সিলিকন ভ্যালি-সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর চাকরি by জাকারিয়া স্বপন
খুবই মজার একটি খবর। রাতের খাবার খেয়ে যখন স্থানীয় টিভিতে খবর দেখতে বসলাম, মুহূর্তের মধ্যেই চোখ বড় বড় হয়ে এল। টিভির পর্দায় ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের স্বভাবসুলভ হাস্যোজ্জ্বল মুখ। তিনি সিলিকন ভ্যালির একটি প্রতিষ্ঠানে উপদেষ্টা হিসেবে চাকরি নিচ্ছেন—তারই ছবি। প্রতিষ্ঠানটির নাম খোসলা ভেঞ্চার।
প্রতিষ্ঠানটি ছোট ছোট হাইটেক কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে থাকে। তারপর এই ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোই একসময় বিশাল প্রতিষ্ঠানে রূপ নেয়। বর্তমানে খোসলা ভেঞ্চার বিনিয়োগ করছে গ্রিন এনার্জি প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে এমন সব প্রতিষ্ঠানে। টনি ব্লেয়ারের কাজ হবে এসব ছোট প্রতিষ্ঠানকে বিশ্ববাজার ও পরিবেশ পরিবর্তন নিয়ে বিশ্বরাজনীতির ওপর উপদেশ দেওয়া।
সিলিকন ভ্যালি একটি আজব জায়গা। বর্তমান বিশ্বের হাইটেক প্রযুক্তির অজস্র উদ্ভাবনী হয়েছে এই শহরে, এবং এখনো হয়েই চলেছে। গুগল, ফেসবুক, ইয়াহু, হটমেইল, ইবে, সিসকো, ইন্টেল, এইচপি, এএমডি, টুইটার, ইউটিউব, সান মাইক্রোসিস্টেম, ওরাকল ইত্যাদি হাজারো কোম্পানির জন্মভূমি এই সিলিকন ভ্যালি। এখানে মানুষ প্রতিনিয়ত নিত্যনতুন বিষয়ে গবেষণা করছে এবং পণ্য তৈরিতে নিজেকে নিয়োগ করেছে। পৃথিবীর বড় বড় বিনিয়োগকারীরা এখানে বিনিয়োগ করতে আসেন। সেই সুবাদে অজস্র মানুষ চাকরিও করতে আসেন। কিন্তু সেই দলে যখন টনি ব্লেয়ারের মতো মানুষ যোগ দেন, তখন আগ্রহ এমনিতেই বেড়ে যায়। তার উপর যদি হয় প্রতিষ্ঠানটি ভারতীয় মালিকানার, তখন কৌতূহল আরও বেশি হওয়ারই কথা।
জি, খোসলা ভেঞ্চারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মালিক হলেন ভারতীয় উদ্যোক্তা বিনোদ খোসলা। সিলিকন ভ্যালির একজন অন্যতম সফল উদ্যোক্তা। তাঁকে সামনে থেকে দুবার দেখার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। বেশ হাসিখুশি প্রাণবন্ত একজন মানুষ। যাঁরা হাইটেক-শিল্পের উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন, তাঁদের জন্য খোসলার জীবনীটুকু কাজে আসতে পারে। তাঁর বাবা ভারতের সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন, এবং তাঁদের সঙ্গে প্রযুক্তি কিংবা ব্যবসা—কোনোটারই সম্পর্ক ছিল না। খোসলার বয়স যখন ১৬ বছর, তখন তিনি ‘ইন্টেল’-এর কথা শুনতে পান। আর তখন থেকেই তিনি নিজের হাইটেক কোম্পানি তৈরির স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন।
