এমপিদের উপজেলা চেয়ারম্যানদের হুঁশিয়ারি-সংসদ নির্বাচনে দেখে নেব by হায়দার আলী
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ এলাকার সংসদ সদস্য আবদুস সাত্তার, আর উপজেলা চেয়ারম্যান সৌমেন্দ্র কিশোর চৌধুরী। দুজনই নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হলেও এলাকার কোনো অনুষ্ঠানে তাঁদের একসঙ্গে দেখা যায় না। যেখানে এমপি আবদুস সাত্তার আছেন, সেখানে নেই সৌমেন্দ্র কিশোর চৌধুরী। কারণ দুজনের বিরোধ।
এই বিরোধ দিনে দিনে এমন পর্যায়ে গড়িয়েছে যে, আগামী সংসদ নির্বাচনে এমপিকে মোকাবিলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন উপজেলা চেয়ারম্যান। নিজেই এবার এমপি প্রার্থী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, 'আর উপজেলা নির্বাচন নয়- ভবিষ্যতে এমপি পদে নির্বাচন করব। মাঠকর্মীদের মতামত উপেক্ষা করে এলাকায় এমপি প্রার্থী দেওয়া হলে দলের জন্য ভালো হবে না। আশা করি দল আমাকে বঞ্চিত করবে না।'
এ চিত্র ঈশ্বরগঞ্জের হলেও এমন বাস্তবতা এখন দেশের অনেক উপজেলায়। অনেক উপজেলা চেয়ারম্যান জনসেবা বা রাষ্ট্রীয় আইন প্রণয়ন-প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার জন্য নয়, বরং স্থানীয় এমপিকে 'দেখে নিতে' আগামী নির্বাচনে এমপি প্রার্থী হওয়ার কথা ভাবছেন। কেউ কেউ মাঠপর্যায়ে কাজও শুরু করে দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ নেতা ও বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট বদিউজ্জামান বাদশা কালের কণ্ঠকে বলেন, দেড় শতাধিক উপজেলায় সরকারি দলের এমপির সঙ্গে আওয়ামী লীগ সমর্থিত উপজেলা চেয়ারম্যানের দ্বন্দ্ব রয়েছে। এর জের ধরে অনেক চেয়ারম্যানই সংসদ নির্বাচন করার কথা ভাবছেন। তিনি বলেন, অনেক এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর এলাকার কোনো উন্নয়ন করেননি। নেতা-কর্মীদের কথা না ভেবে শুধু নিজের আখের গুছিয়েছেন। জড়িয়েছেন বিভিন্ন অপকর্মেও। ফলে এলাকাবাসী তাঁদের প্রত্যাখ্যান করেছে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ইশতিয়াক হোসেন দিদার বলেন, 'ঢাল নেই তলোয়ার নেই, নিধিরাম সরদারের ভূমিকায় আমাদের রাখা হয়েছে। সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া আর ঝগড়া-ফ্যাসাদ মেটানো ছাড়া কোনো কাজই করতে পারিনি। সব কিছুর মূলে সেই এমপি মহোদয়রা। এবার আর ছাড় নয়, ভবিষ্যতে এমপি প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করবই করব।'
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজাহান ভুঁইয়া বলেন, 'জানাজা পড়া আর দাওয়াত খাওয়া ছাড়া আমাদের কোনো কাজ নেই। কোনো দায়িত্বই আমরা পাইনি।' স্থানীয় এমপি সম্পর্কে তিনি বলেন, 'দলের নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে তিনি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। ভবিষ্যতে উপজেলা নির্বাচন করার কোনো ইচ্ছাই আমার নেই, জনগণ চাইলে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেব।' এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রূপগঞ্জের এমপি গাজী গোলাম দস্তগীর (বীরপ্রতীক) কালের কণ্ঠকে বলেন, 'শুধু আমার উপজেলায় নয়, সারা দেশেই উপজেলা চেয়ারম্যানরা আগামী নির্বাচনে এমপি হওয়ার জন্য চিন্তা করছেন এবং সেভাবে মাঠে প্রচার চালাতে গিয়ে দলের ক্ষতি করছেন। এই উপজেলা চেয়ারম্যানরা ভবিষ্যতে দলের জন্য বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারেন। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।'
