অভিমত ভিন্নমত

পরিবর্তন কতটুকু হলো? জনগণ একটা পরিবর্তন সত্যি চেয়েছিল। কারণ, তাদের পিঠ ঠেকে গিয়েছিল দেয়ালে। মানুষের এই প্রত্যাশাকে সম্মান জানিয়ে বা পুঁজি করে যাঁরা পরিবর্তনের সুর বাজালেন, তাঁদের বাঁশির পেছনে ইঁদুরের পালের মতো লাইন ধরল জনসাধারণ। কিন্তু বিনিময়ে কী পেল তারা?


প্রায় ১৭ মাস পেরিয়ে গেল, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম সিংহ ভাগ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আসেনি, আসবে বলে আভাসও নেই। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দ্রব্যমূল্য আকাশচুম্বী হয়েছিল, সেখান থেকে কিছুটা কমিয়ে এনে বর্তমান সরকারের মন্ত্রীরা তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছেন। গত বছর কৃষকেরা বোরো ধানের ন্যায্য দাম পাননি। এবার দেখা যাক কী হয়।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ভীষণ অবনতি ঘটেছে। মানুষের জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। এমন কোনো দিন নেই, মানুষ খুন হচ্ছে না। স্বয়ং পুলিশ কর্মকর্তা নিজেকে রক্ষা করতে পারছেন না। কোলের শিশুটিও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। ছিনতাই-ডাকাতি নিত্যদিনের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারি দলের লোকদের টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সীমা ছাড়িয়ে গেছে। ছাত্রলীগের অস্ত্রবাজি আর রামদা দিয়ে মানুষ কোপানোর দৃশ্য দেখে পুরো জাতি শিউরে ওঠে। গ্যাস নেই, পানি নেই; মানুষের প্রাণ যায় যায় অবস্থা। বিদ্যুৎ তো এখন আর যায় না, কেবল মাঝেমধ্যে আসে!
এ কথা ঠিক, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের অপশাসনে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল এবং সেই দিনগুলোতে দেশবাসী আর ফিরে যেতে চায় না। সে জন্যই তাঁরা পরিবর্তন চেয়েছিল, দিনবদলের স্বপ্ন দেখেছিল। কিন্তু আজ সে স্বপ্ন ফিকে হতে চলেছে। মানুষ বিএনপির কাছে লাথি খেয়ে আওয়ামী লীগের কাছে আশ্রয় নেয়, আওয়ামী লীগের কাছে লাথি খেয়ে বিএনপির কোলে আশ্রয় নেয়। এভাবে লাথি, পাল্টা লাথি খেতে খেতে বাংলাদেশের কৃষক-শ্রমিক মেহনতি মানুষ কেঁচোর মতো সরু হয়ে গেছে।
আইন সংশোধন করে দুর্নীতি দমন কমিশনের ক্ষমতা কার স্বার্থে কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, তা জনগণ জানতে চায়। স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করা বর্তমান সরকারের অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল। কিন্তু সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম দেখে মনে হয় না, তারা স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী হতে দিতে চায়। নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যানদের দীর্ঘদিন ক্ষমতা না দেওয়া বা ক্ষমতা কাটছাঁট করে কমিয়ে দেওয়ার বিভিন্ন কৌশল খোঁজার যে চেষ্টা, তা জনগণ স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারেনি।