মাত্র ২০ বছর বয়সে দিল্লির ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং (আইআইটি) থেকে ইলেকট্রিক্যালে ব্যাচেলর ডিগ্রি করে প্রথমে ভারতেই সয়া-দুধের ওপর একটি কোম্পানি তৈরির চেষ্টা করেন। ওটাতে ব্যর্থ হয়ে তিনি চলে আসেন আমেরিকায়। এখানে কার্নেগি-মেলন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওপর মাস্টার্স করেন। নতুন প্রযুক্তির কোম্পানি গড়ার স্বপ্ন তাঁকে নিয়ে আসে সিলিকন ভ্যালিতে। এখানে তিনি এমবিএ করেন স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
পাস করে তিন বন্ধু মিলে প্রথম তৈরি করেন ‘ডেইজি সিস্টেম’। প্রতিষ্ঠানটি স্টক মার্কেটে গেলে বিনোদ খোসলা প্রচুর অর্থের মালিক হন। তারপর তিনি ১৯৮২ সালে শুরু করেন ‘সান মাইক্রোসিস্টেম’। ওয়ার্ক স্টেশন ও সার্ভার মার্কেটে সান মাইক্রোসিস্টেম আধিপত্য বিস্তার করে। মাইক্রো প্রসেসর বাজারে ইন্টেলের আধিপত্য ভাঙার জন্য ১৯৮৬ সালে তিনি তৈরি করেন ‘নেক্সজেন’, যা পরবর্তী সময়ে ‘এএমডি’-এর কাছে ২৮ শতাংশ শেয়ারের বিনিময়ে বিক্রি করে দেন। এখন পর্যন্ত এএমডি হলো ইন্টেলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। তারপর ‘সিসকো’-এর একচ্ছত্র বাজার ভাঙতে বিনিয়োগ করেন ‘জুনিপার নেটওয়ার্ক’ নামের কোম্পানিতে। জুনিপার এখন প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলারের প্রতিষ্ঠান। এরপর তিনি তৈরি করেন ইন্টারনেট সার্চ ইঞ্জিন ‘এক্সাইট’। তারপর ‘কেরেন্ট’ নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠান করেন, যা সিসকো সিস্টেমস মাত্র সাত বিলিয়ন ডলার দিয়ে কিনে নেয়। ২০০৪ সালে তিনি তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তৈরি করেন খোসলা ভেঞ্চার, যার কাজ হলো অন্যান্য ছোট প্রতিষ্ঠানে (যাকে আমরা বলি স্টার্ট-আপ) বিনিয়োগ করা। এগুলোই হলো সিলিকন ভ্যালির প্রাণ।
বিনোদ খোসলার বর্তমান আগ্রহ হলো অধ্যাপক ইউনূসের ‘সামাজিক বানিজ্য’। দারিদ্র্য বিমোচনে তিনি ক্ষুদ্রঋণকে কাজে লাগাতে চান। তিনি প্রচুর ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পে আর্থিক সাহায্য দিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর আরেকটি আগ্রহের বিষয় হলো, বিকল্প জ্বালানি ও পরিবেশ। এ খাতেই তিনি নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য বিনিয়োগ করে চলেছেন। আর সে জন্যই টনি ব্লেয়ারকে উপদেষ্টা হিসেবে নিয়ে এসেছেন নিজের প্রতিষ্ঠানে।
গত সোমবার (২৪ মে) সেই অনুষ্ঠানে বিনোদ খোসলা বলেন, ‘আমরা যাঁরা সিলিকন ভ্যালির প্রযুক্তিগুরু, যাঁরা বিশ্বের অন্যান্য বিষয়ে মোটেই বুঝতে পারি না, টনি ব্লেয়ার আমাদের সেগুলো বোঝাতে সাহায্য করবেন।’ খোসলা মনে করেন, বর্তমান বিশ্বের জ্বালানি ও পরিবেশগত সমস্যা প্রযুক্তি দিয়েই সমাধান করতে হবে। তবে সেই প্রযুক্তির মূল্য খুব সাশ্রয়ী হতে হবে, যেন উন্নয়নশীল দেশগুলো সেটা ব্যবহার করতে পারে।
