থা শিথিলের চুক্তি করেছে। এবার বাংলাদেশের সঙ্গেও সেই চুক্তি হবে।
ফ্লাইট বাড়ানো হচ্ছে। ঢাকা-কলকাতার উড়াল-যাত্রীর সংখ্যা তুলনায় কম। বেসরকারি বিমান সংস্থার সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে যাতায়াত সহজ করার চেষ্টা হচ্ছে, যাতে তারা আরো বিমান চালাতে পারে। টিকিটের দাম কমাতে যেন উদ্যোগী হয়, সেদিকে লক্ষ রাখা হচ্ছে। সড়ক পরিবহনে অসুবিধা নেই। যথেষ্ট বাস আছে। কিন্তু সরকারি বাস সার্ভিস তেমন নেই। ব্রেক করে যেতে হয়। ঢাকা-কলকাতা বাস আরো বাড়ানো হবে। আপাতত দুটি ট্রেন সপ্তাহে দুই দিন যাতায়াত করে। সেটা বাড়িয়ে তিন দিন করার কথা ভাবা হচ্ছে।
তিস্তা চুক্তি হওয়ার আগে ছিটমহল নিয়ে যে সমস্যা আছে, সেটা মিটিয়ে ফেলার উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ পর্যন্ত এ বিষয়ে যতটা অগ্রগতি হয়েছে, তার খতিয়ান পেশ করবেন সিন্ধে। 'রপ্তানির বিনিময়ে আমদানি' নীতিতে আলো জ্বালছে সিনেমা। পহেলা বৈশাখের আগেই ঢাকার সিনেমা কলকাতায়, কলকাতার ছবি ঢাকায় মুক্তি পাবে। এই ইতিবাচক পদক্ষেপে কলকাতায় আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। কলকাতার দর্শক ঢাকার ছবি দেখার জন্য উন্মুখ। ঢাকার টিভি চ্যানেল যাতে কলকাতায় দেখা যায়, সে বিষয়ে উদ্যোগী হবে দিলি্লর তথ্য মন্ত্রণালয়। এটা কার্যকর হলে কলকাতা ঢাকাকে আরো কাছে পাবে।
সিন্ধের ঢাকা সফরের পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদের বাংলাদেশ যাওয়ার কথা। খুরশিদ চাইছেন এই সফরকে আরো অর্থবহ করে তুলতে। সেটা সম্ভব, যদি তিনি ঢাকাকে তিস্তা চুক্তি সম্পর্কে কোনো সদর্থক ইঙ্গিত দিতে পারেন। সালমান সে চেষ্টাই করছেন। যেভাবেই হোক চুক্তির রাস্তার অপ্রত্যাশিত কাঁটাটা উপড়ে ফেলতে হবে।
লেখক : কলকাতার সাংবাদিক
পাশাপাশি দুটি দেশ- বাংলাদেশ-ভারত বিচ্ছিন্ন। বাস, ট্রেন, প্লেন রুট আছে। যাতায়াতে বিস্তর বাধা। ভিসা সহজলভ্য নয়। কাঠখড় পুড়িয়ে ভিসা হাতে পেতে সফরের আনন্দ পুড়ে ছাই। ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাস অত্যন্ত কৃপণ। হাত দিয়ে ভিসা গলে না। ঢাকার এক বন্ধু বিরক্ত হয়ে বলেছিলেন, এবার বেড়াতে গেলে কলকাতা নয়, সিঙ্গাপুর যাব। এত ঝামেলা করে ভিসা পাওয়া পোষায় না। এ রাগ সংগত। কুন্তলীনের মতো আয়ুর্বেদিক তেল মাথায় ঘষেও উষ্মা প্রশমিত হওয়ার নয়।
যাতায়াত না থাকলে, দেখা-সাক্ষাৎ না হলে, চুটিয়ে খাওয়াদাওয়া না চললে বন্ধুত্ব বৃথা। মৈত্রীর বিড়ম্বনা। সেটাই হচ্ছে। রাজনৈতিক, কূটনৈতিক জটিলতায় বন্ধুত্বকে বলি দেওয়া চূড়ান্ত অবিবেচনার কাজ। সন্ত্রাসীরা খুশি। এটাই চেয়েছে তারা। ব্যবধানে তাদের বাড়বাড়ন্ত। বুকভরা অভিমান নিয়ে একে অপরের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে বসে থাকুক। অন্ধকারের কারবারিরা নৈরাজ্য গড়ে তুলুক।
