অর্থ মন্ত্রণালয়ের কি কাজের অভাব?-অযাচিত হস্তক্ষেপ চলছেই

দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলোর অন্যতম হলো অর্থ মন্ত্রণালয়। বলা হয়ে থাকে, এই মন্ত্রণালয়ই সরকারের কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে প্রাণশক্তির জোগান দেয়। মোটা দাগে বললে, অর্থায়নের ব্যবস্থা করে থাকে। দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার নীতি নির্ধারণ ও পরিচালনার বড় কাজটিও সম্পন্ন হয় এই মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে।


এখানে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেয় অর্থনীতিসংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সংস্থা। মন্ত্রণালয় ও এসব সংস্থার মধ্যে সমন্বয়টা তাই জরুরি। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে অর্থ মন্ত্রণালয় এমন কিছু কাজে নিজেকে যুক্ত করছে, তাতে মনে হচ্ছে নীতিনির্ধারণ, পরিচালন ও তদারকির চেয়ে এসব ছোটখাটো কাজই তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। অথচ ওই সব কাজের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা আছে এবং সংস্থাগুলোর স্বাধীনভাবে কাজ করাটা অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলার জন্য অপরিহার্য।
প্রথম আলোয় প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দেশের ব্যাংকিং খাত ও শেয়ারবাজারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে, যার কোনো প্রয়োজন নেই। কয়েক দিন আগে তালিকাভুক্ত শেয়ারের অভিহিত মূল্যে সমতা আনার চূড়ান্ত নির্দেশনা দেওয়া হলো অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে। অথচ বিষয়টি মন্ত্রণালয় পর্যন্ত গড়ানোর কোনোই অবকাশ নেই। পুঁজিবাজারের প্রচলিত আইন মেনে নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) সম্মতি নিয়ে তালিকাভুক্ত যেকোনো প্রতিষ্ঠান অভিহিত মূল্য পরিবর্তন করতে পারে। আবার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় নিয়োগ ও পদোন্নতির বিষয়েও মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নেওয়ার নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এগুলো উদ্বেগজনক। কারণ, এর মাধ্যমে একদিকে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা বাড়ানো হচ্ছে, অন্যদিকে আর্থিক খাতে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের সুযোগ তৈরি করা হচ্ছে।
বস্তুত, গতিশীল অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ও শক্তিশালী আর্থিক খাতের জন্য মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাজের মধ্যে সুস্পষ্ট সীমারেখা মেনে চলা অপরিহার্য। আর দুই দশক ধরে কোটি কোটি টাকা খরচ করে আর্থিক খাতে যেসব সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তার সুফল পাওয়ার জন্য এই সীমারেখা অনুসরণ করা জরুরি। বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের নির্দেশিত পথে গৃহীত সংস্কারের অনেক সীমাবদ্ধতা ও অসম্পন্নতা থাকলেও স্ব-উদ্যোগে গৃহীত সংস্কারের কিছু সুফল বাংলাদেশ পেয়েছে। এখন তা এগিয়ে নিতে হলে অর্থ মন্ত্রণালয়কেই অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে। কারণ, এর পেছনে রাজনৈতিক সদিচ্ছা জরুরি, যার প্রতিফলন ঘটবে মন্ত্রণালয়ের কাজের মাধ্যমেই। অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক ও এসইসির মতো নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোরও দায়িত্ব আছে। কেন শেয়ারের অভিহিত মূল্য পরিবর্তনের বিষয়টি এসইসি থেকে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে? কেন বাংলাদেশ ব্যাংক সুস্পষ্টভাবে মন্ত্রণালয়কে জানাবে না যে প্রচলিত আইন-আদেশ অনুসারে সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর বিষয়ে সরকারের হস্তক্ষেপ করার কোনো অবকাশ নেই? এই সংস্থাগুলো যদি মন্ত্রণালয় তথা সরকারকে এসব বিষয় ঠিকমতো না বোঝায়, তাহলে অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধ করা যাবে না। পরিণামে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় জটিলতা বাড়বে।

No comments

Powered by Blogger.