টনি ব্লেয়ার বলেন, ‘চীন ও ভারত শিল্পোন্নত দেশে পরিণত হবে। তবে তাদের সঠিক প্রযুক্তি দিয়ে আমাদের সহায়তা করতে হবে, যেন সেই শিল্পায়নটি টিকে থাকতে পারে।’ এর সঙ্গে তিনি আরেকটি সুন্দর কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা যদি মানুষকে শুধু বলি, তোমরা এমন একটি পৃথিবীতে বাস করতে যাচ্ছ, যেখানে তোমরা কোনো কিছুই ব্যবহার করতে পারবে না; তাহলে সেটা দিয়ে পরিবেশ বিপর্যয় ঠেকানো যাবে না। আমাদেরকে তাদের দেখিয়ে দিতে হবে, কীভাবে বিকল্পভাবেও ব্যবহার করা যায়। আমরা সেই কাজটিই করতে যাচ্ছি।’
টনি ব্লেয়ার সিলিকন ভ্যালিতে কাজ করবেন—এটা খুবই সুখের বিষয়। মাঝেমধ্যে বিভিন্ন সেমিনারে তাঁকে দেখা যাবে, স্থানীয় টিভির গণ্ডি ছেড়ে বিশ্বের অনেক দেশেও তাঁর কথা পৌঁছে যাবে, মানুষের কল্যাণ হবে (বিশেষ করে, উন্নয়নশীল দেশগুলোর তো বটেই), পরিবেশ যে হারে পরিবর্তিত হতে চলেছে তার ওপর একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে—এসব চিন্তা আমাকে যেমন আশান্বিত করছে, পাশাপাশি আরেকটি বিষয়ও আমার সামনে বিশাল একটি প্রশ্নবোধক চিহ্ন হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। সেটি হলো, ব্রিটিশরা এটাকে কীভাবে দেখছে? তারা এটাকে কীভাবে নিচ্ছে?
ইতিহাস কীভাবে বদলে যায়, তাই না? আজকে হয়তো কোনো ব্রিটিশ এটা নিয়ে সামান্য প্রশ্নই তুলবে না। কিন্তু এটা কি এই ১০০ বছর আগেই হতো? ২০০ বছর আগে? কিংবা যখন ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে গিয়েছিল সওদা করতে, তখন?
সময় বড়ই নিষ্ঠুর, সময়ের হাত থেকে কারও বুঝি রক্ষা নেই। সময়ের কাঠগড়ায় আমাদের সবাইকেই কখনো না কখনো দাঁড়াতেই হবে।
সিলিকন ভ্যালি, যুক্তরাষ্ট্র
জাকারিয়া স্বপন: তথ্য প্রযুক্তিবিদ।
zakariaswapan@hotmail.com
সিলিকন ভ্যালি একটি আজব জায়গা। বর্তমান বিশ্বের হাইটেক প্রযুক্তির অজস্র উদ্ভাবনী হয়েছে এই শহরে, এবং এখনো হয়েই চলেছে। গুগল, ফেসবুক, ইয়াহু, হটমেইল, ইবে, সিসকো, ইন্টেল, এইচপি, এএমডি, টুইটার, ইউটিউব, সান মাইক্রোসিস্টেম, ওরাকল ইত্যাদি হাজারো কোম্পানির জন্মভূমি এই সিলিকন ভ্যালি। এখানে মানুষ প্রতিনিয়ত নিত্যনতুন বিষয়ে গবেষণা করছে এবং পণ্য তৈরিতে নিজেকে নিয়োগ করেছে। পৃথিবীর বড় বড় বিনিয়োগকারীরা এখানে বিনিয়োগ করতে আসেন। সেই সুবাদে অজস্র মানুষ চাকরিও করতে আসেন। কিন্তু সেই দলে যখন টনি ব্লেয়ারের মতো মানুষ যোগ দেন, তখন আগ্রহ এমনিতেই বেড়ে যায়। তার উপর যদি হয় প্রতিষ্ঠানটি ভারতীয় মালিকানার, তখন কৌতূহল আরও বেশি হওয়ারই কথা।
