‘বেগুনবাড়ী : জীবন, শিল্প, প্রক্রিয়া’ ভিন্ন আঙ্গিকের শিল্পকর্ম- সংস্কৃতি সংবাদ

রাজধানীর তেজগাঁও শিল্প এলাকার অন্তর্ভুক্ত একটি স্থান বেগুনবাড়ী। সময়ের বহমানতায় বর্তমানে ব্যাপক রূপান্তরিত হয়েছে এই স্থানটি। শিল্প এলাকা হিসেবে বেগুনবাড়ীর রয়েছে বিশেষ ঐতিহ্য। পাকিস্তান আমলে এই এলাকা ঢাকার প্রধান শিল্প এলাকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ আমলেও সেটা বহাল থাকে।


ব্যাপক অর্থে শিল্প এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত জীবনচর্চা গড়ে উঠেছে বেগুনবাড়ীতে। এ ঐতিহ্যে এখন আবার বইতে শুরু করেছে নতুন হাওয়া। উন্নয়নমূলক কর্মকা-ের অংশ নতুন করে গড়ে উঠছে হাতিরঝিল প্রকল্প। চলমান প্রক্রিয়াতেই এ এলাকার অধিবাসীরা নানাভাবে শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আর শিল্পের চলমানতার পরিবর্তন স্বাভাবিকভাবেই স্পর্শ করে তাদের জীবনকে। আর এই এলাকা এবং এর অধিবাসীদের পরিবর্তনশীলতার পটভূমিকে শিল্পিত রূপে উপস্থাপন করেছেন চার শিল্পী। ভিন্ন আঙ্গিকে শিল্পের স্বরূপ সন্ধানকারী এই চার শিল্পীর শিল্প রচনায় আশ্রয় নেন ভাস্কর্য মাধ্যমের। এই চার শিল্পী হলেন ভাস্কর লালা রুখ সেলিম, তৌফিকুর রহমান, নাসিমা হক মিতু ও নাসিমুল খবির।
এ চার শিল্পীর শিল্প নির্মাণের প্রক্রিয়াটিও ব্যতিক্রমী। বেগুনবাড়ী এলাকার পরিবেশের সঙ্গে সমন্বয় করেই গড়েছেন শিল্পকর্ম। ওই এলাকার সানোয়ার ট্রেডার্স নামের একটি স’ মিলের অভ্যন্তরে সেখানকার পরিবেশের মধ্যেই নানা উপকরণের মিশেল দিয়ে উপস্থাপন করেছেন তাদের স্থাপনাশিল্প। ছয়টি স্থাপনাশিল্প নিয়ে করা এ প্রদর্শনীর শিরোনাম ছিল ‘বেগুনবাড়ী : জীবন, শিল্প, প্রক্রিয়া’। রবিবার কোন আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই বিকেল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।
এক দিনের এ প্রদর্শনীটি শিল্পপ্রেমীদের কাছে পৌঁছে দিয়েছে নূতনের বারতা। শিল্পীদের নিপুণতায় কাঠ চেরাইয়ের একটি স’ যেন পরিণত হয়েছিল গ্যালারিতে। স’ মিলে স্তূপ করে রাখা কাঠের গুঁড়িগুলোয় নানা উপকরণ জুড়ে দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে শিল্পের আঙ্গিক। ভাইসেল স’ নামে কাঠ চেরাইয়ে একটি যন্ত্রের চারপাশে বিছিয়ে দেয়া হয়েছে কলমি শাক। আর ওপর থেকে ক্রমাগতভাবে নেমে আসছে কাছ চেরাইয়ের ধারালো পুরু ব্লেড। তার পাশে কয়েকটি কাঠের গুঁড়িতে লম্বা সারি করে সাজিয়ে দেয়া হয়েছে লাল শাক। শিল্পকর্মটি সম্পর্কে এর নির্মাতা তৌফিকুর