বিএনপির বিক্ষোভ- * গাড়ি চাপা পড়ে এক পথচারীর মৃত্যু- * মিছিল করে যাবার সময় রাস্তার পাশের গাড়ি ভাংচুর ও তাণ্ডব- * পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে মানুষের দিশেহারা হয়ে ছোটাছুটি, এ সময় পথচারী গাড়ি চাপা পড়ে
বিএনপির বিৰোভ মিছিলে পুলিশের বাধা ও নেতাকর্মীর সঙ্গে ধাওয়া পাল্টাধাওয়ার ঘটনা এবং হুড়াহুড়ির কারণে গাড়িচাপায় ঢাকায় এক পথচারী নিহত ও সারাদেশে বিএনপির মিছিলে গোলযোগের কারণে মিছিল প- হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
মিছিলে পুলিশের বাধা ও টিয়ার সেল নিৰেপে শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছে বলে দাবি করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরম্নল ইসলাম আলমগীর। একই সঙ্গে পুলিশের বাধা ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদনত্মের দাবি করেছেন তিনি।বৃহস্পতিবার সারাদেশের প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিৰোভ মিছিলের অংশ হিসেবে ঢাকার মুক্তাঙ্গনে বিএনপি সমাবেশ করে। সরকারের কর্মকা-ের বিরম্নদ্ধে সমাবেশ থেকে মাসব্যাপী বিভাগীয় শহরে গণসংযোগ ও ২৩ ফেব্রম্নয়ারি সারাদেশের মহানগর, থানা, উপজেলায় সমাবেশ ও বিৰোভ মিছিল কর্মসূচীর ঘোষণা করে সংসদের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। আগামী মার্চ মাসে পল্টন ময়দানে বিএনপি বিশাল সমাবেশ করবে। ওই সমাবেশ থেকে বিরোধী দলের নেতা বেগম খালেদা জিয়া গণআন্দোলনের ডাক দেবেন বলে মুক্তাঙ্গনের সমাবেশে বিএনপি নেতারা ঘোষণা দেন।
সমাবেশ শেষে বিএনপির মিছিল থেকে ইটপাটকেল নিৰেপ করে যাত্রীবাহী ও রাসত্মার পাশে গ্যারেজে রাখা ৮/৯টি গাড়ি ভাংচুর করা হয়। মিছিলের সামনে থাকা পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টাধাওয়া হয়। ব্যাপক হারে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে মিছিল শেষ হয়। এ সময়ও পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের কথা কাটাকাটি হয়। গাড়ি ভাংচুরের সময় হুড়াহুড়ির ঘটে। এ সময় গাড়ির নিচে একজন চাপা পড়ে। মেডিক্যালে নেয়ার পর চাপাপড়া ব্যক্তিকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। কিন্তু মৃত ব্যক্তির ব্যাপারে বিএনপি নেতারা কিছু বলছেন না। বিএনপির এক নেতা বলেন, একজন মারা গেছে শুনেছি। কিন্তু দলের কিনা এখনও বুঝতে পারছি না। পথচারী, না দলের কর্মী খোঁজখবর নিয়ে পরে জানাবে বলে ওই বিএনপি নেতা জানান। কর্মসূচী ঘোষণার আগে মুক্তাঙ্গনে সমাবেশে বিএনপি নেতারা বলেন, স্বৈরাচারী এ সরকারের কর্মকা-ের বিরম্নদ্ধে গণআন্দোলনের কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে। এ আন্দোলনে শরিক হওয়ার জন্য জাতীয়তাবাদী দল, মত ও সকল গোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান বিএনপি নেতারা।
বৃহস্পতিবার সারাদেশে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিৰোভ মিছিল কর্মসূচীর অংশ হিসেবে রাজধানী ঢাকার মুক্তাঙ্গনে প্রতিবাদ সমাবেশ করে ঢাকা মহানগর বিএনপি। প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরম্নল ইসলাম আলমগীর এ কর্মসূচী ঘোষণা করেন। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মহানগর বিএনপি নেতা ও ঢাকার মেয়র সাদেক হোসেন খোকা। বক্তব্য রাখেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান বেগম সেলিমা রহমান, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব আমানউলস্নাহ আমান ও বিরোধী দলের চীফ হুইপ জয়নুল আবদীন ফারম্নক । এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মইন খান, নজরম্নল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব বরকত উলস্নাহ বুলু, খায়রম্নল কবির খোকন, হাবিব-উন নবী খান সোহেল, মহিলা দলের নেতা শিরিন সুলতানা এবং সাবেক এমপি মশিউর রহমান।