জি, খোসলা ভেঞ্চারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মালিক হলেন ভারতীয় উদ্যোক্তা বিনোদ খোসলা। সিলিকন ভ্যালির একজন অন্যতম সফল উদ্যোক্তা। তাঁকে সামনে থেকে দুবার দেখার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। বেশ হাসিখুশি প্রাণবন্ত একজন মানুষ। যাঁরা হাইটেক-শিল্পের উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন, তাঁদের জন্য খোসলার জীবনীটুকু কাজে আসতে পারে। তাঁর বাবা ভারতের সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন, এবং তাঁদের সঙ্গে প্রযুক্তি কিংবা ব্যবসা—কোনোটারই সম্পর্ক ছিল না। খোসলার বয়স যখন ১৬ বছর, তখন তিনি ‘ইন্টেল’-এর কথা শুনতে পান। আর তখন থেকেই তিনি নিজের হাইটেক কোম্পানি তৈরির স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন।
মাত্র ২০ বছর বয়সে দিল্লির ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং (আইআইটি) থেকে ইলেকট্রিক্যালে ব্যাচেলর ডিগ্রি করে প্রথমে ভারতেই সয়া-দুধের ওপর একটি কোম্পানি তৈরির চেষ্টা করেন। ওটাতে ব্যর্থ হয়ে তিনি চলে আসেন আমেরিকায়। এখানে কার্নেগি-মেলন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওপর মাস্টার্স করেন। নতুন প্রযুক্তির কোম্পানি গড়ার স্বপ্ন তাঁকে নিয়ে আসে সিলিকন ভ্যালিতে। এখানে তিনি এমবিএ করেন স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
পাস করে তিন বন্ধু মিলে প্রথম তৈরি করেন ‘ডেইজি সিস্টেম’। প্রতিষ্ঠানটি স্টক মার্কেটে গেলে বিনোদ খোসলা প্রচুর অর্থের মালিক হন। তারপর তিনি ১৯৮২ সালে শুরু করেন ‘সান মাইক্রোসিস্টেম’। ওয়ার্ক স্টেশন ও সার্ভার মার্কেটে সান মাইক্রোসিস্টেম আধিপত্য বিস্তার করে। মাইক্রো প্রসেসর বাজারে ইন্টেলের আধিপত্য ভাঙার জন্য ১৯৮৬ সালে তিনি তৈরি করেন ‘নেক্সজেন’, যা পরবর্তী সময়ে ‘এএমডি’-এর কাছে ২৮ শতাংশ শেয়ারের বিনিময়ে বিক্রি করে দেন। এখন পর্যন্ত এএমডি হলো ইন্টেলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। তারপর ‘সিসকো’-এর একচ্ছত্র বাজার ভাঙতে বিনিয়োগ করেন ‘জুনিপার নেটওয়ার্ক’ নামের কোম্পানিতে। জুনিপার এখন প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলারের প্রতিষ্ঠান। এরপর তিনি তৈরি করেন ইন্টারনেট সার্চ ইঞ্জিন ‘এক্সাইট’। তারপর ‘কেরেন্ট’ নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠান করেন, যা সিসকো সিস্টেমস মাত্র সাত বিলিয়ন ডলার দিয়ে কিনে নেয়। ২০০৪ সালে তিনি তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তৈরি করেন খোসলা ভেঞ্চার, যার কাজ হলো অন্যান্য ছোট প্রতিষ্ঠানে (যাকে আমরা বলি স্টার্ট-আপ) বিনিয়োগ করা। এগুলোই হলো সিলিকন ভ্যালির প্রাণ।