এ বিষয়ে দোষটা বাংলাদেশের চেয়ে ভারতের বেশি। গুলশানে ভারতীয় দূতাবাসে সকাল থেকে সন্ধ্যা ভিসার জন্য তদবির। ভিসা পাওয়াটা বেড়ানোর ভাগ্যে শিকে ছেঁড়ার মতো। ভ্রমণ, শিক্ষা, চিকিৎসা- এ তিনটি ক্ষেত্রে ভিসার চাহিদা বেশি। এটা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অত্যন্ত মানবিক দিক। সেখানে প্রত্যাখ্যান মানে চূড়ান্ত অপমান। সম্পর্কের ভিত নষ্ট। তার পরও কি বলা যায়, দুটি দেশ মানে একই পাখির দুটি ডানা।
দেরিতে হলেও ভারতের টনক নড়েছে। ভিসা ব্যবস্থা সহজ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের নেতৃত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে দীর্ঘ আলোচনার পর নতুন রাস্তায় পা ফেলেছে ভারত। বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গিতে এগোনোর সিদ্ধান্ত। ভিসার ফাঁস আলগা করে বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসার পথ সুগম করা হবে। সাধারণ মানুষ সহজে মিশুক। কূটনীতির পুকুর ছেড়ে মৈত্রীর সাগরে ভাসুক। এই মনোভাব নিয়েই সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচনের চেষ্টা।
মনমোহন সিং বিলম্ব না করেই ঢাকায় পাঠাচ্ছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার সিন্ধেকে। ২৮ জানুয়ারি থেকে তিন দিনের সফরে গুরুত্ব পাবে ভিসা সমস্যার সমাধান। উদারভাবে ভিসা দেওয়া হবে ৬৫ বছরের ঊধর্ে্ব যাঁদের বয়স, তাঁদের। ১২ বছরের কম বয়সীরাও সেই সুযোগ পাবে। শিল্পপতি আর বণিকরা যাতে সহজে যাতায়াত করতে পারেন, লক্ষ্য সেদিকেও। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ যাতে ভিসা পাওয়ার ঝক্কি থেকে মুক্তি পায়, নজর থাকবে সেদিকেও। ভিসা শিথিল হলে নিরাপত্তা, উন্নয়ন দুই ক্ষেত্রেই যৌথ উদ্যোগ ত্বরান্বিত করতে অসুবিধা নেই।
ভাবনার মধ্যে এটাও রয়েছে, ভিসা প্রসেসিংয়ের দায়িত্ব কোনো এজেন্সির হাতে দেওয়া যায় কি না। যাতে দূতাবাসের কাজটা লঘু হয়। ভিসাপ্রার্থীর চাপ সামাল দিতে অনেক সময় তারা নাজেহাল। যথেষ্ট কর্মচারী নেই, সেই অভিযোগও ওঠে। এ থেকে পরিত্রাণের জন্য বিকল্প চিন্তা। আঞ্চলিক ভিসা অফিস খোলার কথাও পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে।