দেশের এত সব সমস্যা নিয়ে বর্তমান বিরোধী দলের যেন কোনো মাথাব্যথা নেই। তাদের উচিত, সংসদের ভেতরে-বাইরে এসব দাবি নিয়ে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা। সত্যিকার গণতন্ত্রে সেটিই হওয়ার কথা। কিন্তু তারা আছে কেবল ভারত-বিরোধিতা নিয়ে, নিজেদের দমন-পীড়ন-হয়রানির অভিযোগ নিয়ে। জনগণের প্রকৃত সমস্যা নিয়ে কথা বলার চেয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলাই যেন তাদের প্রধান উদ্দেশ্য। তাই তারা হরতালের মতো জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
কাজী জোবায়েদ
কোমারপুর, আদমদীঘি, বগুড়া।

খোকা-খুকু আর কাঠবেড়ালি
২৩ এপ্রিল প্রথম আলোয় শাহাদুজ্জামানের ‘খোকা-খুকু আর কাঠবেড়ালি’ নিবন্ধটির জন্য লেখককে ধন্যবাদ। তিনি নিবন্ধটির মাধ্যমে বর্তমান শিশু-কিশোরদের (বিশেষত শহরের) সামাজিক জীবনযাত্রার একটি চিত্র তুলে ধরেছেন। এর বিপরীত চিত্রও দেখতে পাই গ্রামীণ জীবনযাত্রায়।
কর্মসূত্রে আমাকে বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করতে হয়। আমি যখন ময়মনসিংহ শহর থেকে বিভিন্ন জেলা শহরে যাই, তখন দেখি, স্কুলের সময়ে শিশুরা দলে দলে রাস্তার দুই পাশ দিয়ে স্কুলের দিকে যাচ্ছে। তাদের পরনে মলিন পোশাক, ধূলিমাখা খালি পা, হাতে ব্যাগ ছাড়া বই, সঙ্গে মা-বাবা কেউ নেই। তারা রাস্তায় চলমান ভারী ভারী যানবাহনের পাশ দিয়ে নির্বিঘ্নে কলরব করতে করতে যাচ্ছে। মনে হয় যেন একেকটা আলো একত্রে আলোর গুচ্ছ হয়ে রাস্তার দুই ধারকে সূর্যের আলোর চেয়ে আলোকিত করে এগোচ্ছে, যেন আলোর মিছিল নদীর স্রোতের মতো বয়ে যাচ্ছে। তারা বাতাসে ফুলের সুবাস ছড়িয়ে যাচ্ছে। প্রযুক্তি জীবনকে উন্নত করে, আবার কিছু কিছু প্রযুক্তি জীবনকে কলুষিতও করে। তাই জীবনের একটা ধাপ পর্যন্ত সেসব প্রযুক্তিকে দূরে রাখা দরকার, যেগুলো এখনো গ্রামীণ জীবনকে কলুষিত করেনি। কিন্তু যদি করে, তবে রাস্তার দুই ধারের ওই আলোর মিছিলের স্রোত শুকিয়ে হবে শীর্ণ নদীর মতো এবং একদিন মরুভূমিতে পরিণত হবে গোটা গ্রামীণ সমাজব্যবস্থা। তাই চূড়ান্ত সর্বনাশের আগেই এর থেকে বাঁচার উপায় খুঁজে বের করতে হবে সবাইকে।
মুন্সি মো. রফিকুল ইসলাম
মোহাম্মদপুর, ঢাকা।

আত্মহত্যা নয়, চাই প্রতিরোধ
১৪ এপ্রিল বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় বখাটেদের উত্পাতে আরও একাধিক স্কুলছাত্রীর আত্মহননের খবর ছাপা হয়েছে। বখাটেদের শিকার হয়ে পাবনায় কাজলী, রূপগঞ্জে সুফিয়া আত্মহত্যা করেছে। নেত্রকোনায় তিকলিমা আত্মহত্যাকালে পরিবারের প্রচেষ্টায় মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন জায়গায় ইভ টিজিংকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের খবরও ছাপা হয়েছে। কোথাও কোথাও বখাটেপনায় বাধা দিতে গিয়ে উল্টো আক্রমণ ও হামলার শিকার হতে হয়েছে। এসব ঘটনা আমাদের উদ্বিগ্ন করে। স্কুলগামী মেয়েদের মা-বাবাদের উদ্বেগ সবচেয়ে বেশি। বখাটেদের বিরুদ্ধে সারা দেশে চলছে মানববন্ধন, চলছে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় বিভিন্ন সভা-সমাবেশ। কিছু বখাটেকে পুলিশ আটকও করেছে। কিন্তু এসব সত্ত্বেও মেয়েদের উত্ত্যক্ত করার ঘটনা কমছে না।