বিনোদ খোসলার বর্তমান আগ্রহ হলো অধ্যাপক ইউনূসের ‘সামাজিক বানিজ্য’। দারিদ্র্য বিমোচনে তিনি ক্ষুদ্রঋণকে কাজে লাগাতে চান। তিনি প্রচুর ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পে আর্থিক সাহায্য দিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর আরেকটি আগ্রহের বিষয় হলো, বিকল্প জ্বালানি ও পরিবেশ। এ খাতেই তিনি নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য বিনিয়োগ করে চলেছেন। আর সে জন্যই টনি ব্লেয়ারকে উপদেষ্টা হিসেবে নিয়ে এসেছেন নিজের প্রতিষ্ঠানে।
গত সোমবার (২৪ মে) সেই অনুষ্ঠানে বিনোদ খোসলা বলেন, ‘আমরা যাঁরা সিলিকন ভ্যালির প্রযুক্তিগুরু, যাঁরা বিশ্বের অন্যান্য বিষয়ে মোটেই বুঝতে পারি না, টনি ব্লেয়ার আমাদের সেগুলো বোঝাতে সাহায্য করবেন।’ খোসলা মনে করেন, বর্তমান বিশ্বের জ্বালানি ও পরিবেশগত সমস্যা প্রযুক্তি দিয়েই সমাধান করতে হবে। তবে সেই প্রযুক্তির মূল্য খুব সাশ্রয়ী হতে হবে, যেন উন্নয়নশীল দেশগুলো সেটা ব্যবহার করতে পারে।
টনি ব্লেয়ার বলেন, ‘চীন ও ভারত শিল্পোন্নত দেশে পরিণত হবে। তবে তাদের সঠিক প্রযুক্তি দিয়ে আমাদের সহায়তা করতে হবে, যেন সেই শিল্পায়নটি টিকে থাকতে পারে।’ এর সঙ্গে তিনি আরেকটি সুন্দর কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা যদি মানুষকে শুধু বলি, তোমরা এমন একটি পৃথিবীতে বাস করতে যাচ্ছ, যেখানে তোমরা কোনো কিছুই ব্যবহার করতে পারবে না; তাহলে সেটা দিয়ে পরিবেশ বিপর্যয় ঠেকানো যাবে না। আমাদেরকে তাদের দেখিয়ে দিতে হবে, কীভাবে বিকল্পভাবেও ব্যবহার করা যায়। আমরা সেই কাজটিই করতে যাচ্ছি।’
টনি ব্লেয়ার সিলিকন ভ্যালিতে কাজ করবেন—এটা খুবই সুখের বিষয়। মাঝেমধ্যে বিভিন্ন সেমিনারে তাঁকে দেখা যাবে, স্থানীয় টিভির গণ্ডি ছেড়ে বিশ্বের অনেক দেশেও তাঁর কথা পৌঁছে যাবে, মানুষের কল্যাণ হবে (বিশেষ করে, উন্নয়নশীল দেশগুলোর তো বটেই), পরিবেশ যে হারে পরিবর্তিত হতে চলেছে তার ওপর একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে—এসব চিন্তা আমাকে যেমন আশান্বিত করছে, পাশাপাশি আরেকটি বিষয়ও আমার সামনে বিশাল একটি প্রশ্নবোধক চিহ্ন হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। সেটি হলো, ব্রিটিশরা এটাকে কীভাবে দেখছে? তারা এটাকে কীভাবে নিচ্ছে?
ইতিহাস কীভাবে বদলে যায়, তাই না? আজকে হয়তো কোনো ব্রিটিশ এটা নিয়ে সামান্য প্রশ্নই তুলবে না। কিন্তু এটা কি এই ১০০ বছর আগেই হতো? ২০০ বছর আগে? কিংবা যখন ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে গিয়েছিল সওদা করতে, তখন?
সময় বড়ই নিষ্ঠুর, সময়ের হাত থেকে কারও বুঝি রক্ষা নেই। সময়ের কাঠগড়ায় আমাদের সবাইকেই কখনো না কখনো দাঁড়াতেই হবে।
সিলিকন ভ্যালি, যুক্তরাষ্ট্র
জাকারিয়া স্বপন: তথ্য প্রযুক্তিবিদ।
zakariaswapan@hotmail.com
No comments