ঢাকার ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো নিরাপদ করুন-বেগুনবাড়ি ট্র্যাজেডি
উপড়ে পড়ার পর জানা গেল, ভবনটি যতটা না বাসস্থান, তার থেকে বেশি ছিল মৃত্যুফাঁদ। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে এ রকম একটি ভবন উপড়ে গিয়ে এ পর্যন্ত ১২ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। আরও কয়েক শ মানুষ জীবিত বা মৃত অবস্থায় ভবনের নিচে চাপা পড়ে রয়েছে।
কোনোরকম পাইলিং ছাড়া ঝিলের নরম মাটিতে পাঁচতলা ভবন নির্মাণ অপরাধ। কিন্তু ভবন-মালিক সেই অপরাধ করার সময় সরকারি কর্তৃপক্ষের দ্বারা বাধা পাননি। এ রকম মারাত্মক অবহেলার পরিপ্রেক্ষিতে এই মুত্যুগুলোকে তাই দুর্ঘটনা না বলে হত্যাকাণ্ডই বলা উচিত। ঢাকার অনেক ভবনই যে ঝুঁকিপূর্ণ এবং এ রকম আরও মর্মান্তিকতা যে আসন্ন, এ ঘটনা তারই আভাস দিয়ে গেল।
বেগুনবাড়ির উপড়ে পড়া ভবনটি নিজেই শুধু নাজুক ছিল না, এর আশপাশের টিনের দুই ও তিনতলা বাড়িগুলো ছিল ততোধিক নাজুক। এ জন্যই মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেড়ে গিয়েছে বলে ধারণা। শুধু তা-ই নয়, ওই সব ঘরবাড়ির মধ্যে চলাচলের জন্য ছিল মাত্র তিন ফুট প্রশস্ত একটি রাস্তা। সে এমন এক রাস্তা, যা দিয়ে না যেতে পারে অ্যাম্বুলেন্স, না যেতে পারে দমকলের উদ্ধারকর্মীদের গাড়ি। এসব কি দেখার কেউ ছিল না? রাজউকের দায়িত্ব ছিল, দায়িত্ব ছিল সিটি করপোরেশন ও গণপূর্ত বিভাগের। অথচ সবার সম্মিলিত অবহেলার ফল হলো এত মানুষের প্রাণহানি এবং আরও অনেকের মৃত্যুর আশঙ্কা। এর আগে পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজারে ভবন ধসে অনেক মানুষের মৃত্যু ঘটেছে। প্রায়ই এ রকম ঘটনা ঘটে চলছে, অথচ সরকার নির্বিকার।
ঢাকার অজস্র পাড়া-মহল্লায় অজস্র ঘরবাড়ি ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুসরণ না করে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। উপায়হীন অবস্থায় মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারগুলোকে এরই মধ্যে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করতে হচ্ছে। সরকার যদি অবিলম্বে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা না নেয়, যদি সবখানে যথাযথভাবে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুসরিত হওয়া নিশ্চিত না করে, তাহলে এ রকম অনেক ট্র্যাজেডি আমাদের দেখতে হবে। বলা বাহুল্য, এ রকম সব ঘটনায় প্রধান দায় সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থার, তথা খোদ সরকারেরই। সরকারের কর্তাব্যক্তিদের টনক নামে কোনো বস্তু যদি থাকে, বেগুনবাড়ি ট্র্যাজেডি দেখেই তা নড়ে ওঠা উচিত।
No comments