বিরোধের কথা পরোক্ষভাবে মেনে নিয়ে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের সংসদ সদস্য আবদুস সাত্তার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'উপজেলা চেয়ারম্যান সৌমেন্দ্র ২০০১ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। সেই অভিযোগে দল থেকে তাঁকে বহিষ্কারও করা হয়েছিল। আশা করি তিনি সেই ভুল আর করবেন না। দল যাঁকে মনোনয়ন দেবে, তাঁর পক্ষেই কাজ করবেন। তবে দলের বাইরে গিয়ে কেউ কিছু করতে চাইলে স্থানীয় নেতা-কর্মীরা মেনে নেবেন না, প্রতিহত করবেন।'
সারা দেশে ৪৮১ জন নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যানের মধ্যে আওয়ামী লীগ সমর্থিত উপজেলা চেয়ারম্যান রয়েছেন প্রায় ৩৫০ জন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ সমর্থিত শতাধিক উপজেলা চেয়ারম্যানের সঙ্গে স্থানীয় এমপিদের প্রকাশ্য বিরোধ থাকার কথা জানা যায়। এ নিয়ে কোথাও কোথাও তাঁদের মুখ দেখাদেখিও বন্ধ। আগামী সংসদ নির্বাচনে দলীয় সমর্থন না পেলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে লড়াই করার কথা প্রকাশ্যেই বলছেন অনেক উপজেলা চেয়ারম্যান।
খুলনার দাকোপ উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'উপজেলা চেয়ারম্যান হয়ে স্থানীয় এমপির করাল গ্রাসে আছি, কোনো কাজ ছাড়া কাটছে সময়। আগামী সংসদ নির্বাচনে আমিও একজন প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন চাইব।'
একই ধরনের হতাশা ব্যক্ত করেন গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন সবুজ। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'স্থানীয় সংসদ সদস্য সহযোগিতা করবেন দূরের কথা, উপজেলা পরিষদই কার্যকর করতে দেননি। ভবিষ্যতে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচন নিয়ে ভাবছি না। এলাকার তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা আমার সঙ্গে আছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে অন্য কিছু ভেবে দেখব।'
আরো কয়েকজন উপজেলা চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হতাশা ও ক্ষোভ থেকে তাঁরা আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে আগ্রহী। কালের কণ্ঠের অনুসন্ধানে দেখা যায়, স্থানীয় সংসদ সদস্য আর উপজেলা চেয়ারম্যান মতবিরোধ থেকে জড়িয়ে পড়ছেন প্রকাশ্য দ্বন্দ্বে। এখন সংঘাত, হামলা-মামলার ঘটনাও ঘটছে। অনেক জেলায় এসব বিরোধ এখন চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।
সর্বশেষ ময়মনসিংহের গফরগাঁও থেকে নির্বাচিত স্থানীয় সংসদ সদস্য ক্যাপ্টেন (অব.) গিয়াসউদ্দিন আহমেদের অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি চালানো এবং একপর্যায়ে গাড়ি থেকে নেমে পিস্তল তাক করে প্রতিপক্ষকে ধাওয়া করার ঘটনা ঘটে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, উপজেলা চেয়ারম্যান ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল ও সংসদ সদস্য গিয়াসউদ্দিনের বিরোধের কারণে গফরগাঁও আওয়ামী লীগ এখন দুই ভাগে বিভক্ত। একই দলের সমর্থন নিয়ে নির্বাচিত হলেও তাঁদের মধ্যে চরম দ্বন্দ্ব চলছে এবং এ নিয়ে উভয়ের অনুসারীদের মধ্যে কয়েকবার সংঘর্ষও হয়েছে।
বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট বদিউজ্জামান বাদশা বলেন, এমন কোনো জেলা নেই, যেখানে এই দ্বন্দ্ব নেই। জাতীয় নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, এই বিরোধ যেন আরো চরম পর্যায়ে যাচ্ছে। এসব উপেক্ষিত উপজেলা চেয়ারম্যানই ভবিষ্যতে সংসদ সদস্যদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়াবেন। অনেকেই সংসদ সদস্য হিসেবে আগামী নির্বাচনে লড়াই করবেন। তিনি দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করে বলেন, 'সারা দেশে যেভাবে একের এক উপজেলা চেয়ারম্যান আর এমপিরা বিরোধে জড়াচ্ছেন, এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে সাংগঠনিকভাবে বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছি।'
ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল মতিন সরকার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বাস্তব পরিস্থিতি অস্বীকার করা যাবে না। উপজেলা চেয়ারম্যান ও এমপিদের সংঘাতের কারণে মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীরা হতাশ হয়ে পড়ছেন। এভাবে চলতে থাকায় আমাদের সাংগঠনিক অনেক ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি সুরাহার জন্য দলের নেত্রী থেকে শুরু করে সাংগঠনিকভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের বিষয়টি জানানো হয়েছে।' তিনি বলেন, তিন দফায় উপজেলা পরিষদ আইন সংশোধন করেও জনপ্রতিনিধি হিসেবে চেয়ারম্যানদের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা না করা, নিজ নিজ উপজেলার উন্নয়নকাজে ভূমিকা রাখতে না পারাসহ নানা কারণে সরকারের ওপর মহলের ওপরও তাঁরা ভীষণ ক্ষুব্ধ।
বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক হারুন-অর-রশীদ হাওলাদার বলেন, দুই বছর ধরে উপজেলা পরিষদ অকার্যকর করে রাখার বিরূপ প্রভাব পড়েছে গত পৌরসভা নির্বাচনে। বেশির ভাগ পৌরসভায় সংসদ সদস্যদের মনোনীত প্রার্থীরাই পরাজিত হয়েছেন। এ অবস্থায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকারি দল থেকে সংসদ সদস্য পদে যাঁরা প্রার্থী হবেন, তাঁদের কী অবস্থা হতে পারে- তা নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের মধ্যেও শঙ্কা ছড়িয়ে পড়েছে। বিষয়টি বিশেষ বিবেচনায় না আনলে দলীয় বিপর্যয় অবধারিত।
এ চিত্র ঈশ্বরগঞ্জের হলেও এমন বাস্তবতা এখন দেশের অনেক উপজেলায়। অনেক উপজেলা চেয়ারম্যান জনসেবা বা রাষ্ট্রীয় আইন প্রণয়ন-প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার জন্য নয়, বরং স্থানীয় এমপিকে 'দেখে নিতে' আগামী নির্বাচনে এমপি প্রার্থী হওয়ার কথা ভাবছেন। কেউ কেউ মাঠপর্যায়ে কাজও শুরু করে দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ নেতা ও বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট বদিউজ্জামান বাদশা কালের কণ্ঠকে বলেন, দেড় শতাধিক উপজেলায় সরকারি দলের এমপির সঙ্গে আওয়ামী লীগ সমর্থিত উপজেলা চেয়ারম্যানের দ্বন্দ্ব রয়েছে। এর জের ধরে অনেক চেয়ারম্যানই সংসদ নির্বাচন করার কথা ভাবছেন। তিনি বলেন, অনেক এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর এলাকার কোনো উন্নয়ন করেননি। নেতা-কর্মীদের কথা না ভেবে শুধু নিজের আখের গুছিয়েছেন। জড়িয়েছেন বিভিন্ন অপকর্মেও। ফলে এলাকাবাসী তাঁদের প্রত্যাখ্যান করেছে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ইশতিয়াক হোসেন দিদার বলেন, 'ঢাল নেই তলোয়ার নেই, নিধিরাম সরদারের ভূমিকায় আমাদের রাখা হয়েছে। সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া আর ঝগড়া-ফ্যাসাদ মেটানো ছাড়া কোনো কাজই করতে পারিনি। সব কিছুর মূলে সেই এমপি মহোদয়রা। এবার আর ছাড় নয়, ভবিষ্যতে এমপি প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করবই করব।'
