তাইওয়ানের মুসলমানদের হালচাল by জহির উদ্দিন বাবর
তাইওয়ান পূর্ব এশিয়ার পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় একটি দ্বীপ, যা চীনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। দেশটি অর্থনৈতিকভাবে বেশ সমৃদ্ধ। তাইওয়ানে সরকার স্বীকৃত ধর্ম ১৩টি। এর মধ্যে বৌদ্ধ, তাঈ, রোমান, ক্যাথলিক, প্রোটেস্ট্যান্ট, ইসলাম, লি-ইজম, বাহাই ও থেনকিকিও উল্লেখযোগ্য। তবে অর্ধেক জনগোষ্ঠী বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী।
তাইওয়ানে মুসলমানদের উপস্থিতি খুব পুরনো নয়। সপ্তদশ শতাব্দীতে মুসলমানরা সর্বপ্রথম তাইওয়ানে বসতি স্থাপন করে। তাইওয়ানে ইসলামের আগমন ঘটে মূলত চীন থেকে। ১৯৪৯ সালের দিকে তাইওয়ান মেইনল্যান্ড চীন থেকে কয়েক হাজার মুসলমান এখানে এসে বসবাস শুরু করে। ১৯৮০ সালের দিকে মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড থেকে উন্নত জীবনের প্রত্যাশায় বিপুলসংখ্যক মুসলমান তাইওয়ানে পাড়ি জমায়। বর্তমানে তাইওয়ানে প্রায় ৬০ হাজার মুসলমান বাস করেছে, যা মোট জনসংখ্যার ০.২ শতাংশ। এ ছাড়া ৮৮ হাজার ৫০০ ইন্দোনেশীয় মুসলমান তাইওয়ানে কর্মরত রয়েছেন। সব মিলে তাইওয়ানে মুসলমানের সংখ্যা লক্ষাধিক। স্থানীয় মুসলমানদের বেশিরভাগ সামরিক বাহিনীতে এবং সরকারি চাকরি করছেন। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে যারা এখানে এসেছেন তাদের বেশিরভাগই এখানকার ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পের সঙ্গে জড়িত। বর্তমানে তাইওয়ানের অধিকাংশ মুসলমান নতুন ধর্মান্তরিত। ইসলাম গ্রহণকারীদের মধ্যে মহিলাদের সংখ্যা অধিক।
তাইওয়ানের মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষার হার বেশি। তবে মুসলিম সমাজে আলেমের সংখ্যা একেবারে নগণ্য। উচ্চ পর্যায়ের মাদ্রাসা না থাকায় পর্যাপ্ত আলেম তৈরি হচ্ছে না। ইসলামী সংস্থাগুলোর সহযোগিতায় প্রতি বছর শতাধিক শিক্ষার্থীকে বাইরে পাঠানো হয়, যারা সংশিল্গষ্ট বিষয়ে ডিগ্রি নিয়ে আরবি ও ইংরেজি ভাষায় দক্ষ হয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ কূটনৈতিক অঙ্গনে দায়িত্ব পালনের সুযোগ লাভ করেন। চীনা মুসলিম অ্যাসোসিয়েশন তাইওয়ানের সবচেয়ে বড় মুসলিম সংগঠন। স্থানীয় মুসলমানদের মধ্যে তাদের নানা কাজ চালু আছে। দ্বীনি শিক্ষার স্বতন্ত্র কোনো প্রতিষ্ঠান তাইওয়ানে নেই। তবে তাদের শিশুরা রোববার ভোরে মক্তবে দ্বীনি শিক্ষা গ্রহণ করে। কোরআন শিক্ষার মাধ্যমে তাদের বিভিন্ন দ্বীনি জ্ঞান শিক্ষা দেওয়া হয়। চীনা মুসলিম অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে সাধারণ মুসলমানদের দ্বীনি শিক্ষার বিষয়টি দেখা হয়। ইসলাম সম্পর্কে জানার জন্য দুই মাস অন্তর অন্তর একটি পত্রিকাও বের হয়। তাইওয়ানে ধর্মকর্ম পালনের ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো বাধানিষেধ নেই। গত কয়েক বছর ধরে তাইওয়ান সরকার প্রতিবছর একটি হজ-কাফেলা পাঠায়।