দেশের আনাচ-কানাচে, গ্রামীণ পরিমণ্ডলে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করার সব খবর পত্রপত্রিকায় আসে না। বখাটেদের সংঘবদ্ধ আক্রমণের ভয়ে অনেক পরিবার থানায় নালিশ করারও সাহস পায় না। বখাটেদের পুনরায় আক্রমণ বা সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হওয়ার ভয়ে অনেক পরিবার পুরো ঘটনা চেপে যায়। মনে প্রশ্ন জাগে, আমরা এ কোন সমাজে বাস করছি? আমাদের মেয়েরা নিরাপদে স্কুলে যেতে পারবে না কেন? কেন আমরা এই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের নাগরিক দাবি করেও মেয়েদের চলার পথকে নিরাপদ করতে পারছি না? মেয়েদের যদি সব সময় আতঙ্কের মধ্যে চলাফেরা করতে হয়, তাহলে কীভাবে তারা সুস্থ জীবন যাপন করবে? কীভাবে তাদের স্বাভাবিক বিকাশ ঘটবে? মেয়েদের কি ঘরের বাইরে যাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে? তারা কি স্কুলে যাবে না? আরেকটি বিষয়, বখাটেদের লাঞ্ছনার শিকার অনেক মেয়ে নিজের পরিবার থেকেও সহানুভূতি পায় না। উল্টো অনেক অভিভাবক মেয়েটিকেই বকাঝকা করেন। ফলে মেয়েটি চরম মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়। মনে হয়, লাঞ্ছনার জন্য যেন মেয়েটিই দায়ী। আবার বখাটেদের উপদ্রব এড়াতে অনেক অভিভাবক মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে দিতে বাধ্য হন।
শহরের বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে, স্কুলের সামনে উঠতি বয়সের তরুণদের সংঘবদ্ধভাবে আড্ডা দিতে দেখা যায়। মেয়েরা যখন একা চলাফেরা করে, তখন বখাটেরা নানা রকমের অশালীন উক্তি করে, শিস দেয়, সুযোগ বুঝে কখনো ওড়না ধরে টান দেয়। আবার কখনো নিজের মুঠোফোন নম্বর কাগজে লিখে রিকশা আরোহী কোনো মেয়ের উদ্দেশে ছুড়ে দেয়। শুধু মেয়েরা একা থাকলেই যে বখাটেরা এসব করে, তা নয়। অভিভাবক সঙ্গে থাকলেও অনেক সময় বখাটেরা সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে চরম দুঃসাহস ও ধৃষ্টতার পরিচয় দেয়। তখন মানসম্মান বাঁচানোর জন্য অভিভাবকদের নীরবে পলায়ন ছাড়া গত্যন্তর থাকে না। যেসব মেয়ে একা স্কুলে যাতায়াত করে, তাদের অবস্থা আরও খারাপ।
বখাটেদের উত্পাত থেকে মেয়েদের রক্ষা করতে হলে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। আইনশৃঙ্খলা কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ পাওয়ার অপেক্ষায় বসে থাকলে চলবে না। সরকার এরই মধ্যে স্কুলগুলোর সামনে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। শুধু এটাই যথেষ্ট নয়। হাজার হাজার স্কুলের সামনে পুলিশ মোতায়েন করাও সম্ভব হবে না। আইনের কঠোর প্রয়োগের পাশাপাশি একটা সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। পাড়ায় পাড়ায় সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠন করতে হবে ইভ টিজিং নিরোধ কমিটি। বখাটেদের পরিবারকেও এই উদ্যোগে শামিল করতে হবে।
আর আমাদের মেয়েদের বুঝতে হবে, ইভ টিজিংয়ের শিকার হওয়ার পর আত্মহত্যাই একমাত্র পথ নয়। সেটা না করে বরং পরিবার, পাড়া-প্রতিবেশী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের সহযোগিতায় বখাটেদের প্রতিরোধ করতে হবে।