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজাহান ভুঁইয়া বলেন, 'জানাজা পড়া আর দাওয়াত খাওয়া ছাড়া আমাদের কোনো কাজ নেই। কোনো দায়িত্বই আমরা পাইনি।' স্থানীয় এমপি সম্পর্কে তিনি বলেন, 'দলের নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে তিনি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। ভবিষ্যতে উপজেলা নির্বাচন করার কোনো ইচ্ছাই আমার নেই, জনগণ চাইলে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেব।' এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রূপগঞ্জের এমপি গাজী গোলাম দস্তগীর (বীরপ্রতীক) কালের কণ্ঠকে বলেন, 'শুধু আমার উপজেলায় নয়, সারা দেশেই উপজেলা চেয়ারম্যানরা আগামী নির্বাচনে এমপি হওয়ার জন্য চিন্তা করছেন এবং সেভাবে মাঠে প্রচার চালাতে গিয়ে দলের ক্ষতি করছেন। এই উপজেলা চেয়ারম্যানরা ভবিষ্যতে দলের জন্য বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারেন। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।'
বিরোধের কথা পরোক্ষভাবে মেনে নিয়ে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের সংসদ সদস্য আবদুস সাত্তার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'উপজেলা চেয়ারম্যান সৌমেন্দ্র ২০০১ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। সেই অভিযোগে দল থেকে তাঁকে বহিষ্কারও করা হয়েছিল। আশা করি তিনি সেই ভুল আর করবেন না। দল যাঁকে মনোনয়ন দেবে, তাঁর পক্ষেই কাজ করবেন। তবে দলের বাইরে গিয়ে কেউ কিছু করতে চাইলে স্থানীয় নেতা-কর্মীরা মেনে নেবেন না, প্রতিহত করবেন।'
সারা দেশে ৪৮১ জন নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যানের মধ্যে আওয়ামী লীগ সমর্থিত উপজেলা চেয়ারম্যান রয়েছেন প্রায় ৩৫০ জন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ সমর্থিত শতাধিক উপজেলা চেয়ারম্যানের সঙ্গে স্থানীয় এমপিদের প্রকাশ্য বিরোধ থাকার কথা জানা যায়। এ নিয়ে কোথাও কোথাও তাঁদের মুখ দেখাদেখিও বন্ধ। আগামী সংসদ নির্বাচনে দলীয় সমর্থন না পেলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে লড়াই করার কথা প্রকাশ্যেই বলছেন অনেক উপজেলা চেয়ারম্যান।
খুলনার দাকোপ উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'উপজেলা চেয়ারম্যান হয়ে স্থানীয় এমপির করাল গ্রাসে আছি, কোনো কাজ ছাড়া কাটছে সময়। আগামী সংসদ নির্বাচনে আমিও একজন প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন চাইব।'
একই ধরনের হতাশা ব্যক্ত করেন গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন সবুজ। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'স্থানীয় সংসদ সদস্য সহযোগিতা করবেন দূরের কথা, উপজেলা পরিষদই কার্যকর করতে দেননি। ভবিষ্যতে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচন নিয়ে ভাবছি না। এলাকার তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা আমার সঙ্গে আছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে অন্য কিছু ভেবে দেখব।'