সীমান্ত নিরাপত্তায় যৌথ অভিযানের কথা বলা হচ্ছে অনেক দিন ধরে। কাজটা সেভাবে এগোচ্ছে না। সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। সীমান্ত ডিঙিয়ে অপরাধীরা এক দেশ থেকে অন্য দেশে আশ্রয় নিচ্ছে। তাদের গ্রেপ্তার করেও স্বদেশে ফেরত পাঠানো যাচ্ছে না। বিচারে শাস্তি হওয়ার পরও রেখে দিতে হচ্ছে। প্রত্যর্পণ চুক্তি নেই বলেই অপরাধীরা পার পাচ্ছে। ভারতে অপরাধ করে বাংলাদেশে গিয়ে লুকাচ্ছে। বাংলাদেশের অপরাধীরাও ভারতে আশ্রয় নিচ্ছে।
সিন্ধে জানিয়েছেন, সাধারণ মানুষের যাতায়াত বৃদ্ধি পেলে আশ্রয়কারীদের পথ সংকুচিত হবে। সন্ত্রাসীরা চায় সীমান্তে তাদের স্বর্গরাজ্য গড়ে তুলতে, যাতে মৈত্রীপ্রিয় নাগরিকরা আসতে-যেতে ভয় পান। সেই ইচ্ছায় ছাই ফেলা দরকার। সিন্ধে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরের সঙ্গে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবেন। সম্প্রতি ভারত বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত বন্ধুদেশ হিসেবে কয়েকটি দেশের সঙ্গে ভিসা ব্যবস্থা শিথিলের চুক্তি করেছে। এবার বাংলাদেশের সঙ্গেও সেই চুক্তি হবে।
ফ্লাইট বাড়ানো হচ্ছে। ঢাকা-কলকাতার উড়াল-যাত্রীর সংখ্যা তুলনায় কম। বেসরকারি বিমান সংস্থার সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে যাতায়াত সহজ করার চেষ্টা হচ্ছে, যাতে তারা আরো বিমান চালাতে পারে। টিকিটের দাম কমাতে যেন উদ্যোগী হয়, সেদিকে লক্ষ রাখা হচ্ছে। সড়ক পরিবহনে অসুবিধা নেই। যথেষ্ট বাস আছে। কিন্তু সরকারি বাস সার্ভিস তেমন নেই। ব্রেক করে যেতে হয়। ঢাকা-কলকাতা বাস আরো বাড়ানো হবে। আপাতত দুটি ট্রেন সপ্তাহে দুই দিন যাতায়াত করে। সেটা বাড়িয়ে তিন দিন করার কথা ভাবা হচ্ছে।
তিস্তা চুক্তি হওয়ার আগে ছিটমহল নিয়ে যে সমস্যা আছে, সেটা মিটিয়ে ফেলার উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ পর্যন্ত এ বিষয়ে যতটা অগ্রগতি হয়েছে, তার খতিয়ান পেশ করবেন সিন্ধে। 'রপ্তানির বিনিময়ে আমদানি' নীতিতে আলো জ্বালছে সিনেমা। পহেলা বৈশাখের আগেই ঢাকার সিনেমা কলকাতায়, কলকাতার ছবি ঢাকায় মুক্তি পাবে। এই ইতিবাচক পদক্ষেপে কলকাতায় আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। কলকাতার দর্শক ঢাকার ছবি দেখার জন্য উন্মুখ। ঢাকার টিভি চ্যানেল যাতে কলকাতায় দেখা যায়, সে বিষয়ে উদ্যোগী হবে দিলি্লর তথ্য মন্ত্রণালয়। এটা কার্যকর হলে কলকাতা ঢাকাকে আরো কাছে পাবে।
সিন্ধের ঢাকা সফরের পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদের বাংলাদেশ যাওয়ার কথা। খুরশিদ চাইছেন এই সফরকে আরো অর্থবহ করে তুলতে। সেটা সম্ভব, যদি তিনি ঢাকাকে তিস্তা চুক্তি সম্পর্কে কোনো সদর্থক ইঙ্গিত দিতে পারেন। সালমান সে চেষ্টাই করছেন। যেভাবেই হোক চুক্তির রাস্তার অপ্রত্যাশিত কাঁটাটা উপড়ে ফেলতে হবে।
লেখক : কলকাতার সাংবাদিক
No comments