মো. মুজিবুর রহমান, সরকারি কলেজ শিক্ষক।
mujibur30@yahoo.com

প্রথম বাংলাদেশির এভারেষ্ট বিজয়
প্রথম বাংলাদেশির এভারেস্ট বিজয় নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের জন্য এক যুগান্তকারী ঘটনা। আমরা সবাই এই বিজয়ে গৌরবান্বিত। মুসা ইব্রাহীমের এই অনবদ্য সাফল্য শুধু হিমালয়ের চূড়ায় বাংলাদেশের পতাকাই ওড়ায়নি, স্বপ্নপূরণের এক অসামান্য আকাঙ্ক্ষার তেজ তৈরি করেছে। এ এক অসামান্য কৃতিত্ব। বাংলাদেশের একজন মানুষের প্রতি পদে অনেক বাধা। সাহস জোগানোর মানুষের অভাব, টাকা-পয়সার অভাব, পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের অভাব—এই সবকিছুকে অতিক্রম করে অসীম দৃঢ়তার পরিচয় দিয়েছেন মুসা ইব্রাহীম। তাঁর এই মনোবলের দৃঢ়তা নিঃসন্দেহে উজ্জীবিত করবে আরও অনেক তরুণকে। এই উদ্দীপনা যে কেবল পাহাড় জয়ের জন্যই, তা নয়, এই উদ্দীপনা যেকোনো অজেয়কে জয় করার প্রেরণা জোগাবে এ দেশের মানুষের মনে।
সব বাধা পেরিয়ে আমরা এভাবেই যেন নতুন নতুন সাফল্যের দিকে এগিয়ে যেতে পারি—এই হোক আমাদের প্রত্যয়। জাতির পক্ষ থেকে মুসা ইব্রাহীমকে প্রাণঢালা অভিনন্দন! তাঁর এ বিজয় হোক আমাদের সবার চলার পাথেয়।
বন্দনা আমীর, উত্তরা, ঢাকা।

শিক্ষানীতি ও নতুন বিদ্যালয়
প্রথম আলোর খবরে (১৬ এপ্রিল ২০১০) জানা গেল, সরকার দেশে আরও এক হাজার ৫০০ প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছে। স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ৩৬ হাজার ৮৪৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করা হয়। আশির দশকে জাতীয়করণ করা হয় ৮২৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। অর্থাত্, বঙ্গবন্ধুর সরকার কর্তৃক জাতীয়কৃত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৯৭৫ সালের পরবর্তী ৩৫ বছরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সংখ্যার প্রায় ৪০ গুণ। একই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকার জাতীয়কৃত ৩৭ হাজার ৬৭২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু করতে যাচ্ছে। সুসংবাদ, সন্দেহ নেই। আরও এক হাজার ৫০০ প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরও হয়তো অনেক শিশুই স্কুলের বাইরে থেকে যাবে, তবু এই সিদ্ধান্ত দীর্ঘদিনের স্থবিরতা দূর করবে। খসড়া শিক্ষানীতিতে পাঁচ বছরের বেশি বয়সী শিশুদের জন্য এক বছর মেয়াদি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু করার কথা বলা হয়েছে। এ জন্য পর্যায়ক্রমে এক লাখ ৩০ হাজার শিক্ষক নিয়োগের কথা উল্লেখ আছে।
এ ছাড়া প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিক থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদানের জন্য পর্যাপ্তসংখ্যক কক্ষের ব্যবস্থা রাখতে হবে। আর কয়েক বছরের মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির হার যদি ১০০ শতাংশে উন্নীত হয়, তবে সেই অনুপাতে শ্রেণীকক্ষের সংখ্যাও বাড়াতে হবে। