চট্টগ্রামে ১৩২০ মে.ও. বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে শীঘ্রই সমঝোতা চুক্তি- সেপ্টেম্বরের প্রথমার্ধেই মালয়েশিয়া যাচ্ছে প্রতিনিধি দল by রশিদ মামুন

মালয়েশিয়ার জাতীয় কোম্পানি তেনেগা ন্যাশনাল বারহেডের সঙ্গে চট্টগ্রামে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের বিষয়টি চূড়ান্ত হচ্ছে। বিদ্যুত কেন্দ্রটির জন্য সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) চূড়ান্ত করতে আগামী মাসের প্রথমার্ধে বিদ্যুত বিভাগের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল মালয়েশিয়া যাচ্ছে।


মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এখন অনেকটা নিশ্চিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত প্রকল্পটি মালয়েশিয়ার বারহেড ও পিডিবির সমন্বয়ে গঠিত যৌথ মূলধনী কোম্পানি নির্মাণ করবে।
বিদ্যুত মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে চীন, থাইল্যান্ড এবং মালয়েশিয়ার সঙ্গে আলোচনার পর তেনেগা ন্যাশনাল বারহেডের প্রস্তাবকে গ্রহণযোগ্য বলে মনে করা হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে পিডিবির সঙ্গে যৌথ মূলধনী কোম্পানি গঠন এবং প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রের মাধ্যমে বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে আগ্রহী প্রতিষ্ঠান খোঁজা হচ্ছিল। তেনেগা বারহেড সরকারের ওই শর্তে রাজি হওয়ায় তাদের সহায়তা গ্রহণ করা হচ্ছে।
পিডিবি সূত্র জানায়, বাগেরহাটে ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে সরকার অনেকদূর অগ্রসর হলেও চট্টগ্রামের বিদ্যুত কেন্দ্রর জন্য আগ্রহী প্রতিষ্ঠান খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। বৃহৎ কেন্দ্রটি নির্মাণে চীনের সঙ্গে গত বছর আলোচনা ফলপ্রসূ না হওয়ায় বিকল্প অর্থায়নের চেষ্টা করা হয়। মালয়েশিয়া বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণের আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেয়াতে সরকার তাদের সহায়তা গ্রহণের বিষয়টি চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে। অবশ্য এই প্রকল্পে থাইল্যান্ড বিনিয়োগ করতে চাইলেও তাদের কঠিন শর্তের কারণে সহায়তা গ্রহণ সম্ভব হয়নি।
বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, গত ডিসেম্বরে মালয়েশিয়ার সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের উদ্যোগ নেয়া হয়, যা এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। প্রথম পর্যায়ে বিদ্যুত খাতে সহায়তার জন্য বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া সরকারী পর্যায়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হবে। পরবর্তীতে এই সমঝোতার আলোকে পিডিবি তেনেগা বারহেডের সঙ্গে যৌথ মূলধনী কোম্পানি গঠন চুক্তি করবে। যৌথ মূলধনী কোম্পানি গঠনের পর ওই কোম্পানিটি বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেবে।
পিডিবি কর্মকর্তারা বলছেন, ভারতের জাতীয় প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কোম্পানির (এনটিপিসি) সঙ্গে যেভাবে বাগেরহাটে ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে একইভাবে তেনেগার সঙ্গে কাজ করা হবে। অর্থাৎ এখানে পিডিবি এবং বারহেডের সমান অংশীদারিত্ব থাকবে। কোম্পানির বোর্ডেও সমান সদস্য থাকবে। কোম্পানির চেয়ারম্যান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পর্যায়ক্রমে পিডিবি এবং বারহেডের কর্মকর্তারা পালন করবে। কোম্পানির বোর্ডে বিদ্যুত বিভাগের কর্মকর্তা থাকবেন।
বিদ্যুত বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মোফাজ্জেল হোসেনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল আগামী মাসে মালয়েশিয়া যাচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েক দফা আলোচনা করে সমঝোতা স্মারকটি চূড়ান্ত করা হয়েছে।
বিদ্যুত বিভাগ মালয়েশিয়ার সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করার জন্য ইতোপূর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে যে চিঠি পাঠিয়েছে তাতে দেখা যায়, দুই দেশের সরকারের মধ্যে যে সমঝোতা স্মারক হবে তার আলোকে বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এবং তেনেগা ন্যাশনাল বারহেড কাজ করবে।
গত বছর ১৭ অক্টোবর মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার চট্টগ্রামে ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের জন্য উভয় দেশের মধ্যে একটি এমওইউ স্বাক্ষরের প্রস্তাব দেয়। এর আগে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত বাংলাদেশ সফর করে বিদ্যুত-জ্বালানিসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেন।
মালয়েশিয়া বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের জন্য একটি সমঝোতা স্মারকের খসড়া বিদ্যুত মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। তাতে তেনেগা বিল্ট অন অপারেট (বিওওটি) সিস্টেমে বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, চট্টগ্রামের আনোয়ারা অথবা কক্সবাজারের মহেশখালীতে বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হবে। পিডিবি আনোয়ারা ও মহেশখালীর দু’জায়গাতে কেন্দ্রের জন্য জমি অধিগ্রহণ করছে। তবে সূত্র বলছে, মহেশখালী দ্বীপে ৫০ হাজার টনের কয়লাবাহী জাহাজ প্রবেশ করার মতো গভীরতা থাকায় সেখানেই বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হতে পারে।
উল্লেখ্য, ভারতের ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার লিমিটেডের (এনটিপিসি) সঙ্গে বাগেরহাটের ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্রর সমঝোতা স্মারক যৌথ কোম্পানি গঠনে চুক্তি হয়েছে। কিন্তু এখনও কোম্পানিটির বোর্ড গঠন করা হয়নি।
সরকারের ২০১৫ সালের মধ্যে বিদ্যুত উৎপাদনের যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সেখানে খুলনা এবং চট্টগ্রামে পৃথক দুটি ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র রয়েছে। তবে এই সময়ের মধ্যে বিদ্যুত কেন্দ্র দুটি উৎপাদনে আসা প্রায় অসম্ভব। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জনায়, এত বড় প্রকল্পে বিনিয়োগে দাতারা আগ্রহী না হওয়ায় প্রকল্প দুটি পিছিয়ে যাচ্ছে। তেনেগা এগিয়ে আসায় এখন অর্থায়নে সমস্যা হবে না বলে মনে করা হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.