উলেস্নখ্য, মুক্তাঙ্গনের সমাবেশ শেষে বিৰোভ মিছিল বের হয়ে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়। মুক্তাঙ্গন থেকে পল্টন মোড় হয়ে বিজয়নগর পর্যনত্ম পৌঁছলে মিছিলের কর্মীরা রাসত্মার পাশে গ্যারেজে রাখা কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করে। মিছিলের সামনে থাকা পুলিশ বাধা দিলে আরও ৰিপ্ত হয়ে রাসত্মার পূর্বে যাত্রীবাহী গাড়িতে ইটপাটকেল নিৰেপ করে কর্মীরা। প্রায় ৮/৯টি গাড়ির কাচ ভেঙ্গে দেয় বিৰুব্ধ কর্মীরা। একটি চলনত্ম গাড়িতে আগুন লাগানোর চেষ্টা করলে পুলিশের হসত্মৰেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। গাড়ি ভাংচুরের ঘটনার সময় আশপাশের দোকানপাট বন্ধ করে দেয় দোকানিরা। পথচারীরা দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করে। পরে মিছিলটি নয়া পল্টনের বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়। বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে মুক্তাঙ্গনে বিএনপির প্রতিবাদ সমাবেশ শুরম্ন হয়। পুলিশের নিরাপত্তার মধ্য দিয়েই সমাবেশ শেষ হয়। মহানগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানা থেকে ব্যানার নিয়ে দলের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগ দেয়। মুক্তাঙ্গনে সমাবেশ করার সময় পল্টন মোড়, বিজয়নগর, জিরো পয়েন্ট এলাকায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। ঢাকার মেয়র সাদেক হোসেন খোকার সভাপতিত্বে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, স্বৈরাচারী এ সরকারের ওপর থেকে দেশের মানুষ আস্থা ফিরিয়ে নিয়েছে। সরকার সর্বত্র ব্যর্থ হয়ে এখন জোর করে ৰমতায় থাকার জন্য শহীদ জিয়ার নাম মুছে ফেলার পাশাপাশি বেগম জিয়া ও তারেকের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। অথচ গত চৌদ্দ মাসে সরকার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। ঘরে ঘরে চাকরি দেয়ার কথা বললেও কাউকে একটি চাকরি পর্যনত্ম দিতে পারেনি আওয়ামী লীগ সরকার। দেশে কোন বিনিয়োগ নেই। শুধু তাই নয়, বিদেশ থেকে শ্রমিকরা চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরছে। নির্বাচনী ইশতেহার পূরণে ব্যর্থ হয়ে বিদেশের কাছে যেসব ওয়াদা করেছে তা পূরণের জন্য ব্যসত্ম হয়ে পড়েছে সরকার। বিএনপিকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। এ সরকারের বিরম্নদ্ধে আন্দোলন ছাড়া বিকল্প কোন পথ নেই। জিয়া আনত্মর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে জিয়ার নাম মুছে ফেলা, খালেদা জিয়ার প্রাণনাশের চেষ্টা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি, দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা-হামলার প্রতিবাদে দলীয় চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া সরকারের বিরম্নদ্ধে গণআন্দোলনের কর্মসূচী দেবেন।
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেন, আমরা এ সরকারকে এক বছর সময় দিয়েছি। দেশে মানুষের জীবনের কোন নিরাপত্তা নেই। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি। এ অবস্থায় দেশের মানুষ কঠোর কর্মসূচী চায়। আমরা বলেছি ধৈর্য ধরম্নন। তিনি বলেন, জিয়ার নাম যতই মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র করা হোক, মানুষের হৃদয় থেকে মুছে ফেলা যাবে না। মহাজোট সরকারের এহেন কর্মকা-ের প্রতিবাদে সারাদেশের সচেতন মানুষদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণআন্দোলনে শরিক হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