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত ১ঃ৩০ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের জন্য অতিরিক্ত কক্ষের ব্যবস্থা করার প্রয়োজন হবে। প্রস্তাবিত শিক্ষানীতির দ্বিতীয় অধ্যায়ে বলা হয়েছে, ‘শিশুর সৃজনশীল চিন্তন দক্ষতার প্রসারের জন্য সক্রিয় শিক্ষণপদ্ধতি অনুসরণ করে শিক্ষার্থীকে এককভাবে বা দলভিত্তিক কার্য সম্পাদনের সুযোগ দেওয়া হবে।’ প্রতি ক্লাসের শিক্ষার্থী-সংখ্যা বিবেচনা করে দলীয় কাজসহ বিভিন্ন সক্রিয় শিক্ষণপদ্ধতি পরিচালনার উপযোগী শ্রেণীকক্ষ ও আধুনিক আসবাবের ব্যবস্থা করা হবে।
পশ্চাত্পদ এলাকাগুলো, বিশেষ করে, হাওর, চরাঞ্চল ও পাহাড়ি এলাকায় বিদ্যালয় স্থাপনের বিষয়টি অগ্রাধিকার দিতে হবে।
মো. আবুল বাশার, সিলেট।

পানি-সমস্যার কথা একটু ভাবুন
নদী-নালা, খাল-বিলে ভরা সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা এ দেশের নাম বাংলাদেশ। আর এ দেশেই কিনা পানির অভাবে মানুষ হাহাকার করছে! একে অদৃষ্টের পরিহাস ছাড়া আর কী বলব? তবে পানি আছে এটা যেমন সত্য, পানি নেই এটাও তেমনই সত্য।
ভাবছেন, তা কী করে হয়? পানি আছে, তবু পানির জন্য হাহাকার? সত্যিই তা-ই। ব্যবহারযোগ্য বিশুদ্ধ পানির সত্যিই বড় অভাব এ দেশে। কারণ, অব্যবস্থাপনা আর সততা ও নিষ্ঠার অভাবে এ সোনার দেশটির আজ এই হাল।
ঢাকাসহ বড় সব শহরেই বিশুদ্ধ পানির সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। ঢাকার চারপাশে আছে বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু, তুরাগ নদ। ঢাকা ওয়াসা এসব নদী থেকে পানি পরিশোধন করে নগরে সরবরাহ করে, কিন্তু নদী কোথায়? বুড়িগঙ্গা আবর্জনার ভারে বুড়ি-নর্দমা হয়ে গেছে, অন্য নদীগুলোর পানিও কলকারখানার বিষাক্ত বর্জ্যে বিষাক্ত হয়ে উঠেছে। ওয়াসা এই দূষিত পানি প্রতিদিন তুলে দিচ্ছে মানুষের মুখে। দেশকে উন্নতির শিখরে নিতে নদীর তীরঘেঁষে কলকারখানা স্থাপন করে চলেছে সোনার দেশের সোনার মানুষেরা! কিন্তু বর্জ্যটা যে ঠিকমতো নিষ্কাশন করতে হয়, সেদিকে কারও নজর নেই।
আর পলি পড়ে দেশের অধিকাংশ নদী নাব্যতা হারিয়ে ফেলে। নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে হলে এবং নদীভাঙন রোধ করতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে নদী খনন করা দরকার। এ কাজটি কখনো প্রয়োজনমতো ও সঠিকভাবে করা হয়নি। তাই বর্ষাকাল এলেই নদ-নদীর দুই কূল ছাপিয়ে বন্যার সৃষ্টি করে, দরিদ্র মানুষকে ঘরবাড়ি ভাসিয়ে নিয়ে রিক্ত-নিঃস্ব করে দেয়।
আবার শুকনো মৌসুমে উত্তরাঞ্চলে খরায় জমি ফেটে চৌচির, ফসল নষ্ট হয়; ফলে মঙ্গা, খাদ্যাভাব। উঁচু অঞ্চলের পানি গড়িয়ে নিচে চলে আসবে—এটাই পানির স্বভাব। তাই বর্ষার পানি ধরে রেখে খরার মৌসুমে তা ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া দরকার। প্রাকৃতিক খাল-বিলগুলো পুনরুদ্ধার, নতুন করে দিঘি-পুকুর, খাল খননের কথা ভাবা যেতে পারে। এ বিষয়ে দেশ-বিদেশের বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তিগত অভিজ্ঞতা সঞ্চয় ও ব্যবহারের উদ্যোগ নিতে হবে। কাজটা সরকারের।