আরো কয়েকজন উপজেলা চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হতাশা ও ক্ষোভ থেকে তাঁরা আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে আগ্রহী। কালের কণ্ঠের অনুসন্ধানে দেখা যায়, স্থানীয় সংসদ সদস্য আর উপজেলা চেয়ারম্যান মতবিরোধ থেকে জড়িয়ে পড়ছেন প্রকাশ্য দ্বন্দ্বে। এখন সংঘাত, হামলা-মামলার ঘটনাও ঘটছে। অনেক জেলায় এসব বিরোধ এখন চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।
সর্বশেষ ময়মনসিংহের গফরগাঁও থেকে নির্বাচিত স্থানীয় সংসদ সদস্য ক্যাপ্টেন (অব.) গিয়াসউদ্দিন আহমেদের অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি চালানো এবং একপর্যায়ে গাড়ি থেকে নেমে পিস্তল তাক করে প্রতিপক্ষকে ধাওয়া করার ঘটনা ঘটে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, উপজেলা চেয়ারম্যান ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল ও সংসদ সদস্য গিয়াসউদ্দিনের বিরোধের কারণে গফরগাঁও আওয়ামী লীগ এখন দুই ভাগে বিভক্ত। একই দলের সমর্থন নিয়ে নির্বাচিত হলেও তাঁদের মধ্যে চরম দ্বন্দ্ব চলছে এবং এ নিয়ে উভয়ের অনুসারীদের মধ্যে কয়েকবার সংঘর্ষও হয়েছে।
বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট বদিউজ্জামান বাদশা বলেন, এমন কোনো জেলা নেই, যেখানে এই দ্বন্দ্ব নেই। জাতীয় নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, এই বিরোধ যেন আরো চরম পর্যায়ে যাচ্ছে। এসব উপেক্ষিত উপজেলা চেয়ারম্যানই ভবিষ্যতে সংসদ সদস্যদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়াবেন। অনেকেই সংসদ সদস্য হিসেবে আগামী নির্বাচনে লড়াই করবেন। তিনি দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করে বলেন, 'সারা দেশে যেভাবে একের এক উপজেলা চেয়ারম্যান আর এমপিরা বিরোধে জড়াচ্ছেন, এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে সাংগঠনিকভাবে বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছি।'
ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল মতিন সরকার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বাস্তব পরিস্থিতি অস্বীকার করা যাবে না। উপজেলা চেয়ারম্যান ও এমপিদের সংঘাতের কারণে মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীরা হতাশ হয়ে পড়ছেন। এভাবে চলতে থাকায় আমাদের সাংগঠনিক অনেক ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি সুরাহার জন্য দলের নেত্রী থেকে শুরু করে সাংগঠনিকভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের বিষয়টি জানানো হয়েছে।' তিনি বলেন, তিন দফায় উপজেলা পরিষদ আইন সংশোধন করেও জনপ্রতিনিধি হিসেবে চেয়ারম্যানদের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা না করা, নিজ নিজ উপজেলার উন্নয়নকাজে ভূমিকা রাখতে না পারাসহ নানা কারণে সরকারের ওপর মহলের ওপরও তাঁরা ভীষণ ক্ষুব্ধ।
বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক হারুন-অর-রশীদ হাওলাদার বলেন, দুই বছর ধরে উপজেলা পরিষদ অকার্যকর করে রাখার বিরূপ প্রভাব পড়েছে গত পৌরসভা নির্বাচনে। বেশির ভাগ পৌরসভায় সংসদ সদস্যদের মনোনীত প্রার্থীরাই পরাজিত হয়েছেন। এ অবস্থায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকারি দল থেকে সংসদ সদস্য পদে যাঁরা প্রার্থী হবেন, তাঁদের কী অবস্থা হতে পারে- তা নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের মধ্যেও শঙ্কা ছড়িয়ে পড়েছে। বিষয়টি বিশেষ বিবেচনায় না আনলে দলীয় বিপর্যয় অবধারিত।
No comments