সন্ধ্যায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরম্নল ইসলাম আলমগীর বলেন, মুক্তাঙ্গনে সমাবেশ শেষে আমাদের দলের মিছিলটি দলীয় কার্যালয়ের সামনে আসার পথে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় কয়েকটি গাড়ি ভাংচুরের ঘটে। কিন্তু পুলিশ লাঠিচার্জ করে শতাধিক নেতাকর্মীকে আহত করেছে। আমাদের দলের কয়েকজনকে আটকও করেছে পুলিশ। লাঠিচার্জের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে বিচার বিভাগীয় তদনত্মের দাবি করেন তিনি।
না'গঞ্জে পুলিশের সঙ্গে হাতাহাতি
নারায়ণগঞ্জ থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে জেলা বিএনপি শহরে বিােভ মিছিল বের করলে বাধা দেয় পুলিশ। এ সময় নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের বাগবিত-া ও ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে নেতাকর্মীদের মাঝে। বৃহস্পতিবার বিকেলে বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন স্থাপনা থেকে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নাম মুছে ফেলার প্রতিবাদে জেলা বিএনপি মিছিল বের করে।
বিকেলে শহরের জেলা বিএনপি কাযর্ালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকে বিএনপির নেতাকমর্ীরা। বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-আইন সম্পাদক ও জেলা কমিটির সভাপতি এ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশ বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী মনিরম্নজ্জামান, সহ-সভাপতি বদরম্নজ্জামান খান খসরম্ন, জেলা বিএনপি নেতা জান্নাতুল ফেরদৌস, সুরম্নজ্জামান, হাজী নুরম্নদ্দিন ও মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ।
রাজশাহীতে সমাবেশ
রাজশাহী থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, সন্ধ্যায় মহানগর বিএনপি প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে বৃহস্পতিবার বিএনপির সমাবেশে যুবদল নেতা মাহফুজুল হাসনাইন হিকোল বক্তব্য রাখেন। এ সময় সমাবেশের প্রায় দু'শ' গজ দূরে মিতা স্টুডিওর সামনে কে বা কারা একটি ককটেলসদৃশ বস্তু ফেলে। কিন্তু সেটি পিচঢালা রাসত্মায় পড়লেও বিস্ফোরিত হয়নি। এ সময় পথচারী ও বিএনপি নেতাকর্মীরা আতঙ্কে ছোটাছুটি শুরম্ন করে। তাৎণিকভাবে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে বস্তুটি উদ্ধার করে। এ ঘটনার পর বিএনপি নগরীতে বিােভ মিছিল বের করে। মিছিল শেষে সোনাদীঘির মোড়ে আয়োজিত সংপ্তি পথসভায় বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব ও রাজশাহী মহানগর সভাপতি মিজানুর রহমান মিনু, বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম দুলাল, আজিজুর রহমান, মশিউর রহমান চৌধুরী বাবু, এলাহী বক্স মণ্ডল, মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, আসলাম সরকার ও আবুল কালাম আজাদ সুইট বক্তব্য রাখেন।
চাঁপাইয়ে মিছিল প-
চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিএনপির বিােভ মিছিল প- হয়ে যায় প্রতিপরে বাধা ও হামলার মুখে। এ সময় আহত হয় কমপ ে১০ জন।
আহতদের মধ্যে গুরম্নতর অবস্থায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ঘাতক দালাল নিমর্ূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক রফিক হাসান বাবলুকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পুলিশ ও প্রত্যদর্শীরা জানায়, কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক এমপি হারম্ননুর রশিদের নেতৃত্বে একটি বিােভ মিছিল শহরের গাবতলা মোড়ে পেঁৗছলে প্রতিপরা ইট, ধারালো অস্ত্র, লাঠি নিয়ে হামলা চালায়। এ সময় মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
এছাড়া যশোর, সুনামগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে বিএনপি বৃহস্পতিবার বিৰোভ মিছিল কর্মসূচী পালন করে।
No comments