পানি ছাড়া জীবজগত্ অচল, বিশুদ্ধ পানি সংরক্ষণের জন্য আমাদের বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। বৃষ্টির পানি অত্যন্ত বিশুদ্ধ, তাই বর্ষা মৌসুমে উত্তরবঙ্গে যদি বৃষ্টির পানি জলাধারের মাধ্যমে ধরে রাখা যায়, তাহলে একসঙ্গে দু-দুটো কার্য সিদ্ধ হয়—এক. জনসাধারণ উত্তরবঙ্গে দুঃসময়ে পানির জন্য হাহাকার করবে না, দুই. দক্ষিণাঞ্চল বানের জলে ভেসে যাবে না।
তাই পরিশেষে সরকারের কাছে অনুরোধ, উত্তরবঙ্গে জলাধার নির্মাণ করা হোক, নাব্যতা হারিয়ে ফেলা নদীগুলো খনন করে নাব্যতা ফিরিয়ে আনা হোক এবং কলকারখানা ও অন্যান্য বর্জ্য থেকে নদ-নদীগুলোকে রক্ষা করা হোক। পানিই জীবন—এই সাধারণ সত্য কথাটির গুরুত্ব আজ যথাযথভাবে উপলব্ধি করা ভীষণ প্রয়োজন। কারণ, আগামী দিনগুলোতে জাতির জন্য পানির সমস্যা হয়ে উঠবে অতিশয় গুরুতর এক সমস্যা।
শিখা ব্যানার্জি
বাউফল, পটুয়াখালী।

রেলওয়ের সংস্কার খুব দরকার
বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রশাসনিক সংস্কারের জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট পক্ষের সঙ্গে বহু আলোচনা-কর্মশালা করে এক বছরের বেশি সময় আগে সরকারের কাছে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে। লাইন অব বিজনেস অনুসারে সংস্থাটিকে অভ্যন্তরীণভাবে ভাগ করে প্রশাসনের শীর্ষে একটি বোর্ড কাঠামোর সুপারিশ করা হয়েছিল প্রতিবেদনে। বাংলাদেশ রেলওয়ে বাহ্যত একটি সংস্থা হলেও এর ভেতরে ক্রিয়াশীল বিভিন্ন বিভাগের অস্তিত্ব রয়েছে। লাইন অব বিজনেস তারই আধুনিক রূপ বুঝতে পেরে সর্বস্তরের রেলকর্মীরা নতুন ধারণাটিকে গ্রহণের জন্য প্রস্তুতিও নিয়েছিলেন।
একজন মহাপরিচালকের অধীনে সদর দপ্তরে পাঁচজন অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও দুই জোনে দুজন আঞ্চলিক মহাব্যবস্থাপকের নেতৃত্বে রেল পরিচালিত হচ্ছে। ১৯৯৬ সালে প্রবর্তিত এ ব্যবস্থা নানা কারণে সফল হয়নি। উন্নয়ন খাতে দেওয়া সরকারি অর্থের সদ্ব্যবহার হচ্ছে না, জনগণ উন্নত সেবা পাচ্ছে না। উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়নের ক্ষেত্রে রেলওয়ের ভেতরে আন্তবিভাগ মতামত নেওয়ার ব্যবস্থা নেই। ফলে বিভিন্ন গোষ্ঠী তাদের স্বার্থে প্রকল্প তৈরি করছে ও করাচ্ছে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রভাব খাটিয়ে অনুমোদন করিয়ে জনগণের অর্থের অপচয় করছে। এখন রেলওয়ের জন্য ইঞ্জিন-কোচের প্রয়োজন সর্বাগ্রে, অথচ অর্থ ব্যয় হচ্ছে লাইন পুনর্বাসনে। উদাহরণস্বরূপ, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লাইনে মোটামুটি ৪০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন ভালোই চলছে, রুটিনমাফিক মেরামত করে আগামী আট-দশ বছর এভাবেই চলতে পারত। ঢাকা থেকে চার স্টেশনে থেমে ৩৫ মিনিটে নারায়ণগঞ্জে যেতে পেরে যাত্রীরা খুশি। এখানে যাত্রীদের জন্য প্রয়োজন আরও বগির। কিন্তু বগির ব্যবস্থা না করে ৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে লাইনটি পুনর্বাসন করা হচ্ছে ৬০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চালানোর জন্য। কিন্তু ঘন ঘন লেভেল ক্রসিং, আশপাশের ঘনবসতি ও হাটবাজার, অগণিত পথচারী, লাইনের বাঁক ইত্যাদি কারণে সেটা সম্ভব হবে না। এ রকম আরও অনেক প্রকল্প রয়েছে।