রহমান জানালেন, মূলত শিল্পায়নের ফলে সমান্তরাল ভূমি নষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়েছে এই শিল্পকর্মে। আরেকটি স্থাপনাশিল্পে দেখা গেল ওপর থেকে ধাপে ধাপে নেমে আসা কাঠের গুঁড়িতে বিছিয়ে দেয়া হয়েছে লাল কাপড়। অনেকটা যেন পাহাড় বেয়ে নেমে আসা জলের ধারা। এই শিল্পকর্মটি সম্পর্কে এর স্রষ্টা লালা রুখ সেলিম জানালেন, পুরনো এই শিল্প এলাকাটিতে ক্রমাগত পরিবর্তন ঘটছে। ঘটছে রূপান্তর। আর এই পরির্তন ও রূপান্তরকেই এভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। শিল্পী নাসিমা হক মিতু বালিশকে ভিন্ন আকৃতিতে স্তনের বৃন্তের রূপ দিয়ে লম্বা লম্বা কাঠের গুঁড়িয়ে ওপর উপস্থাপন করেছেন। তিনি এই শিল্পকর্মের নাম দিয়েছেন মৃত বৃক্ষ ও আদি মাতা। আর নাসিমুল খবির ফেলে রাখা কাঠের গুঁড়ির ওপর তারের সাহায্যে ভাসিয়ে দিয়েছেন আরো কিছু গুঁড়ি। সে সবের মধ্যে আবার কয়েকটি মুড়ে দেয়া হয়েছে খবরের কাগজ দিয়ে। এই শিল্পকর্মটি সম্পর্কে শিল্পী জানান, এখানে কাঠ হচ্ছে ভারি বস্তু আর কাগজ হচ্ছে হাল্কা। এই তেজগাঁও শিল্প এলাকাটি যে ভারি শিল্প থেকে হাল্কা শিল্পের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, সে বার্তাই দেয়ার চেষ্টা করেছি এখানে।
রাজবাড়ীতে চারদিনের
আর্ট ক্যাম্প
শিল্পচর্চা ও প্রদর্শনীর জন্য ঢাকার বাইরেও এখন গড়ে উঠছে আর্ট গ্যালারি। রাজবাড়ী জেলার স্বর্ণ শিমুলতলা রাইনগরে বড় একটি এলাকা নিয়ে গড়ে উঠেছে শিল্পীদের আবাসন কেন্দ্রসহ আর্ট গ্যালারি বুনন আর্ট স্পেস। এই গ্যালারির সৌজন্যে আজ সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে চারদিনের আর্ট ক্যাম্প। এই আর্ট ক্যাম্পের পাশাপাশি আজ বিকেলে অনুষ্ঠিত হবে শিশু চিত্রকলা প্রতিযোগিতা।
চারদিনের আর্ট ক্যাম্পের উদ্বোধন করবেন বেঙ্গল গ্যালারি অব ফাইন আর্টসের পরিচালক সুবীর চৌধুরী। আর আর্ট ক্যাম্প পরিচালনা করবেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের অধ্যাপক চিত্রশিল্পী মনসুর উল করিম। ক্যাম্পে অংশগ্রহণকারী শিল্পীরা হলেন সামিনা নাফিজ, আফরোজা খন্দকার বিউটি, আফজালুর রহিম, আনিসুজ্জামান মামুন, আমেনা আক্তার আঁখি, আরাফাত করিম, মুশারফ হোসেন, মেহেদী নূর আক্তার স্মৃতি, মামুর হোসেন মাহ্্তাব, হায়দারী আন্দা লুসিয়া, শামীম সুব্রানা ও সাদিয়া শামীম মনসুর। চারদিনের আর্ট ক্যাম্প শেষ ৩০ আগস্ট সকালে। ওই দিন বিকেলে ক্যাম্পে চিত্রিত ছবি দিয়ে অনুষ্ঠিত হবে চিত্রকলা প্রদর্শনী।

No comments

Powered by Blogger.