বাংলাদেশী ইঞ্জিনিয়ার শাহীনের উদ্ভাবন জিপিএস বাংলায় নির্দেশনা দিচ্ছে by এনা

মাতৃভাষায় পথ চলার অপার আনন্দÑ উপহার দেয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে বাংলা কণ্ঠে জিপিএস-এ দিকনির্দেশনা তৈরি করেছেন নিউজার্সি প্রবাসী প্রকৌশলী হাবিব শাহীন তরফদার।
সাবলীল কণ্ঠে প্রমিত বাংলা ছাড়াও সিলেট, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, বরিশাল, পুরান ঢাকা ও পাবনাসহ দশটি ভিন্ন কণ্ঠ যে কেউ সুলভে ডাউনলোড করতে পারবেন জিপিএসবাংলা.কম থেকে এবং ব্যবহার করতে পারবেন জার্মিন জিপিএস-এ। জ্যাকসন হাইটসে ওয়ান ডট নেটের অফিসে গিয়েও এটি ইন্সটল করা যাবে।

বাংলায় জিপিএস-কণ্ঠ তৈরি করতে কিভাবে উদ্বুদ্ধ হলেন জানতে চাইলে এডিপিতে (অটোমেটিক ডাটা প্রসেসিং) বিজনেস ইন্টেলিজেন্স ডিরেক্টর হিসেবে কর্মরত শাহিন তরফদার বার্তা সংস্থা এনাকে বলেন, ‘এ দেশে দিনের একটা বড় সময় আমরা কাটাই গাড়িতে। কাজ, শিশুদের স্কুল, শপিং, উইকএন্ডে লং ড্রাইভÑ সব মিলিয়ে জিপিএস আমাদের নিত্যসঙ্গী। জিপিএসে সেই পথ নির্দেশনা যদি হয় মাতৃভাষায়, তবে অন্য রকম একটা অনুভূতি হবে। সে বোধ থেকেই আমি বছরখানেক আগে এ কাজে মনোনিবেশ করি।’

দুই দশক আগে শাহীন তরফদার উচ্চ শিক্ষার্থে যুক্তরাষ্ট্রে এলেও এখনো নাড়ির টান অনুভব করেন প্রতিটিক্ষণ। ‘জিপিএসে ইংরেজিতে যে কণ্ঠটি আসে সেটি খুবই যান্ত্রিক। আমি চেষ্টা করেছি মানবিকতা যোগ করতে, কেউ পার্সোনালি আমাকে ডিরেকশন দিচ্ছে, সেটি যেন মনে হয়, যতটুকু সম্ভব সে দিকে খেয়াল রেখেছি’Ñ বললেন তিনি। এই কণ্ঠটি শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, কানাডা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়াসহ যেখানেই জার্মিনের সার্ভিস রয়েছে সেখানেই বাংলা কণ্ঠগুলো ব্যবহার করা যাবে।

আদিবাড়ি যশোর শহরে, পড়াশোনা করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছাত্রাবস্থায় আব্দুল্লাহ আল-মামুন, ফেরদৌসি মজুমদারসহ অন্যদের সাথে থিয়েটারের ব্যানারে নিয়মিত নাটক করতেন মহিলা সমিতি মঞ্চে। পরে স্কলারশিপ নিয়ে চলে আসেন যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও অঙ্গরাজ্যে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক ডিগ্রি শেষ করার জন্য। প্রথমে সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ওহাইও এবং ইলিনয়ে কাজ করলেও পরে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে আকৃষ্ট হন এবং প্রফেশন বদলে ফেলেন। এখন আমেরিকার অন্যতম হিউম্যান রিসোর্স কোম্পানি এডিপিতে তিনি বিজনেস ইন্টেলিজেন্স ডিপার্টমেন্টে কাজ করছেন ডিরেক্টর পজিশনে।

তার উদ্ভাবিত জিপিএসে প্রমিত বাংলা নির্দেশনায় কণ্ঠ দিয়েছেন লুৎফুন্নাহার লতা ও শাহিন তরফদার নিজে। পাবনার আঞ্চলিক ভাষায় কণ্ঠ দিয়েছেন অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী, সিলেটি ভাষায় নিউ ইয়র্ক প্রবাসী শিল্পী তাজুল ইমাম, নোয়াখালী ভাষায় অভিনেত্রী তরু মোস্তফা।

পরে বিভিন্ন চরিত্রের ওপর ভিত্তি করে মজাদার ও উপভোগ্য কণ্ঠ তৈরি করে উপহার দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলে তিনি জানালেন।

জিপিএসবাংলাডটকমে গিয়ে যে কেউ ঘরে বসে কিনতে পারবেন এই কণ্ঠগুলো এবং সরাসরি জিপিএসে ইন্সটল করতে পারবেন। তা ছাড়া জ্যাকসন হাইটসের ৭৪ অ্যাভিনিউ ও ৩৭ স্ট্রিটের কর্নারে অবস্থিত ওয়ানডট-নেটের অফিসে গিয়েও এটি ইন্সটল করা যাবে। প্রাথমিকভাবে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৯.৯৫ ইউএস ডলার।

অনেকের কাছ থেকে সাড়া ও প্রশংসা পাচ্ছি। এখানে কর্মজীবনের প্রচুর ব্যস্ততার মধ্যেও ইচ্ছার তাগিদে ও সখের বশে যখনই একটু সময় পেয়েছি, এটার ওপর কাজ করেছি। সময় লেগেছে ছয় মাস। প্রফেশনাল ব্যস্ততার কারণে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে কিছুটা সময় লেগে গেলÑ বললেন শাহিন তরফদার। আশা করি, সবাই আনন্দ পাবেন, প্রবাসের যান্ত্রিক জীবনে এক ঝলক শান্ত বাতাসের মতো অনুভূতি হবে, সেই কামনা করছি।

দূর-বহু দূরের গন্তব্যে যেতে জার্মিন জিপিএস অনেকের কাছে নির্ভরযোগ্য হয়ে উঠেছে। ঠাণ্ডা মাথায় ড্রাইভ করলে পথ হারানোর আশঙ্কা একেবারেই থাকে না। তবে অনেক সময় গাড়ির অন্য প্যাসেঞ্জারের সাথে কথা বলার সময় কিংবা নিচু স্বরে মোহিত হওয়ার মতো সঙ্গীতের মধ্যে ইংরেজির নির্দেশনা বুঝতে অসুবিধা হলেও বাংলা নির্দেশনায় সে আশঙ্কা একেবারেই নেই। চমৎকার একটি আবেদন রয়েছে মনোযোগ আকর্ষণের। জিপিএস এখন বেশির ভাগ ড্রাইভারের অবলম্বনে পরিণত হয়েছে। নতুন প্রজন্মের কাছে এটি আরো বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশী বংশোদ্ভূতদের যদি বাংলা জিপিএসের কাছাকাছি আনা সম্ভব হয় তাহলে তাদের মধ্যে বাংলা ভাষা বিচ্ছুরণের আরেকটি অবলম্বন উদঘাটিত হবেÑ নিঃসন্দেহে এ আশা সুধীজনের।
       

No comments

Powered by Blogger.