অপচয়, অপব্যয়, দুর্নীতি ও অদক্ষতা রেলওয়ের উন্নতির প্রধান অন্তরায়। এসব দূর করতে হলে রেলওয়ের বর্তমান প্রশাসনিক কাঠামো ভেঙে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের অনুরূপ একটি কার্যকর রেলওয়ে বোর্ড গঠন করা যেতে পারে। বোর্ডের মধ্যে বিভিন্ন ক্রিয়াশীল বিভাগের (যান্ত্রিক, সিভিল, সিগন্যাল, পরিবহন, বাণিজ্যিক ও অর্থ বিভাগ) উপযুক্তসংখ্যক প্রতিনিধি তথা সদস্যপদ নিশ্চিত করে সমন্বয় ও জবাবদিহিমূলক একটি গতিশীল ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে।
গত তিন দশকে এ দেশে এককভাবে সড়কপথের বিস্তার ঘটেছে। এ রকম জনবহুল দেশে শুধু সড়কপথ জনগণের চাহিদা পূরণে সক্ষম নয়। বর্তমান সরকার বিষয়টি উপলব্ধি করে রেলওয়ের উন্নয়নের কথা ভাবছে বলে জানা যায়। সরকারের চিন্তাভাবনার বাস্তব রূপায়ণ তথা সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ, সময়মতো বাস্তবায়ন, জনগণকে উন্নততর সেবা প্রদান উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ ছাড়া সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যথায় জনগণের অর্থের অপচয় হবে বটে, কিন্তু রেলের কোনো উন্নতি হবে না; জনগণ রেলের উন্নত সেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে।
আশরাফুল আলম
টাইগারপাস, চট্টগ্রাম।

উপহারদাতা ‘সংবর্ধনা’
এ দেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতির রূপ সঞ্চালনে নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। কিছু দেশপ্রেমিক মানুষ সাংস্কৃতিক উপকরণ ও নিদর্শন উপহার দিয়ে জাদুঘরকে সমৃদ্ধ করেছেন। প্রতিষ্ঠার দীর্ঘকাল পর হলেও জাদুঘর কর্তৃপক্ষ ১৮ মে আন্তর্জাতিক জাদুঘর দিবসে সেসব উপহারদাতাদের স্মরণ করেছেন জানতে পেরে খুব খুশি হয়েছিলাম।
এমন একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আমিও গিয়েছিলাম। প্রবল মনোযোগ ও ধৈর্যের সঙ্গে আমন্ত্রিত প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি, সভাপতি ও আরও অনেকের মূল্যবান বক্তব্য শুনছিলাম আর অপেক্ষা করছিলাম কখন ‘সংবর্ধনা’ অনুষ্ঠান শুরু হবে। আশায় ছিলাম, উপস্থিত সব দর্শক-শ্রোতার মতো, কিছু মহান ব্যক্তির মুখ দেখতে পাব বা অন্তত স্পিকারে নামগুলো শুনতে পাব। কিন্তু দুর্ভাগ্য, আমার সব আশা ধূলিসাৎ করে দিয়ে সম্মানিত সঞ্চালক ঘোষণা দিলেন, ‘আমাদের আজকের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের এখানেই সমাপ্তি, একটু পরই শুরু হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সম্মানিত উপহারদাতারা যাওয়ার সময় নিচের লবি থেকে আপনাদের জন্য রক্ষিত আমাদের উপহার নিয়ে যাবেন।’ আশান্বিত হলাম যে, যাক ‘সংবর্ধনা’ শেষ হয়নি। আবারও হোঁচট খেলাম, লবিতে গিয়ে দেখি, কিছু জবাবদিহির বিনিময়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত সব হাততালিদাতারা একটি করে বিরিয়ানির প্যাকেট ও পানির বোতল পাচ্ছেন।
বেরিয়ে এসে রাজপথে হাঁটি আর ভাবি, ‘সংবর্ধনা’ শব্দটির অর্থ কি অভিধানেই ভুল, না আমাদের প্রয়োগে?
একজন উপহারদাতার উত্তরসূরি।

No comments

Powered by Blogger.