পুরো তাইওয়ানে মসজিদ আছে ৬টি, গণপাঠাগার ৪টি এবং প্রকাশনা সংস্থা রয়েছে একটি। তাইপে গ্র্যান্ড মসজিদটি তাইওয়ানের সবচেয়ে বড় মসজিদ। এ মসজিদে বছরে প্রায় ১০০ জন ইসলাম গ্রহণ করেন। মসজিদটি তাইওয়ানের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থাপনাও। আরবি ও পারস্য স্থাপত্যশৈলীর সংমিশ্রণে তৈরি এ মসজিদে এক হাজার মুসলিল্গ একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। তবে তাইওয়ানে প্রয়োজনের তুলনায় মসজিদ কম থাকায় জুমার নামাজ আদায় করতে সমস্যা হয়। এ ছাড়া হালাল খাদ্য সবখানে বিক্রি না করার কারণে দৈনন্দিন জীবনে মুসলমানদের বিপাকে পড়তে হয়। মূলত যেসব দেশে মুসলমানরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হিসেবে বাস করছেন তাদের নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়। এসব প্রতিকূলতা সত্ত্বেও ইসলামের ওপর অটল থাকা এবং বিশ্বাসের ভিত শক্তিশালী রাখা অনেক বড় কৃতিত্ব।
zahirbabor@yahoo.com
তাইওয়ানের মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষার হার বেশি। তবে মুসলিম সমাজে আলেমের সংখ্যা একেবারে নগণ্য। উচ্চ পর্যায়ের মাদ্রাসা না থাকায় পর্যাপ্ত আলেম তৈরি হচ্ছে না। ইসলামী সংস্থাগুলোর সহযোগিতায় প্রতি বছর শতাধিক শিক্ষার্থীকে বাইরে পাঠানো হয়, যারা সংশিল্গষ্ট বিষয়ে ডিগ্রি নিয়ে আরবি ও ইংরেজি ভাষায় দক্ষ হয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ কূটনৈতিক অঙ্গনে দায়িত্ব পালনের সুযোগ লাভ করেন। চীনা মুসলিম অ্যাসোসিয়েশন তাইওয়ানের সবচেয়ে বড় মুসলিম সংগঠন। স্থানীয় মুসলমানদের মধ্যে তাদের নানা কাজ চালু আছে। দ্বীনি শিক্ষার স্বতন্ত্র কোনো প্রতিষ্ঠান তাইওয়ানে নেই। তবে তাদের শিশুরা রোববার ভোরে মক্তবে দ্বীনি শিক্ষা গ্রহণ করে। কোরআন শিক্ষার মাধ্যমে তাদের বিভিন্ন দ্বীনি জ্ঞান শিক্ষা দেওয়া হয়। চীনা মুসলিম অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে সাধারণ মুসলমানদের দ্বীনি শিক্ষার বিষয়টি দেখা হয়। ইসলাম সম্পর্কে জানার জন্য দুই মাস অন্তর অন্তর একটি পত্রিকাও বের হয়। তাইওয়ানে ধর্মকর্ম পালনের ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো বাধানিষেধ নেই। গত কয়েক বছর ধরে তাইওয়ান সরকার প্রতিবছর একটি হজ-কাফেলা পাঠায়।
পুরো তাইওয়ানে মসজিদ আছে ৬টি, গণপাঠাগার ৪টি এবং প্রকাশনা সংস্থা রয়েছে একটি। তাইপে গ্র্যান্ড মসজিদটি তাইওয়ানের সবচেয়ে বড় মসজিদ। এ মসজিদে বছরে প্রায় ১০০ জন ইসলাম গ্রহণ করেন। মসজিদটি তাইওয়ানের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থাপনাও। আরবি ও পারস্য স্থাপত্যশৈলীর সংমিশ্রণে তৈরি এ মসজিদে এক হাজার মুসলিল্গ একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। তবে তাইওয়ানে প্রয়োজনের তুলনায় মসজিদ কম থাকায় জুমার নামাজ আদায় করতে সমস্যা হয়। এ ছাড়া হালাল খাদ্য সবখানে বিক্রি না করার কারণে দৈনন্দিন জীবনে মুসলমানদের বিপাকে পড়তে হয়। মূলত যেসব দেশে মুসলমানরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হিসেবে বাস করছেন তাদের নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়। এসব প্রতিকূলতা সত্ত্বেও ইসলামের ওপর অটল থাকা এবং বিশ্বাসের ভিত শক্তিশালী রাখা অনেক বড় কৃতিত্ব।
zahirbabor@yahoo.com
No comments